আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

ফোনালাপ, হরতাল এবং অভ্যুত্থান সমাচার

আমাদের রাষ্ট্রে ক্ষমতার লড়াই এবং পাশা খেলা চলছে। কে কাকে হারাবে এবং কতটা হারাতে পারল, এ যেন তারই প্রতিযোগিতা। দুই প্রধান দলের জেদ, গোঁয়ার্তুমি এবং হিংসাপরায়ণতার পাল্টাপাল্টি চলছে। এক পক্ষ বলছে তো অন্যপক্ষ তার পাল্টা জবাব দিচ্ছে। যুতসই হোক বা না হোক।

তবু কেউ কাউকে 'নাহি দেব সুচ্যগ্র মেদিনী'। রাজনীতিতে বাগ্যুদ্ধ আছে, তবে এ যে 'কবির লড়াই' এমন দেখিনি কোনো দিন। ক্ষমতাসীনরা দাবি করছে, দেশের এই পরিমাণ উন্নতি হয়েছে, মানুষ এখন শান্তি-স্বস্তিতে বাস করছেন। যেই বলা শেষ হতে না হতেই প্রতিপক্ষ জোরালো গলায় তার বিরুদ্ধে গলগল করে বলতে থাকে। আবার সরকারের সমালোচনা যাই হোক, মাটিতে পড়তেও পারে না, এমনি গর্জে ওঠে ক্ষমতাধররা।

এমনি করে 'বাগ্যুদ্ধের বাঘ-ছাগল খেলা' চলছে মহাজোটের শাসনকালের সব সময়টা ধরেই। অথচ বিরোধী দল বিএনপি-জামায়াত জোট মহাজোটের পৌনে পাঁচ বছরে কোনো যুতসই আন্দোলনই করতে পারেনি। কড়া আন্দোলন, সরকার পতনের আন্দোলন, এক দফার আন্দোলন- ইত্যাকার গর্জন, হুমকি শুনেছি বিরোধীদলীয় নেতা খালেদা জিয়ার কাছে, গলা মিলিয়েছেন সাঙ্গপাঙ্গ নেতারাও। কিন্তু সরকারকে হেলাতে পারেনি এক ইঞ্চিও। সাধারণ মানুষ 'নলখাগড়া' হয়ে তাবৎ কাণ্ডকারখানা দেখেছেন।

বিরোধী দল সংসদে না যাওয়ার রুটিন মেনে যে 'আন্দোলন' তৎপরতা চালাচ্ছে, তা কেবল মানুষকে ক্ষ্যাপানোর জন্য, যদি জনগণকে ক্ষ্যাপানো যায়, তাহলে নির্বাচনে ভোট পাওয়া সুবিধা হবে এবং বিজয়ী হয়ে আবার শাসন ক্ষমতা হাতে পাওয়া যাবে। বহু দিন থেকেই বাহাস চলছে নির্বাচন কীভাবে হবে। বিরোধী দল বলছে, তত্ত্বাবধায়ক, তারপর নির্দলীয়-নিরপেক্ষ সরকার, এখন কেবল শেখ হাসিনা ছাড়া নিরপেক্ষ সরকার হতে হবে। আর সরকারি দল একই কথা ঘোষণা করেছে, সংবিধান অনুযায়ী নির্বাচন হবে। প্রধানমন্ত্রী তো বলেই দিয়েছেন, একচুলও নড়বেন না।

একটি গণতান্ত্রিক দেশে তো সংবিধানই সর্বোচ্চ নিয়ামক। সব দেশে গণতান্ত্রিক বিধান মেনে নির্বাচন হয়। এ নিয়ে যে বিতর্ক, বচন লড়াই, গলাবাজি, ব্যাখ্যা-বিশ্লেষণ চলছে, তাতে দেশের মানুষ প্রচণ্ড উদ্বিগ্ন। এই বাহাসে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জাতির উদ্দেশে বক্তৃতা প্রসঙ্গে তার যাবতীয় অর্জন-সাফল্য সম্পর্কে বললেন এবং এই উন্নয়ন অব্যাহত রাখতে পুনরায় নৌকায় ভোট চাইলেন। নির্বাচনী বিতর্ক অবসান করে সংলাপের মাধ্যমে চলমান রাজনৈতিক সংকট দূর করতে সর্বদলীয় সরকার গঠন করার প্রস্তাব দিলেন এবং বিরোধী দলের পাঁচজন এবং ক্ষমতাসীনদের পাঁচজনকে নিয়ে সরকার গঠন করে সুষ্ঠু, অবাধ, গ্রহণযোগ্য নির্বাচন অনুষ্ঠানের প্রত্যয় ব্যক্ত করলেন।

জামায়াত তাৎক্ষণিকভাবে প্রতিক্রিয়া জানিয়ে সর্বদলীয় অন্তর্বর্তী সরকারের প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করেছিল। তাতেই সচেতন নাগরিক মাত্রই বুঝতে পারছিলেন ১৮ দলের নামে যে 'বিশাল' জোট আছে তারা প্রধানমন্ত্রীর প্রস্তাবকে প্রত্যাখ্যান করবে। হলোও তাই। দুদিন বাদে বিরোধীদলীয় নেতা একটি হোটেলে সংবাদ সম্মেলন করে বললেন, আমরা নির্দলীয়-নিরপেক্ষ সরকার ছাড়া নির্বাচনে যাব না। যাব তো নয়ই এমনকি নির্বাচন করতেও দেবে না।

শেখ হাসিনার অধীনে কোনো নির্বাচন হবে না। ... এর আগে এক জনসভায় খালেদা জিয়া তত্ত্বাবধায়ক সরকার- নির্দলীয়-নিরপেক্ষ সরকারের জন্য সংগ্রাম কমিটি গঠন করে আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দিয়েছিলেন। অন্যদিকে আলোচনা করার কথাও বলে যাচ্ছিলেন। কথা বলতে বলতে প্রস্তাবও দিচ্ছিলেন। কিন্তু অনড় দুই নেত্রী বা দল কিংবা জোট-মহাজোটের বাচন এবং দেহভঙ্গি দেখে সাধারণ মানুষও বুঝতে পারছিলেন এসব হচ্ছে তথাকথিত নষ্ট সংসদীয় রাজনীতির বল প্রদর্শনের কসরত।

দুজনই ভাবেন, তিনিই জনপ্রিয়। সুতরাং তোয়াক্কা করার কিছু নেই। লোকে কি বলছে, তাতে কান দেওয়ার প্রয়োজন বোধ তারা করেন না। নিজ ক্ষমতা দখল ও স্বার্থ উদ্ধারের জন্য তারা একে-অপরের তীব্র সমালোচনা করেন। সেসব বক্তব্যে সত্য কতটা থাকে জানি না, তবে যুক্তি থাকে না।

তবু স্থিরিকৃত সিদ্ধান্ত বা বক্তব্য থেকে নড়তে চায় না প্রতিদ্বন্দ্বী মানসিকতার কারণে। এতে দেশজুড়ে সাধারণ মানুষের মনে যে প্রতিক্রিয়া দেখা দেয়, তাকে কেউ পাত্তাই দেন না। একজন ক্ষমতায় থাকার জন্য, অন্যজন ক্ষমতায় আরোহণের জন্য। এই স্বার্থসিদ্ধির ক্ষেত্রে কোনো তরফই ছাড় দেয় না। দিতে চায় না।

জনগণ ধৈর্যহীন, বিরক্ত এবং ক্ষোভে ক্ষুব্ধ হয়ে যায়; কিন্তু দুর্ভাগ্য এ দেশে ওই দুই দলের কোনো বিকল্প যে নেই। সুতরাং তাদের সহ্য করতে হয়। সরকার ও বিরোধী দলের মধ্যে এখন দা-মাছ সম্পর্ক। কেউ কাউকে নাহি ছাড়ে সমানে সমান। পাঁচ বছর কেটে গেল, দেশবাসীর জন্য কিছুই না করে বিরোধী দল এখন গোঁ ধরেছে, তত্ত্বাবধায়ক না হলে নির্দলীয়-নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচন হতে হবে।

ক্ষমতাসীন মহাজোট তিন-চতুর্থাংশ আসন পেয়ে 'পঞ্চদশ সংশোধনী' সংবিধানে সংযোজন করায় গায়ে লেগেছে বিএনপি-জামায়াত জোটের। অথচ ক্ষমতাসীনরা যখন এই পঞ্চদশ সংশোধনী পাস করেছে তখন বিরোধী দল সংসদে যায়নি। গেলে তখন প্রতিবাদ করতে পারত। তারা ভেবেছিল নির্বাচন এলে এ প্রসঙ্গ তুলে সরকারের সমালোচনা করলে বিএনপি-জামায়াতের লাভ বেশি। কারণ নানা ব্যর্থতার কারণেই পাঁচ বছরে লোকজন ক্ষুব্ধ ও ক্রুদ্ধ হয়ে উঠবে, তখন তাদের পক্ষে টানতে সুবিধা হবে।

কারণ যত সময় যাবে, ততই সরকারবিরোধী হয়ে উঠবে জনগণ। আর বিরোধী দল তো সারাক্ষণ সরকারের সমালোচনা করতে থাকবে। তাতেও জনগণ ক্ষুব্ধ হয়ে উঠবে ক্ষমতাসীনদের ওপর। কোনো সত্যিকার আন্দোলন না করে ক্ষমতাসীনদের যা খুশি করতে দিয়ে পাঁচ বছর বিরোধী দল আয়েশে কাটিয়েছে, মাঝে-মধ্যে হরতাল, বিক্ষোভ, রোডমার্চ, সমাবেশ আর সংবাদ সম্মেলন করেছে, তাকে কি এত পাওয়ারফুল প্রতিপক্ষকে তাও ক্ষমতাসীনদের ঘায়েল করা যায়?

দেশবাসী সংলাপ চান দুই নেত্রীর। যে কোনো দুর্যোগ-দুর্ভোগ কাটিয়ে ওঠার জন্য চাই সংলাপ।

কিন্তু প্রধানমন্ত্রী এবং বিরোধীদলীয় নেতা দুজনই নিজেদের অবস্থানে অনড়। আইনজীবী, বুদ্ধিজীবী, নানা পেশার সংগঠন, বিদেশি রাষ্ট্রদূত মায় জাতিসংঘও সংঘাত নয় সংলাপ চায়। চায় গ্রহণযোগ্য স্বচ্ছ নির্বাচন। কিন্তু দুই নেত্রীই অটল। তবে মুখে দুইপক্ষই সংলাপের ডাক দিচ্ছিল।

বিরোধী দল হাসিনার অধীনে নির্বাচন করবে না। দৃঢ় প্রত্যয় বারবার ব্যক্ত করলেও হাসিনা সংবিধান মেনেই নির্বাচন হবে বলে জানিয়ে যাচ্ছিলেন। নানা চাপ পূর্ব-পশ্চিম, উত্তর-দক্ষিণের চাপ, তারপর প্রধানমন্ত্রী জাতির উদ্দেশে ভাষণ দিয়ে সংকট সমাধানে একটি প্রস্তাব দিলেন। সেটি হলো- ক্ষমতাসীন ও বিরোধী দল থেকে পাঁচজন করে সদস্য নিয়ে সর্বদলীয় সরকার গঠন করে তার অধীনে নির্বাচন করা। এ প্রস্তাব সব মহলেই অভিনন্দিত হলো, কেবল বিরোধী দল ছাড়া।

তারা তো অনড়। তবু প্রধানমন্ত্রী যখন প্রস্তাব দিয়েছে, তখন তাদের একটা প্রতিক্রিয়া তো জানাতে হয়, তাই তারা তাৎক্ষণিক কিছু না বলে দুদিন পর সংবাদ সম্মেলনে প্রতিক্রিয়া জানাবেন বললেন। বিরোধীদলীয় নেতা খালেদা জিয়া সাংবাদিকদের জানালেন, তিনি ওই প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করছেন এবং এর প্রতিবাদে ২৫ অক্টোবর (২০১৩) মহাসমাবেশ ডাকলেন। আওয়ামী লীগও ঢাকায় সমাবেশ ডাকল। ফলে পুলিশ সভা-সমাবেশ নিষিদ্ধ ঘোষণা করল।

ঘরে-বাইরেও বৈঠক করা যাবে না, ভাবটা দেশে মার্শাল ল' জারি হয়েছে। যাই হোক, পুলিশ প্রশাসন কেন এমন অতি উৎসাহ দেখাল, বুঝলাম না। তবে পরে ব্যাখ্যা দিয়ে শুধু 'সভা-সমাবেশ' নিষিদ্ধ বলল, কিন্তু তাও রাখতে পারল না। বিএনপিকেও সমাবেশ করতে দিতে হলো। বিএনপি ঘোষণা দিয়েছিল, অনুমতি পাক বা না পাক সমাবেশ হবেই।

তা-ই হলো। তবে নয়াপল্টনে নয় সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে। জামায়াত-শিবির গোটা সমাবেশটাকেই দখল করে ফেলল। হাতে তাদের ফেস্টুন যুদ্ধাপরাধীদের মুক্তির দাবি লিখিত। তাদের তারা 'রাজবন্দী' বলে চিহ্নিত করেছে।

এই সেই উদ্যান, যেখানে মুক্তিযুদ্ধের বিজয় অর্জিত হয়েছিল। শিখা চিরন্তন জ্বলছে। সেখানে ওই পিশাচ রক্তপিপাসু খুনিদের ছবিসহ পোস্টার ছিল ওদের হাতে। মুক্তিযুদ্ধের এই অবমাননা কেন করল পুলিশ প্রশাসন?

জামায়াত যে এখন বিএনপিকে পরিচালিত করছে হরতাল এবং অন্যান্য কর্মসূচি নিতে, তা সুস্পষ্ট বোঝা যাচ্ছে। যখন খালেদা জিয়া সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে বক্তৃতা প্রায় শেষ করে এনেছেন, তখন সমাবেশের একাংশ হরতাল, হরতাল করে চিৎকার করছিল।

দেখলাম টিভিতে, শুনলামও। হ্যাঁ, সেই হরতালের ঘোষণাই দিলেন খালেদা। যে বিষয় বহুদিন থেকেই জামায়াত বিএনপির ওপর চাপ দিয়ে আসছিল। তিন দিন হরতাল দেয় এবং জামায়াতের পরিকল্পনা ও প্রস্তুতি ছিল ব্যাপক সহিংসতার। হরতাল ঘোষণা করতে গিয়ে খালেদা জিয়া দুদিন আজ ও কালের সময় দিয়ে আলটিমেটাম দিলেন।

বললেন- এর মধ্যে যদি আলোচনা শুরুর উদ্যোগ না নেওয়া হয়, তবে ২৭ অক্টোবর (২০১৩) রবিবার সকাল ৬টা থেকে ২৯ অক্টোবর সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত টানা হরতাল। ৬০ ঘণ্টা হরতাল। আবার বললেন- ২৭ অক্টোবর থেকে এ সরকার অবৈধ। সরকারি প্রশাসন ও পুলিশ বাহিনীকে উদ্দেশ করে নির্দেশ দিলেন, ২৭ তারিখ থেকে আপনারা এ সরকারের নির্দেশ মানবেন না। আবার বললেন, আলোচনা এবং সংগ্রাম পাশাপাশি চলবে।

...

যা হোক, খালেদার বেঁধে দেওয়া সময়ের মধ্যেই শেখ হাসিনা টেলিফোন করে কথা বললেন এবং ৩৭ মিনিট আলাপও করলেন। ২৮ অক্টোবর সন্ধ্যায় আমন্ত্রণ জানালেন। সেই সঙ্গে রাতের ডিনারেরও অনুরোধ জানালেন। (মনে রাখতে হবে, খালেদা জিয়া দুই দিনের আলটিমেটাম দিয়েছিলেন। কিন্তু ঘোষণা করলেন, শুক্রবার ২৫ অক্টোবর বিকালে।

হাসিনা ফোন করলেন দুপুর বেলা। পেলেন না। লাল টেলিফোন নাকি খারাপ ছিল, যা কস্মিনকালেও শোনা যায় না। তবু প্রধানমন্ত্রী ২২ ঘণ্টা যেতে না যেতেই ফোন করলেন। পেলেন না।

সন্ধ্যায় কথা বললেন। সময়টা ২৫ ঘণ্টা হবে দুদিনের। ) কিন্তু ম্যাডাম খালেদা জিয়া প্রধানমন্ত্রী ও মহাজোট নেত্রী শেখ হাসিনার প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করলেন এবং বললেন সুস্পষ্ট উচ্চারণে, ২৯ অক্টোবর হরতাল শেষে বসতে পারেন।

এই ফোনালাপকে অভিনন্দিত করল দেশবাসী। অনেকেই বললেন, বিরোধীদলীয় নেত্রীর বসা উচিত।

মানুষমাত্রই আনন্দিত হলেন, স্বস্তিবোধ করলেন। কারণ এসব পাল্টাপাল্টি শুনতে শুনতে এই চরম মুহূর্তে 'কি হয়' সেই উদ্বেগে আক্রান্ত মানুষ। সবাই আতঙ্কিত। অথচ বিরোধী দলের মনে হচ্ছিল বোধ হয়, কেমন দিলাম। বাধ্য করলাম হাসিনাকে হরতাল পর্যন্ত অপেক্ষা করতে।

রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের ধারণা বেগম জিয়া জামায়াতের চাপে হরতাল দিতে বাধ্য হয়েছে। এই জামায়াতী কৌশলের ফলে এ পর্যন্ত (২৯ শে অক্টোবর সকাল) ১৮ জনের প্রাণহানি হয়েছে নিদারুণ সহিংসতায়। আগুনে পুড়েছে রিকশা, অটোরিকশা, কার, বাস, পুলিশের গাড়ি, এমনকি অ্যাম্বুলেন্সও। সাংবাদিকদের গাড়িও রেহাই পায়নি। তিনজন সাংবাদিক হাসপাতালে মৃত্যুর সঙ্গে লড়ছেন।

... এসবই নাকি, মির্জা সাহেবের কথায় সরকারি এজেন্টরা করছে। এই বিরোধীদলীয় নৃশংসতায় অন্তঃসত্ত্বা নারী, দিনমজুর, বাসচালক, হেলপার, ট্রাক ড্রাইভারও রেহাই পায়নি। নেতারা সব নয়াপল্টন অফিসে থেকে কর্মী-সমর্থকদের রাস্তায় নামিয়ে দিয়েছেন। মরলে ওরা মরবে। হায় নেতৃবৃন্দ, ঘরে বসে এর বেশি করবেনই বা কি।

ক্ষমতায় গেলে এর প্রতিশোধ নেবেন বলেছেন, দেখা যাবে কার কি করেন। এই যে ১৮ জন প্রাণ দিলেন, সে যে দলেরই হোক, ব্যক্তির মৃত্যু হলো। ক্ষতি তো পরিবারের। আবার টার্গেটেড মন্ত্রী, বিচারক, আইনজীবী, রাজনীতিক, সাংবাদিকদের হত্যা বা হুমকি দেওয়ার জন্য ভাড়াটে ককটেল ফুটিয়ে বালকদের ব্যবহার করা হয়েছে অর্থের বিনিময়ে। যাদের ওপর এই বোমা, ককটেল মারার দায়িত্ব তারাই নাকি ভাড়াটে বালক-তরুণদের ব্যবহার করেছে।

নেতারা তো কথা বানাতে ওস্তাদ। কি অবলীলায় সরকারকে চাপ দেওয়ার চেষ্টা করছে এবং জনগণকে নিজেদের ব্যর্থতা ঢাকার জন্য 'বচন-বাহার' ব্যবহার করছেন। যেমন- তারা বলছেন, সহিংসতা সব সরকার করছে। নির্বাচন একতরফা করতে নাকি শেখ হাসিনা সরকারের এসবই কৌশল। আদতে সরকার সংলাপ করতে চায় না।

অথচ আলোচনায় বসার প্রস্তাব দিয়েই রেখেছে। হরতাল সত্ত্বেও প্রস্তাব বহাল রয়েছে। তারপরও মির্জা সাহেব ম্যাডামের পক্ষ থেকে হরতাল সফল (তাদের ভাষায়) করতে জনগণকে ধন্যবাদ জানাচ্ছেন। দলীয় কর্মী বলে প্রচারিত যারা, তাদের জন্য ম্যাডামের পক্ষ থেকে দুঃখ প্রকাশ (?) করছেন। নেতা-কর্মীদের এই সহিংস হরতাল সফল করার জন্য আবারও ম্যাডামের পক্ষ থেকে অভিনন্দন জানাচ্ছেন।

তবে সরকারকে দোষারোপ করতে করতে সংলাপে তাদের (মহাজোটের) আন্তরিকতা নেই, সে কথা বলতে ছাড়ছে না।

বিএনপি-জামায়াতসহ ১৮ দল হরতাল ডেকেছে নিজেদের ক্ষমতার দাপট দেখাতে। এসব যে নির্বাচনের আগে হতে থাকে তা তো আমরা জানি। কিন্তু জনগণের দুর্ভোগের অন্ত থাকে না। অথচ মির্জা ফখরুল জামায়াতের সহিংসতার লাশের ওপর বসে 'পুষ্পের হাসি' হাসতে না পারলেও বেশ কুশলী ভাষায় বলে চলেছেন, খালেদা জিয়ার আহ্বানে ১৮ দলের তিন দিনের হরতাল সম্পূর্ণ সফল করে জনগণের অভ্যুত্থান ঘটে গেছে।

ভারপ্রাপ্ত মির্জা সাহেব আনুগত্যের 'দেহীপল্লব মুদারস' ভঙ্গিতে সব দায়িত্ব পালন করেও মহাসচিব হতে পারলেন না। তবু তিনি উদারচিত্তে ছাত্রজীবন ও পরবর্তী রাজনৈতিক প্রশিক্ষণকে কাজে লাগিয়ে পুরনো বামপন্থি কায়দায় বিএনপিকে সার্ভ করে যাচ্ছেন। কিন্তু গণঅভ্যুত্থান ঘটেছে- বলছেন কি করে? গণঅভ্যুত্থান কাহারে কয় তাতো মির্জা সাহেবের অজানা থাকার কথা নয়!

লেখক : সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব।

 

 

সোর্স: http://www.bd-pratidin.com/

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।