আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

মেরিল স্ট্রিপ এক জীবন্ত কিংবদন্তী অভিনেত্রীর নাম

শিক্ষা আনে চেতনা , চেতনা ঘটায় বিপ্লব আর বিপ্লব দেয় মুক্তি

মেরিল লুইস স্ট্রিপ সংক্ষেপে সারা বিশ্বব্যাপী যিনি মেরিল স্ট্রিপ নামে পরিচিত । একাধারে তিনি অ্যামেরিকান থিয়েটার , টেলিভিশন এবং ফিল্ম অভিনেত্রী । তাকে বলা হয় থাকে সর্বকালের সেরা অভিনেত্রীদের একজন । তার অসাধারণ অভিনয় শৈলীর গুনে চলচিত্র জগতের এমন কোন পুরুস্কার নেই যাহা মেরিল স্ট্রিপ অর্জন করেননি । আসুন এক নজরে দেখে নেওয়া যাক এই জীবন্ত কিংবদন্তীর সংক্ষিপ্ত জীবনী ।



২২ জুন ১৯৪৯ সালের অ্যামেরিকার নিউ জার্সি অঙ্গরাজ্যের সামিট শহরে জন্মগ্রহন করেন এই সময়কার শক্তিমান এই হলিউড অভিনেত্রী । ছোটবেলাতে থেকে সে প্রেসবিটারিয়ান (রিফর্মড প্রোটেস্টান্টিজিম ) হিসাবে বড় হয়ে উঠছিলো । সামিট শহরে জন্মগ্রহন করলেও সে মুলত বেড়ে উঠেছে নিউ জার্সির অপর একটি শহর বার্নার্ডসভিলে । বাবা ছিলেন ফার্মাসিউটিকাল এক্সিকিউটিভ এবং মা ছিলেন বাণিজ্যিক শিল্পী ও আর্ট এডিটর ।

তার শিক্ষা জীবন শুরু হয় বার্নার্ডস হাই স্কুল থেকে , পরে সে বি.এ পাশ করেন ভাসসার কলেজ থেকে নাটকের উপর ও মাস্টার্স অফ ফাইন আর্টস শেষ করেন ইয়েল স্কুল অফ ড্রামা থেকে ।

ইয়েল স্কুল অফ ড্রামা থেকে তার শিক্ষাজীবন শেষের পর নিউ ইয়র্ক শেক্সপীয়ার উৎসব এ বেশ কিছু কিছু শেক্সপীয়ার এর নাটকে তিনি অভিনয় করেন এর আগে সে বেশ কিছুদিন থিয়েটার আর্টিস্ট হিসেবেও কাজ করেন ।

মেরিল স্ট্রিপ অভিনীত প্রথম ছবি “ জুলিয়া “ মুক্তি পায় ১৯৭৭ সালে , ছবিতে তার অভিনয় চরিত্র ছোট কিন্তু কেন্দ্রীয় চরিত্রের একটি ফ্ল্যাশব্যাক দৃশ্যর সময় । ওই সময় স্ট্রিপ তার বন্ধু বা পার্টনার অভিনেতা জন কেজাল এর সাথে নিউ ইয়র্ক শহরে বাস করতেন একই সময়টাতে তার বন্ধু অভিনেতা জন কেজালের বোন ক্যান্সার ধরা পরে । ১৯৭৮ সালে স্ট্রিপ “ দি ডিয়ার হান্টার “ ছবিতে ছোট একটি চরিত্রে কাজ করার সুযোগ পান ছোট চরিত্রে সুযোগ পাওয়ার পরেও সে খুব আনন্দিত ছিলো কারন তার বন্ধু জন কেজাল ও এই ছবিটিতে তার সাথে সহ অভিনেতা ছিলেন এবং ছবিতে ছোট রোল থাকা সত্ত্বেও তার অনবদ্য অভিনয়ের কারনে ছবিটির জন্য তিনি চলচিত্রের সেরা পুরুস্কার হিসাবে খ্যাত অ্যাকাডেমি এ্যাওয়ার্ড (অস্কার) এ সহ অভিনেত্রীর ও গোল্ডেন গ্লোব অ্যাওয়ার্ড এ প্রধান চরিত্রে নমিনেশন পান ।

১৯৭৮ সালে তিনি টেলিভিশনে মিনি সিরিজ ” হলোকস্ট “ এ কেন্দ্রীয় চরিত্রে অভিনয় করার সুযোগ পান এখানে তার রোল ছিলো নাৎসি যুগে একজন জার্মান মহিলার যার স্বামী ছিলো কিনা একজন ইহুদী শিল্পী ।

পরে তিনি স্বীকার করেন শুধুমাত্র টাকার জন্য তিনি এই চরিত্রে অভিনয়ের জন্য রাজী হয়েছিলেন । স্ট্রিপ মিনি সিরিজটি করাকালীন তাকে ছবিজনিত কাজে জার্মানি ও অষ্ট্রিয়া ভ্রমণ করতে হয় ঠিক ওই সময়টাতে কেজেল অসুস্থ অবস্থায় নিউ ইয়র্ক এ অবস্থান করছিলেন । যখন স্ট্রিপ নিউ ইয়র্ক ফিরে আসলো তখন কেজেলের অসুস্থতা দিনে দিনে বৃদ্ধি পাচ্ছিলো ।

অবশেষে অভিনেতা জন কেজেল ১৯৭৮ এর ১২ই মার্চ মৃত্যুবরন করেন, তার মৃত্যুর শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত মেরিল স্ট্রিপ তার অক্লান্ত সেবা চালিয়ে গেছেন তার প্রিয় মানুষটির প্রতি । কেজেল এর মৃত্যুর পর তিনি ১৯৭৮ সালের ৩০ সেপ্টেম্বর দ্বিতীয় বারের মতো বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হন ডন গামার এর সাথে যিনি পেশায় একজন ভাস্কর এবং আজ পর্যন্ত তাদের বিবাহবন্ধন অটুট আছে , এবং তারা চারটি সন্তানের পিতা মাতা ।



কেজেল এর মৃত্যুর পর স্ট্রিপ আরো বেশ কিছু ভালো সিরিজ এ কাজ করেছেন এবং ততদিনে তার ভক্তের সংখ্যা অনেক ছারিয়ে গেছে তবে মিনি সিরিজ “ হলোকস্ট “ তাকে বিখ্যাত করে তোলে এবং এনে দেয় লিড অভিনেত্রীর জন্য প্রাইমটাইম ”এমি “ পুরস্কার ।

১৯৭৯ এ বিখ্যাত হলিউড পরিচালক “ উডি অ্যালেন “ পরিচালিত “ ম্যানহাটান “ ছবিতে সাপোরটিং চরিত্রে কাজ কাজ করার সুযোগ পান । তবে তিনি মূল ব্রেক পান ১৯৭৯ সালে রবার্ট বেন্টন পরিচালিতো “ ক্র্যামার ভার্সেস ক্রামার “ ছবিতে এখানে তার সহ অভিনেতা ছিলেন হলিউডের আর এক শক্তিমান অভিনেতা ডাস্টিন হফম্যান এবং এই ছবিতে অভিনয়ের সুবাধে জিতে নেন ফিল্ম জগতের সেরা দুইটি দামী পুরস্কার সহ অভিনেত্রী হিসেবে অস্কার এবং গোল্ডেন গ্লোব অ্যাওয়ার্ড ।

১৯৮১ সালে ” দি ফ্রেঞ্চ লেফটেন্যান্ট “ এবং ২০১১ সালে “ দি আইরন লেডি “ এর জন্য সেরা অভিনেত্রী হিসাবে জিতে নেন অ্যাকাডেমি অ্যাওয়ার্ড ( অস্কার ) । এরপর আর থেমে থাকেনি তার অভিনয়ের দক্ষশীলতা তার ছবি আসা মানে কোন একটা অ্যাওয়ার্ড এ তার নমিনেশন নিশ্চিন্ত,অনেক সাধারণ ছবিকে তিনি তার অভিনয় দিয়ে অসাধারণ করে তুলেছেন ।

তার এতো বিখ্যাত ছবি আছে যা নাম বলে শেষ করা যাবেনা ।

• আজ পর্যন্ত তিনি অ্যাকাডেমি অ্যাওয়ার্ড এ নমিনেশন পেয়েছেন ১৮ বার যাহা একটি বিরল রেকর্ড ও বটে এমন কি এবছর ২০১৪ তে ও তিনি আছেন সেরা অভিনেত্রীর তালিকাতে , তিনি এই পর্যন্ত ৩ বার অ্যাকাডেমি অ্যাওয়ার্ড পেয়েছেন ২ বার কেন্দ্রিও চরিত্রে এবং একবার সহ-অভিনেত্রীর চরিত্রে ।
• গোল্ডেন গ্লোব অ্যাওয়ার্ড নমিনেশন পেয়েছেন ২৮ বার জিতেছেন ৮ বার ।
• বার্লিন ইন্টারন্যাশনাল অ্যাওয়ার্ড এ নমিনেশন পেয়েছেন ৩ বার এবং ৩ বার তিনি জিতেছেন।
• কান ফিল্ম ফেস্টিভ্যাল অ্যাওয়ার্ড এ নমিনেশন পেয়েছেন ১ বার এবন জিতেছেন ১ বার ।


• বাফটা ( ব্রিটিশ অ্যাকাডেমি অফ ফিল্ম এন্ড টেলিভিশন আর্টস ) নমিনেশন পেয়েছেন ১৪ বার জিতেছেন ২ বার ।
• এমি অ্যাওয়ার্ডস নমিনেশন পেয়েছেন ৩ বার পেয়েছে ২ বার ।
• গ্রামী নমিনেশন পেয়েছেন ৫ বার একবারো পুরুস্কার পান ।
• এস.এ.জি ( দি স্ক্রীন এক্টরস গিল্ড অ্যাওয়ার্ড ) নমিনেশন পেয়েছেন ১৬ বার পেয়েছেন জিতেছেন ২ বার ।
• টনি অ্যাওয়ার্ডস এর নমিনেশন পেয়েছেন ১ বার কিন্তু জিততে পারেননি ।



আরো অনেক অ্যাওয়ার্ড এ তিনি ভূষিত হয়েছেন সব মিলিয়ে অন্যান্য অ্যাওয়ার্ড সহ তিনি নমিনেশন পেয়েছেন ২১৭ খানা এবং জিতেছেন সর্বমোট ১১২ টি ।

মেরিল স্ট্রিপ শুধু একজন অভিনেত্রী নহে তিনি লোকহিতৈষণা কাজের সাথেও জড়িত আছেন তিনি ন্যাশনাল ওমেন্স হিস্টোরি মিউজিয়াম এর মুখপাত্র তার করা ছবি আয়রন লেডি থেকে কাজ করে তিনি যে পারিশ্রমিক পেয়েছেন তা তিনি এই সংস্থা কে দান করে দিয়েছেন । ২০১২ সালের ৪ অক্টোবর তিনি দি পাবলিক থিয়েটারে এক মিলিয়ন ডলার ডোনেট করেন এর ফাউন্ডার প্রয়াত জোসেফ পাপ্প এবং তাহার লেখক বন্ধু নোরা এফ্রন এর সন্মানে ।

এই মহান জীবিত কিংবদন্তী অভিনেত্রীর প্রতি রইলো আমার শ্রদ্ধা ও ভালোবাসা ।

 


অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.