আমি একজন পর্যটন কর্মী। বেড়াতে, বেড়ানোর উৎসাহ দিতে এবং বেড়ানোর আয়োজন করতে ভালোবাসি।
১৯৯৯ সালের গোড়ার দিকে-সদ্য ক্যাম্পাসে ঢুকেছি। সব কিছু চিনে উঠতে সময় নিচ্ছিলাম। এর মধ্যে একদিন মধুর ক্যান্টিনের পূর্ব পাশে একটা মেয়ের সাথে দেখা।
সাথে আরো তিন চারজন। নীল রঙের জারের ওপর বসে আমরা আড্ডা মারতাম। পাশেই ওরা। পরে জানলাম ওই গ্রুপ ইকনমিক্স ডিপার্টমেন্টের।
ওদের গ্রুপের মায়াবী চেহারার যে মেয়েটা- তার দিকে কিছুটা কৌতুহল এবং জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে তাকালাম।
খুব চেনা মনে হচ্ছে- কিন্তু মনে করতে পারছিলাম না । সেখানে একদিন দুদিন এবং বহুৃদিন পরে তার সাথে কথা হলো- তিনি শীলা আহমেদ। হুমায়ূন আহমেদের মেয়ে। আমরা একই ইয়ারে ছিলাম। আমাদের সময় ক্যাম্পাসে বেশ কয়েকজন স্টার পড়তো তার মধ্যে তনিমা হামিদ, শীলা আহমেদ এবং পরে হৃদি হক অন্যতম।
বাকি আরো কিছু কয়েকজন। এর মধ্যে পরে ডিজুসের কম্পিটিশনে সেরা গাইয়ে হয়েছিল শুভ। আইইআরের ছেলে।
শীলার অভিনয় পছন্দ করতাম। তার সাথে দেখা হবার পর ভালো লাগলো।
তার কাছে জানতে চেয়েছিলাম- অভিনয় করো না কেন? সে এর জবাব এড়িয়ে যায়। আমি হুমায়ূন আহমেদের ভক্ত। সেই সুবাধে হুমায়ূন পরিবারের খবরাখবর পড়তাম আগে এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের সেকেন্ড ইয়ারের সময় থেকে প্রিয়মুখের প্রথমে রিপোর্টার ও পরে চিফ রিপোর্টার হিসাবে এ সব খবর কভার করার দায়িত্বে ছিলাম।
আমার সেই টিমে জিওগ্রাফির সাজিয়া, পাবলিক অ্রাডের মারুফ এবং পল সায়েন্সের ফারুকসহ আরো ক'জন ছিলো। তারা সবাই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে।
আমি সব সময় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের সাথে কাজ করতে পছন্দ করতাম এবং এখনো করি। তারা আমাকে গালি দিলেও। এমনকি হেনস্তা করলেও করি। এবং সামনেও করবো।
শীলার প্রসঙ্গে আসি।
২০০১ সালের দিকে আমি মানবজমিনে ঢুকলাম। বিশ্ববিদ্যালয় রিপোর্টার হিসাবে। সে সুবাধে তারকাদের খবরাখবরও রাখতাম। অথবা মানবজমিনের মত গ্ল্যামার কাগজের কারণে সেটি রাখতে হতো।
শীলার চেয়ে আমার বেশিবার কথা হয়েছে তনিমার সাথে।
তনিমাদের ইস্কাটনের বাসায়ও আমি গেছি। ২০০৩ সালের দিকে গুজব ছড়িয়ে পড়ে আসিফ নজরুল শীলাকে বিয়ে করেছেন। কোনো একটা খবরের কাগজে খবর বের হয়- হুমায়ূন আহমেদ এ খবর শুনে হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে চিকিৎসা নিচ্ছেন।
ক্যাম্পাসের সে সময়কার একজন রিপোর্টার হিসাবে অধ্যাপক নজরুল ইসলাম মানে আসিফ নজরুলের কাছে বিষয়টা সম্পর্কে জানতে চাই। আাসিফ ভাই আমাকে বিস্তারিত বলেছেন।
তার সবই এখানে উল্লেখ করার মত নয়। তবে তিনি আমাকে এ টুকু নিশ্চিত করেছিলেন - শীলাকে বিয়ে তিনি করেন নি।
তবে করবেন না- এমনটাও বলেননি। আসিফ ভাইয়ের সাথে সে সময় আমার বেশ ভালো সম্পর্ক ছিল। তার মত আরো অনেকের সাতে আমার ভালো সম্পর্ক- তার মধ্যে হুমায়ূন আজাদ স্যার, মুহাম্মদ সামাদ স্যার, অধ্যাপক শরিফউল্লাহ ভূইয়া স্যার, আখতার স্যার, অজয় স্যার, আহাদুজ্জামান মোহাম্মদ আলী স্যার, গীতি ম্যাডাম, টপি ম্যাডামসহ আরো অনেকে।
তারা অনেকেই এখন আমাকে মনে করতে পারবেন বলে মনে হয় না।
এ সম্পর্ক দুই কারণে- প্রথমত সে সময় ক্যাম্পাসে রিপোর্টারদের মধ্যে আমার একটা ভালো অবস্থান ছিল। সবার স্নেহ এবং ভালোবাস-শ্রদ্ধায় সিক্ত ছিলাম। দ্বিতীয়ত- আমি মানবজমিনের রিপোর্টার। এ পত্রিকার সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী প্রভাবশালী বলয়ের সত্যাশ্রয়ী লোক।
আসিফ ভাই উপন্যাস লিখেততেন। তার একটি কপি তিনি আমাকে দিয়েছিলেন। সে সময় তিনি শহীদ মিনার এলাকায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কোয়র্টারে থাকতেন। নিচতলায় অন্ধকার ঘর। তবে তার গবেষনার মত উপন্যাস পাঠক হিসাবে আমাকে টানেনি।
আমার দেখা শীলা মেয়েটা আমুদে এবং আনন্দ ময় জীবনে অভ্যস্ত। নিজের বিচিত্র সব ইচ্ছেকে সে সব সময় লালন করতো। এটা আমি তার ঘনিষ্ঠজনদের মারফত জেনেছিলাম। হুমায়ুন আহমেদের নায়িকাদের মধ্যে অনেকর যে সরল আলাপ ছিল তা শীলার ভেতরে কিছু ছিল! শীলার বাবা মায়ের ছাড়াছাড়ির পর শীলা অনেকটা চুপসে যায়। অনেক দিন তাকে হাস্যোজ্জ্বল আড্ডায় কলাভভনের দোতলার করিডোরে কিম্বা টিএসসি বা লাইব্রেরি চত্বরে দেখা মেলেনি।
পরে কিছুটা স্বস্তি নিয়ে পড়া শোনা অব্যাহত রাখে শীলা।
শীলা ও আসিফ নজরুল এখন আলোচিত-ফের। বিষয় তাদের বিয়ে্। এতে আমি মোটেও অবাক হইনি। এ রকম একটা বিয়ে নিযে অনেক আলোচনা হচ্ছে।
অনেকে শাওনের সাথে হুমায়ুন আহমেদের বিয়ের প্রসঙ্গ তুলছেন। তুলতেই পারেন।
কারো মন্তব্যে চাচার সাথে বিয়ে। কারো আরেকটু বেশি। আমাদের অনেকেরই জানা যে, বাংলাদেশে অসম বিয়ে কোনো ব্যাপারই নয়্।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রী বিয়ের ঘটনাও নতুন নয়। আর শিক্ষকেদের একাধিক বিয়ে একটা মামুলি ব্যাপার। বিশ্ববিদ্যালযরে কলাভবনে একটি ডিপার্টমেন্ট আছে যার প্রায় সব শিক্ষকাই দুই তিনবার বিয়ে বন্ধনে আবদ্ধ হয়েছেন। এটা দোষের বলে আমি কখনো মনে করিনি।
বিশ্ববিদ্যালয়ের বর্তমানের একজন শীর্ষ কর্তাও ছাত্রী বিয়ে করেছেন।
২০০৩ সালের দিকে বাংলামোটরে এক কমিউনিটি সেন্টারে তিনি বউসহ এসেছিলেন। সে সময় আমাদের মত নবীন ও অপিরপক্কস অনেকের প্রশ্ন ছিল- তার সাতে থাকা তরুণীটি তার কন্যা কি-না। সে যাই হোক।
বউয়ের বয়স কম বেশি বা স্বামীর বয়স নিযে যার যার চিন্তা। কিন্তু বিশ্ববিদ্যালযের এক শিক্ষক বলেছেন- যেহেতু আসিফ ও শীলা সেলিব্রেটি ।
তাদের নিয়ে ভাবনা আমাদেরও। আসলে তাই।
শীলা আহমেদ এখন আর সেলিব্রেটি নন। শীলার বয়সও কম নয়। ৩৪ বা তার কিছু বেশি।
আসিফ নজরুলের বয়স ৪৭ বা ৪৮ বলে শুনলাম। তাহলে এখানে খুব একটা বষয বৈষম্য দেখিনা। মানে অসম বলতে যা বোঝায় তা কিন্তু নয় বলে মনে হয় না।
আমাদের অনেক 'প্রগতিশীল' বন্ধুও বাল্য বিবাহ করেছেন। তার বয়স ৩৫ ।
তার স্ত্রীর বয়স ১৮। এটা তো আসিফ ভাইয়ের চেয়ে বেশি,অসম। সে সব বিতর্ক বৃথা। সংসার সুখটাই এখানে আসল।
আসিফ নজরুলের সাথে ঘুরে ঘুরে আমার দেখা হয়।
তাকে সমীহ করি। তার প্রতি একটা শ্রদ্ধা আমার আছে। কিন্তু তার ব্যাক্তিজীবন নিয়ে আমার বিস্তর আগ্রহ নেই। আমার কিস্তি চলমান অবস্থায় এ ঘটনা ঘটলো বলে লিখলাম তা কিন্তু নয়। আমি এ স্মৃতি চারণ এমনিতেই করতাম।
কারণ এটা আমার ক্যাম্পাস সাংবাদিকতার জীবনে একটা ঘটনা। সেটি আলোচনার মতই।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।