আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

দলাদলি থেমে নেই, তবু বিকল্প হতে চায় বামেরা

দেশে আদর্শিক দল হিসেবে বামপন্থি ও কমিউনিস্ট সংগঠনগুলোর প্রতি সাধারণ মানুষের দুর্বলতা একটু বেশি থাকলেও সময়ের চাহিদার সঙ্গে নিজেদের রাজনৈতিক কৌশল এবং মতাদর্শের সমন্বয় করতে পারছে না তারা। গরিষ্ঠ জনগণের আকাঙ্ক্ষা পূরণে যাদের অগ্রগামী থাকার কথা, তারা ক্রমান্বয়ে পিছিয়ে পড়ছে। নিজেদের আদর্শিক রাজনীতিতে আপাতসন্তুষ্ট এ দলগুলোয় দলাদলি থেমে নেই। ফলে বিকল্প রাজনৈতিক শক্তি হিসেবে নিজেদের গড়ে তোলার প্রচেষ্টা সফল হচ্ছে না। বারবার মুখ থুবড়ে পড়ছে বামদের ঐক্য। এ জন্য তাদের কষ্ট আছে। হতাশাও আছে। তার পরও দেশের রাজনৈতিক সংস্কৃতিতে সুষ্ঠু ধারা প্রবর্তনের লক্ষ্যে নিজেদের বিকল্প শক্তি হিসেবে প্রতিষ্ঠার সংগ্রামে লিপ্ত বামপন্থিরা। বাম নেতাদের দাবি, 'আমরা বসে নেই। একদিন অভীষ্ট লক্ষ্যে পেঁৗছাবই। রাজনৈতিক চড়াই-উতরাই পেরিয়েই হাঁটি হাঁটি পা পা করে এগিয়ে যাচ্ছি আমরা।' শীর্ষস্থানীয় এক কমিউনিস্ট নেতার মতে, দেশের বাম দলগুলোর মধ্যে মতাদর্শগত তেমন একটা ভিন্নতা নেই। ভিন্নতা যা তা হচ্ছে কৌশলগত। একটি বাম দল যে বিষয়টি স্বল্পসময়ে বাস্তবায়ন করতে চায়, অন্য বাম দলটি দীর্ঘ সময় নিয়ে তা চায়। আমাদের বিপক্ষরা এসবকেই দলাদলি বলে প্রচার করতে চায়। তিনি বলেন, আমাদের দেশে অর্ধশতাধিক রাজনৈতিক দল আছে। কিন্তু জনগণের নিত্যদিনের সংকট ও সমস্যা, বিশেষ করে দেশের স্বার্থ নিয়ে আমাদের আগে আর কারা রাজপথে সোচ্চার থাকে? অবশ্য বাম দলগুলোর মধ্যে সমন্বয় ও সমঝোতার অভাবে আমরা জনগণের মনের কথাগুলো যথাসময়ে জনগণের কাছে পেঁৗছাতে পারছি না। এটা আমাদের ব্যর্থতা। রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকদের মতে, দেশে বামপন্থি এমন অনেক দল আছে যারা ঐক্যের জন্য মিলের জায়গা না খুঁজে, অন্য আরেকটি সমমনা দলের 'দাঁড়ি, কমা ও ছিদ্রান্বেষণেই' বেশি ব্যস্ত থাকে। কে বড় কমিউনিস্ট, কে বেশি বামপন্থি- এ মানসিকতা প্রতিবন্ধক হয়ে দাঁড়িয়েছে বামপন্থি ও কমিউনিস্ট দলগুলোর ঐক্যপ্রয়াসে। নিজেদের একটা গণ্ডির মধ্যে আবদ্ধ রাখা এবং কিছুটা সাংঘর্ষিক হলেও দেশ ও জনগণের জন্য কল্যাণ বয়ে আনতে পারে এমন রাজনৈতিক রণকৌশল গ্রহণের ক্ষেত্রে বামপন্থিদের মধ্যে বিভাজন ও বিভক্তি বৃহৎ জনগোষ্ঠীকে আশাহত করছে। আর সেখানে আদর্শের চেয়ে ক্রমেই গুরুত্ব পাচ্ছে ঘরানাগত দলাদলি। যদিও বাম নেতারা প্রকাশ্যে তা কবুল করতে নারাজ। তারা বিষয়টিকে দেখতে চান ঐক্যের অভাব হিসেবে। এ ব্যাপারে দেশের প্রধান বামপন্থি দল বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির (সিপিবি) সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আবু জাফর আহমেদ বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, বামপন্থি দলগুলোর ঐক্যের অভাবের কারণে তারা মানুষের সামনে গ্রহণযোগ্য বিকল্প শক্তি হিসেবে নিজেদের প্রতিভাত করতে ব্যর্থ হয়েছে। এর সুযোগ নিয়েছে বিএনপি-জামায়াত। বিএনপি-জামায়াতের কর্মকাণ্ড খারাপ জানা সত্ত্বেও অতীতে আওয়ামী লীগের শাসনামলে মানুষের সরকারবিরোধী মনোভাবটি তাদের (বিএনপি-জামায়াত) দিকে গেছে। বিকল্প শক্তি গড়ে না ওঠায় জেনে-শুনেই জনগণ আওয়ামী লীগের বিকল্প হিসেবে বিএনপি-জামায়াতকে বেছে নিয়েছিল। তিনি বলেন, বিকল্প শক্তি গড়ে তোলার ব্যর্থতার জন্য বামপন্থিদের ঐক্যের অভাবটাই মূল কারণ। তবে ভবিষ্যতে বামপন্থি-প্রগতিশীল ও গণতান্ত্রিক দলগুলোর সমন্বয়ে বিকল্প শক্তির উন্মেষ ঘটবেই। বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দলের (বাসদ) সাধারণ সম্পাদক খালেকুজ্জামান বলেন, বামপন্থিদের মধ্যে অতীতে যারা শাসক গোষ্ঠীর ক্ষমতার অংশীদারিত্ব পাওয়ার জন্য বিকল্প রাজনৈতিক শক্তি গড়ে তোলার অঙ্গীকার থেকে সরে গেছে, তারা বামপন্থি শক্তি হিসেবে জনগণের কাছে গ্রহণযোগ্যতা হারিয়েছে। ফলে প্রকৃত বামপন্থি বিশেষ করে কমিউনিস্ট পার্টি ও বাসদসহ উদারনৈতিক গণতান্ত্রিক দেশপ্রেমিক দল, সংগঠন ও ব্যক্তিরা যে বিকল্প রাজনৈতিক শক্তি গড়ে তোলার আহ্বান জানিয়েছেন, তার গ্রহণযোগ্যতা দিন দিন বাড়ছে। আগামী দিনগুলোয় তা অনেক দৃশ্যমান হবে। গণতান্ত্রিক বিপ্লবী পার্টির সাধারণ সম্পাদক মোশরেফা মিশু বলেন, জনগণের আকাঙ্ক্ষার বিপরীত দিকে যাচ্ছে বর্তমান বাংলাদেশ। মানুষের গণতান্ত্রিক অধিকারগুলো হুমকির মুখে পড়েছে। এমন পরিস্থিতিতে বাম-গণতান্ত্রিক শক্তি মুক্তিযুদ্ধের মূল চেতনা ধারণ করে সামনে এগিয়ে যেতে পারে। তবে বামদের যে অংশ শাসক শ্রেণীর লেজুড়ে পরিণত হয়েছে, তাদের দিয়ে কিছু হবে না। বামপন্থি-কমিউনিস্ট নেতৃত্বকেই আত্দমর্যাদাশীল অসাম্প্রদায়িক ও গণতান্ত্রিক বাংলাদেশ নির্মাণের লড়াই এগিয়ে নিতে হবে।

জাতীয় মুক্তি কাউন্সিলের সম্পাদক ফয়জুল হাকিম লালা বলেন, বাংলাদেশের জনগণ সামগ্রিক ব্যবস্থার পরিবর্তন চায়। এ ক্ষেত্রে নির্বাচনের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশের মৌলিক পরিবর্তন হবে না। তাই জনগণের ক্ষমতায়নে গণঅভ্যুত্থানের স্বপ্ন বাস্তবায়নে এ দেশের কমিউনিস্টরা কাজ করছেন। চাই গণরাজনৈতিক অভ্যুত্থান।

গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়কারী জোনায়েদ সাকী বলেন, দেশে রাজনৈতিক সংকট অব্যাহত আছে। এ থেকে দেশকে স্থায়ীভাবে মুক্ত করতে হলে জনগণকে সঙ্গে নিয়ে গণতান্ত্রিক-প্রগতিশীল শক্তিগুলোকে ঐক্যবদ্ধভাবে একটি বিকল্প শক্তি গড়ে তুলতে হবে। এর বিকল্প নেই।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.