নাশকতাকারী ও অপরাধী গ্রেফতারে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর চলমান যৌথ অভিযান আরও জোরালো হচ্ছে। বাড়ছে অভিযানের পরিধিও। এ অভিযান জামায়াত-শিবিরের সহিংসপ্রবণ ১৯ জেলায় আর সীমাবদ্ধ থাকছে না। দেশের প্রতিটি জেলায় পর্যায়ক্রমে যৌথবাহিনীর এ অভিযান চালানোর পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। চলতি সপ্তাহের মধ্যে দেশব্যাপী যৌথবাহিনী এ অভিযান চালাবে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে। সূত্র জানায়, অপরাধী ও নাশকতাকারী ছাড়াও অভিযানে গ্রেফতারের টার্গেটে রয়েছে তাদের ইন্ধনদাতারাও। তালিকায় জামায়াত-শিবির ছাড়াও রয়েছে বিএনপির নেতা-কর্মীরা।
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একটি সূত্র জানায়, প্রথম পর্যায়ে ৩ সহস াধিক নাশকতাকারীর তালিকা স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় হয়ে সহিংসপ্রবণ জেলার পুলিশ সুপারদের কাছে সরবরাহ করা হয়। কয়েক মাস ধরে চলা ভাঙচুর-অগি্নসংযোগ, বোমাবাজিসহ বিভিন্ন ধরনের নাশকতামূলক কর্মকাণ্ডে যারা সরাসরি যুক্ত ছিল তাদের নামই এসেছে তালিকায়। তাদের অধিকাংশের বিরুদ্ধে ১০ থেকে ১৫টি করে মামলা রয়েছে। গ্রেফতারের পর তাদের এসব মামলায় গ্রেফতার দেখাবে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। ইতোমধ্যে ওইসব জেলায় যারা নাশকতায় নেতৃত্ব দিচ্ছে তাদের ওপরও গোপন নজরদারি চলছে। জানা গেছে, দেশে চলমান সহিংসতা প্রতিরোধে যৌথবাহিনীর অভিযান চালানোর পরিকল্পনা নেয় সরকার। গত সপ্তাহে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে আইনশৃঙ্খলা সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটির বৈঠকে যৌথবাহিনীর অভিযানের বিষয়ে সিদ্ধান্ত হয়। অভিযান শুরু হয় লক্ষ্মীপুর, দিনাজপুর, বগুড়া, গাইবান্ধা, নোয়াখালী, ফেনী, সাতক্ষীরা, চট্টগ্রাম, নাটোরসহ ১৯ জেলায়। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একজন কর্মকর্তা জানান, প্রাথমিক পর্যায়ে পুলিশ, বিজিবি, র্যাব ও আনসার বাহিনীর সদস্যদের দিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা চলছে। নিয়ন্ত্রণ করা না গেলে চলতি মাসের শেষ সপ্তাহে দ্বিতীয় ধাপের অভিযান শুরু হবে। এদিকে গতকাল দেশের ১১টি জেলায় যৌথবাহিনী অভিযান চালিয়েছে। তবে অভিযান চলাকালে বিভিন্ন স্থানে সংঘর্ষের ঘটনাও ঘটেছে। সাতক্ষীরার কালিগঞ্জে যৌথবাহিনীর সঙ্গে সংঘর্ষে এক শিবির কর্মী গুলিবিদ্ধ ও বগুড়ার শাহজাহানপুরে ১০ নেতা-কর্মী আহত হয়েছে। যৌথবাহিনীর অভিযানে বিভিন্ন স্থান থেকে ১৪৩ জনকে আটক করা হয়েছে। আমাদের নিজস্ব প্রতিবেদক ও প্রতিনিধিদের পাঠানো খবর- সাতক্ষীরা : কালিগঞ্জ উপজেলায় যৌথবাহিনীর সঙ্গে জামায়াত-শিবিরের সংঘর্ষ হয়েছে। এ সময় আশরাফুল ইসলাম বাবু (১৯) নামের এক শিবির কর্মী গুলিবিদ্ধ হয়। শনিবার গভীর রাতে উপজেলার কুশলিয়া গড়ের মাঠ এলাকায় গুলিবিদ্ধ শিবির কর্মী মুকন্দমধুসুদনপুর গ্রামের রুহুল আমিনের ছেলে। এ ছাড়া সদর উপজেলার মাহমুদপুরে যৌথবাহিনীর সঙ্গে জামায়াত-শিবিরের সংঘর্ষ হয়েছে। এ সময় আলীপুর ইউনিয়ন জামায়াতের আমির মাওলানা শফিকুল ইসলাম, ইউপি সদস্য বিএনপি নেতা আনিসুর রহমান ও তার ভাই প্রিন্সিপাল আজিজুল ইসলামের বাড়ি ভাঙচুর করা হয়। যৌথবাহিনীর অভিযানে পাটকেলঘাটা থেকে তিনজন, কলারোয়া থেকে দুজন ও গুলিবিদ্ধ আশরাফুল ইসলাম বাবুকে গ্রেফতার করা হয়েছে। অতিরিক্ত পুলিশ সুপার জয়দেব চৌধুরী বলেন, মাহমুদপুরে বিক্ষুব্ধ জনতা বাড়িঘর ভাঙচুর করে থাকতে পারে। বগুড়া : শাজাহানপুরে ভাঙচুর, পিকেটিং ও সমাবেশকালে বিএনপি-জামায়াতসহ ১৮ দলের ৬৩ নেতা-কর্মীকে আটক করেছে যৌথবাহিনী। বেলা সাড়ে ১১টায় নেতা-কর্মীরা মাঝিড়া বন্দর এলাকার বটতলায় ঢাকা-বগুড়া মহাসড়ক অবরোধ করে সমাবেশ করে। দুপুরে তারা বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির চেষ্টাকালে যৌথবাহিনী তাদের আটকের চেষ্টা করলে উত্তেজনার সৃষ্টি হয়। এ সময় পুলিশ লাঠিচার্জ করে ৬৩ নেতা-কর্মীকে আটক করে। নেতা-কর্মীরা বিক্ষুব্ধ হয়ে সমাবেশের চেয়ার, আশপাশের দোকানপাট ও কিছু স্থাপনায় ভাঙচুর চালায়। এ সময় উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক ফজলুল হক রতন, সিনিয়র যুগ্ম-আহ্বায়ক আবুল বাশার, যুগ্ম-আহ্বায়ক আজিজুর রহমান বিদ্যুৎসহ ১০ নেতা-কর্মী আহত হন। পুলিশ সুপার মোজাম্মেল হক পিপিএম জানান, আটককৃতদের বিরুদ্ধে ঢাকা-বগুড়া মহসড়কে পিকেটিং, মহাসড়কে গাড়ি ভাঙচুর ও অগি্নসংযোগের অভিযোগ রয়েছে। জেলা বিএনপির সভাপতি ভিপি সাইফুল ইসলাম বিকালে শাজাহানপুর বনানী মোড়ে সমাবেশে বলেন, সমাবেশ পুলিশ ভণ্ডুল করে ৬৩ জন নেতা-কর্মীকে গ্রেফতার এবং লাঠিচার্জে কমপক্ষে ১০ জনকে আহত করেছে। এর প্রতিবাদে আজ শাজাহানপুর উপজলায় সকাল-সন্ধ্যা হরতাল আহ্বান করা হয়েছে। সিলেট : মহানগর পুলিশ ৬ থানায় অভিযান চালিয়ে ১৮ দলীয় জোটের নেতা-কর্মীসহ ১৮ জনকে গ্রেফতার করেছে। গতকাল ভোর পর্যন্ত অভিযানে তাদের গ্রেফতার করা হয়। এর মধ্যে কোতোয়ালি থানা পুলিশ ৫ শিবির কর্মীসহ ৭ জনকে, জালালাবাদ থানা পুলিশ ১ শিবির কর্মীসহ ৩ জন, বিমানবন্দর থানা পুলিশ ১ শিবির কর্মীসহ ২ জন, দক্ষিণ সুরমা থানা পুলিশ বিএনপির ৩ কর্মী ও শাহপরাণ থানা পুলিশ ২ শিবির কর্মীসহ ৩ জনকে গ্রেফতার করে। বরিশাল : শনিবার রাত থেকে গতকাল বিকাল পর্যন্ত কাজিরহাট, বানারীপাড়া ও মুলাদী থানা পুলিশ মেহেন্দিগঞ্জ পৌর জামায়াতের সেক্রেটারি সেলিম সিকদারসহ বিএনপি-জামায়াতের ১৩ জন নেতা-কর্মীকে আটক করেছে। সিরাজগঞ্জ : শনিবার রাতে র্যাব ও ডিবি পুলিশ শহরে অভিযান চালিয়ে জেলা জামায়াতের মহিলা সেক্রেটারি মরিয়ম বেগম, সদস্য কামারখন্দ উপজেলার জামতৈল গ্রামের নিলা খাতুন, শহরের এস এস রোডের বাসিন্দা সদর উপজেলার চক-ফুলকোচা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষিকা সানজিদা-বিনতে-আনোয়ার এবং মাহমুদপুর মহল্লার পল্লী চিকিৎসক জামায়াত সংগঠক ডা. আবদুস সালামকে আটক করেছে। এদিকে সিরাজগঞ্জে গতকাল অভিযানের খবরে বিএনপি-জামায়াত কর্মীদের গা-ঢাকা দেওয়ার পাশাপাশি ভয়ে সাধারণ মানুষও বাড়িঘর ছেড়ে পালিয়ে যায়। ফলে পুরুষশূন্য গ্রামগুলোতে কাউকে গ্রেফতার করতে পারেনি। সদর উপজেলার শিয়ালকোল ইউনিয়নের চণ্ডিদাসগাতী, কয়েলগাতী, ছোট হামকুড়িয়া, জগতগাতী এবং কামারখন্দ উপজেলার ভদ্রঘাট ইউনিয়নের বানিয়াগাতী, চৌরগাতী, সেনগাতী, বহুতী ও কুটিরচরসহ ১০টি গ্রামে ৪ ঘণ্টা অভিযান চালে। নীলফামারী : আসাদুজ্জামান নূর এমপির গাড়িবহরে হামলা এবং আওয়ামী লীগ নেতা-কর্মী হত্যা মামলায় জামায়াত-শিবিরের তিনজনকে গ্রেফতার করেছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। গতকাল ভোরে সদর উপজেলার পলাশবাড়ী এবং ইটাখোলা ইউনিয়ন থেকে তাদের গ্রেফতার করা হয়। গাড়ি ভাঙচুরের অভিযোগে কিশোরগঞ্জে আবু হোসেন সুরুজ (২২) নামে ইউনিয়ন ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদককে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। নাটোর : বড়াইগ্রাম ও গুরুদাসপুরে ভোরে যৌথবাহিনী বিএনপি ও শিবিরের ৯ নেতা-কর্মীকে আটক করেছে। বড়াইগ্রাম সার্কেলের এএসপি মাহফুজুজ্জামান আশরাফ জানান, অবরোধে গাড়ি ভাঙচুরের অভিযোগে তাদের আটক করা হয়। গাইবান্ধা : সদরসহ চার উপজেলায় যৌথবাহিনী শনিবার রাতে ১৮ জনকে গ্রেফতার করেছে। এদের মধ্যে পলাশবাড়ী উপজেলায় ১০ জন, সাদুল্লাপুরে ৪ জন, সদরে ৩ জন এবং সাঘাটা উপজেলায় ১ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। নোয়াখালী : কোম্পানীগঞ্জ উপজেলার বিভিন্ন স্থানে অভিযান চালিয়ে জামায়াত-শিবিরের ৮ কর্মীকে আটক করেছে যৌথবাহিনী। শনিবার রাত থেকে গতকাল সকাল পর্যন্ত অভিযান চালিয়ে তাদের আটক করা হয়। কুমিল্লা : সদর দক্ষিণ থানা পুলিশ গতকাল দুপুরে কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রশিবিরের যুগ্ম-সম্পাদক তোফায়েলকে গ্রেফতার করেছে। সদর দক্ষিণ থানার ওসি গাজী মো. শাখাওয়াত হোসেন জানান, তোফায়েল বিভিন্ন নাশকতা ও সন্ত্রাসী কাজে জড়িত থাকায় তাকে আটক করা হয়।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।