নারী কূটনীতিককে বিবস্ত্র করে দেহ তল্লাশি ও হাজতে পাঠানোর জবাবে নিরাপত্তা প্রত্যাহারসহ ভারতে নিযুক্ত যুক্তরাষ্ট্রের কূটনীতিকদের বিশেষ সুবিধা স্থগিত করা শুরু করেছে ক্ষুব্ধ নয়া দিলি্ল। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সূত্রের উদ্ধৃতি দিয়ে ভারতীয় সংবাদমাধ্যমগুলো বলছে, এটা যুক্তরাষ্ট্রের 'ঘৃণ্য ও বর্বর' আচরণের বিরুদ্ধে ভারতের প্রাথমিক পদক্ষেপ। সংবাদমাধ্যমগুলো জানিয়েছে, ভারতজুড়ে নিযুক্ত মার্কিন কূটনীতিক ও তাদের পরিবারের সদস্যদের পরিচয়পত্র জমা দিতে বলেছে নয়া দিলি্ল। কনস্যুলেট ও দূতাবাস কর্মকর্তাদের সব রকমের এয়ারপোর্ট পাসপোর্ট প্রত্যাহার করে নেওয়া হয়েছে। মার্কিন দূতাবাসের নিরাপত্তায় নিয়োজিত পুলিশি ব্যারিকেড সরিয়ে নেওয়ার জন্য দিলি্ল পুলিশকে বলা হয়েছে। সূত্র : বাংলানিউজ
এসব পদক্ষেপের পাশাপাশি যুক্তরাষ্ট্রের দূতাবাস ও কনস্যুলেটগুলোয় কর্মরত ভারতীয় কর্মচারীদের বেতন-ভাতার বিবরণ এবং মার্কিন কর্মকর্তাদের বাসভবনে গৃহস্থালির কাজ করা শ্রমিকদের বেতন-ভাতার বিবরণসহ দূতাবাস ও কনস্যুলেটের বিভিন্ন খুঁটিনাটি কার্যক্রমও জানতে চেয়েছে নয়া দিলি্ল। যুক্তরাষ্ট্রের স্কুলের ভারতীয় শাখাগুলোর শিক্ষকদের ভিসার বিবরণ চাওয়ার পাশাপাশি তাদের বেতন-ভাতার বিবরণ ও ব্যাংক অ্যাকাউন্টের ব্যাপারেও তথ্য চাওয়া হয়েছে। এ ছাড়া, মার্কিন দূতাবাস ও কনস্যুলেটগুলোর জন্য বিশেষ আমদানি অগ্রাধিকারও প্রত্যাহার করা হয়েছে। সংবাদমাধ্যমগুলো বলছে, বৃহস্পতিবার ভারতের নিউইয়র্ক কনস্যুলেটের ডেপুটি কনসাল জেনারেল দেবযানী খোবরাগাড়েকে বিবস্ত্র করে দেহ তল্লাশির পর হাজতে পাঠিয়ে দেওয়ার ঘটনায় ক্ষুব্ধ নয়া দিলি্ল এসব পাল্টা পদক্ষেপ নিল। দেশটির সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো বলছে, আরও কঠোর পদক্ষেপের কথা বিবেচনা করছে সরকার।
এর আগে, গতকাল সকালেই 'জাতীয় সংহতির' স্বার্থে ভারত সফররত মার্কিন কংগ্রেসের পাঁচ সদস্যের প্রতিনিধি দলের সঙ্গে নির্ধারিত বৈঠকে বসতে অস্বীকৃতি জানান ক্ষমতাসীন ন্যাশনাল কংগ্রেসের ভাইস প্রেসিডেন্ট রাহুল গান্ধী ও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সুশীলকুমার সিনধে। মার্কিন কূটনীতিকদের সঙ্গে বৈঠক বাতিল করেন ভারতীয় জনতা পার্টি-বিজেপির আগামী নির্বাচনের প্রধানমন্ত্রী প্রার্থী নরেন্দ্র মোদিও। নারী কূটনীতিকের সঙ্গে এমন আচরণকে 'ঘৃণ্য ও বর্বর' উল্লেখ করে কংগ্রেস প্রতিনিধি দলের সঙ্গে সোমবার নির্ধারিত বৈঠক বাতিল করেন ভারতের জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা শিবশঙ্কর মেনন। বৈঠক বাতিল করেন লোকসভার স্পিকার মীরাকুমারও। বৃহস্পতিবার ভারতের নিউইয়র্ক কনস্যুলেটের ডেপুটি কনসাল জেনারেল দেবযানী খোবরাগাড়েকে বিবস্ত্র করে দেহ তল্লাশির পর হাজতে পাঠিয়ে দেওয়া হয়। সেখানে জামিনের আগে মাদকসেবীদের সঙ্গে হাজতবাসে বাধ্য হন দেবযানী।
দেবযানীর বিরুদ্ধে ভিসা জালিয়াতির অভিযোগের জেরেই এমন ঘটনা ঘটেছে বলে জানায় সংবাদমাধ্যমগুলো। মার্কিন সংবাদমাধ্যমগুলোয় দাবি করা হয়, ভিসা জালিয়াতির মাধ্যমে সংগীতা রিচার্ড নামে এক ভারতীয় পরিচারিকাকে আমেরিকা নিয়ে যাওয়ার অভিযোগে দেবযানীকে আটক করা হয়। পরে ২ লাখ ৫০ হাজার মার্কিন ডলারে জামিনে মুক্ত হন তিনি। এ ব্যাপারে দেবযানী কোনো মন্তব্য করতে রাজি না হলেও ভারতীয় সংবাদমাধ্যমগুলো বলছে, বিষয়টি চরম অবমাননাকর মনে করছে নয়া দিলি্ল। সরকারি সূত্র জানিয়েছে, 'কূটনীতিকের সঙ্গে এ ধরনের আচরণ অগ্রহণযোগ্য বলে স্পষ্ট বার্তা দেওয়া হবে মার্কিন প্রশাসনকে'। দেবযানীর বাবা সাবেক সরকারি কর্মকর্তা উত্তম খোবরাগাড়ে জানান, বিষয়টি জানাতে তিনি পররাষ্ট্রমন্ত্রী সালমান খুরশিদের সঙ্গে দেখা করবেন।
উত্তম খোবরাগাড়ে সংবাদমাধ্যমকে জানান, 'আমার মেয়ে নির্ভীক, কিন্তু আমি শঙ্কিত। এ ঘটনা চোখের সহনশীলতাকেও হার মানিয়েছে।'
সূত্র জানিয়েছে, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের শীর্ষস্থানীয় কর্মকর্তারা সালমান খুরশিদকেও মার্কিন প্রতিনিধি দলের সঙ্গে বৈঠক বাতিল করার আহ্বান জানিয়েছেন। তবে এ ব্যাপারে যুক্তরাষ্ট্রের প্রতি স্পষ্ট প্রতিক্রিয়া জানাতে তাদের সঙ্গে বৈঠক করার বিষয়টি বিবেচনা করছেন খুরশিদ।
বৃহস্পতিবার নিউইয়র্কে নিজের মেয়েকে স্কুলে পেঁৗছে দিয়ে ফেরার পথে কূটনীতিক দেবযানীকে বিবস্ত্র করে তার দেহ তল্লাশি করা হয় এবং প্রকাশ্যেই তাকে হাতকড়া পরিয়ে হাজতে নেওয়া হয়। ওই ঘটনার এক দিন পর পররাষ্ট্র সচিব সুজাতা সিং নয়া দিলি্লতে নিযুক্ত মার্কিন রাষ্ট্রদূত ন্যান্সি পাওয়েলকে তলব করেন এবং এ ঘটনাকে 'অগ্রহণযোগ্য আচরণ' আখ্যা দিয়ে এর জোরালো প্রতিবাদ জানান। ভারতীয় সংবাদমাধ্যমের পক্ষ থেকে করা প্রশ্নের জবাবে মার্কিন পররাষ্ট্র দফতরের মুখপাত্র নোয়েল ক্লের পক্ষ থেকে বলা হয়, দেবযানীকে আটকের সময় সর্বোচ্চ আইনি প্রক্রিয়া অনুসরণ করা হয়েছে। এ ছাড়া, আরও কোনো তথ্য জানার থাকলে প্রশাসনিক বাহিনী মার্শালসের সঙ্গে যোগাযোগ করতে বলা হয়। তবে এখন পর্যন্ত এ ব্যাপারে কোনো মন্তব্য করেনি মার্শালস কর্তৃপক্ষ। মার্কিন পররাষ্ট্র দফতরের কর্মকর্তা ক্লে দাবি করেন, ভিয়েনা কনভেনশনের আওতায় কূটনৈতিক সম্পর্কের নিয়ম অনুযায়ী ভারতের ডেপুটি কনসাল জেনারেল সব রকমের নিরাপত্তা ও সুযোগ-সুবিধা পেয়েছেন। তবে, এ আচরণের মাধ্যমে ভিয়েনা কনভেনশনের ৪১ অনুচ্ছেদ লঙ্ঘন করা হয়েছে বলে দাবি করেছে ভারত। ওই অনুচ্ছেদে বলা আছে, কোনো কূটনীতিক যদি 'মারাত্দক অপরাধ' করে থাকেন, তবেই কেবল তাকে গ্রেফতার করা যেতে পারে।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।