I am waiting for someone and I know she will ever come. রবীন্দ্রনাথের ভাষায় বিধৃত ছন্দময় সংলাপ,‘ দিনগুলি মোর সোনার খাঁচায় রইলো না/ সে যে আমার নানা রঙের দিনগুলি...’ । হৃদয়ের কপাট একটুখানি খুলে দিলেই সেই নানা রঙের দিনগুলির সাথে আলিঙ্গন করা যায়। সপ্তাহখানি আগে একবিংশ শতাব্দির আরো একটা নতুন বছর শুরু হলো। নতুন আশা-ভরসা আর ভালোবাসা নিয়ে অনেকেই নতুনভাবে জীবন শুরু করবেন। এটাই স্বাভাবিক বা সাধারণ কথা।
পুরাতনকে অতীতকে জারা-জীর্ণকে দূরে ঠেলে সামনে এগিয়ে যাওয়াই মানব মনের নিত্য প্রত্যয়। এই নিয়ে বিশেষ ক্রোড়পত্র, বিশেষ অনুষ্ঠান বিশেষ বিশেষ সময়ে বিশদভাবে প্রকাশিত ও প্রচারিত হয়েছে গণমাধ্যমে। এই সুযোগে কেউ কেউ দিন বদলের গান গাইবেন। কেউ আবার পুরান কথা নতুনভাবে বলবেন, “বদলে যাও বদলে দাও”। আবার কেউ মাদকবিরোধী কনসার্টের স্টেজ থেকে নেমে ড্রেসিং রুমে মদ্যে মাতাল হবেন।
কেউ কেউ নতুন বছর সেলিব্রেশন করেছেন ধানমন্ডি, গুলশান বা বনানীর কোন অভিজাত নাইট ক্লাবে। উন্নত দেশের কথা না হয় বাদই দিলাম। রেডিসন, সোনারগাঁও, রুপসি বাংলা হোটেলের কথা না বললেই চলত। কারণ যার যেমন সামর্থ্য সে তেমনিভাবেই চালিয়েছেন নতুন বছর উৎযাপনের মহড়া। আমরা নতুনের জন্য এতো ব্যাকুল কিন্তু পারি কি পুরাতন কে ছাড়া চলতে ..? কোটি বছরের পুরোনো সেই সূর্য আজো পূর্ব আকাশে উদিত হয়।
সেই আলোতে আমাদের জীবন বাঁচাতে হয়। রাত আসে দিন যায় পুরোনো চাঁদ উকি দেয়। সেই পুরোনো জোছনা, বৃষ্টি, আকাশ, বাতাস সবই রয়ে যায়। ঘরে মা, বোন, বধূ বাবা তারাও তো পুরানই রয়ে যায় । পারি কি তাদের ত্যাগ করতে..! তবে কেন এতো নতুন কে নিয়ে মাত্রাতিরিক্ত মাতামাতি..? পশ্চাত্য দেশের বিজ্ঞান-প্রযুক্তি, শিক্ষা, চিকিৎসা অনেক কিছুই আমরা গ্রহণ করেছি।
যার মাধ্যমে আমরা উন্নত জীবন যাপনের স্বপ্ন দেখি। সাম্প্রতিক বিশ্বের সাথে তাল মেলাতে সক্ষম হই। এতো ভালো কিছু গ্রহণ করছি। সংস্কৃতি কেন গ্রহণ করব না ? তা তো হয় না। মাত্রাহীন প্রগতিশীল উচ্চাকাক্সক্ষা ও রুচি বিকলের সুযোগ নিয়ে নিরবভাবেই সেইসব দেশের সংস্কৃতি আমাদের মধ্যে ঢুকে পড়ছে।
যে কারণে আজকাল আমরাও শিখেছি লিভ টু গেদার করতে, হরহামেশায় র্গাল ফ্রেন্ড চেন্স করতে। একটু কিছু হলেই ডির্ভোস লেটার পাঠিয়ে দিতে। বাবা মা কে বৃদ্ধাশ্রমে পাঠিয়ে দিতে। ইচ্ছে হলেই ক্লাবে পার্টি দিতে। আমরা যতই শিখছি ততই বাঙালিপনা দূরে সরে যাচ্ছে।
জানিনা এভাবে আমরা শিখতে শিখতে ষোলআনা বাঙালিআনা স্বাত্বাটা কোথায় নিয়ে দাঁড় করাব ? আমাদের সাহিত্য, সংস্কৃতি এবং রাজনীতির আদর্শটা কোথায় হারাবো ? এই নতুন বছরে অনেক কিছু যেমন হারিয়েছি আবার বেশ কিছু পেয়েছি। আরো একটা জিনিস পাবো। তাহলো রাজনীতির পালাবদল । এ বছরের শেষের দিকে পালাবদলের নাটকীয়তা শুরু হবে। সেই নাটকের স্ক্রিপ্ট অবশ্য আওয়ামী লীগ, বিএনপি, জাতীয় পার্টি, জামায়াত ইসলামসহ অন্যান্য ছোট বড় মাঝারি সব দলের হর্তা কর্তারা লিখতে শুরু করেছেন।
সেই নাটক হবে অসাধারণ সার্থক নাটক। নাটকের সবগুলো উপাদান নিয়ে রাজপথে সে নাটক মেগাসিরিয়ালি মঞ্চায়ন হবে। নাটকটিতে হাসি তামাশা, উচ্ছ্বাস, উল্লাস এবং গভীর ট্র্যাজেডি সবই থাকবে । নাটকের দুইটি নারী চরিত্রকে কেন্দ্র করে রহস্যময়ভাবে কাহিনি সামনের দিকে এগিয়ে যাবে। নির্দলীয় তত্তাবধায়ক সরকার ও যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের ইস্যুতে কোন অভিনেতার কৃত্রিম নয় দেহের প্রাকৃতিক রক্তে রজ্ঞিত হবে পিচ ঢালা কালো পথ।
কারো আবার প্রাণ যাবে পুলিশের গুলিতে । অথবা মহান ছাত্র রাজনৈতিকের চাপাতি, রামদা ও ছুরিকাঘাতে। বিচিত্র দৃশ্য আর সংলাপের মধ্যদিয়ে দেশের আপামর জনগণ সেই নাটক উপভোগ করবেন বিটিভিতে নয় , ইউটিউবে নয় , স্যাটেলাইট চ্যানেলে, পত্রিকা, রেডিও, ফেসবুক এবং টুইটারে। লক্ষ কোটি দশর্ক শ্রোতা ব্যাপক আকুল ব্যাকুল এবং আকুঁপাঁকু মন নিয়ে অধীর অপেক্ষা করছে এখন থেকেই। কখন শুরু হবে সেই দৃশ্য..? কখন শুরু হবে সেই নাটক...!
বাঙালি জাতির যেমন সংগ্রমের ধর্য্যরে সাহসের গৌরবাজ্জ্বল ইতিহাস আছে।
তেমনি দুর্নীতি, খুন-গুম, ধষর্ণ, লুচপাটের ইতিহাসও আছে। মাল্টি কালারে, মাল্টি মিশ্রণে বাঙালি জাতির সৃষ্টি। বিচিত্র এক জাতির নাম বাঙালি। এই বিচিত্র জাতি সম্পর্কে ষোলআনা ঘাঁটি বাঙালি কবি রবি ঠাকুর তাই ততকালিন সময়ে বলেছিলেন, “ ৭ কোটি বাঙালিরে হে মুগ্ধ জননী/ রেখছো বাঙালি করে মানুষ করো নি। ” এতো বছর পরে আবার নতুন করে প্রশ্ন জাগে- সত্যিই কি আমরা মানুষ হই নি..??
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।