আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

ব্যার্থ সংগ্রামের ২০১৩, বিদায়...............নতুন দিনের সংগ্রামের হোক জয়গান

আসেন দুর্নীতি করি। আর এই দুনিয়াটাকেই খুচাই!


পথে পথে লেখা আছে কত হাসি কান্নার গান। সে গানে মিশে আছি আমি তুমি সকলে। দুঃখ ভালোবাসা বেড়াজালে কেটে যায় ঘন্টা, দিন মাস বছর। নতুনের আগমনে প্রাক্ষলিত হয় কোনো দিন, নিমিষে বিষাদ ঘিরে ফেলে প্রিয় মানুষের চিরপ্রস্হান।



সুখে জন্য মূল্য দিতে হয়, দুঃখের সাথে সহবাস মানুষের চির অম্লান এক বিষয়। আফ্রিকা থেকে উড়ে আসা এক ছেলে ক্লাসে শুনছিলো লেকচার আজ হতে প্রায় ছয় বছর আগে। ক্লাসটা নেয়া হয়েছিলো হার্ভার্ডে যারা প্রকৌশলী নন তাদের জন্য। ক্লাসের এসাইনম্যান্ট ছিলো এমন একটি আইডিয়া যার ফলে পৃথিবীর অধিকাংশ মানুষকে অন্ধকার থেকে আলোতে নিয়ে আসবে। আ্ফ্রিকা থেকে উঠে আসা ছেলেটি তার বান্ধবীকে নিয়ে একটি আইডিয়া দেয় তখন।

সেই আইডিয়া নিয়ে পৃথিবীর সবচেয়ে উৎকর্ষময় ইউনিভার্সিটি গবেষনা করে, ২০১৩ তে এসে ঐ বালকের নিজের দেশ তানজানিয়ায় গিয়ে আমেরিকার সবচেয়ে ক্ষমতাবান একটা মানুষ বারাক ওবামা একটা ফুটবলে লাথী দেয়। সেই ফুটবল এমন কোনো বল নয়, বলটিকে ৩০ মিনিট লাথী দিয়ে ঘুরাতে হয় তাহলে সেটা দিয়ে একটা মোবাইল ফোনকে ১৬ ঘন্টার জন্য চার্জ দিতে সক্ষম।

সুখে থাকার সংগ্রামের জন্য আমরা ১৯৭১ সালে ৩০ লাখ বাঙ্গালী হারিয়েছি। মনে লেগে থাকা বছরের পর বছর ক্ষত আমাদেরকে যন্ত্রনা দিতে দিতে ভোতা বানিয়ে ফেলেছিলো আমাদের সকল অনুভূতি। একসময় ভাবতে শিখেছিলাম খোদার দুনিয়ায় বিচার পাবো না।

এ বিচার রোজ কেয়ামতেই পাবো হয়তো। তবু মানুষ হাল ছাড়েনি, পথে নামে, পুরো শাহবাগে নারী পুরুষ বাচ্চা সবাই এক কন্ঠে বলে ওঠে "বিচার নয়, ফাঁসি চাই"।

শয়তানের মতো মূর্তি যে কিনা এতগুলো মানুষের ওপর নির্যাতন হত্যা করে প্রহসনের বিচারের বিরুদ্ধে 'ভি' চিহ্ন দেখায় তা দেখে রাগে ক্রোধে ক্ষেপে উঠেছিলো লক্ষ লক্ষ মানুষ। শাহবাগে জড়ো হয়, অহিংস প্রতিবাদে ফেটে পড়ে সবাই। তখন আমরা জানতাম এই বিচারের জন্য আমাদের কড়া মূল্য দিতে হবে আরেকবার।

হ্যা দিতে হয়েছে শুধু একবার নয়, ব হুবার।

শীফন শাড়ী পরিহিতা একজন নারী শুধু ক্ষমতার লোভের জন্য শাহবাগে দাড়িয়ে থাকা মানুষের প্রতিবাদকে উপেক্ষা করে। এই সব শয়তানরূপী মানুষদেরকে বাচানোর জন্য সে আন্দোলনের ডাক দেয়, তার পাষন্ড পান্ডারা প্রথমে মিথ্যাচার ছড়ায় শাহবাগী গালি দিয়ে বলতে থাকে শাহবাগে যারা যায় তারা বেশ্যা। হায় খোদা! কতটা মিথ্যাচার!

সেই শয়তানকে ফাসীতে ঝুলাতে হয় সরকার, এরপর থেকে শুরু হয় স্বাধীনতাবিরোধীদের অ হর্নিশ আক্রমন। ন গ্ন স হিংসতায় পেট্রোল বোমায় পুড়ে মারা যায় কত মানুষ।

দেশের অর্থনীতি বিপর্যস্ত হয়ে যায়। এই সুযোগে দুর্নীতিতে ডুবে থাকা এক ব্যার্থ সরকার কায়েম করতে যাচ্ছে এক স্বৈরাচারী সরকার। প্রতিবেশী দেশ গিলে খাচ্ছে দেশের প্রতিটা অংশ, আমরা অস হায়ের মতো অপেক্ষা করছি একটা দুর্ভিক্ষ আসুক, আমাদের গিলে খাক।

যে আরব বসন্তের স্বপ্ন নিয়ে আমরা পথে নেমেছিলাম তারা কেমন আছে? না, তারাও ভালো নেই। ভেবেছিলো যে ধর্মীয় শাসনে মোড়া আছে মুক্তি আকাঙ্খা, তাতে কোনো মুক্তি মেলেনি।

মিলেছে পাহাড় সমান দুর্নীতি, বেকারত্ব আর ধর্মের নামে অবিচার আর ধর্ষন। মোহমুক্তি ঘটতে শুরু করলে মানুষ আবারও পথে নামে, কিন্তু তাদের আন্দোলনক হাইজ্যাক করে নিয়ে যায় সেই পুরোনো দানব, সেনাবাহিনী। যে অভ্যুথ্থানের স্বপ্ন নিয়ে পথে নেমেছিলো বিপ্লবীরা, ভেবেছিলো বিপ্লব সফল, স্বপ্ন ভেঙ্গে যায় এক লহমায়। মুক্তি এখনও অধরা, মানুষ মরছে পথে ঘাটে। সেই মিশর থেকে সিরিয়া, বাংলাদেশ।



তবু আশায় বুক বাধে। কেন্দ্রিয় ব্যাংকের রিজার্ভে উপচে পড়ে টাকা গুলো, অথচ মানুষ না খে্যে থাকে। কেন মানুষ মরবে যদি সরকারের হাতে এতগুলো টাকা থাকে? সেই সমাধান নিয়ে দেশের হাল ধরে কোথাকার কোন কেজরিওয়ালা। শ্বেত হস্তির মতো জেকে বসা কংগ্রেসকে হটিয়ে ক্ষমতা নেয় আম আদমি নামের কোথাকার কোন দল। মানুষের জন্য দেয়া ভর্তুকিগুলো সময়ের সাথে এক কার্যকরী সিদ্ধান্ত হতে চলেছে।

মুখে হাসি যে ফোটাতেই হবে।

যেই হাসির জন্য নিরন্তর গায়ের ঘাম ফেলে গার্মেন্টস কর্মীরা গড়ে তুলেছে আমাদের দেশের গার্মেন্টস শিল্প, সেই গার্মেন্টস শিল্পে ঘটে যায় মানব জাতীর ইতিহাসে কারখানায় দুর্ঘটনাজনিত সবচেয়ে বড় গণহত্যা। হ্যা, আমি এটা গনহত্যা্ই বলবো। কারন দুদিন আগেও বলা হয়েছিলো বিল্ডিং এর দেয়ালে ফাটল, পিলারে ফাটল। মালিক জোর করে গার্মেন্টস কর্মীদের কাজে ঢুকায়।

সবচেয়ে বড় জেনারেটরটি চালু করার মুহুর্তেই কাগজের মতো ধ্বসে পড়ে আট তলা বিল্ডিং। প্রায় ১১০০ মানুষ মারা যায়। কত হাজার মানুষ আহত হয় তার কোনো হিসেব ছিলো না। আমাদের বাংলাদেশের ইতিহাসে সর্বাপেক্ষা ব্যার্থ সরকারের সবচেয়ে অযোগ্য মন্ত্রী প্রথমে বলেন মাত্র ৫-১০ জন মানুষ মারা গেছে। যখন লাশের সংখ্যা ১০০ ছাড়ালো তখন বললো বিরোধী দল বিল্ডিং ধরে ঝাকাঝাকি করেছে।



মানুষের মাতমে চারিদিক অন্ধকার তখনি ফেসবুকের প্রচারনায়, দেশের প্রতিটা স্কুল কলেজ ভার্সিটি মাদ্রাসা থেকে যুবকেরা ঝাপিয়ে পড়ে। হ্যা, আমাদের কোনো বিদেশী সাহায্য লাগেনি। আমরাই বাচিয়েই হাজারের ওপর মানুষকে ধ্বংসস্তুপ থেকে। কত খেটে খাওয়া মানুষ চিরজীবনের জন্য হয়েছে বিকলাঙ্গ, যাদের গায়ে লেগেছে রক্তের দাগ তারা হয়েছে মানসিক ভাবে অসুস্হ। এত মৃত্যু মানুষ দেখেনি খুব বেশী।

মৃত্যু জিনিসটা যে ভয়াব হ। কিন্তু আমরা পেরেছি, সত্যি পেরেছি

আরো আশার আলো আছে, মুক্তির কথা বলে বিজ্ঞান। যে মানুষ চোখে দেখে না তাদের জন্য সমাধান নিয়ে আসে রেটিনা কীট অথবা যারা জন্ম থেকে কানে শুনে না তাদের জন্য থ্রি ডি প্রিন্টারে কান তৈরীর প্রথম ধাপটা পার করে ফেলেছে। কতগুলো মানুষ জীবনে প্রথম শব্দ শুনছে অথবা রিয়ানার অদ্ভুত কন্ঠের সুরেলা গানে জীবনে প্রথম নাচতে পারছে এর চেয়ে বড় পাওয়া কি আছে?

নাহ, এই পাওয়াটা কোনো ঈশ্বর প্রেরিত দৈবদূত নিয়ে আসেনি অথবা পাওয়া হয়নি কোনো জাদুর কাঠির পরশে। যে এইচআইভির আক্রমনে মানুষ যখন অসহায় হয়ে মৃত্যুর দিন গুনতো, সেই এইচআইভিকে ঠেকিয়ে দিয়ে একটি শিশুকে পুরো পুরি রোগমুক্তি দেয়া গেছে।

অথবা প্রযুক্তির উৎকর্ষতায় আসছে গুগল গ্লাস, মঙ্গলে যান পাঠালো চীন, ভারত। চাঁদে নিজেদের পতাকাও তুলে ফেললো।

সবচেয়ে আকর্ষনীয় খবর হলো ইরান আর আমেরিকা হাত মেলালো আর দুঃখ ময় ঘটনা হলো মুসলমানরাই ১লক্ষ নিরপরাধ মুসলমান নারী পুরুষ শিশুদেরকে রাসায়নিক বোমা দিয়ে হত্যা করলো। অথচ মুসলিম বিশ্ব নিশ্চুপ হয়ে রইলো আশ্চর্যজনক ভাবে



বলতে পারেন ২০১৩ ব্যার্থ অভ্যুথ্থানের বছর, আমি কিন্তু তা বলবো না। যুদ্ধের কেবল শুরু, বিপ্লবের চলছে এখন যৌবনকাল।

বিপ্লব সফল হবেই। এই বিপ্লব শুধু আপনার আমার বা মুসলমান খ্রষ্টান দের নয়, আমাদের সকলের। আমাদের মুক্তি মিলবেই, কিন্তু তার জন্য দরকার সংগ্রাম। সম্রাজ্যবাদী আমেরিকা আজ মাথা নোয়াচ্ছে, ঘর থেকে নারীরা নিজেদের অধিকারের জন্য লড়াই করতে পথে ঘাটে যুদ্ধ করছে। নিরপরাধ মানুষ নিজের অধিকারের পথে নেমে হাতে হাতে ধরে রুখে দিচ্ছে শক্তিশালী ফ্যাসিবাদী স্বৈরতন্ত্রকে।



আজ রাজনীতিকরা ভিলেনের দলে। তাদেরকে পাল্টাতে হবেই, যদি না পাল্টায় তাহলে যেদিন এই বিপ্লব জয়ী হবে, তখন তারা হারিয়ে যাবে এই পৃথিবী থেকে অপমানের সাথে।

খুব মনে পড়ে আমার প্রিয় মানুষটিকে , তার ব্লগের লেখাগুলো। ব্লগের ইদানিং খুব একা লাগে। যদি সে আবার লেখা শুরু করতো, হয়তো বুকটা একটু হালকা হতো।

এত ভালো লেখা লেখে যে, যে কিনা লিখতেই ভালোবাসে, সে কেনো কলম উঠিয়ে রাখবে? আমরা কি এর জবাব চাইতে পারি না এই নতুন বছরে?

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.