এখনো চলছে সংখ্যালঘুদের ওপর নির্যাতন ও মন্দিরে হামলা। দেশের অনেক স্থানই অনিরাপদ হয়ে গেছে সংখ্যালঘুদের জন্য। বাগেরহাটের মোরেলগঞ্জে দুটি মন্দিরে হামলা হয়েছে। এ ছাড়া বগুড়ায় আগুন দেওয়া হয়েছে কালীমন্দিরে। দেশের বিভিন্ন স্থানে প্রতিবাদ, মানববন্ধন ও সমাবেশ করেছে বিভিন্ন শ্রেণী-পেশার মানুষ ও রাজনৈতিক, সামাজিক, মানবাধিকার সংগঠন।
তারা অবিলম্বে দোষীদের গ্রেফতার ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করেছেন। একই সঙ্গে ভ্রাতৃত্বপূর্ণ পরিবেশে যেন সংখ্যালঘুরা বসবাস করতে পারেন, এ বিষয়ে পদক্ষেপ নিতে বলেছেন সরকারকে। নিজস্ব প্রতিবেদক ও প্রতিনিধিদের পাঠানো খবর-
বাগেরহাট : মোরেলগঞ্জে রামচন্দ পুর ইউনিয়নে বুধবার গভীর রাতে দুটি মন্দিরে আগুন দিয়েছে অজ্ঞাত দুর্বৃত্তরা। এগুলো হচ্ছে মসনি গ্রামের সর্বজনীন শ্রীশ্রী রাধাগবিন্দ সেবাশ্রম ও কামলা-জিলবুনিয়া গ্রামের শ্রীশ্রী শ্যামা মন্দির। হিন্দু-অধ্যুষিত ওই গ্রাম দুটিতে আতঙ্কের সৃষ্টি হয়েছে।
ঘটনায় জড়িত তিনজনকে আটক করেছে পুলিশ। আটকদের রাজনৈতিক পরিচয় নেই বলে জানা গেছে। শ্রীশ্রী রাধা গোবিন্দ সেবাশ্রম মন্দিরের সভাপতি নরেন্দ নাথ মৃধা জানান, বৃহস্পতিবার ভোররাতের দিকে মন্দিরে কে বা কারা রাধাকৃষ্ণ মূর্তি ভাঙচুর করে আগুন লাগিয়ে দেয়। আগুনে প্রতিমাসহ মন্দিরের টিনের চালাসহ বেশ কিছু অংশ পুড়ে যায়। বগুড়া : নন্দীগ্রামে উপজেলার কাথম গ্রামের কালীমন্দিরে আগুন দিয়েছে দুর্বৃত্তরা।
বুধবার মধ্যরাতে তারা মন্দিরের বারান্দায় অগি্নসংযোগ করে পালিয়ে যায়। এতে তেমন ক্ষয়ক্ষতি হয়নি। এর আগে ৫ জানুয়ারি রাতে উপজেলার দাশগ্রামের শফিকুল আলম বাদশার মিয়ার একটি, হিন্দুপাড়ার নিরঞ্জন চন্দে র দুটি, ধুন্দার হিন্দুপাড়ার প্রফুল্ল চন্দে র তিনটি ও বিশ্বনাথ দাশের একটি খড়ের গাদায় আগুন ধরিয়ে দেয় দুর্বৃত্তরা। এদিকে সামপ্রদায়িক হামলা, ভাঙচুর, লুটপাট ও অগি্নসংযোগের প্রতিবাদে নাগরিক সমাজের ব্যানারে মানববন্ধন ও সমাবেশ থেকে মৌলবাদী সামপ্রদায়িক শক্তিকে প্রতিহত করার আহ্বান জানানো হয়েছে। ঢাকা : দেশের বিভিন্ন অঞ্চলের সংখ্যালঘু হিন্দু সম্প্রদায়ের ওপর হামলা, ঘরবাড়িতে অগি্নসংযোগ ও লুটপাটের ঘটনায় দল ও সংগঠনগুলোর পক্ষ থেকে গভীর উদ্বেগ ও ক্ষোভ অব্যাহত রয়েছে।
তারা বলেছে, সংখ্যালঘুরা আমাদের আমানত। হামলাকারীদের অবিলম্বে গ্রেফতার করে শাস্তির ব্যবস্থা করতে হবে। ১৪ দল : নেতা-কর্মীদের পাড়া-মহল্লায় প্রতিরোধ গড়ে তোলার আহ্বান জানিয়েছে ১৪ দল। বঙ্গবন্ধু এভিনিউয়ে আওয়ামী লীগের কেন্দ ীয় কার্যালয়ের সামনে বিক্ষোভ সমাবেশে গতকাল দলটির নেতারা সরকারের কাছে এ দাবি জানান। সমাবেশের পর একটি মিছিল বঙ্গবন্ধু এভিনিউ থেকে পল্টন মোড়ে এসে শেষ হয়।
সমাবেশে আওয়ামী লীগ প্রেসিডিয়াম সদস্য মোহাম্মদ নাসিম বলেন, নির্বাচনে হিন্দু সম্প্রদায় আওয়ামী লীগকে ভোট দেওয়ায় বিএনপি-জামায়াত সারা দেশে নাশকতা সৃষ্টি করছে। একাত্তরের মতো তারা সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের বাড়িঘর পুড়িয়ে দিচ্ছে। মসজিদ, মন্দির, গির্জায় হামলা চালাচ্ছে। এর বিরুদ্ধে পাড়া-মহল্লায় পাহারা বসাতে হবে। মহানগর আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়ার সভাপতিত্বে এতে বক্তব্য দেন ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি রাশেদ খান মেনন, জাসদের শরিফ নুরুল আম্বিয়া, শিরিন আখতার, গণতন্ত্রী পার্টির নুরুর রহমান সেলিম, আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম, খালিদ মাহমুদ চৌধুরী, আফজাল হোসেন, অ্যাডভোকেট কামনুল ইসলাম প্রমুখ।
চরমোনাই পীর : ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের আমির মুফতি সৈয়দ মুহাম্মাদ রেজাউল করিম পীর চরমোনাই এক বিজ্ঞপ্তিতে বলেন, মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ এ দেশে সংখ্যালঘুদের নিরাপত্তা ও সুরক্ষার দেওয়া আমাদের ইমানি দায়িত্ব। এ হামলা ন্যক্কারজনক এবং সরকারের নীরবতা রহস্যজনক। তরিকত ফেডারেশন : দলটির মহাসচিব লায়ন এম এ আউয়াল এক বিবৃতিতে বলেন, হামলাকারী বিএনপি ও জামায়াত ভাঙচুর, অগি্নসংযোগ, লুটপাট ও নির্যাতনসহ যে তাণ্ডবলীলা চালায়, তা একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধকালীন সময়ে পরিচালিত অপকমের পুনরাবৃত্তি, যা স্বাধীনতার ৪২ বছর পর একটি স্বাধীন দেশে কোনোভাবেই মেনে নেওয়া যায় না। হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিষ্টান ঐক্য পরিষদ : ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে এক সংবাদ সম্মেলনে হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিষ্টান ঐক্য পরিষদ নেতৃবৃন্দ সরকারের কাছে সন্ত্রাস দমন, দ্রুত বিচার ও বিশেষ ক্ষমতা আইনের আওতায় মামলা করা, দোষীদের গ্রেফতারসহ নানা দাবি জানান। পরিষদের নেতা অ্যাডভোকেট রানা দাশগুপ্ত, জয়ন্ত কুমার দেব, ড. নিম চন্দ ভৌমিক, কাজল দেবনাথ প্রমুখ এতে উপস্থিত ছিলেন।
যশোর : অভয়নগর উপজেলার চাপাতলায় নির্বাচন-পরবর্তী সহিংসতায় আক্রান্ত হিন্দু সম্প্রদায়ের বাড়িঘর পরিদর্শন করেছেন জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারম্যান ড. মিজানুর রহমান। ক্ষতির দৃশ্য দেখে গতকাল তিনি সাংবাদিকদের বলেন, যারা এ অপকর্ম করেছে তাদের কোনো রাজনৈতিক পরিচয় নেই। তাদের রাজনৈতিক পরিচয় থাকা উচিত নয়। দলমতের ঊধের্্ব উঠে তাদের সন্ত্রাসী হিসেবে চিহ্নিত করে আইনের আওতায় আনতে হবে। তিনি আরও বলেন, হামলাকারীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির মাধ্যমে স্থানীয় মানুষের মধ্যে আস্থা ও স্বস্তি ফিরিয়ে আনতে হবে।
এ সময় উপস্থিত ছিলেন জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের সদস্য অ্যারোমা দত্ত, পরিচালক ইমান উদ্দিন কবির, আরফান আশীষ, যশোরের জেলা প্রশাসক মোস্তাফিজুর রহমান, জেলা পূজা উদযাপন পরিষদের সভাপতি অসীম কুণ্ডু, সাধারণ সম্পাদক দীপংকর দাস রতন, অভয়নগর উপজেলা চেয়ারম্যান আবদুল মালেক প্রমুখ। সাতক্ষীরা : জামায়াত-শিবিরের তাণ্ডবের কারণে জনমনে আতঙ্ক ও উৎকণ্ঠা থাকলেও তা কমতে শুরু করেছে। গৃহহারা সংখ্যালঘুরাও ফিরছেন নিজ বসতভিটায়। জামায়াত-শিবিরের সহিংসতার বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তুলতে সংগঠিত হচ্ছে জেলা আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা। দিনাজপুর : সদর উপজেলার চেহেলগাজী ইউনিয়নের কর্নাই বাজার এলাকায় নির্বাচন-পরবর্তী সহিংসতায় হিন্দু সমপ্রদায়ের মধ্যে আতঙ্ক বিরাজ করছে।
পুলিশ-র্যাবের টহল থাকলেও দিনাজপুর থেকে ৯ কিলোমিটার দূরে কর্নাই গ্রামের ক্ষতিগ্রস্তরা মনে করছেন ফের হামলা হতে পারে। তবে শিগগিরই আতঙ্ক কেটে যাবে বলে জানিয়েছে প্রশাসন। গতকাল সদর উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে শীতবস্ত্র ও খাদ্যসামগ্রী ক্ষতিগ্রস্তদের মধ্যে বিতরণ করা হয়। রাঙামাটি : সংখ্যালঘু সমপ্রদায়ের ওপর হামলার প্রতিবাদে বিক্ষোভ মিছিল ও প্রতিবাদ সমাবেশ করেছে বাংলাদেশ পূজা উদ্যাপন পরিষদ ও সনাতন যুব পরিষদ। গতকাল শহরের পৌর চত্বর থেকে এ বিক্ষোভ মিছিল বের করা হয়।
মিছিল শেষে সনাতন সমপ্রদায়ের হাজার হাজার নারী-পুরুষ সংখ্যালঘু সমপ্রদায়ের বাড়িঘরে হামলা, নির্যাতন, অগি্নসংযোগ ও লুটপাটের প্রতিবাদে ক্ষোভ প্রকাশ কারেন। সমাবেশে সভাপতিত্ব করেন সনাতন যুব পরিষদের সভাপতি জগন্নাথ ভদ্র। বক্তব্য দেন জেলা পূজা উদযাপন পরিষদের সাধারণ সম্পাদক পঞ্চানন ভট্টাচার্যসহ নেতারা। রংপুর : সংখ্যালঘুদের ওপর হামলা-নির্যাতন বন্ধের দাবিতে বিভিন্ন রাজনৈতিক, সামাজিক ও মানবাধিকার সংগঠন গতকাল নগরীতে বিক্ষোভ সমাবেশ ও মানববন্ধন করে। দ্রুত সহিংসতা বন্ধে সরকারের প্রতি দাবি জানায় তারা।
'জাগো রংপুর' দুপুরে নগরীর জাহাজ কোম্পানি মোড়ে এক ঘণ্টার মানববন্ধন ও সমাবেশ করে। এতে রাজনৈতিক, সামাজিক ও পেশাজীবী সংগঠনের শত শত নেতা-কর্মী অংশ নেন।
শেরপুর : ঝিনাইগাতীর বাঁকাকুড়া গির্জার গেটে অগি্নসংযোগ এবং দেশের বিভিন্ন এলাকায় সংখ্যালঘুদের ওপর হামলা-নির্যাতনের প্রতিবাদে মানববন্ধন করেছে গারো ছাত্ররা। ঝিনাইগাতী উপজেলা পরিষদের সামনে বাংলাদেশ গারো ছাত্র সংগঠনের (বাগাছাস) ব্যানারে গতকাল এ মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়। নওগাঁ : সারা দেশে সংখ্যালঘুদের ওপর হামলার প্রতিবাদে মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করেছে সামপ্রদায়িকতাবিরোধী নাগরিক মঞ্চ জেলা কমিটি।
গতকাল স্থানীয় ব্রিজ মোড়ের মুক্তিযুদ্ধ ভাস্কর্য চত্বরে কমিটির মুখপাত্র শ্যামল দাসের নেতৃত্বে এতে বক্তব্য রাখেন নওগাঁ পৌর মেয়র নজমুল হক সনি, বাসদ সমন্বয়ক জয়নাল আবেদীন মুকুল প্রমুখ। ঝিনাইদহ : সংখ্যালঘু সমপ্রদায়ের ওপর হামলা, নির্যাতনের প্রতিবাদে গতকাল জেলা জজ আদালতের সামনের রাস্তায় সম্মিলিত আইনজীবী পরিষদ মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করে।
নেতৃবৃন্দ সংখ্যালঘু সমপ্রদায়ের উপর হামলা নির্যাতনের তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়ে অবিলম্বে দোষীদের গ্রেফতার ও দৃষ্টান্তমুূলক শাস্তির দাবি জানান। শেষে বক্তব্য রাখেন সম্মিলিত আইনজীবী পরিষদ নেতা অ্যাডভোকেট আজিজুর রহমান, ইসমাইল হোসেন, শফিউল্লাহ বাচ্চু, লিয়াকত আলী, আবদুল মালেক, মোস্তাফিজুর রহমান বরসাত প্রমুখ।
রাজবাড়ী : বিভিন্ন স্থানে সংখ্যালঘু সমপ্রদায়ের ওপর হামলার প্রতিবাদে গতকাল মানববন্ধন ও সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়েছে।
শ্রীকৃষ্ণ সেবা সংঘ জেলা শাখার উদ্যোগে স্থানীয় শহীদ স্মৃতি মুক্তিযোদ্ধা চত্বরে ঘণ্টাব্যাপী মানববন্ধন শেষে বক্তব্য রাখেন অশোক বাগচী, শিবুপদ বিশ্বাস, গণেশ মিত্র প্রমুখ। বক্তারা হামলাকারীদের অবিলম্বে গ্রেফতার এবং সংখ্যালঘু সমপ্রদায়ের নিরাপত্তা নিশ্চিতের দাবি জানান।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।