বহির্বিশ্বে নিজেদের ভাবমূর্তি বাড়াতে এবার পরিকল্পিতভাবে কূটনৈতিক লড়াইয়ে নামছে সরকার। বিশেষ করে সম্পর্কোন্নয়নে জোর দেওয়া হচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র, ব্রিটেন, ইউরোপিয়ান ইউনিয়নভুক্ত দেশগুলোর সঙ্গে। সাংবিধানিক ধারাবাহিকতা রক্ষার লক্ষ্যে বিগত জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠানে বর্তমান সরকার যেভাবে বাধ্য হয়েছে, তা তাদের কাছে তুলে ধরা হবে। এ ব্যাপারে সংশ্লিষ্ট দেশগুলোয় বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত ও হাইকমিশনারদের কাছে দিকনির্দেশনাও পাঠানো হচ্ছে।
জানা গেছে, গত পাঁচ বছরের কূটনৈতিক ব্যর্থতাগুলোকে সামনে রেখে কাজ করতে চায় পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়।
এ ব্যাপারে শুধু পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ওপরই নির্ভরশীলতা থাকছে না। প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে সব কিছু মনিটরিং করা হবে। এ ক্ষেত্রে সমন্বয়কারীর দায়িত্ব পালন করবেন প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা গওহর রিজভী। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে মন্ত্রী হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হবে প্রধানমন্ত্রীর আস্থাভাজন কূটনৈতিক প্রজ্ঞাসম্পন্ন কাউকে। এ ক্ষেত্রে সতর্কতামূলক অবস্থানে রয়েছেন প্রধানমন্ত্রী।
সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডা. দীপু মনির ব্যর্থতাগুলো প্রধানমন্ত্রীর টেবিলে পাঠিয়েছে একাধিক সংস্থা। গত পাঁচ বছর মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রসহ অনেক দেশের সঙ্গে সম্পর্ক অবনতির জন্য দীপু মনিকেই দায়ী করা হচ্ছে।
বর্তমানে বিভিন্ন দেশ থেকে যে অভিনন্দন বার্তা সরকার পাচ্ছে, তাকে ইতিবাচকভাবেই দেখছে ক্ষমতাসীনরা। বিশেষ করে চীন ও রাশিয়ার অভিনন্দনকে সরকারের কূটনৈতিক মহল তাৎপর্যপূর্ণ বলে মনে করছে। অভিজ্ঞ কূটনীতিকরা মনে করেন, সরকারের বাস্তবমুখী ইতিবাচক কূটনীতির ওপরই নির্ভর করছে বহির্বিশ্বের সঙ্গে ভবিষ্যৎ সম্পর্কের ধারাবাহিকতা।
এ প্রসঙ্গে সাবেক কূটনীতিক ফারুক চৌধুরী বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, বহির্বিশ্বের সঙ্গে কূটনৈতিক সম্পর্ক জোরদার করতে হলে বর্তমান সরকারকে আগে বাংলাদেশে যে নেতিবাচক রাজনীতি চলত তা থেকে উত্তরণে কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে। রাজনীতিকে ইতিবাচক প্রক্রিয়ায় নিয়ে যেতে সব পক্ষকেই এগিয়ে আসতে হবে। বর্তমান রাজনৈতিক সমস্যা সমাধানে প্রধান দুই দলকে সংলাপে বসতে হবে। এরপর যথাশীঘ্রই সবার কাছে একটি গ্রহণযোগ্য নির্বাচন উপহার দিতে হবে। তাহলে স্বাভাবিকভাবেই বাইরের দেশের সঙ্গে কূটনৈতিক সম্পর্কের উন্নয়ন ঘটবে।
আর এটা রাতারাতি উন্নয়ন করা সম্ভব নয়।
বিশিষ্ট কূটনীতিক হুমায়ুন কবীর বলেন, বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে বিদেশিদের বক্তব্য শোনার কিছুই নেই। তবে আমাদের বন্ধুরাষ্ট্র ও সংস্থা যদি কোনো পরামর্শ দেয় তা আমরা ভেবে দেখতে পারি। তিনি বলেন, একটি স্বাধীন দেশের সরকার প্রতিষ্ঠার জন্য কোনো ধরনের স্বীকৃতির প্রয়োজন নেই। বিদেশি রাষ্ট্রগুলো অভিনন্দন জানাবে, এটাই স্বাভাবিক কূটনৈতিক শিষ্টাচার।
তবে বাংলাদেশের বর্তমান বাস্তবতায় অভিনন্দনের বিষয়টি উভয় পক্ষ থেকেই বড় করে দেখা হচ্ছে। সাম্প্রতিক কূটনৈতিক ঘটনাবলি সম্পর্কে দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে হুমায়ুন কবীর বলেন, বন্ধুরাষ্ট্ররাও বাংলাদেশের জনগণের দাবির বাইরে কিছু বলেনি। তারা বলেছে, এ দেশের জনগণ যেভাবে চায় সেভাবেই সংকট সমাধানের পরামর্শ তাদের। সরকার যদি জনগণের চাহিদা পূরণ করে তাহলেই সংকট মিটে যায়। এর পাশাপাশি বিরোধী দলকে সংঘাত বন্ধ করতে হবে।
সরকারকে অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের দিকে যেতে হবে। তাহলেই কূটনৈতিক সফলতা আসবে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. ইমতিয়াজ আহমেদ বলেন, বড় দুটি রাজনৈতিক দল কূটনৈতিক ইস্যুটিকে রাজনৈতিক চ্যালেঞ্জে পরিণত করেছে। এভাবে কূটনৈতিক সম্পর্ক গতিশীল হয় না। তিনি বলেন, বিদেশিরা কোনো পক্ষকে সরাসরি সমর্থন দেবে না।
নিজেদের মধ্যে সমঝোতা সৃষ্টি করেই কূটনৈতিক সম্পর্ক জোরদার করতে হবে।
বাংলাদেশ পোশাক প্রস্তুত ও রপ্তানিকারক সমিতির (বিজিএমইএ) সাবেক সভাপতি আনোয়ার-উল আলম চৌধুরী পারভেজ বলেন, আমেরিকা ও ইউরোপের দেশগুলো বলছে বাংলাদেশে গণতন্ত্রচর্চা হচ্ছে না। তারা সংখ্যালঘু নির্যাতন নিয়েও প্রশ্ন তুলেছে। এ অবস্থায় জিএসপি নিশ্চয়তা পেতে বিএনপির সঙ্গে সংলাপ করতে হবে সরকারকে। একই সঙ্গে সরকার যে জনগণের রায় নিয়ে দেশ পরিচালনা করছে, তাও বিদেশি দেশগুলোর কাছে প্রমাণ করতে হবে।
তিনি আরও বলেন, সাম্প্রদায়িক সন্ত্রাস ও মানবাধিকার পরিস্থিতি শান্ত করতে সরকারকে কার্যকর উদ্যোগ নিতে হবে। তারা (বিদেশিরা) যেন বোঝে সরকার একতরফা কাজ করছে না।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।