আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

ধোঁকা

এটা আমার রাজত্ব

১।
নতুন মেসে উঠেছি আজ দিন দশেক হল। পড়াশোনার পাট চুকিয়ে একটা পার্ট টাইম চাকরীর ব্যবস্থা করেছি নিজের বেঁচে ত্থাকার জন্য। সপ্তাহে চার দিন কাজ করি তাও মোটে আট ঘন্টা করে প্রতিদিন। বাকীটা সময় ঘোরাফেরা আর লেখালেখি নিয়েই ব্যাস্ত থাকি।

নতুন এসেছি এখানে তাই এখনও কারো সাথে তেমন চেনা জানা হয়নি। নিজের মনে ঘুরি ফিরি আর কাজের শেষে বাসায় গিয়ে লেখালেখি এই আমার রুটিন গত দশ দিনের। নরসিংদী শহরের এক প্রান্তে আমার মেস। একটা ফ্লাট বাসায় ৮ জন মেস করে থাকি। এখানে আমিই সর্ব কনিষ্ঠ সদস্য।

বাকিরা নিজেদের চাকরী নিয়ে এতটাই ব্যাস্ত থাকে যে কথা বলার ফুরসত তাদের হয়না। অফিস থেকে বাসা, খাওয়া এরপর ঘুম তাদের প্রতিদিনকার রুটিন। আমিও মানিয়ে চলার চেষ্টা করছি ওভাবেই।
আমার রুমমেট আফজাল সাহেব এখানকার একটা মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে পড়ান। খুবই অন্তর্মুখী লোক।

সারাদিন স্কুলে থাকেন আর স্কুল শেষে ৫/৬ টা টিউশনি করে বাসায় ফেরেন। এই দশ দিনে তার সাথে কথা হয়েছে হাতে গোনা ৩/৪ বার তাও কেমন লাগছে নতুন চাকরী, নতুন বাসা এই সংক্রান্ত। বাকি সবার সাথে মাঝে মাঝে আড্ডা হলেও তাকে দেখেছি নিজেকে সারাক্ষন গুটিয়ে রাখেন। তবে বৃহস্পতিবার রাতে কোন এক অজানা কারনে তিনি মদপান করেন। অনেকের নেশা থাকে মদের জানি তবুও তার এই ব্যাপারটা চোখে লাগে।

কেউই অবশ্য তার ব্যাপারে তেমন কিছুই জানেনা। তিনি কি আদৌ বিবাহিত না অবিবাহিত সেই বিষয়েও কেউ কিছু জানেনা। অবশ্য এ নিয়ে কারো কোন মাথা ব্যাথা নেই। এই ব্যাস্ততার যুগে কার এত সময় যে অন্য কারো খবর রাখে?
তবে আমি লেখক মানুষ। এখনও ব্যাস্ততার চাপে পড়ে রোবট হয়ে ওঠা হয়নি।

তাইতো বৃহস্পতিবার রাতে আফজাল সাহেবের মদ পানের সময়ে কিছু ব্যাপার আমার চোখ এড়ায়নি। মদের বোতলের দিকে তাকিয়ে বিড়বিড় করা আর পাশে কারো অবস্থান অগ্রাহ্য করে ঢক ঢক করে মদ গেলার ব্যাপারটা আমার অনুসন্ধিৎসু মনে কিঞ্চিত দাগ কেটেছে। তার চোখের দিকে তাকিয়ে বুঝতে পেরেছি এমন কিছু অবশ্যই আছে যা ভুলে থাকার জন্য তিনি সারাক্ষন ব্যাস্ত থাকার চেষ্টা করেন আর এই রাত আর পরদিন বিকেল পর্যন্ত যে সময়টুকু অবসর পান তাতেও মদের নেশায় চুর্ন হয়ে সেই কথা গুলো ভুলে থাকবার চেষ্টা করেন। হয়ত একথা এমন কিছু যা তিনি কারো কাছে প্রকাশ করতে চাননা বা প্রকাশ করতে চান কিন্তু সেরকম শ্রোতা পাননা। জানিনা কি তার দুঃখ? আর কেনই বা তিনি লুকোতে চান।

একবার ভেবেছিলাম জিজ্ঞাসা করব পরে তা অনধিকার চর্চা হবে বলে আর জিজ্ঞাসা করিনি। থাকনা কারো কোন দুঃখ তার মনেই চাপা। তা বের করে এনে তাকে কষ্ট দিয়ে লাভ কি?
২।
আজ বৃহস্পতিবার। আফজাল সাহেব একা একা মদ পান করেন।

মদ জিনিসটার মধ্যে কিছু মনে হয় আছে। কাউকে খেতে দেখলে নিজেরও সামলানো কষ্ট হয়ে যায় যখন আমিও মদ পান করি মাঝে মাঝে। আফজাল সাহেব যখন খান-ই তখন আমার আর ভদ্র সেজে লাভ কি তাই আজ আমিও একটা হাফ বোতল এনেছি। রাতে সবাই ঘুমিয়ে পড়লে তখন খাব। চারিদিকে নিস্তব্ধ আর নিরবতা, খুব শান্ত চারপাশ, এমন সময়ে মদ খেলে যে অনুভুতি হয় তা বোঝার সাধ্যি কোন ভদ্দরলোকের যে নেই তা বলাই বাহুল্য।

ফিরদউসী যখন মদ নিয়ে কবিতা লিখে গেছেন তখন আমার মত তুচ্ছ ব্যাক্তির কি সাধ্যি এই মদের আকর্ষন ত্যাগ করি!!! আর পার্সী ধর্মে মদ না খেলে নাকি ধর্মের অসম্মান হয়। একটা দিন না হয় পার্সী অনুসারীই হলাম।
রাত ১টা। পাশের প্রত্যেকটা রুমের সবাই ঘুমিয়ে গেছেন। জানালা দিয়ে বাইরে তাকিয়ে দেখলাম আশে পাশের কোন বাড়িতেই আর আলো জ্বলছেনা।

আর এই ঘরটাতে শুধু আফজাল সাহেব আর আমি জেগে আছি। পাশে একজন আছে যদিও তাতে কি সেও তো আমার মত মদানুরাগী। এরই মধ্যে আফজাল সাহেব তার বোতল নিয়ে বসে গেছেন। আমার জানালা দিয়ে বাইরে তাকানোটা লক্ষ্য করে বললেন,
‘কি ব্যাপার সাহেব, আকাশের চাঁদ খুঁজছেন নাকি?’
উত্তর দিলাম, ‘না, আশেপাশের বাড়ির দিকে দেখছি সবাই ঘুমিয়ে পড়ল কিনা?’
রসিকতা করে তিনি বললেন, ‘আশেপাশে কোন সুন্দরী যুবতী মেয়ের আগমন ঘটেছে নাকি? রাতের বেলা ইশারা দেবার চেষ্টা করছেন?’
মদের বোতলটা খাটের পাশ থেকে তুলে এনে বললাম, ‘নাহ, সুন্দরী রমনীর চেয়েও বেশি আনন্দদায়ীর আগমন ঘটেছে আজ। তাই আশেপাশে দেখে নিলাম কেউ আবার দেখছেনা তো? ব্যাচেলরদের তো আবার গায়ে গন্ধ বেশি।

আপনার ওই পাশে তো জানালা নেই তাই রিস্ক কম। এখানে জানালা দিয়ে তো বাইরে থেকে দেখা যায় কি করচি। কেউ দেখে ফেলে বাড়িওয়ালার কাছে অভিযোগ করলে তো সবার সমস্যা হবে। তাই একটু সতর্কতা আরকি’।
‘আপনিও তাহলে মদ খান? ভালই হল একজন সঙ্গী পাওয়া গেল।

তো কি খাচ্ছেন? হুইস্কি না ভদকা?’
‘ভদকা। হুইস্কিটা আবার আমার মুখে রোচেনা’।
‘আমারো ভদকা’ বলে কি যেন ভাবলেন তিনি কিছুক্ষন। মৌনতা ভেঙ্গে বললেন ‘আসুন দুইজনাই যেহেতু মদানুরাগী, একসাথে বসেই খাই। আমরা আমরাই তো।

আলাপও হোক কিছু। এখানে সবাই তো ভদ্রলোক। সিগারেটটাও খাননা। রসকষ জিনিসটাও নেই। অনেক দিন পর মনের মত একজন কে পেলাম।

আসুন’।
আমিও খুশি এই আধা শহুরে জায়গায় মদ খাওয়ার একজন সঙ্গী পেলে কার না ভাল লাগে। তিনি দুজনের গ্লাসে মদ ঢেলে একটা গ্লাস এগিয়ে দিয়ে বললেন
‘তবে শুরু করা যাক। শুভস্য শীঘ্রম’।
আমিও সায় দিয়ে বললাম ‘হ্যা,হ্যা, শুভস্য শীঘ্রম’।


৩।
মদ কয়েক পেগ গিলে তিনি বললেন ‘আজকের মদটা একটু বেশিই কড়া। অল্পতেই ধরল’। বুঝলাম তাকে ধরেছে। তিনি আরম্ভ করলেন সমাজ সংসারের পিন্ডি চটকানো।

তার কথায় বুঝতে পারলাম এই সমাজ সংসারের ওপর তিনি ত্যাক্ত বিরক্ত। তবে জ্ঞ্যান রাখেন অনেক। তার আর আমার রাজনৈতিক দৃষ্টিকোণ ভিন্ন হলেও তার কিছু কিছু কথার সাথে একমত না হয়ে পারলাম না। এর মধ্যে আমাকেও ধরেছে। তাই শিষ্টাচার এর তোয়াক্কা না করে জিজ্ঞাসা করলাম,
‘আপনি তো যথেষ্ট শিক্ষিত।

এই মফস্বলের স্কুলে পড়ে আছেন কেন?’
‘আমি শিক্ষিত? হা হা হা। হাসালেন। আমি ইন্টার পাশ ইন দা ইয়ার নাইন্টিন এইটি টু আই পাসড ইন্টারমিডিয়েট এক্সাম নাউ হুইচ ইস কল্ড এইচ এস সি’।
আমি অবাক হয়ে বললাম ‘আপনাকে দেখে তো মনে হয়না আপনি সেই এইটি টু তে ইন্টার পাশ’।
আমার দিকে তাকিয়ে ভুরু নাচিয়ে বললেন, ‘আমাকে দেখে কি মনে হয় তাহলে জনাব?’
তার দিকে ভাল করে তাকিয়ে বললাম, ‘এইত সাকুল্যে পয়ত্রিশ কি ছত্রিশ’।


আমার কথা শুনে তিনি হে হে করে হেসে উঠে বললেন, ‘আই এম ফিফটি ফাইভ, ডাবল অফ ইয়োর এজ’।
আমি অবাক হয়ে তাকিয়ে আছি তার দিকে। জিজ্ঞাসা করলাম, ‘আপনাকে কি তাহলে আঙ্কেল ডাকব আফজাল ভাই?’
‘না ভাইই ডেকো’ মুচকি হেসে বললেন তিনি। আমার কথায় মজা পেয়েছেন। আর আমাকে আপন ও করে নিয়েছেন এরই মাঝে।

আপনি থেকে তুমিতে নেমে এসেছেন।
আপন যখন হয়েই গেছি তখন আর বাঁধা কই? তাই ব্যাক্তিগত একটা প্রশ্ন জিজ্ঞাসা করতে আর বাঁধা থাকেনা।
জিজ্ঞাসা করলাম, ‘ভাবী কি জানেন আপনি মদ খান?’
প্রশ্ন শুনে তিনি আমার দিকে তাকালেন। চোখ লাল হয়ে আছে। একি মদের দোষ না আমার প্রশ্নের দোষ বুঝতে পারলাম না।

বেশ কিছুক্ষন কেটে গেল এভাবে আমি তার উত্তরের আশায় তার দিকে তাকিয়ে আছি আর তিনি কোন কথা না বলে পিটপিট করে তাকিয়ে আছেন আমার দিকে।
মুখ যখন খুললেন তখন বুঝতে পারলাম তার কষ্ট কোথায়। কেন তিনি ব্যস্ত থাকার প্রানপন চেষ্টা করেন।
‘যাকে ভুলে থাকার জন্য এই জিনিস খাই তাকেই মনে করিয়ে দিলে ভায়া’। বলে আরও তিন পেগ গলাধঃকরণ করলেন।

এরপর আসতে আসতে নেতিয়ে গেলেন বিছানায়। আমি দুইবার ডাকলাম তাকে। কোন সারা নেই। মদের নেশার সাগরে তিনি ডুবে গেছেন। আমিও আমার অংশটুকু শেষ করে নিজের বিছানায় শুয়ে পড়লাম।

ওই বিছানায় আফজাল সাহেব ভাবছেন তার স্ত্রীর কথা যে তাকে দুঃখ দিয়েছে। আর আমি আমার বিছানায় শুয়ে শুয়ে ভাবছি তার কথা যাকে ভালবেসে সবার কাছে অপমানিত হয়েছি এবং যার কাছ থেকে পেয়েছি সবচেয়ে বড় ধোঁকা।


৪।
ঘুম যখন ভাংল তখন বাজে প্রায় ১ টা। আফজাল ভাই পাঞ্জাবী পড়ে রেডি হয়ে বসে আছেন।

আমাকে উঠতে দেখে কাছে এগিয়ে এসে বললেন, ‘ছোট ভাই, বেশ তো ঘুম দিলে। তাড়াতাড়ি রেডি হয়ে নাও। চল একসাথে নামাজ পড়ে আসি’।
দ্রুত প্রস্তুত হয়ে গেলাম। জামাত শুরু হতে দেরি আর অল্প কিছুক্ষন।

আফজাল সাহেব দেখেছি আগে সবার আগে মসজিদে গিয়ে বসে থাকতেন। আজ তিনি আমার জন্য অপেক্ষা করছেন শেষ মুহুর্ত পর্যন্ত। মানে দাঁড়ায় বয়সের ব্যবধান অনেক হলেও তিনি আমাকে বন্ধুর মর্যাদা দিচ্ছেন। খুশিই হলাম এই অচেনা স্থানে এসে একজন বন্ধু পেয়ে। মসজিদে পৌঁছলাম দুজনে।

আমার বাসার বাকি সবাই বারান্দায় বসা ছিল। আফজাল সাহেব আর আমাকে একসাথে দেখে বুঝতে পারলাম তারা খানিকটা অবাক হয়েছেন।
নামাজ শেষ করে বের হয়ে এলাম সবাই। আফজাল ভাই স্থানীয় মাধ্যমিক স্কুলের শিক্ষক। তার সাথে মানুষ যেচে কথা বলবে বলে আশা করেছিলাম।

দেখলাম আফজাল ভাইই শেধে দুই এক জনের সাথে কথা বললেন। আর আমার সাথে পরিচয় করিয়ে দিলেন। যাদের সাথে কথা বলল তাদের চেহারা দেখে বুঝলাম সবাই অবাক হয়ে গেছে। বাসায় ফিরতে ফিরতে জিজ্ঞাসা করলাম,
‘আফজাল ভাই, আপনার সাথে কথা বলার সময় ভদ্রলোকদের দেখে মনে হল তারা নতুন কিছুর অভিজ্ঞতা পাচ্ছে। এ কি আপনার প্রতি তাদের ভয় না শ্রদ্ধা?’
আফজাল ভাই হেসে জবাব দিলেন, ‘এ শ্রদ্ধাও না আবার আমার সম্ভ্রম ও না।

আমি আসলে মানুষের সাথে মিশিনি এতদিন। তাই তাদের চোখে মুখে যে জিনিসটা খেয়াল করেছ টা হল বিস্ময়’।
আমি আর কিছু বললাম না। বাসায় ফিরে দেখলাম সবাই খাওয়া দাওয়ার ব্যাবস্থা করছে। শুক্রবার দিনটায় স্পেশাল খানা হয় আর সবাই একসাথে বসে খায়, আফজাল ভাই ছাড়া।

মেসের সবচেয়ে সিনিয়র কামাল সাহেব আমায় দেখে বললেন, ‘লেখক সাহেব আসেন একসাথে বসে খাওয়া দাওয়া করব’। আফজাল ভাইয়ের দিকে তাকালাম আমি। আফজাল ভাই মুচকি হাসি দিয়ে বুঝিয়ে দিলেন এটা এতদিন ধরে সবাইকে এড়িয়ে চলার ফল। তিনি ঘরের দিকে পা বাড়ালেন। আমি আফজাল ভাইকে ডেকে বললাম, ‘আফজাল ভাই খেতে আসেন।

সবাই বসি একসাথে’। কামাল ভাই আমার দিকে তাকিয়ে আছেন অপার বিস্ময়ে। নিজের বিস্ময় খানিকটা সামলে তিনিও আফজাল ভাইকে আমন্ত্রন করলেন।
আফজাল ভাই শুনলেন কিনা বুঝতে পারলাম না। তিনি চলে গেলেন রুমে।

আমরা বসে পড়লাম খেতে। মনের মধ্যে খচখচ করতে লাগলো। বন্ধু অনুরোধ না রাখলে এমনই হয় সে যেকোনো মানুষই বুঝবে। কামাল ভাই ব্যাপারটা বুঝতে পেরে আমার কানে কানে বললেন আফজাল সাহেব সচরাচর মানুষের সাথে মেশেন কম। তিনি যে আমার সাথে কথা বলছেন এটাই অনেক বিস্ময়কর।

বেশি সামাজিকতা যেন তার কাছ থেকে আশা না করি। কামাল সাহেব আরও বললেন, ‘ভাইজান, আপ্নের সাথে যে উনি কথা বলছে মন খুলে আর মিশছেও এটা আমাদের সবার কাছেই একটা ধন্দের মত’।
সবাই যার যার প্লেট এগিয়ে দিচ্ছে আর সবাইকে বেড়ে দিচ্ছেন কামাল ভাই। এটাই মেসের নিয়ম। সবার অবাক হবার বোধ হয় আরও বাকি ছিল।

সেটুকু পুর্ণ করে আফজাল ভাই তার প্লেট এনে বসে পড়লেন আমার পাশে। কামাল ভাইয়ের দিকে প্লেট এগিয়ে দিয়ে বললেন ‘ভাই এই প্লেটেও কিছু দেন’। সবাই তাকিয়ে আছে আফজাল ভাইয়ের দিকে। কামাল ভাইও তথৈবচ। আমার মাঝেও যে বিস্ময় কিছুমাত্র কম আসেনি তা বলবনা।

কিন্তু ম্যান ইজ এরশাদ, মানুষ মাত্রই পরিবর্তনশীল।
বিকেলে আমি বের হলাম ঘুরতে আর আফজাল ভাই গেল তার টিউশনিতে। রাতে বাসায় ফিরে দেখলাম আফজাল ভাই আগেই পৌঁছে গেছেন। বসে পরীক্ষার খাতা মুল্যায়ন করছেন। আমি বললাম
‘আফজাল ভাই, আমাকেও কয়েকটা খাতা দিন।

আপনার কাজ একটু কমিয়ে দেই’।
আফজাল ভাই বললেন, ‘মনে দয়া মায়া আছে কেমন? আমি বাইরে থেকে খুব কঠিন হলেও কিন্তু সচরাচর কোন ছাত্রকে ফেল করাইনা। নম্বরও কম দেইনা’।
‘আপনারই তো ছোট ভাই। দয়া মনে কম নেই।

আমিও মাঝে মাঝে শিক্ষকদের একাজে সাহায্য করেছি কোন খাতায় কম দেইনি’।
‘তবে নাও’ বলে আমার দিকে কিছু খাতা এগিয়ে দিলেন। আমিও মনের আনন্দে সেগুলো নিয়ে দেখা আরম্ভ করলাম। কাজ শেষ করে আফজাল ভাইকে খাতাগুলো ফিরিয়ে দিলাম। আফজাল ভাই সেগুলো হাতে নিয়ে আমায় জিজ্ঞাসা করলেন
‘মদ তো খাও।

সিগারেট টাও কি চলে?’
হাসিমুখে মাথা নেড়ে জানিয়ে দিলাম চলে। তিনি এক প্যাকেট বেনসন আমার দিকে এগিয়ে দিয়ে বললেন ‘এটা তোমার জন্য’। বুঝলাম আমি অনেকখানি আপন হয়ে গেছি আফজাল ভাইয়ের। সাহসটাও বাড়ল আমার। তাই কোন দ্বিধা না করে বললাম,
‘আফজাল ভাই, কাল রাতে ভাবীর নাম করতেই আপনি যেভাবে রিঅ্যাক্ট করলেন বুঝলাম আপনার এই স্বেচ্ছা নির্বাসনের তিনিই কারন।

যদি কোন আপত্তি না থাকে আপনার কাছ থেকে কি কারণটা জানতে পারি’।
জিজ্ঞাসা করেই মনে হল বাড়াবাড়িই করে ফেললাম নাকি? আফজাল ভাই ভুলটা ভাঙ্গিয়ে বললেন,
‘এতদিন তো মনের মধ্যে চেপেই ছিলাম। আর কয়দিনই বা বাঁচব। সব বলব তোমাকে। তবে আজ নয়।

বৃহস্পতিবার রাতে...’ বলে হাত দিয়ে বোতল খোলার ইঙ্গিত দিয়ে বললেন ‘তখনি না হয় শুনো। এখন ঘুমের সময়’। আমিও হেসে বললাম, ‘তাই হবে’খন’।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।