বেশ কয়েক বছর আগে একটি মামলার খোজ-খবর নিতে গিয়ে, মতিঝিল থানার অভ্যন্তরে পর্যবেক্ষন করেছিলাম এক অভাবনীয় কান্ডের । সেইদিন মতিঝিল থানার এক দারোগা মাদকদ্রব্য বিক্রির অভিযোগে, ধরে নিয়ে আসে এক যুবক বয়সি মেথরকে । তারপর যথারীতি তাকে থানার হাজতে অন্যান্য আসামীর সাথে ঢুকায় । মেথরটিকে হাজতে ঢুকানোর ঘন্টাখানেক পরে সে এক অভাবনীয় কান্ডের অবতারনা করে বসে । সে হাজতের টয়লেট থেকে ময়লা নিয়ে তারা সারা শরীরে মাখে ।
এই সময় হাজতের অন্যান্য আসামীরা চিৎকার-চেচামেচি শুরু করে দেয় । হাজতিদের চিৎকার-চেচামেচি শুনে কর্তব্যরত পুলিশ সদস্যরা দৌঁড়ে হাজতের গেটে যায় । হাজতের গেটে গিয়ে পুলিশ সদস্যদের চোখ কপালে উঠে যাওয়ার উপক্রম । তারা দেখতে পেল যে, মাদকদ্রব্য বিক্রির অভিযোগে আটক মেথর যুবকের মাথা থেকে পা পর্যন্ত সারা শরীরে টয়লেটের ময়লা মাখা এবং প্রচন্ড দূর্গন্ধে অন্যান্য হাজতিরাসহ উপস্থিত সকলের প্রান বের হয়ে যাওয়ার উপক্রম । তখন উপস্থিত পুলিশ সদস্যরা তাড়াতাড়ি হাজতের গেইট খুলে দেয় এবং ঐ বেটা মেথরকে বের হতে বললে, সে হাজতখানা থেকে বের হয়ে উপস্থিত পুলিশ সদস্যদের ঝাপটে ধরার চেষ্টা করে ।
তখন পুলিশ সদস্যরা তার হাত থেকে রক্ষা পেতে দৌঁড়ে নিরাপদ দূরত্বে সরে যায়, আর ঐ মেথর বেটা হেঁটে হেঁটে সকলের চোখের সামনে দিয়ে বের হয়ে যায় এবং তখন পুলিশ সদস্যরা তাকে ধরার আর কোন চেষ্টাই করেনি । ঐ হাজতখানায় আরও অনেক আসামী থাকা সত্বেও , আর কোন আসামীই কিন্ত অনুরুপ কাজটি করে হাজতখানা থেকে বের হওয়ার চেষ্টা করেনি । কারন, ঐ ধরনের কাজ একমাত্র মেথর বলেই তার বংশগত ঐতিহ্যের কারনে করা সম্ভব হয়েছিল ।
বর্তমানে আমাদের দেশে সবচেয়ে বেশী গনতান্ত্রিক এবং নিয়মতান্ত্রিক রাজনীতির ধারক ও বাহক হিসাবে দাবীকারী দল, আওয়ামীলীগ ক্ষমতাসীন আছে । যদিও দলটি ১৯৭৫ইং সালে একবার সবদলের রাজনীতি নিষিদ্ধ করে, একদলীয় বাকশাল কায়েম করে গনতন্ত্রের কবর রচনা করেছিল ।
তথাপি এই দলটির প্রতি রয়েছে দেশের বিপুল জনগোষ্ঠীর সমর্থন । যার ফল শ্রুতিতে দলটি আবারও রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত হয় একবার ১৯৯৬সালে এবং সর্বশেষ ২০০৮সালে । আগামী ২৪শে জানুয়ারী বর্তমান আওয়ামীলীগ সরকারের পাঁচ বছরের মেয়াদ পূর্ন হতে চলেছে । তাই তাদের মেয়াদ পূর্ন হওয়ার আগেই আগামী ৫ই জানুয়ারী জাতিয় নির্বাচন অনুষ্ঠানের মাধ্যমে নূতন সরকার নির্বাচিত হতে চলেছে । এই নির্বাচনের মাধ্যমে যাতে বর্তমান আওয়ামীলীগই আবার ক্ষমতায় আসতে পারে, তার জন্য শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন আওয়ামী জোট এক নজীরবিহীন নির্বাচন পদ্ধতির প্রবর্তন করেছে ।
বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাই, সবদলের জন্য নির্বাচনে সমান সুযোগ সৃষ্টির উদ্দেশ্যে ১৯৯৬ইং সালে নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচন অনুষ্ঠানের বিধান সংবিধানে সন্নিবেশিত করতে, তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়াকে বাধ্য করেছিলেন । অথচ পঞ্চদশ সংশোধনীর মাধ্যমে বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাই, তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী ও বর্তমান বিরোধীদলীয় নেত্রী খালেদা জিয়াকে নির্বাচনের বাইরে রাখার জন্য সংবিধান থেকে নির্দলীয়, নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচন অনুষ্ঠানের বিধান বাতিল করে দিয়েছেন, যেন বর্তমান প্রধানমন্ত্রী আর কোন দিনও বিরোধীদলে যাবেন না এবং তাঁর আর নির্দলীয়, নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচন করার প্রয়োজন পড়বে না । আবার নির্দলীয়, নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচন অনুষ্ঠানের দাবীতে যাতে বিরোধীদল সুবিধা করতে না পারে, তার জন্য মানবতাবিরোধী অপরাধের মতো অত্যন্ত স্পর্শকাতর বিষয়ের বিচারকে ঢাল হিসাবে ব্যবহার করছেন । আওয়ামীলীগের মতো এমন অভিজ্ঞ ও অতিহ্যবাহীদলের পক্ষে এমন জঘন্য কাজ করা, কি করে সম্ভব হচ্ছে, তা এই দেশের অধিকাংশ জনগন তো বটেই, অনেক আওয়ামী ঘরানার নামকরা বুদ্ধিজীবিদের কাছেও বিস্ময় ঠেকছে । তাছাড়া, আমাদের অধিকাংশ বন্ধুপ্রতিম বিদেশী রাষ্ট্রগুলির পক্ষ থেকেও এইরুপ একদলীয় নির্বাচনের বিপক্ষে তীব্র প্রতিক্রয়া দেখানো হচ্ছে ।
এতো কিছুর পরেও বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এই নির্বাচন অনুষ্ঠানের জন্য বদ্ধপরিকর । যে কোন কিছুর বিনিময়ে হলেও , তিনি এই নির্বাচন করবেনই । কারন, তার পক্ষেই সম্ভব এই ধরনের একটি গনবিরোধী একদলীয় নির্বাচন অনুষ্ঠানের আয়োজন করা, যা তাঁর বংশগত ঐতিহ্যের মধ্যেই পড়ে ।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।