বিরোধীদলীয় নেতা বেগম খালেদা জিয়ার ডাকে 'গণতন্ত্রের অভিযাত্রা'য় রাজধানীর নয়াপল্টনে যোগ দিতে প্রস্তুত বিএনপি নেতৃত্বাধীন ১৮ দলীয় জোটের নেতা-কর্মী ও সমর্থকরা। সব বাধা-বিপত্তি পার হয়ে ঢাকা ও আশপাশের এলাকাসহ সারা দেশ থেকেই হাজার হাজার নেতা-কর্মী এবং সমর্থক ইতোমধ্যেই রাজধানীতে এসে পেঁৗছেছেন। অনেকে অবস্থান করছেন দুই দিন আগে থেকেই। খালেদা জিয়ার নির্দেশ অনুযায়ী যে কোনো মূল্যে আজ তারা নয়াপল্টনের গণজমায়েতে অংশ নিতে দৃঢ়প্রতিজ্ঞ। সর্বোচ্চ প্রচেষ্টা চালাবেন তারা। বাধা দিলে সংঘাত অপরিহার্য বলেই মনে করছেন জোট নেতারা। আর এ সংঘাত তাৎক্ষণিকভাবে ছড়িয়ে পড়বে ঢাকা মহানগরীসহ প্রত্যেক জেলা-উপজেলায়। পাশাপাশি রাজধানীতে প্রতিদিনই অব্যাহত রাখা হবে গণজমায়েতের এই প্রচেষ্টা। কিংবা দুই/একদিন পিছিয়ে দিয়ে আবারও একই কর্মসূচির ডাক দিতে পারেন বেগম খালেদা জিয়া। এবার আর পিছু হটছে না বিরোধী জোট। তাতেও বাধা দিলে ঘোষণা করা হবে অনির্দিষ্টকালের জন্য অসহযোগ কিংবা অবরোধের মতো লাগাতার কর্মসূচি। একই সঙ্গে আগামী পাঁচ জানুয়ারির আগেই ঢাকায় স্থায়ী অবস্থানের সর্বোচ্চ প্রচেষ্টাও অব্যাহত রাখার পরিকল্পনা রয়েছে ১৮ দলীয় জোটের। এর আগে পঞ্চম দফা অবরোধ শেষে গত মঙ্গলবার জনাকীর্ণ এক সংবাদ সম্মেলনে মানুষের ভোটাধিকার ও গণতন্ত্র রক্ষায় আজকের এই 'মার্চ ফর ডেমোক্রেসি' কর্মসূচি ঘোষণা করে সারা দেশ থেকে দলমত নির্বিশেষে সর্বস্তরের মানুষকে ঢাকায় নয়াপল্টনে আসার আহ্বান জানান বেগম খালেদা জিয়া। এর পরদিন থেকে তিনি গুলশানের বাসায় কার্যত অবরুদ্ধ হওয়ার পর শুক্রবার এক ভিডিও বার্তায় ১৮ দলের নেতা-কর্মীসহ জনগণের উদ্দেশে বলেন, আমি না থাকতে পারলেও আপনারা নয়াপল্টনে যাবেন এবং গণতন্ত্রের এই অভিযাত্রা কর্মসূচি সফল করবেন। সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, সরকারি দল এবং আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা কোথায়, কীভাবে বাধা দিতে পারে সেসব বিষয় মাথায় রেখেই এবার প্রস্তুতি নিয়েছে বিরোধী জোট। ১৮ দলের নেতা-কর্মীরা আশা করছেন, জোটনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া দুপুরের মধ্যে শান্তিপূর্ণভাবে গুলশানের বাসভবন থেকে নয়াপল্টনে পেঁৗছবেন এবং সমাবেশও শান্তিপূর্ণভাবে শেষ হবে। কিন্তু সরকার যদি তাতে বাধা দেয় এবং শেষ পর্যন্ত বেগম খালেদা জিয়া নয়াপল্টনে না আসতে পারেন সেক্ষেত্রে কী হবে, তার পরিকল্পনাও করে রাখা হয়েছে। বেগম খালেদা জিয়াকে অন্তরীণ বা গৃহবন্দী করা হলে তার অনুপস্থিতিতে কে, কীভাবে নেতৃত্ব দেবেন তাও ঠিক করে রাখা হয়েছে। তবে আজকের শান্তিপূর্ণ কর্মসূচিতে বাধা দিলে সংঘাত স্থায়ী রূপ নেবে বলে আশঙ্কা করছেন রাজনৈতিক সচেতনমহল। এমনকি ভয়াবহ রক্তক্ষয়ী সংঘাতের দিকেও যেতে পারে দেশ। এ প্রসঙ্গে বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা ও সুপ্রিম কোর্ট বার কাউন্সিলের ভাইস চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট খন্দকার মাহবুব হোসেন বলেছেন, রবিবার নয়াপল্টনে গণতন্ত্রের উৎসব হবে, আর সরকারের হবে পতন। সংবিধান ও গণতন্ত্র রক্ষায় আমরা প্রয়োজনে জীবন দেব, তবু পিছপা হব না। বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, গণতন্ত্র ও মানুষের ভোটাধিকার রক্ষায় বেগম খালেদা জিয়া ঘোষিত কর্মসূচি বাস্তবায়নে দৃঢ়প্রতিজ্ঞ ১৮ দল। কিন্তু সরকার শান্তিপূর্ণ এ কর্মসূচি বানচাল করার জন্য সব রকমের প্রচেষ্টা চালাচ্ছে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে নিরস্ত্র জনগণের মুখোমুখি দাঁড় করিয়ে দিয়েছে। র্যাব-পুলিশ ও তাদের দলীয় বাহিনী দিয়ে অঘোষিত অবরোধের মাধ্যমে অচলাবস্থার সৃষ্টি করে গোটা দেশকে সংঘাতের দিকে ঠেলে দিয়েছে। এর সব দায়ভার সরকারকেই বহন করতে হবে। দলমত নির্বিশেষে সর্বস্তরের মানুষকে সব বাধা-বিপত্তি অতিক্রম করে গণতন্ত্র অভিযাত্রা কর্মসূচিতে যোগ দেওয়ার আহ্বান জানান তিনি।
এ প্রসঙ্গে ১৮ দলীয় জোটের শরিক বাংলাদেশ লেবার পার্টির চেয়ারম্যান ডা. মুস্তাফিজুর রহমান ইরান বলেন, টার্গেটের অর্ধেক লোক ইতোমধ্যেই ঢাকায় এসে গেছে। বাকিরাও আজ এসে যোগ দেবে। যে কোনো মূল্যে এ কর্মসূচিকে সফল করতে আমরা দৃঢ়প্রতিজ্ঞ।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক জামায়াতে ইসলামীর একজন সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল বলেন, সরকার পায়ে পাড়া দিয়ে সংঘাত সৃষ্টি করতে চাইলে আমরাও সর্বোচ্চ প্রতিরোধ গড়ে তোলার চেষ্টা করব। আর সে প্রতিরোধ চলতেই থাকবে। সরকারের শেষ পরিণতির আগে জনগণ আর থামবে না ইনশাল্লাহ। তিনি আরও জানান, জামায়াতে ইসলামীসহ তাদের অঙ্গসংগঠনের লক্ষাধিক কর্মী নয়াপল্টনে যেতে সর্বাত্দক প্রস্তুতি নিয়েছেন। কিন্তু তার চেয়েও বেশি সংখ্যক নেতা-কর্মী রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় অবস্থান করছেন সরকারের বাধায় প্রতিরোধ গড়ে তোলার জন্য। বিএনপি স্থায়ী কমিটির একজন সদস্য জানান, তারা শান্তিপূর্ণ কর্মসূচি পালনের চেষ্টা করবেন। সরকার বাধা দিলে প্রতিরোধ গড়ে তোলারও চেষ্টা করবেন। কিংবা এক/আধ দিন পিছিয়েও দিতে পারেন নয়াপল্টনের এ কর্মসূচি। তবে এর পরেও বাধা দিলে অনির্দিষ্টকালের জন্য অবরোধ বা অসহযোগেরও ডাক দেওয়ার কথা বিবেচনা করছেন বেগম খালেদা জিয়া।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।