আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

কয়েকটি গণ-অভ্যুত্থান - ৪

মুক্তিযুদ্ধের সেই উত্তাল দিনুলোতে, অজস্র তরুণ কি অসম সাহসিকতা নিয়ে দেশমাতৃকাকে রক্ষা করেছিল!

কয়েকটি গণ-অভ্যুত্থান - ৪
--------------------------- ডঃ রমিত আজাদ

(পূর্ব প্রকাশিতের পর থেকে)

দেয়ালে পিঠ ঠেকে গেলে মুক্তিকামী নিপীড়িত জনগণ রাজপথে নেমে আসে। সর্বস্তরের দেশপ্রেমিক জনতার সন্মিলিত প্রচেষ্টা ও আত্মত্যাগে হটে যায় স্বৈরাচারী শাসক। শাসন ক্ষমতায় বসেন নিপীড়িত জনগণের নির্বাচিত প্রতিনিধি। একেই বলে গণ-অভ্যুত্থান। মানবজাতির পথ চলার দীর্ঘ ইতিহাসে এই জাতীয় গণ-অভ্যুত্থান ঘটেছে বহুদেশে বহুবার।

এরকম কয়েকটি উল্লেখযোগ্য গণ-অভ্যুত্থান স্থান পাবে আমার এই প্রবন্ধে।

পূর্ববর্তি তিনটি পর্বে আমি লিখেছিলাম ইরাকের গণ-অভ্যুত্থান (১৯৫৮), মিশরের গণ-অভ্যুত্থান (১৯৫২) ও আমাদেরই দেশের ১৯৬৯ সালের গণ-অভ্যুত্থানের সম্পর্কে। আজকের পর্বে লিখবো ফিলিপাইনের গণ-অভ্যুত্থান (১৯৮৬)-এর উপর

ম্যনিলা গণ-অভ্যুত্থান (১৯৮৬)

নিষ্ঠুরতার কাহিনীঃ
১৯৮১ সালের ১৭ নভেম্বরের কথা। ফিলিপাইনের রাষ্ট্রক্ষমতায় তখন ছিলো জান্তা ফার্দিনান্দ মার্কোস। দেশের জনগণের কাছে যার কোন জনপ্রিয়তাই ছিলনা।

তারপরেও বহাল তবিয়তে সিংহাসনে বসে ছিলো খুটির জোড়ে। একবার তার খ্যাতির লক্ষ্যে ভাবলেন, তাক লাগানো একটি ফিল্ম সেন্টার তৈরী করবেন তিনি। যথারীতি শুরু করলেন ব্যয়বহুল 'ম্যানিলা চলচ্চিত্র কেন্দ্র'-এর নির্মাণ। নির্মাণ চলাকালীন সময়ে তিনি এবং তার রূপসী স্ত্রী ইমেল্দা মার্কোস কয়েকদফা নির্মাণ পরিকল্পনা পরিবর্তন করেন। এর ফলে একদিকে যেমন কাজে বারবার বাধা আসছিলো আবার সেই বাধা মেক-আপ করার জন্য আসন্ন ফিল্ম ফেস্টিভালের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানকে লক্ষ্য করে বেধে দেয়া সময়ের মধ্যে কাজ শেষ করার জন্য তাড়াহুড়োও করা হচ্ছিলো প্রচুর।

এসময় দুর্ভাগ্যবশত একটি scaffold ধ্বসে পড়ে, আর শ্রমিকরা পতিত হয় ভেজা সিমেন্টের মধ্যে যার উপরে ধ্বসে পড়েছিলো ভারী ভারী ইস্পাতের বার। অনেকেরই জীবন্ত কবর হয় ওখানে। বেঁচে থাকা অনেকেই ট্র্যাপ্টড হয়ে যায় । যেহেতু মৃতদেহ ও জীবিতদের উদ্ধার করতে যথেস্ট সময়ের প্রয়োজন ছিলো, তাই ইমেল্দা মার্কোস নির্দেশ দিলো, "উদ্ধার করার প্রয়োজন নেই, দেহগুলোকে সিমেন্ট দিয়ে ঢেকে দাও। কন্সট্রাকশন ওয়ার্ক চলুক।

" এই দুর্ঘটনায় ১৬৯ জন মারা যায়। এবং তাদের দেহাবশেষ ঐ ইমারতেই রয়ে যায়। এই ভয়াবহতা ও নির্মমতার সংবাদ সকল ম্যানিলাবাসীই জানতো। কিন্তু প্রেসিডেন্ট মার্কোসের নির্দেশে ফিলিপিনি কোন সংবাদ মাধ্যেমেই তা প্রচারিত হয়নি। হায়রে নিস্ঠুরতা! স্বৈরাচার থাকলে যা হয় আরকি!!

ঐ অভিশপ্ত ভবনটির চারপাশ দিয়ে ভয়ে কেউ হাটতে চাইতো না।

লোকে বলতো, নিহত হতভাগ্য শ্রমিকদের আত্মার দীর্ঘশ্বাস শোনা যায় ওখানে। পুরো ভবনের বাতাস ভারী হয়ে থাকে অকালে ঝরে পড়া অতৃপ্ত আত্মাদের চাপা কান্নার শব্দে। এর ফল অবশ্য ক্ষমতার দাপটে অন্ধ মার্কোস পরিবার পেয়েছিলো। কয়েক বৎসর পরে এই সাধারণ মানুষগুলোই ঘাড় ধাক্কা দিয়ে ক্ষমতা থেকে ফেলে দিয়েছিলো ফার্দিনান্দ মার্কোস ও ইমেল্দা মার্কোসকে। ক্ষমতার জোরে অনেকেই অনেক কিছু করে আর বেমালুম ভুলে যায় ইতিহাসের শিক্ষা যে, ‘ক্ষমতা চিরকাল থাকেনা’।



কে এই মার্কোস? কি করে ক্ষমতায় এলেন?

ফার্দিনান্দ মার্কোসের জন্ম হয় ১৯১৭ সালে ১১ই সেপ্টেম্বর ফিলিপাইনের সারাত নামক একটি শহরে। তার পিতা Mariano Marcos y Rubio ছিলেন একজন আইনজীবি ও রাজনীতিবিদ। ফার্দিনান্দ খ্রীষ্ট ধর্মে বিশ্বাসী ছিলেন। বাল্যকাল থেকেই শ্রুতিধর হিসাবে শুনাম ছিলো ফার্দিনান্দ মার্কোসের। তিনি ফিলিপাইনের University of the Philippines, মর্যাদাপূর্ণ College of Law-তে অধ্যয়ন করেন।

বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যায়নকালীন সময়ে তিনি ও তার পিতা একটি রাজনৈতিক হত্যা মামলায় জড়িয়ে পড়েন। এই মামলা কয়েক বছর চলার পর প্রথমে ফার্দিনান্দ নিম্ন আদালতে মৃত্যুদন্ডপ্রাপ্ত হন। অবশ্য পরে আপীল করে উচ্চ আদালত থেকে ছাড়া পান। বিশ্ববিদ্যালয় জীবনে তিনি অত্যন্ত মেধাবী ছাত্র ছিলেন। ১৯৩৯ সালে বার এক্সামিনেশনে cum laude পেয়ে গ্র‌্যাজুয়েশন করেন।

বলা হয়ে থাকে যে ২৭ দিন কারারুদ্ধ না থাকলে তিনি magna cum laude পেয়েই গ্র‌্যাজুয়েশন করতেন। পড়ালেখার পাশাপাশি তিনি সহপাঠক্রম (সাঁতার, বক্সিং, কুস্তি, বিতর্ক, ও লেখালেখি)-এও পারদর্শীতা দেখিয়েছিলেন। তাঁর এই সকল গুনাগুনের কারণে তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ে একজন পরিচিত মুখ হয়ে ওঠেন এবং এখানেই তিনি অনেক ভবিষ্যৎ মন্ত্রি ও সেনানায়কদের সাথে পরিচিত হয়ে ওঠেন।

তিনি দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ চলাকালীন সময়ে আগ্রাসী জাপানীদের বিরূদ্ধে গেরিলা অপারেশন চালিয়ে খ্যাতি অর্জন করেছিলেন। এটা তাঁকে রাজনীতির মাঠে তার প্রতিদ্বন্দীদের চাইতে উপরে নিয়ে আসে, যেহেতু তার রাজনৈতিক প্রতিদ্বন্দীরা অনেকেই জাপানীদের সহযোগী রাজাকার ছিলো।

মেধা ও রাজনৈতিক নৈপূণ্যের জোরে তিনি ধীরে ধীরে তারকা হিসাবে আবির্ভুত হতে শুরু করেন এবং সিনেটর থেকে শুরু করে বিভিন্ন রাজনৈতিক পদে অধিষ্ঠিত হন।


১৯৬৫ সালে ফিলিপাইনে অনুষ্ঠিত রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে লিবারেল পার্টির Incumbent রাষ্ট্রপতি Diosdado Macapagal-কে পরাজিত করে জাতীয়তাবাদী দলের ফার্দিনান্দ মার্কোস বিজয়ী হন। তবে ভোটের ব্যবধান ছিলো খুবই কম। ১৯৬৫ থেকে ১৯৬৯ সাল পর্যন্ত তিনি সাংবিধানিকভাবে রাষ্ট্রপতির দায়িত্ব পালন করেন। তার ও তার সরকারের দাবী যে, তারা এই চার বছরে ফিলিপাইনের অনেক উন্নয়ন সাধন করেছিলেন।

রাস্তাঘাট, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান নির্মান থেকে শুরু করে অনেক গণমূখী কাজ তার সরকার করেছিলো।

তারপর ১৯৬৯ সালের রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে ফার্দিনান্দ মার্কোস দ্বিতীয় দফা রাষ্ট্রপতি নির্বাচিত হন। তিনিই প্রথম ফিলিপিনো যিনি দ্বিতীয় বারের মতো রাষ্ট্রপতি নির্বাচিত হয়েছিলেন। তবে এই নির্বাচনে ভোট ক্রয় ও ব্যাপক কারচুপীর অভিযোগ রয়েছে।

দ্বিতীয় দফা রাষ্ট্রপতির পদ পাওয়ার পর মার্কোসের ভোল একেবারেই পাল্টে যায়।

শুরু করেন অসহনীয় মাত্রার অসাধুতা ও দুর্নীতি। তিনি এবং তার আত্মীয়-স্বজন ও আজ্ঞাভাজনদের সম্পদ ফুলে-ফেঁপে উঠতে থাকে। এই দুর্নীতির মাত্রা এতোই ছাড়িয়ে যায় যে, ধনী ও দরিদ্রের মধ্যে অর্থনৈতিক ব্যবধান হয়ে ওঠে আকাশ ও পাতাল। ফলে দেশের সর্বস্তরে দুর্নীতি ঢুকে পড়ে। দুর্নীতির ফলাফলই হয় অপরাধ ও দেশজুড়ে রাজনৈতিক অস্থিরতা।

সম্পদের সুষম বন্টনের দাবীতে গড়ে ওঠে সসস্ত্র সংস্থা New People's Army এবং দেশের দক্ষিণাঞ্চলে মিন্দানাও দ্বীপে মুক্তিকামী মুসলমান জনতা গড়ে তোলে Moro National Liberation Front।

অর্থলোভী মার্কোসঃ

দেশের সম্পদ লুন্ঠন করে মার্কোস ও তার স্ত্রী এবং তাদের আত্মীয়-স্বজনরা ফুলে ফেঁপে উঠেছিলেন। কিন্তু তাদের অর্থলোভ তারপরেও থেমে থাকেনি। মার্কোস যে কি পরিমান অর্থলোভী ছিলেন তা নিচের একটি ঘটনায় বোঝা যাবেঃ
গুপ্তধনের সন্ধানে : তখন ১৯৭০ সাল। রজার রক্সাস নামে এক লোক সপরিবারে ফিলিপাইনে বাস করতো।

দেশের রাজধানী ম্যানিলা থেকে প্রায় ২০০ মাইল উত্তরে ‘লুজন’ নামের একটা ছোট্ট দ্বীপে বাস করতো রজার।

ছোটবেলা থেকেই রজারের ছিলো গুপ্তধনের নেশা। তাই ছুটির দিনগুলোতে সে তার বন্ধুদের নিয়ে বেড়িয়ে পড়তো গুপ্তধনের খোঁজে। ওর ছোটবেলার সেই বন্ধুদের একজন ছিলো অ্যালবার্ট ফুচিগামী। অ্যালবার্টের বাবা দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় জাপানী সেনাবাহিনীর অফিসার ছিলেন।

ছোটবেলায় অ্যালবার্টের বাবা অ্যালবার্টকে একটা গুপ্তধনের নকশা দিয়েছিলেন। মানে, যেটাতে কোথায় গুপ্তধন লুকানো আছে আর কীভাবে কীভাবে সেখানে যেতে হবে তার সব বিস্তারিত ম্যাপ এঁকে দেখানো থাকে। অ্যালবার্টের বাবার দেয়া সেই নকশাটাতে এক গোপন সুড়ঙ্গের হদিস দেয়া ছিলো, যেখানে কিনা জাপানিজ সৈন্যরা প্রচুর সোনাদানা লুকিয়ে রেখেছে। অনেক আগেই অ্যালবার্ট রজারকে এই গুপ্তধনের কথা বলেছিলো। একদিন অ্যালবার্ট ম্যাপটা রজারকে দেখালো।

রজার দেখেই বুঝতে পারলো যে, নকশাটাতে সত্যি সত্যিই গুপ্তধনের হদিস দেয়া আছে। অ্যালবার্টের বাবা তো আসলেই জাপানিজ সেনাবাহিনীতে চাকরি করতো। রজার আর অ্যালবার্ট সিদ্ধান্ত নিলো- তারা যে করেই হোক এই গুপ্তধন খুঁজে বের করবেই।

তো যে কথা সেই কাজ। রজার আর অ্যালবার্ট দেরি না করে গুপ্তধন উদ্ধারে ঝাঁপিয়ে পড়লো।

অবশেষে তারা খুঁজে পেলো সেই কাঙ্খিত গুপ্তধনের সুড়ঙ্গ। সুড়ঙ্গে ঢোকার পথও বের করতে পারলো। রজারই প্রথমে সুড়ঙ্গে ঢুকলো। ঢুকেই তো ওর চোখ যাকে বলে ছানাবড়া হয়ে গেলো। গুপ্তধনের বদলে প্রায় ১০-১২টা কঙ্কাল দেখতে পেল সে! সবগুলোই জাপানি সৈন্যদের।

রজার বুঝতে পারলো, সে একটা গোপন কবরস্থানে ঢুকে পড়েছে।

না, সেটা শুধুই একটা কবরস্থান ছিল না; জাপানি সৈন্যদের কঙ্কালগুলোর সাথে সাথেই রজারের চোখে পড়ল আরেকটি জিনিস- সামনে তাকিয়ে রজার পুরোটাই স্বর্ণের তৈরি এক বিশাল বুদ্ধমূর্তি দেখতে পেলো। মানে বৌদ্ধ ধর্মের প্রবর্তক গৌতম বুদ্ধের মূর্তি। এবার রজার আর অ্যালবার্টের চোখ সত্যি সত্যিই ছানাবড়া হয়ে গেল। এত্তো বড় স্বর্ণের মূর্তি তারা জীবনেও দেখেনি।

ধীরে ধীরে তারা ম্যাপ দেখে দেখে সুড়ঙ্গের আরও ভেতরে ঢুকতে লাগলো। আর বিস্ময়ের সাথে আবিষ্কার করলো, পুরো সুড়ঙ্গ ভর্তি শুধু সোনা আর সোনা। যেদিকে তাকানো যায় সেদিকেই শুধু সোনা ছড়ানো।

কিন্তু এতো স্বর্ণ তো একবারে নেয়া সম্ভব নয়। তাই তারা ঠিক করলো, এবারে তারা শুধু বুদ্ধমূর্তিটাই নিয়ে যাবে।

আর সেটা বিক্রি করে যে টাকা পাওয়া যাবে, তাই দিয়ে আরও লোকজন আর গাড়ি নিয়ে এসে বাকি স্বর্ণ উদ্ধার করে নিয়ে যাবে। আর যাবার আগে অবশ্যই ডিনামাইট ফাটিয়ে সুড়ঙ্গের মুখটি বন্ধ করে যেতে হবে। নইলে, বলা তো যায় না, ওদের আবিষ্কারের ফসল যদি অন্য কেউ ঘরে তোলে!

মূর্তিটা বাসায় নিয়ে আসার পর রজার মূর্তিটা পরীক্ষা করিয়ে জানতে পারলো, মূর্তিটা আসলেই একদম খাঁটি সোনার তৈরি। পরীক্ষা করার সময় রজার হঠাৎ মূর্তিটার গলার কাছে একটা ফাটল দেখতে পেল। পরিস্কারভাবেই বোঝা যাচ্ছে, কিছু একটা ব্যাপার আছে সেখানে।

কিন্তু কিছুতেই খুলতে পারছিলো না রজার। অনেকক্ষণ চেষ্টার পর সে যখন মূর্তির মাথাটা আলাদা করতে পারলো, তখন তো বিস্ময়ে রজারের প্রায় পাগল হবার দশা। মূর্তির ভেতরে ভর্তি শুধু হীরা আর হীরা। কিছু কাটা, আর বেশীরভাগই আকাটা হিরা। বিস্ময়ের ধাক্কা সামলে ওঠার পর রজার হীরাগুলো সযত্নে আলমারিতে তুলে রাখলো।



কিন্তু গুপ্তধনের কথা কি আর চাপা থাকে! আস্তে আস্তে সবাই জেনে গেলো, রজার গুপ্তধনের সন্ধান পেয়েছে। খোদ ফিলিপাইনের প্রেসিডেন্ট ফার্দিনান্দ মার্কোস পর্যন্ত জেনে গেলো এই গুপ্তধনের কথা। ব্যস, আর যায় কোথায়! অর্থলোভী প্রেসিডেন্ট সাহেবের নজর পড়লো রজারের গুপ্তধনের ওপর। হঠাৎ করেই প্রেসিডেন্টের একদল সৈন্য একদিন হামলা চালালো রজারের বাসায়। বুদ্ধমূর্তি, হীরা- সবই নিয়ে গেলো তারা।

শুধু তাই নয়, বেশি কথা বললে রজারকে প্রাণে মেরে ফেলার হুমকিও দিয়ে গেলো তারা। বেচারা রজার আর কী করে! স্ত্রী-সন্তান নিয়ে জঙ্গলে গিয়ে আশ্রয় নিলো।

কিন্তু তারপরও রেহাই মিলল না। প্রেসিডেন্ট জানতে পারলেন, আরো গুপ্তধনের সন্ধান জানে রজার। আর তাই রজারকে খুঁজে আনার নির্দেশ দিলেন তিনি।

প্রেসিডেন্টের সৈন্যরা রজারকে খুঁজে বের করে একটা ঘরে বন্দি করে করে রাখলো। গুপ্তধনের হদিস দেয়ার জন্য প্রতিদিন তার ওপর চলতে লাগলো নির্যাতন। কিন্তু রজার প্রতিজ্ঞা করেছিলো, কোনোদিনই কারো কাছে এই গুপ্তধনের সন্ধান দেবে না সে। তাই অকথ্য নির্যাতন সত্তেও সেই গুপ্তধনের খোঁজ জানালো না রজার। একদিন রজারকে নিয়ে যাওয়া হলো তার স্ত্রীর সাথে দেখা করানোর জন্য।

স্ত্রীর সাথে দেখা করে রজারকে যখন আবার ফিরিয়ে নিয়ে যাওয়া হচ্ছিলো, তখন সে বাথরুমে যাবার নাম করে বাথরুমের জানালা দিয়ে পালিয়ে গেলো।
এই ছিলো অর্থলোভী মার্কোসের অর্থলালসার একটি উদাহরণ।

ভোটের অধিকার বাতিল করে ক্ষমতা দখলঃ

১৯৭৩ সালে তৃতীয় দফা রাষ্ট্রপতির পদে আসীন হওয়ার সাংবিধানিক সুযোগ মার্কোসের ছিলোনা আবার জনসমর্থনও ছিলোনা। কিন্তু যে কোন স্বৈরাচারী শাসকের মতোই ক্ষমতায় আজীবন টিকে থাকার উদ্দেশ্যে কূটচাল চাললেন। ২৩শে সেপ্টেম্বর, ১৯৭২ সালে তিনি দেশব্যাপী সামরিক শাসন জারী করেন (presidential proclamation (No. 1081)) ।

আত্মপক্ষ সমর্থনের উদ্দেশ্যে তিনি বললেন দেশজুড়ে সৃষ্টি হওয়া রাজনৈতিক অস্থিরতার কারণেই তিনি সামরিক শাসন দিতে বাধ্য হয়েছেন। আসলে এই রাজনৈতিক অস্থিরতা ছিলো তারই শাসনামলের মাত্রাতিরিক্ত দুর্নীতির ফলাফল।

এই ডিক্রীর বলে ফার্দিনান্দ মার্কোস দেশের সরকার ও সসত্রবাহিনীর পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ গ্রহন করেন, জনগণের বাক স্বাধীনতা কেড়ে নেন। প্রেসের স্বাধীনতা কেড়ে নেন, এবং অন্যান্য সিভিল লিবার্টিও কেড়ে নেন। তিনি ফিলিপিনো কংগ্রেস ভেঙে দেন ও মার্কোসের স্বৈরাচারের বিরুদ্ধে সোচ্চার মিডিয়া-গুলোও বন্ধ করে দেন।

নিঃসন্দেহে তার এই সকল অপকর্মে সহযোগীতা করেছিলো তার গত দুই মেয়াদে সৃষ্ট তার আজ্ঞাভাজন তারই মানসিকতার অর্থ ও ক্ষমতালোভী কিছু সেনা কর্মকর্তা, পুলিশ কর্মকর্তা ও প্রশাসনিক কর্মকর্তা, এছাড়া দেশপ্রেমহীন দুর্নীতিবাজ কিছু রাজনীতিবিদতো ছিলোই। বাক স্বাধিনতা ও ভোটের স্বাধীনতা কেড়ে নেয়ার পাশাপাশি মার্কোস তার রাজনৈতিক বিরোধীদের একে একে গ্রেফতার করতে শুরু করেন। এদের মধ্যে একজন ছিলেন সমালোচনায় সোচ্চার অকুতোভয় রাজনীতিবীদ সিনেটর এ্যাকুইনো (Senator Benigno Aquino Jr.) ।

(চলবে)

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.