আরজ আলী মাতুব্বরের নাম হয়ত আপনারা সবাই
শুনেছেন। বাংলাদেশের নাস্তিকরা আরজ
আলী মাতুব্বর বলতে অজ্ঞান ! বাংলাদেশের
নাস্তিকরা আরজ আলী মাতুব্বর কে তাদের ঈশ্বর
মানে। আরজ আলী মাতুব্বর যা বলবে বাংলাদেশের
নাস্তিকরা তাই চোখ বুঝে মেনে নিবে। দারিদ্রতার
কারনে আরজ আলী মাতুব্বর
বেশী পড়াশুনা করতে পারেন নি। তবে আরজ
আলী মাতুব্বর একজন স্বশিক্ষিত ব্যক্তি ছিলেন।
বরিশাল
পাবলিক লাইব্রেরির প্রায় সকল বই উনি পড়ে ফেলেছিলেন।
পেশা হিসাবে আরজ আলী মাতুব্বর বেছে নিয়েছিলেন
জমি জরিপ বা আমিনের কাজ। “সত্যের সন্ধান” ও
“সৃষ্টি রহস্য” আরজ আলী মাতুব্বরের দুইটা বিখ্যাত বই।
আরজ আলী মাতুব্বর উনার “সত্যের সন্ধান” নামক
বইতে মুসলমানদের আখিরাত বা পরকালীন বিশ্বাস
এবং হাশর মিযান পুলসিরাত এই
ঘটনাগুলিকে একটা আজগুবি বিশ্বাস বলে অভিহিত
করেছেন। আর আরজ আলী মাতুব্বরের এই কথার সূত্র
ধরেই বাংলার আবাল নাস্তিকরা বলা শুরু
করেছে যে আখিরাত বলতে নাকি কিছু নেই।
আচ্ছা আমরা এখন একটু
চিন্তা করে দেখি তো মুসলমানদের আখিরাত বিশ্বাস
কি আসলেই একটা আজগুবি বিশ্বাস ? হযরত আদম
আলাইহিস সাল্লাম থেকে শুরু করে রাসূলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম পর্যন্ত এই
পৃথিবীতে অনেক নবী রাসুল এসেছিলেন এটা সত্য। হযরত
ঈসা আলাইহিস সাল্লাম, হযরত মূসা আলাইহিস
সাল্লাম, হযরত ইব্রাহিম আলাইহিস সাল্লাম
উনারা যে এই পৃথিবীতে এসেছিলেন, এই পৃথিবীর মানুষের
মাঝে দ্বীন ইসলাম প্রচার করেছেন এর হাজার
হাজার প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন রয়েছে। এমনকি সকল
নবী রাসূলের কবর ও চিহ্নিত করা আছে।
অর্থ্যাৎ Archaeology বা প্রত্নতাত্ত্বিক
মতে এবং Anthropology বা নৃতত্ত্বমতে এই
পৃথিবীতে হাজার হাজার নবী রাসূল রা এসেছিলেন
এই ব্যাপারে সকল ঐতিহাসিক, প্রত্নতাত্ত্বিক ও
নৃতাত্ত্বিকরাও একমত। আচ্ছা সকল নবী রাসূল
রা কি একই সময় এসেছিল ? না হাতে গোনা কয়েকজন
নবী রাসুল ছাড়া আর সকল নবী রাসুলদের আসার সময়
ভিন্ন ভিন্ন ছিল।
এক এক নবী এক এক জাতির
কাছে এসেছিলেন। নবী রাসূলরা যেই
জাতিগুলি কাছে এসেছিলেন সেই জাতিগুলির ভাষা,
জীবন যাত্রা ও পৃথিবীতে অবস্থানের সময়
পুরাপুরি ভিন্ন ছিল। শুধু তাই নয় বেশীর ভাগ
ক্ষেত্রে নবী রাসুলরা যেই জাতিগুলির কাছে এসেছিল
সেই জাতিগুলির মাঝে কোন পারস্পরিক কোন যোগাযোগও
ছিল না। আর যোগাযোগ থাকবেই বা কীভাবে এক এক
নবী রাসুল রা এসেছিলেন এক এক সময়ে। যেমন হযরত নূহ
আলাইহিস সাল্লাম হযরত ইব্রাহিম আলাইহিস
সাল্লামের অনেক পূর্বে এসেছিলেন।
আবার হযরত
মূসা আলাইহিস সাল্লাম হযরত ঈসা আলাইহিস
সাল্লামের অনেক অনেক পূর্বে এসেছিলেন।
কিন্তু সকল নবী রাসূলদেরর মূল কথাই ছিল তাওহীদ
রিসালত ও আখিরাত। নবী রাসূল রা কি শুধু মাত্র
লা ইলাহা ইল্লাল্লাহের দাওয়াত দিছেন ? না সকল
নবী রাসূলরাই একটা ইসলামী জীবন ব্যবস্থার
দাওয়াত দিছেন। একমাত্র আদম আলিহিস সাল্লাম ও
হযরত সুলায়মান আলাইহিস সাল্লাম ছাড়া আর সকল
নবী রাসূল রা ঐ সময়কার জালেম শাসকের
বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করেছিলেন। যেমন হযরত ঈসা আলাইহিস
সাল্লাম ইহুদীদের সুদ প্রথার বিরুদ্ধে, হযরত
মুসা আলাইহিস সাল্লাম ফেরাঊনের বিরুদ্ধে, হযরত
দাঊদ আলাইহিস সাল্লাম তালুতের বিরুদ্ধে সংগ্রাম
করেছেন।
এই সকল নবী রাসূলরা কিন্তু নব্যুয়ত পাওয়ার
আগেও তাদের সমাজে একজন ভাল মানুষ হিসাবেই
পরিচিত ছিলেন। নবী হওয়ার আগেই উনাদের মাঝে কোন
লোভ লালসা ছিল না এবং নবী হওয়ার পরেও
উনারা কাফেরদের অত্যাচারের কারনে দ্বীন
ইসলামের প্রচার থেকে এক চুলও সরে যান নি।
এমনকি অনেক নবী রাসূলকে কাফের রা হত্যাও
করে ফেলেছিল। তাইলে সকল নবী রাসুলদের
পক্ষে কি মিথ্যা কথা বলা সম্ভব ? আর সকল
নবী রাসুলরা একই ইসলামী জীবন ব্যবস্থার
কথা তাঁরা কার কাছ থেকেই বা শিখল ? এ
থেকে বুঝা যায় এক ঐশী বাণী বা ওহী উনাদের
কাছে এসেছিল আল্লাহ সুবহানাতায়ালার তরফ
থেকে যার জন্য সময়, ভাষা,
জীবনযাত্রা আলাদা হলেও সকল নবী রাসুলদের মূল
কথাই ছিল আল্লাহ সুবহানাতায়ালা ছাড়া আর কোন
ইলাহ নাই, আখিরাত সত্য। আর প্রায় প্রত্যেক ধর্ম
গ্রন্থের কিতাব তা যত বিকৃতই হোক না কেন যেমন
খ্রিষ্টানদের বাইবেল, ইহুদীদের তালমুদ, হিন্দুদের ধর্ম
গ্রন্থ বেদ সকল ধর্মগ্রন্থেই রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়া সাল্লামের আগমন সম্পর্কিত
ভবিষ্যৎবাণী গুলি উল্লেখ করা আছে।
আর
বার্ণাবাসের বাইবেল টা একটু উল্টাইলেই
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের
আগমন সম্পর্কিত ভবিষ্যৎবাণী গুলি খুব সহজেই চোখে পড়ে।
ডাক্তার জাকির নায়েকের Similarities Between isLam
and Hinduism এই Lecture টা শুনলে স্পষ্টই বুঝা যায়
যে হিন্দুদের ধর্ম গ্রন্থ বেদে সহস্র হাজার বার
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম
যে এই পৃথিবীতে আসবেন তা আগে থেকেই বলা হয়েছে।
রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম
যে তাওহীদ রিসালত ও আখিরাতের দাওয়াত দিয়েছেন
ঠিক তেমনি হযরত ঈসা আলাইহিস সাল্লাম, হযরত
মুসা আলাইহিস সাল্লাম, হযরত ইবরাহিম আলাইহিস
সাল্লাম এরকম সকল নবী রাসূল রা একই
কথা বলেছেন। এই তাওহীদ রিসালত আখিরাতের
কথা এই পৃথিবীতে মানব জাতির আগমনের পর থেকে শুরু
করে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়া সাল্লাম পর্যন্ত সকল নবী রাসুলরাই
বলে গিয়েছেন। জ্বলজ্যান্ত ইতিহাস এর সাক্ষী।
তাইলে এখন কোন যুক্তিতে আপনি সকল নবী রাসূলদের
কথা অস্বীকার করবেন? এখন আপনি যদি বলেন
যে আখিরাত বলতে কিছু নাই তাইলে আপনি এই
পৃথিবীতে আসা সকল নবী রাসুলের
কথা টা কে অস্বীকার করলেন। আপনি একটু
ঠান্ডা মাথায় চিন্তা করে দেখুন তো ১ লাখ ২৪
হাজার বা ২ লাখ ২৪ হাজার নবী রাসূলরা এই
পৃথিবীতে এসেছিলেন যারা সবাই এই মানব
জাতিকে তাওহীদ রিসালত ও আখিরাতের দাওয়াত
দিয়েছেন তাইলে এতগুলি নবী রাসুলের
কথা কি মিথ্যা হতে পারে ? আর ইসলামই কিন্তু এই
পৃথিবীর সবচেয়ে প্রাচীন ধর্ম কারন এই পৃথিবীর প্রথম
মানব হযরত আদম আলাইহিস সাল্লাম থেকেই দ্বীন
ইসলামের সূচনা। আর আল কোরআনেই কিন্তু
বলা হয়েছে যে হযরত ঈসা আলাইহিস সাল্লাম, হযরত
মুসা আলাইহিস সাল্লাম উনারা সবই মুসলমান ছিলেন
এবং উনারা সবাই দ্বীন ইসলামের কথাই বলেছেন। আর
একমাত্র দ্বীন ইসলাম ছাড়া আর সকল ধর্মেই কিন্তু
আল্লাহ সুবহানাতায়ালার সাথে শিরক
বা অংশীবাদ করা হয়েছে। যেমন খ্রিষ্টানরা হযরত
ঈসা আলাইহিস সাল্লাম কে আল্লাহ্র পুত্র
বানিয়ে নিয়েছে নাউযুবিল্লাহ আর ইহুদীরা হযরত
উযাইর আলাইহিস সাল্লাম কে আল্লাহ্র পুত্র
বানিয়ে নিয়েছে নাউযুবিল্লাহ।
আর হিন্দুধর্মের
কথা তো বাদই দিলাম। তাই আজকে যারা মূর্খ আরজ
আলী মাতুব্বরের কথায় আখিরাত কে অস্বীকার করছেন
তারা কি বুদ্ধিমান নাকি যারা ১ লাখ ২৪ হাজার
বা ২ লাখ ২৪ হাজার নবী রাসূলদের
কথা দ্বারা আখিরাতের উপর বিশ্বাস আনছেন
তারা বুদ্ধিমান ? অবশ্যই মুসলমানরাই
হচ্ছে সবচেয়ে বুদ্ধিমান জাতি যারা হাজার হাজার
নবী রাসুলদের কথা মত আখিরাতের উপর ঈমান এনেছে।
এই আরজ আলী মাতুব্বর করে করে অনেক মুসলমান ঘরের
ছেলে নাস্তিক হয়েছে।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।