দেবযানী খোবড়াগারে নামে একজন ভারতীয় কূটনীতিককে আটক করা হয়েছে আমেরিকাতে। তার বিরুদ্ধে অভিযোগ সঙ্গীতা রিচার্ড নামে এক ভারতীয় পরিচারিকাকে আমেরিকা নিয়ে গেছেন অবৈধ ভিসাতে। তো আমেরিকা যেটা করেছে তা হলো দাগী সন্ত্রাসীদের মত মিডিয়ার সামনে হাতকড়া পরিয়ে নিয়ে গেছে দেবযানীকে এবং মাদকাসক্তদের সাথে একই জেলে রেখেছে। প্রমান পাওয়া না গেলেও একটা অভিযোগ আছে, তা হলো দেবযানীকে তল্লাশী করার সময় অন্য অপরাধীদের মতই বিবস্ত্র করে তল্লাশী চালিয়েছে পুলিশ। তার প্রেক্ষিতে ভারত সরকারের নেওয়া পদক্ষেপ গুলোর একটু ফিরিস্তি দেই।
১) দিল্লির ন্যায়বার্গে মার্কিন দূতাবাসের সামনে থেকে যাবতীয় ব্যারিকেড তুলে নিয়েছে পুলিশ।
২) কনস্যুলেটদের এয়ারপোর্ট পাশ ও ইমপোর্ট ক্লিয়ারেন্স তুলে নেওয়া হয়েছে।
৩) ভারতে নিযুক্ত সব মার্কিন কূটনীতিককে তাদের এবং তাদের পরিবারের সকলের পরিচয়পত্র অতি শীঘ্র জমা দিতে বলা হয়েছে। সব কনস্যুলেটর, তাদের পরিবার এবং তাদের পরিচারকদের বেতন কাঠামো চাওয়া হয়েছে।
৪) ভারতে অবস্থিত মার্কিন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোর শিক্ষকদের ভিসা এবং বেতন কাঠামোও চেয়েছে ভারতীয় সরকার।
৫) মাত্র এক দিনের ব্যবধানে কনস্যুলেট থেকে সরিয়ে দেবযানীকে রাষ্ট্রপুঞ্জে ভারতীয় স্থায়ী প্রতিনিধি দলের সদস্য হিসেবে নিয়োগ দিয়েছে নয়াদিল্লি, যাতে দেবযানী সব কূটনৈতিক রক্ষাকবচ পায়।
৬) মার্কিন কংগ্রেসের সাথে পূর্ব নির্ধারিত শিডিউল ক্যানসেল করে তাদের সাথে দেখা করেনি রাহুল গান্ধী, সরাষ্ট্রমন্ত্রী সুশীল শিন্ডে, এবং গুজরাটের মূখ্যমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। বিদেশমন্ত্রী সলমন খুরশিদ পার্লামেন্টে হুশিয়ারী দিয়ে বলেছেন, আমেরিকা যা করেছে তার জন্যে যা যা করা প্রয়োজন তার সবই করা হবে। দেবযানীকে স্বসম্মানে দেশে ফিরাতে না পারলে আমি আর সংসদেই ঢুকবো না।
৭) মার্কিন দূতাবাসের সামনে শিবসেনা বিক্ষোভ করেছে।
এবং সেখানে পুলিশি বাধার সম্মুখীন হতে হয়নি।
এরপর ওবামা প্রসাশন আবেদন জানিয়ে বলেছে, ভারতে নিযুক্ত মার্কিন কূটনীতিকদের নিরাপত্তা সুনিশ্চিত করুক ভারত সরকার। কালবিলম্ব না করে বিদেশ মন্ত্রকের মুখপাত্র ওবামা প্রসাশনকে জানিয়ে দিয়েছেন, মার্কিন প্রসাশন ভিয়েনা কনভেনশনের নীতি মানলেই ভারত সেই নীতি মানতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ, নতুবা নয়।
ভারত নিয়ে মাথাব্যথা নেই একটুও। এত ফিরিস্তি টানলাম অন্য একটা কারণে।
পাশের দেশ ভারত ছোট্ট একটা ইস্যুতে আমেরিকাকে রক্তচক্ষু দেখিয়ে ছাড়ছে। রিপিট অ্যাগেইন, আমেরিকার মত পরাশক্তিকে একবিন্দু পুচে কথা বলছে না। আর পাকিস্তানের পার্লামেন্টে বাংলাদেশের আভ্যন্তরীন বিষয় নিয়ে এত বড় কান্ড করার পরেও ধরতে গেলে বাংলাদেশ সরকার মুখ বুঝে আছে। আস্তে করে পাকিস্তানের হাই কমিশনারকে তলব করে একটু বকে দেওয়া হয়েছে। হুমকি-ধামকি বাদ দিলাম, কয়েক দিন চলে গেলেও পাকিস্তানের সাথে কূটনৈতিক সম্পর্ক নিয়ে এক বিন্দু মন্তব্য করেনি সরকার।
উল্টো গতকাল পাকিস্তান দূতাবাসের সামনে শান্তিপূর্ণ বিক্ষোভ আর ঘেরাও কর্মসূচিতে পুলিশ মা ফেরদৌসী প্রিয়ভাষিণী সহ মুক্তিযোদ্ধার গায়ে হাত তুলেছে! একই সময়ে পাশের দেশ যখন সামান্য ইস্যুতে আমেরিকার কূটনীতিকদের হেনস্থা করে ছাড়ে, ব্যারিকেড উঠিয়ে উগ্রপন্থী শিবসেনাদের বিক্ষোভের মঞ্চ পর্যন্ত তৈরি করে দিচ্ছে আর তখন আমরা চুনোপুটি পাকিস্তানের সাথে সামান্য কূটনেতিক সম্পর্ক ছিন্ন করার জন্যে শান্তিপূর্ণ আন্দোলনে পুলিশের মার খাচ্ছি। আপনি বলবেন, এসব আন্তর্জাতিক বিষয় সরকারকে আমলে নিতে হয়। বাই দ্যা ওয়ে, যুদ্ধাপরাধীদের বিচার আমাদের আভ্যন্তরীণ বিষয়। তাহলে সেখানে অন্য দেশের নাক গলানো কেন? অ্যা?
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।