অর্থনৈতিক উন্নয়নে মধ্যম উচ্চাকাঙ্ক্ষা নিয়েই এগোবে সরকার। আগামী পাঁচ বছর অর্থনীতি কোন পথে চলবে তার একটি রূপরেখা তৈরি হচ্ছে। সেখানে টেকসই প্রবৃদ্ধি অর্জন, বিনিয়োগ বৃদ্ধি, কর্মসংস্থান বাড়ানো, দারিদ্র্য বিমোচন, যোগাযোগ অবকাঠামো এবং বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতের উন্নয়নসহ শিক্ষা, স্বাস্থ্যে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দেওয়া হবে। পরিকল্পনা কমিশনের সাধারণ অর্থনীতি বিভাগের সদস্য প্রফেসর শামসুল আলম বাংলাদেশ প্রতিদিনকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে সরকারের এসব অগ্রাধিকারের কথা জানান।
শামসুল আলম বলেন, মহাজোট সরকারের নেওয়া ষষ্ঠ পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনা হয়েছিল মধ্যম উচ্চাকাঙ্ক্ষা নিয়ে। সেখানে আমরা যা প্রক্ষেপণ করেছিলাম তার পুরোটা অর্জিত হয়নি। কয়েকটি সূচকে পিছিয়ে আছি। সেই অভিজ্ঞতা নিয়ে পরবর্তী পঞ্চবার্ষিকী প্রণয়ন ও বাস্তবায়নে গুরুত্ব দেব। অর্থনীতিতে পাঁচ বছরের প্রেক্ষিত নির্ধারণে আওয়ামী লীগের নির্বাচনী ইশতেহারে ঘোষিত বিষয়গুলোই প্রাধান্য পাবে বলেও জানান তিনি। এবারের ইশতেহারে বলা হয়েছে, কর্মসংস্থান সৃষ্টি ও শিল্প-সভ্যতার ভিত্তি রচনার জন্য দেশি-বিদেশি এবং প্রবাসী বিনিয়োগকারীদের বিনিয়োগে আকৃষ্ট করাকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দেওয়া হবে। এ জন্য ভৌত অবকাঠামো উন্নয়ন ছাড়াও বিনিয়োগবান্ধব রাজনৈতিক ও সামাজিক পরিবেশ সৃষ্টি, অভ্যন্তরীণ বাজার সম্প্রসারণ, রপ্তানি পণ্য বহুমুখীকরণ, বিনিয়োগকারীদের রাজস্ব ও আর্থিক প্রণোদনা দেওয়া, তৈরি পোশাক ও বস্ত্র খাতকে আরও শক্তিশালী করা হবে। ২০১৬ সাল নাগাদ বিদ্যুৎ উৎপাদন ১৬ হাজার মেগাওয়াটে উন্নীত করার পাশাপাশি ২০২১ সাল নাগাদ এটি ২৪ হাজার মেগাওয়াটে উন্নীত করার কথা বলা হয়েছে। ২০২১ সালের মধ্যে স্বল্পোন্নত দেশ থেকে মধ্যমেয়াদি দেশে উন্নীত করার ঘোষণাও দেওয়া হয়েছে নির্বাচনী ইশতেহারে।
পরিকল্পনা কমিশনের এই সদস্য বলেন, সরকারের সামনে বড় চ্যালেঞ্জ হচ্ছে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্থিতিশীল করা। কারণ বিনিয়োগ বাড়াতে হলে এর কোনো বিকল্প নেই। স্থিতিশীল পরিবেশ নিশ্চিত করা গেলে বিনিয়োগ এমনিতেই বাড়বে।
এ ছাড়া বিদ্যুৎ ও জ্বালানিসহ যোগাযোগ অবকাঠামো উন্নয়নেও চ্যালেঞ্জ রয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, আমাদের ভূমির স্বল্পতা রয়েছে। বিদেশি বিনিয়োগকারীদের জমি দিতে পারছি না। রয়েছে যোগাযোগ সমস্যা, বিদ্যুৎ ও গ্যাস সংকট। গত পাঁচ বছরে বিদ্যুৎ উৎপাদন বেড়েছে। তবে চাহিদার তুলনায় তা অপ্রতুল। কাঙ্ক্ষিত প্রবৃদ্ধির জন্য আরও বেশি বিদ্যুৎ ও জ্বালানি দরকার। প্রবৃদ্ধি অর্জনে সহায়ক এমন প্রকল্পই সরকারের পরবর্তী বাজেটগুলোর বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচিতে অগ্রাধিকার পাবে বলেও জানান শামসুল আলম। তিনি বলেন, বড় ধরনের বেশ কিছু প্রকল্প চলমান রয়েছে। সেগুলো দ্রুত বাস্তবায়নে গুরুত্ব দেওয়া হবে। আর উন্নয়ন প্রকল্পে সর্বোচ্চ গুরুত্ব থাকবে পদ্মা সেতু নির্মাণে। নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মা সেতু নির্মাণের সিদ্ধান্তে সরকার এখনো বহাল আছে এমন তথ্য জানিয়ে তিনি বলেন, পদ্মা সেতু প্রকল্প বাস্তবায়নে অর্থ সমস্যা নয়। দরকার কারিগরি সহায়তা। কারণ এ ধরনের বড় ব্রিজ নির্মাণে আমাদের পূর্ব অভিজ্ঞতা নেই। সে ক্ষেত্রে বিদেশিদের সাহায্য লাগবে। বিষয়টি নিয়ে চীনের সঙ্গে আলোচনা চলছেও বলে জানান তিনি। যোগাযোগ অবকাঠামো উন্নয়নে পদ্মা সেতু ছাড়াও সোনাদিয়া গভীর সমুদ্র বন্দর, রাজধানী ঢাকার সঙ্গে বৃহত্তম জেলাগুলোর চার লেন সংযোগ সড়ক এবং মেট্রোরেল প্রকল্প অগ্রাধিকার পাচ্ছে। এ ছাড়া বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতের উন্নয়নে রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র, কয়লাভিত্তিক তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র এবং তরল প্রাকৃতিক গ্যাস টার্মিনাল নির্মাণ প্রকল্পে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে। অর্থনৈতিক উন্নয়নের পাশাপাশি মানব উন্নয়ন সূচকে আরও ভালো করতে সরকার শিক্ষা ও স্বাস্থ্যখাতেও গুরুত্ব দিচ্ছে বলে জানান তিনি।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।