নিচে তাকিয়ে থাকার মজা হল কাওকে দেখতে হয় না, আবার কাওকে দেখা দিতে হয় না। লুকিয়ে থাকতে চাই বলে উপরে তাকাই না। একদিন তাকাবো, আর সব কিছু দেখে নেব। চেনা মানুষ দেখতে দেখতে আজ ক্লান্ত আমি, বড় বেশি ক্লান্ত। facebook.com/rabib5
মাঝরাত।
বাতাসে বসন্তের পাতা ঝরার খসখস শব্দ হচ্ছে। হালকা একটা টিশার্ট গায়ে ছেলেটি চার তলার ছাদে পা ঝুলিয়ে বসেছে। বসন্তের শুরুতে ফুরিয়ে যাওয়া শীতের কামড় ছেলেটির মনোযোগ কাড়তে না পারলেও হাতে ধরা ফোনের ডিসপ্লেতে ভেসে আসা ফেসবুক ম্যাসেজটা ছেলেটির আবেগুলোকে বেশ ভাল ভাবেই নাড়িয়ে দিতে থাকে।
*****
মি: হায়েনা আকাশের দিকে তাকালো। আকাশ আলো করে পূর্ণিমার চাঁদ ঝুলছে।
যতদূর চোখ যায় সাদা আলোয় ভেসে যাচ্ছে। মি: হায়েনা হা হা করে হেসে উঠল। চারিদিকে সে হাসির ঠা ঠা প্রতিধ্বনি তুলে গাছ পালার অন্ধকারে মিশে যেতে লাগল। তার পর সব সুনশান। ঝিঝিরাও ডাকা বন্ধ করে ঘুমিয়ে গিয়েছে কতক্ষন হল।
রাস্তায় জ্বলা ল্যাম্পপোস্টের আলোটাও দুবার মিটমিট করে এক নাগাড়ে জ্বলে পাশের বাসার দেয়ালে একটা দৈত্যের ছবি আঁকতে লাগল।
মি: হায়েনা একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলল। তারপর এঞ্জেল অনন্যার ইনবক্সে খটখট করে মোবাইলের বাটন টিপে একটা ম্যাসেজ টাইপ করে ফেলল।
টুং করে শব্দ হতেই ল্যাপটপের উপর ঘুমিয়ে পড়া অনন্যার কাঁচা ঘুমটা ছুটে গেল। ফেসবুক চ্যাট বক্সে ওপেন হওয়া ম্যাসেজটা দেখে সারা শরীর কাঁটা দিয়ে উঠল তার।
কাঁচের জানালা দিয়ে এসে পড়া চাঁদের আলো বিছানার উপর কালো-সাদার আলপনা আঁকছে। তারি কিছুটা যেন সমুদ্রের ঢেউওয়ের মত বালুতীরে দাড়ানো অনন্যার পা ছুয়ে ছুয়ে যাচ্ছে।
'যদি কখনো ঘুম ভেঙ্গে দেখ ঐ আকাশের চাঁদ খানা তোমার পায়ে লুটিয়ে পড়েছে তখন যদি তোমায় বলি ভালবাসি? ভালবাসবে? অনন্যা আজ এই চাঁদ শুধু তোমাকেই দিলাম। '
মি: হায়েনা! কি বিদঘুটে নাম। যেমন নাম তেমন বিদঘুটে কাজ ছেলেটার।
মাঝরাতে প্রায় প্রায় ফেসবুকে কেমন কেমন ম্যাসেজ দেয় ছেলেটা। এক মাস থেকেই পরিচয় ছেলেটার সাথে অথচ কত না রহস্য। যত কথা বলে তত জট পাকায় অনন্যার মাথায়। ছেলেটা কি তাকে ভালবাসে? নাকি মজা করে?
আজকের ম্যাসেজটা দেখে আরো এলোমেলো হয়ে যায় অনন্যা। কি বোর্ডের বাটনে ঝড় তোলে।
সত্যি?
-হুম সত্যি। আজ এই চাঁদ শুধু তোমার।
আর?
-আর কি?
কিছুনা।
তুমি এমন বিদঘুটে নাম কেন রেখেছ?
-আমি যে মানুষরূপী হায়েনা তাই।
তুমি হায়েনা হবে কেন! তুমি অনেক ভাল।
-তাই!?
হুম তাই।
-তাহলে আমার একটা ভাল নাম তুমি দিয়ে দাও।
-আচ্ছা। তাহলে আজ থেকে তোমার নাম শুভ্র।
রাত গভীর হতে থাকে।
মি: হায়েনা, এঞ্জেল অনন্যা জেগে থাকে। সম্পর্কের গভীরতা বাড়ে। চ্যাটবক্সে ভালবাসার ইমো ছড়িয়ে দেয় দুজনে। একসাথে জোছনা দেখে স্বপ্ন সাজায়। অনন্যা ভালবেসে ফেলে।
*****
দুই বছর পর ঠিক সেই রাতে অনন্যা জানালার পাশে দাড়ায়। সেই একই চাঁদ অনন্যার মুখে আলো ফেলে। অনন্যার চোখ মুখ জ্বলে যায়। মনে হয় এই চাঁদ তার নয় অন্য কারো। সব মিথ্যা।
সব ভুল। ছলনা। কি নিষ্ঠুর ছেলেটা। কি নিষ্টুর!
টুং টুং করে ল্যাপটপে শব্দ হতে থাকে। এঞ্জেল অনন্যা এখন নীল পরী হয়ে ছেলেদের মাঝে ধরা দিয়েছে।
অনন্যা আবারো কি বোর্ডে ঝড় তুলে।
'যদি কখনো ঘুম ভেঙ্গে দেখ ঐ আকাশের চাঁদ খানা তোমার পায়ে লুটিয়ে পড়েছে তখন যদি তোমায় বলি ভালবাসি? ভালবাসবে? আজ এই চাঁদ শুধু তোমাকেই দিলাম। '
অনন্যা কপি করে। তারপর ছেলেগুলোকে একটা একটা করে পাঠাতে থাকে। শান্তি লাগে।
খুব শান্তি লাগে অনন্যার।
****
মাঝরাত। বাতাসে বসন্তের পাতা ঝরার খসখস শব্দ হচ্ছে। হালকা একটা টিশার্ট গায়ে ছেলেটি চার তলার ছাদে পা ঝুলিয়ে বসেছে। বসন্তের শুরুতে ফুরিয়ে যাওয়া শীতের কামড় ছেলেটির মনোযোগ কাড়তে না পারলেও হাতে ধরা ফোনের ডিসপ্লেতে ভেসে আসা ফেসবুক ম্যাসেজটা ছেলেটির আবেগুলোকে বেশ ভাল ভাবেই নাড়িয়ে দিতে থাকে।
'যদি কখনো ঘুম ভেঙ্গে দেখ ঐ আকাশের চাঁদ খানা তোমার পায়ে লুটিয়ে পড়েছে তখন যদি তোমায় বলি ভালবাসি? ভালবাসবে? আজ এই চাঁদ শুধু তোমাকেই দিলাম। '
নীল পরি! কি অদ্ভুত নাম মেয়েটার। তার থেকেও অদ্ভুত মেয়েটার পাঠানো ম্যাসেজগুলো। প্রায় একমাস হল পরিচয়। অথচ কত না রহস্য মেয়েটার মধ্যে।
যত কথা বলে তত জট পাকায় ছেলেটির মাথায়।
মেয়েটি কি তাকে ভালবাসে? নাকি মজা করে?
হাতের ছোঁয়ায় ম্যাসেজ টাইপ করতে থাকে ছেলেটি। রাত বাড়তে থাকে। ঘুরে ফিরে জোছনা আসতে থাকে। আসতে থাকে বসন্ত।
বার বার। বহুবার।
(উৎসর্গ: সেই সব ছেলে মেয়ে অথবা শিকারি শিকার যারা মাঝরাতে অযথাই অনলাইনে থাকে। )
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।