সেনাবাহিনী প্রধান মইন উ আহমেদ তার রাষ্ট্রপতি হওয়ার গুঞ্জন নাকচ করে দিয়ে বলেছেন, সেনাবাহিনীর মতায় যাওয়ার অভিপ্রায় নেই। সেনাপ্রধান মঙ্গলবার লন্ডনস্থ বাংলাদেশ হাইকমিশনে আয়োজিত জনাকীর্ণ সংবাদ সম্মেলনে দেশের সার্বিক পরিস্থিতি নিয়ে খোলামেলা বক্তব্য রাখেন। সংবাদ সম্মেলনে বাংলা সংবাদ মাধ্যমের প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন। মইন উ আহমেদ উপদেষ্টা সংখ্যা বাড়ানো কিংবা পরামর্শক নিয়োগের সম্ভাবনার ইঙ্গিত দিয়ে বলেন, এ ব্যাপারে সাংবিধানিক বিষয় খতিয়ে দেখা হচ্ছে।
আমেরিকার হাওয়ার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে বক্তব্য রাখার জন্য বাংলাদেশ সেনাবাহিনী প্রধানকে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে।
জেনারেল মইন উ আহমেদ দেশের বর্তমান পরিস্থিতি তুলে ধরে সেখানে বক্তব্য দেয়ার জন্য যাওয়ার পথে লন্ডনে দুদিন যাত্রাবিরতি করেন। সেনাবাহিনী প্রধান বলেন, তত্ত্বাবধায়ক সরকারকে সহযোগিতা করার জন্য আমরা এসেছি। সরকার যখন চাইবে আমরা তখনই ব্যারাকে ফিরে যাব।
সেনাপ্রধান বলেন, দেশে এক ভয়াবহ পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছিল, নির্বাচনকে কেন্দ্র করে দেশ গৃহযুদ্ধের দিকে ধাবিত হচ্ছিল। আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি চরম আকার ধারণ করেছিল।
তিনি বলেন, আমরা সে পরিস্থিতি কাটিয়ে উঠতে সম হয়েছি। বর্তমানে দেশের আইন-শৃঙ্খলা আগের যে কোন সময়ের তুলনায় অনেক ভালো। তিনি উদাহরণ দিয়ে বলেন, ঈদের আগের দিন 'চাঁদরাতে' মধ্যরাত ঢাকার পথে বের হওয়া কত ঝুঁকিপূর্ণ ছিল মানুষ ভয়ে বের হতে পারতেন না। এবারের চিত্র ছিল সম্পূর্ণ ভিন্ন। মানুষ নির্বিঘেœ মধ্যরাতে রাস্তায় ঘোরাফেরা করতে পেরেছেন।
দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি সম্পর্কে তিনি বলেন, দুর্নীতিবাজ মজুদদার কালোবাজারিদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ায় অর্থনীতিতে কিছুটা বিরূপ প্রতিক্রিয়া ল্ক্ষ্য করা যাচ্ছে। তবে বিগত রমজান মাসগুলোর তুলনায় এ বছর রমজানে দ্রব্যমূল্য অনেক কম ছিল। সেনাপ্রধান বলেন, ওয়ান-ইলেভেনের আগের বিষয়ে সবার মাথায় তিনটি বিকল্প কাজ করত। এর মধ্যে এক, কিছু না করা অর্থাৎ ২২ জানুয়ারি নির্বাচন হলে একতরফা নির্বাচন হতো, জোট অংশীদাররা জয়ী হতো। তাতে দেশ একটি সংঘাতের দিকে এগিয়ে যেত।
দেশ একটা অকার্যকর রাষ্ট্রে পরিণত হতো। দ্বিতীয় অপশন, মার্শাল ল' জারি করা। এ বিষয়ে অনেক বিদেশী কূটনীতিক তাকে জিজ্ঞেস করতেন কবে মার্শাল ল' জারি হবে। তৃতীয় অপশন ছিল, দেশে জরুরি অবস্থা জারি করে নতুন তত্ত্বাবধায়ক সরকার গঠন এবং নির্বাচনের সুষ্ঠু পরিবেশ সৃষ্টি। সেনাবাহিনী তৃতীয় সিদ্ধাš-ই নিয়েছিল।
তিনি সেনাবাহিনীর ভূমিকা নিয়ে বলেন, মার্শাল ল' জারি করলে দেশের মানুষ তাতে স্বাগত জানাত এবং সেটা করা খুবই সহজ ছিল। কিš' তারা সিদ্ধাš- নিলেন দেশে সাংবিধানিক ধারা বজায় রাখতে হবে। পাশাপাশি দেশকে সুষ্ঠু গণতান্ত্রিক ধারায় এগিয়ে নিতে হবে এবং এই এগিয়ে নেয়ার প্রক্রিয়াতেই সামরিক বাহিনী জড়িত হয় ও নতুন তত্ত্বাবধায়ক সরকারকে পুরোপুরি সমর্থন দেয়। মইন উ আহমেদ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাফল্যের দৃষ্টাš- তুলে ধরেন। তিনি বলেন, চট্টগ্রাম বন্দরের জাহাজ থেকে মালামাল খালাসে এখন ১৩ দিনের স্থলে ৩ দিন সময় লাগে।
বিদ্যুৎ খাতে সরকারের সাফল্য, স্বাধীন নির্বাচন কমিশন, দুর্নীতি দমন কমিশনকে স্বাধীন রূপে প্রতিষ্ঠা, ইতিমধ্যে ২৮ জন দুর্নীতিবাজের বিচার ও সাজা এবং ৭৭ জনকে গ্রেফতারের কথা উলেখ করেন তিনি। তিনি বলেন, নতুন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের মতা গ্রহণের পর হাতে সময় থাকে তিন মাস। যদিও এতে সাংবিধানিক বাধ্যবাধকতা নেই। তবুও ধরে নেয়া হয় তিন মাসের মধ্যে নির্বাচন করে নতুন সরকারের হাতে ক্ষমতা হস্তান্তর করে চলে যাবেন। কিš' বর্তমান তত্ত্বাবধায়ক সরকার মতায় থাকবে দু'বছর।
কাজেই একজন প্রধান উপদেষ্টা এবং ১০ জন উপদেষ্টার পে দু’বছর দেশ চালানো কঠিন। বিশেষ করে কঠিন ও জটিল সিদ্ধাš- নিয়ে দেশ চালানো কঠিন হয়ে পড়বে। তাই তারা ভাবছেন উপদেষ্টা পরিষদ বাড়ানোর কোন সাংবিধানিক উপায় আছে কিনা। যদি উপদেষ্টা নিয়োগ না করা যায় তবে পরামর্শক নিয়োগ করা যায় কিনা তা নিয়েও তারা ভাবছেন।
প্রেসিডেন্ট ইয়াজউদ্দিন আহম্মেদের মেয়াদ ৫ সেপ্টেম্বর শেষ হলে জেনারেল মইন উ আহমেদ রাষ্ট্রপতি হবেনÑ এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, একথা আমি এই প্রথম শুনছি।
সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, এতো ঘটনার জš§ দেয়ার দরকার ছিল না। মার্শাল ল' তো সেদিনই দিতে পারতাম। গত ৯ মাসে অনেক ঘটনা ঘটে গেছে। আমার কাছে যুক্তরাজ্য, যুক্তরাষ্ট্র থেকে লোক আসছে। তারাও ৫ সেপ্টেম্বরের পর কি হতে যাচ্ছে জানতে চেয়েছেন।
শেখ হাসিনা জেলে থাকলে আওয়ামী লীগ যদি নির্বাচনে না যায় সেক্ষেত্রে কী হবেÑ এই প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ২০০৭ সালের ২২ জানুয়ারি নির্বাচন হওয়ার কথা ছিল। কিš' তার কয়েক দিন আগে আওয়ামী লীগ নির্বাচনে যাবে না বলেছিল। ২০০৮ সালের নির্বাচন ডিসেম্বরে, তাই আওয়ামী লীগের অনেক ভাবার সময় আছে বলে মন্তব্য করেন। সাংবাদিক নির্যাতনের ব্যাপারে তিনি অস্বীকার না করে বলেন, আমরা ভালো কাজ করছি। তাই আমাদের সব কাজই একশ' ভাগ ভালো হবে তা তো নয়।
এটা তো মানুষেরই ধর্ম। না হয় তো আমরা ফেরেশতা হয়ে যেতাম। আমরা আমাদের ভুল ধরার চেষ্টা করছি পাশাপাশি সংশোধনেরও। সাংবাদিকরা আমাদেরই অংশ। দু'একটি ঘটনা যে ঘটছে না, তাতো নয়।
কিš' তাদের হত্যা, নির্যাতন, পেটানো ও হয়রানি করা হয় না। দেশে নিরপরাধ ব্যক্তিদের ওপর হয়রানিমূলক আচরণ করা হচ্ছে এমন প্রশ্নের জবাবে মইন উ আহমেদ বলেন, এমনটি করা হচ্ছে না। যাদের বিরুদ্ধে সুনির্দিষ্ট অভিযোগ পাওয়া যাচ্ছে কেবল তাদেরকেই আটক করা হচ্ছে। এখন পর্যš- বিনা কারণে কোন সাংবাদিককে হয়রানি করা হয়েছে বলে তার জানা নেই।
প্রবাসীদের ভোটাধিকার প্রদান প্রসঙ্গে তিনি বলেন, সব প্রবাসীই পর্যায়ক্রমে ভোটার তালিকাভুক্ত হবেন।
যুক্তরাজ্য প্রবাসীদের দিয়েই এ কাজটি শুরু করা হবে বলে তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন।
সিলেট ইন্টারন্যাশনাল বিমানবন্দরে যাতে বিশ্বের অন্যান্য দেশ থেকে ফাইট আসা-যাওয়া করতে পারে সে জন্য আমরা রানওয়ে সম্প্রসারণের কাজ শুরু করেছি। অচিরেই বোয়িংসহ অন্যান্য বড় বড় বিমান এ রানওয়ে ওঠানামা করতে পারবে, তাতে প্রবাসীদের দেশ ভ্রমণে অনেক ঝামেলা কমে যাবে।
প্রবাসী সুরত মিয়া হত্যাকাণ্ডের বিচার কেন এখন পর্যন্ত সম্পন্ন হয়নি তা জানতে চাইলে সেনাবাহিনী প্রধান এ ধরনের ঘটনার জন্য দুঃখ প্রকাশ করে বিষয়টি তিনি ব্যক্তিগতভাবে মনিটরিং করে সুষ্ঠু ব্যবস্থা নেয়ার কথা বলেন।
সংবাদ সম্মেলনে অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন হাইকমিশনার সফি ইউ আহমদ, ডেপুটি হাইকমিশনার আশরাফ উদ্দিন, ব্রিগেডিয়ার জেনারেল বেলাল উদ্দিন মাহমুদ, ব্রিগেডিয়ার এনামুর রহমান চৌধুরী প্রমুখ।
এর আগে যুক্তরাজ্য প্রবাসী মুক্তিযোদ্ধাদের সঙ্গে সেনাবাহিনী প্রধান এক সৌজন্য সাাতে মিলিত হন। আজ তিনি যুক্তরাষ্ট্রের উদ্দেশে লন্ডন ত্যাগ করবেন।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।