আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

পাকিস্তানের ঔদ্ধত্য, ঘুম ভেঙেছে মাহমুদ আল

১. একাত্তরের রক্তক্ষয়ী সশস্ত্র মুক্তিযুদ্ধে বাঙালি জাতির বীরত্বের কাছে পরাজিত পাকিস্তান ৪২ বছর পর যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের রায় কার্যকরের পরিপ্রেক্ষিতে নতুন চেহারা উন্মোচন করেছে। তারা রীতিমতো একাত্তরের সেই রক্তচোখ বের করে শাসাচ্ছে। যুদ্ধাপরাধী কাদের মোল্লার ফাঁসি হওয়ায় ঠিক আমাদের বিজয় দিবসের লগ্নে পাকিস্তানের পার্লামেন্ট নিন্দা প্রস্তাব এনে বাংলাদেশের জনগণের হৃদয়ে রক্তক্ষরণ ঘটিয়েছে। কাদের মোল্লার ফাঁসির পর দিন শুক্রবার পাকিস্তানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী শারতাজ আজিজের আপত্তিকর বিবৃতি এবং সে দেশের পার্লামেন্টে নিন্দা প্রস্তাব উত্থাপনের পর আমাদের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ও ইসলামাবাদে নিযুক্ত হাইকমিশনার সোহরাব হোসেনের তাৎক্ষণিক কোনো ভূমিকা নজরে আসনি। বাংলাদেশের তরফ থেকে প্রতিবাদ জানানো হয়নি। সেদিনই এর প্রতিবাদ জানানো উচিত ছিল। পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ এইচ এম মাহমুদ আলী ও হাইকমিশনার সোহরাব হোসেন তখন নাক ডেকে ঘুমিয়েছেন। আর তাদের বিনা প্রতিবাদের মধ্যে সোমবার পাকিস্তানের পার্লামেন্ট পাস হয়েছে কাদের মোল্লার ফাঁসির নিন্দা প্রস্তাব। এ খবর ঢাকায় পেঁৗছানোর পর অবশেষে গতকাল বিকালে পাকিস্তানের হাইকমিশনার মিয়া আফরাসিয়াব মেহদি হাশমি কুরেশিকে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে তলব করে কৈফিয়ত চাওয়া হয়েছে। যাক, বিলম্বে হলেও বেলা শেষে পররাষ্ট্রমন্ত্রীর ঘুম ভেঙেছে। যদিও একটি স্বাধীন-সার্বভৌম জাতির বিজয়ের মাসে পরাজিত পাকিস্তানিদের অবস্থান খোলাসা করা এবং ঔদ্ধত্য দেখানোর পর এ বিলম্বিত পদক্ষেপে সন্তুষ্ট নয় জনগণ। আগেই পাকিস্তানের হাইকমিশনারকে তলব করে কঠোর ভাষায় প্রতিবাদ ও নিন্দা জানানো উচিত ছিল। এ ব্যর্থতা ক্ষমাহীন। পাকিস্তানের পররাষ্ট্রমন্ত্রীকে অবশ্যই তার স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ও পাকিস্তানের সংসদে নিন্দা প্রস্তাব পাস এবং প্রতিনিধিত্বশীল রাজনৈতিক দল জামায়াতে ইসলামীর বাংলাদেশকে আক্রমণ করার দাবি জানানোর ভূমিকা নিয়ে বাংলাদেশের জনগণের কাছে ক্ষমা চাইতে হবে, দুঃখ প্রকাশ করতে হবে, ব্যাখ্যা দিতে হবে।

২. একাত্তরে বিশ্ববিবেককে স্তম্ভিত করে পাকিস্তান হানাদার বাহিনী আমাদের ওপর তাদের এ-দেশীয় দোসরদের নিয়ে যে হত্যাযজ্ঞ চালিয়েছিল তার জন্য আজ পর্যন্ত পাকিস্তান সরকার ক্ষমা চায়নি। আওয়ামী লীগ সরকার জনগণের রায় নিয়ে যুদ্ধাপরাধীদের বিচার করেছে। এটা লুকোচাপা কিছু ছিল না। ৪২ বছর পর এ বিচার নিয়ে অনেকের অনেক মত রয়েছে। তা আমাদের অভ্যন্তরীণ বিষয়। একটি রায় কার্যকর নিয়ে অনেকের অনেক মতামত রয়েছে। তাও একজন নাগরিকের ব্যক্তিগত অভিমত। কিন্তু রায় ঘোষণার পর পাকিস্তানের কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী নিসার আলী খান এক বিবৃতিতে বলেছেন, অবিভক্ত পাকিস্তানের প্রতি কাদের মোল্লার বিশ্বস্ততা ও আনুগত্যের জন্য দেওয়া এ ফাঁসিতে পাকিস্তানের জনগণ গভীরভাবে শোকাহত। ফাঁসি কার্যকরের আগে তাদের পররাষ্ট্রমন্ত্রী শারতাজ আজিজ বলেছিলেন, বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ কোনো বিষয়ে হস্তক্ষেপে পাকিস্তান বিশ্বাস করে না। কিন্তু স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর বিবৃতিতে পরাজিত পাকিস্তানের গ্লানি ও ক্ষোভের বহিঃপ্রকাশ ঘটেছে। তিনি বলেছেন, ৪২ বছর পর কাদের মোল্লার ফাঁসি দুর্ভাগ্যজনক ও বেদনাদায়ক। তিনি আরও বলেছেন, '৭১ সালে জামায়াতের এই নেতা পাকিস্তানের প্রতি যে আনুগত্য ও একাত্দতা প্রকাশ করেছিলেন এবং বিশ্বস্ত ও অনুগত ছিলেন তাতে আজ সব পাকিস্তানি দুঃখ এবং নিন্দা জানাচ্ছে। এদিকে পাকিস্তানের ন্যাশনাল অ্যাসেম্বলিতে জামায়াতের নেতা সাহিবজাদা তারিকুল্লাহ যে নিন্দা প্রস্তাব এনে পাস করিয়েছেন সেখানে সুমহান মুক্তিযুদ্ধে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীকে সহায়তা করতে কাদের মোল্লার ভূমিকার প্রশংসা করা হয়। পাকিস্তান তার দোসরদের জন্য কাঁদবে আর বাংলাদেশ তার সন্তান হত্যা ও দেশের প্রতি বিশ্বাসঘাতকদের বিচার চাইবে না_ এমনটি হয় না। এ ঘটনার মধ্য দিয়ে ৪২ বছর পর প্রমাণ হয়ে গেল পাকিস্তান বাংলাদেশের বন্ধু হতে পারেনি, শত্রুর জায়গা দখল করে রেখেছে। অন্যদিকে বাংলাদেশের মাটি ও মানুষের সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা করে একটি শক্তি পরাজিত পাকিস্তানের প্রতি আনুগত্য রেখেছে। এ শক্তির বিরুদ্ধে মুক্তিযুদ্ধের শহীদদের উত্তরাধিকারীদের রুখে দাঁড়ানোর সময় এখন।

৩. ক্রিকেট দুনিয়া কাঁপানো একসময়ের অলরাউন্ডার ইমরান খানের অধিনায়কত্বের সময় বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের প্রতি শ্রদ্ধাশীল তারুণ্য পাকিস্তান ক্রিকেট দলকে সমর্থন করার উদারতা দেখিয়েছিল। সেই সমর্থনকেও আজকের পাকিস্তানের নব্য পার্লামেন্টারিয়ান ইমরান খান অশ্রদ্ধা দেখাতে কার্পণ্য করেননি। ইমরান খান জামায়াতের প্রস্তাবকে সমর্থন জানিয়েছেন। তিনি কাদের মোল্লাকে নির্দোষ বলতে দ্বিধা করেননি। পাকিস্তান মুসলিম লীগ ও জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম এ প্রস্তাবকে সমর্থন করেছে। একমাত্র পাকিস্তান পিপলস পার্টি এতে সম্মতি দেয়নি। বলেছে, এটি বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়। পাকিস্তান যেখানে বাংলাদেশের নাগরিক হোক কিন্তু তাদের প্রতি অনুগত তাদের জন্য এককাতারে দাঁড়িয়ে যাচ্ছে সব রাষ্ট্রীয় শিষ্টাচারবহিভর্ূতভাবে সেখানে আমাদের রাজনৈতিক শক্তি যারা মুক্তিযুদ্ধের প্রতি শ্রদ্ধাশীল, স্বাধীন ভূখণ্ডের প্রতি অনুগত তাদের আজ একদিকে দাঁড়ানো উচিত। রাজনীতিতে নানা মত, পথ ও বিতর্ক থাকতে পারে। গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় তা স্বাভাবিক। কিন্তু পাকিস্তানের এই নির্লজ্জপনার বিরুদ্ধে কেন এককাতারে দাঁড়াবেন না- এ প্রশ্ন সব গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক নেতানেত্রীর বিবেকে কড়া নাড়ছে।

৪. সংসদীয় গণতন্ত্রের জনক উইনস্টন চার্চিল বলেছিলেন, 'যে বিজয়ী হয় তাকে উদার হতে হয়'। আমাদের মুক্তিযুদ্ধের মহানায়ক জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান একজন বিশ্বনন্দিত জাতীয়তাবাদী নেতা হিসেবে সেই উদারতা দেখিয়ে বিশ্ববাসীকে চমকে দিয়েছিলেন। তিনি সবার সঙ্গে বন্ধুত্বের দরজা খুলে দিয়েছিলেন। বিনিময়ে পরিবার-পরিজনসহ উদার গণতন্ত্রী শেখ মুজিবকে জীবন দিতে হয়েছিল। তার বিশ্বস্ত সহচরদের সেই জাতীয় ও আন্তর্জাতিক ষড়যন্ত্রের রূপরেখায় হত্যা করা হয়েছিল কারাগারের অন্ধকার প্রকোষ্ঠে। মুক্তিযুদ্ধে নেতৃত্বদানকারী দল আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীদের বছরের পর বছর জেল-জুলুম-নির্যাতন সইতে হয়েছিল। মুক্তিযুদ্ধে অর্জিত মূল্যবোধ ও চেতনা নির্বাসিত করা হয়েছিল। নানা চড়াই-উতরাই পেরিয়ে সেনাশাসনের অবসান ঘটিয়ে বারবার বাঙালির বুকের রক্ত ঝরিয়ে সংসদীয় গণতন্ত্রের ইতিহাস রচিত হয়েছিল। বঙ্গবন্ধু হত্যার বিচারকাজ সম্পন্ন হয়েছিল। গণরায় নিয়ে '৭১-এর মানবতাবিরোধী অপরাধীদের বিচার সম্পন্ন হতে চলেছে। দক্ষিণ এশিয়ায় বাংলাদেশ এক উদীয়মান টাইগারে রূপ নিয়েছিল।

৫. মধ্যপন্থি দল বিএনপির সঙ্গে জামায়াত ক্ষমতায় আসার পরই বাংলাদেশের বুকে জঙ্গিবাদের উত্থান ঘটেছিল। দিনদুপুরে ভয়াবহ গ্রেনেড হামলা চালিয়ে বিরোধীদলীয় নেতা শেখ হাসিনাকে তার নেতাদেরসহ দুনিয়া থেকে উড়িয়ে দেওয়ার চেষ্টা চালানো হয়েছিল। সারি সারি লাশ ও রক্ত দেখেছে সেদিন বিশ্ব। এর নেপথ্যে কোন শক্তি, আজ পরিষ্কার। সেই সময়টায় সারা দেশ বোমার আতঙ্কে প্রকম্পিত হয়েছিল। বোমার আঘাতে অনেক বরেণ্য নেতার মৃত্যু হয়েছিল। অস্ত্রবোঝাই ট্রাক ধরা পড়েছিল। সন্ত্রাসবাদীদের অভয়ারণ্য করা হয়েছিল এই মাটি। অভিযোগ উঠেছিল এই সন্ত্রাস, এই জঙ্গিবাদ, এই গ্রেনেড-বোমা-অস্ত্রের নেপথ্যে '৭১-এর পরাজিত পাকিস্তান নামক রাষ্ট্রের গোয়েন্দা সংস্থার হাত রয়েছে। বৃহত্তর গণতান্ত্রিক দেশ, '৭১-এ আমাদের সুমহান মুক্তিযুদ্ধে গণতন্ত্রের মহান নেত্রী শ্রীমতি ইন্দিরা গান্ধীর নেতৃত্বে আশ্রয়, খাবার, অস্ত্র, ট্রেনিং ও রক্ত দিয়ে বিজয় অর্জনে সহায়তা করেছিল সেই ভারত বারবার অভিযোগ তুলেছে বাংলাদেশের মাটি পাকিস্তানি জঙ্গি ও সন্ত্রাসীদের নিরাপদ রুট হিসেবে ব্যবহৃত হয়েছে। মুজিবকন্যা শেখ হাসিনা তার শাসনামলে নানা ভুলত্রুটি, সাফল্য-ব্যর্থতা সত্ত্বেও ওই জঙ্গিবাদ, সন্ত্রাসবাদকে কঠোর হাতে দমন করেছিলেন। সেনাশাসন ও সাম্প্রদায়িক জঙ্গিবাদের তাণ্ডবে ক্ষতবিক্ষত পাকিস্তানের শাসকগোষ্ঠী আজকে যে অবস্থান নিয়েছে তাতে স্বচ্ছ কাচের মতো পরিষ্কার করে দিয়েছে আমাদের লাখো লাখো শহীদের রক্তে অর্জিত স্বাধীন বাংলাদেশে এ দেশের নাগরিক হয়েও অনেকে মনস্তাত্তি্বকভাবে পাকিস্তানের প্রতি অনুগত রয়ে গেছেন এবং লাখো শহীদের রক্তস্নাত এই পবিত্র মাটিতে ছোট আকারে হলেও তাদের একটি শক্তি রয়ে গেছে। এই ঔদ্ধত্য দেশপ্রেমিক গণতান্ত্রিক ও মুক্তিযুদ্ধের প্রতি শ্রদ্ধাশীল আর মাটির প্রতি অনুগত কোনো রাজনৈতিক শক্তি ও মানুষ মেনে নিতে পারে না। এই প্রশ্নে আওয়ামী লীগ, বিএনপিসহ সব রাজনৈতিক শক্তিকেই এককাতারে সমঝোতায় আসার দাবি এখন সময়ের।

৬. একাত্তরে ওরা আমাদের ঘুমন্ত মানুষের ওপর সশস্ত্র হামলা চালিয়েছে। তাদের অন্যায় ও পাশবিকতায় রক্তের বন্যায় ভেসেছে পদ্মা, মেঘনা, যমুনার কাজলকালো জল। ওরা ঘরে ঘরে মায়েদের সন্তানহারা করেছে। ওরা ভাইয়ের সামনে বোনকে ধর্ষণ করেছে। মাসুম সন্তানের কান্না তাদের হৃদয় স্পর্শ করেনি, আল্লাহর আরশ কেঁপেছে। এতিম সন্তান খোলা আকাশের নিচে দাঁড়িয়ে থেকেছে জানে না তার বাবা-মাকে কীভাবে হত্যা করেছে। ওরা স্বামীর সামনে তার স্ত্রীকে ধর্ষণ করেছে। ওরা বন্দীশিবিরে নিরীহ মানুষ ধরে নিয়ে হত্যা করেছে। আমাদের মা-বোনদের বন্দী করে পাশবিক অত্যাচার চালিয়েছে। ওরা অগি্নসংযোগ, লুটতরাজ সব মিলিয়ে পাকিস্তানি জল্লাদ ইয়াহিয়া খানের পোড়ামাটি নীতি গ্রহণ করে ইতিহাসে নিন্দিত পূর্ববাংলার কসাই টিক্কা খানের হত্যাযজ্ঞের মাধ্যমে বাংলাদেশকে এক ধ্বংসস্তূপ আর সারি সারি লাশের ভূমিতে পরিণত করেছিল। ইয়াহিয়া খান আমাদের মহান নেতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে ফাঁসিতে ঝুলিয়ে কবর দেওয়ার সব প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছিলেন। বাঙালির মহত্তম নেতা শেখ মুজিবকে ফাঁসি দেওয়ার জন্য ক্ষমতাচ্যুত ইয়াহিয়া শেষ মুহূর্তেও সিভিলিয়ান সিএমএলএ জুলফিকার আলী ভুট্টোর কাছে শেষ মিনতি করেছিলেন। বাঙালির বীরত্বের প্রতীক বঙ্গবন্ধু যেমন মৃত্যুদুয়ার দেখেও আপস করেননি তেমনি এ দেশের অতি সাধারণ একজন মানুষও মাথা নত করেনি। তদানীন্তন সোভিয়েত ইউনিয়ন ও ভারত ছাড়া বড় বড় পরাশক্তি সেদিন পাকিস্তানের পাশে ছিল। বিশ্ববিবেক সেদিন পাকিস্তানি হত্যাকাণ্ডের বিরুদ্ধে মুক্তিকামী বাঙালির পাশে দাঁড়িয়েছিল। পরাশক্তি নয়, সেদিন মানবতা আর বীর বাঙালির সংগ্রামেরই বিজয় ঘটেছিল। আজ এমন এক সময় পাকিস্তানের রাজনৈতিক শক্তি তাদের মানসিক বিকৃত চেহারা উন্মোচিত করেছে যখন আমরা রাজনৈতিকভাবে দুই শিবিরে বিভক্ত। মুক্তিযুদ্ধের আগেও রাজনীতিতে নানা মত, পথ ছিল। আজ সেই পরাজিত শক্তি জেগেছে। আমাদেরও আজ প্রকৃত দেশপ্রেমিক রাজনৈতিক শক্তিকে এ প্রশ্নে এক কণ্ঠে নিন্দা ও প্রতিবাদ জানানোর মধ্য দিয়ে জাতীয় ঐক্যের একটি মোহনা তৈরি করতে হবে। ওদের ঔদ্ধত্য আমাদের জাতির বিরুদ্ধে ঔদ্ধত্য। এ অপমান আমাদের রাষ্ট্রের অভ্যন্তরীণ ব্যাপারে হস্তক্ষেপ করে সব কূটনৈতিক শিষ্টাচার লঙ্ঘন করার শামিল। আমাদের পূর্বসূরিরা আমাদের আত্দসম্মানবোধ নিয়ে বাঁচার জন্য নিজেদের জীবন উৎসর্গ করেছিলেন। সম্ভ্রম হারিয়েছিলেন। সেই সম্মান ও সম্ভ্রম রক্ষা করার দায় আজ সবার। বিএসএফের হাতে একজন মানুষের মৃত্যুতে আমরা প্রতিবাদের ঝড় তুলি। সেটাই স্বাভাবিক। ভারতের ঢাকাস্থ হাইকমিশনারকে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় তলব করে কৈফিয়ত চায়। তাও স্বাভাবিক। সেখানে পাকিস্তান সরকারের ও সংসদের এই উন্নাসিকতার বিরুদ্ধে আজকে সবাইকে প্রতিবাদমুখর হতে হবে। মুজিবকন্যা শেখ হাসিনা বিশাল গণরায় নিয়ে ক্ষমতায় এসেছিলেন। দুর্ভাগ্য আমাদের, তিনি দেউলিয়া ভ্রষ্ট কমিউনিস্টদের খপ্পরে পড়ে যোগ্য ও দক্ষদের সরকার ও রাজনীতিতে শুরু থেকে কাজে লাগাননি। কাজে লাগালে পরিস্থিতি এই জায়গায় দাঁড়াত না। পশ্চিমা মিডিয়া বাংলাদেশের বিরুদ্ধে হামেশাই নানা প্রতিবেদন লিখে যাচ্ছে। লন্ডন, ওয়াশিংটনে হাইকমিশনার-রাষ্ট্রদূতই নয়, আমাদের প্রেস মিনিস্টাররাও রয়েছেন। পশ্চিমা মিডিয়ার সঙ্গে সম্পর্ক দূরে থাক বাংলা মিডিয়ার সঙ্গেই তাদের যোগাযোগ নেই। লন্ডনের প্রেস মিনিস্টার পানাহারে ব্যস্ত, বাকিরা বিক্রি করে টাকা জমাতেই তৎপর। লজ্জা লাগে রাজনৈতিক নিয়োগপ্রাপ্ত দলকানা কূটনীতিকদের কীর্তিকলাপ দেখে। রীতিমতো কেচ্ছার জন্ম দিচ্ছেন একেক জায়গায় একেকজন। না দেশ, না সরকার কারোর জন্যই কাজ করছেন না। বউ-বাচ্চা নিয়ে বিদেশে আরামের জীবন কাটাচ্ছেন। এর চেয়ে আর কীইবা চাওয়ার থাকতে পারে?

৭. মাহমুদ আলী একজীবনে মুজিবকন্যার কাছে এতই পাচ্ছেন যে যথাসময়ে পাকিস্তানের ঔদ্ধত্যের প্রতিবাদ জানাতেও ভুলে যাচ্ছেন। গতকাল পাকিস্তানের হাইকমিশনারকে তলবের আগে পর্যন্ত মনে হয়নি বাংলাদেশে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলে কেউ আছেন। আগের পররাষ্ট্রমন্ত্রী দুনিয়ায় আমাদের একা করে রেখে গেছেন। সরকার ও বিরোধী দলের চলমান সংলাপ থামিয়ে দেওয়ার সুযোগ নেই। একদিকে আন্দোলনের নামে জামায়াত-শিবিরের সন্ত্রাসী তাণ্ডব চলছে, মানুষ মরছে। লাশের মিছিল বাড়ছে। সিইসি রকিব কমিশন সব লাজলজ্জার নেকাব খুলে নির্বাচন কমিশনকে আজ্ঞাবহ ঠুঁটোজগন্নাথে পরিণত করে রীতিমতো কবর দিচ্ছেন। একতরফা নির্বাচনে যা দেখিয়েছেন তা নাটক নয়, মধ্যরাতের গ্রামগঞ্জের যাত্রাপালাকেও হার মানিয়েছেন। মধ্যরাতের যাত্রাপালার প্রিন্সেসদের নাচও এত অশ্লীল নয়, নির্বাচন কমিশনের মনোনয়নপত্র প্রত্যাহারের পরও বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় প্রার্থী বিজয়ী ঘোষণা করার দৃশ্য যত অশ্লীল। এককথù

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.