রাজধানীর রাজারবাগ পুলিশ লাইন্স এলাকায় ট্রাফিক ব্যারাকের পাঁচ তলা ভবনের ছাদ থেকে এক ব্যক্তির মস্তকবিহীন লাশ উদ্ধার হয়েছে। তার বয়স আনুমানিক ৩৫ বছর, তবে পরিচয় শনাক্ত হয়নি। লাশটি গতকাল বেলা ১১টার দিকে উদ্ধারের পর ময়নাতদন্তের জন্য ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতাল মর্গে পাঠানো হয়।
পুলিশ অবকাঠামোর ভেতরে এ রকম লাশ নিয়ে রহস্যের সৃষ্টি হয়েছে। ব্যাপক নিরাপত্তা বেষ্টনী আর ২৪ ঘণ্টা নজরদারির মধ্যে এ ঘটনায় পুলিশ কর্মকর্তারাও বিস্মিত। হাসপাতাল সূত্র জানায়, নিহতের শরীরের একাধিক স্থান, হাত ও বুকে ছুরিকাঘাতের চিহ্ন রয়েছে। শ্বাসরোধে অচেতন করার পর মৃত্যু নিশ্চিত করতে জবাই করা হয় বলে ধারণা করা হচ্ছে। ডিবি, র্যাব, সিআইডিসহ অন্যান্য গোয়েন্দা সংস্থার ঊধর্্বতন কর্মকর্তারা ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন।
ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের (পূর্ব) উপকমিশনার জাহাঙ্গীর হোসেন মাতুব্বর বলেন, 'ঘটনাটি রহস্যজনক। তদন্ত চলছে। ভবনের নিচে ড্রেন থেকে একটি সাদা শার্ট উদ্ধার করা হয়েছে। এর পকেটে ৯৩৫ টাকা পাওয়া গেছে। ধারণা করা হচ্ছে, শার্টটি ওই যুবকের পরনে ছিল।' মতিঝিল বিভাগের উপকমিশনার আশরাফুল ইসলাম জানান, বিচ্ছিন্ন মস্তক, হত্যাকাণ্ডের কারণ এবং ঘটনার সঙ্গে কারা জড়িত তা খুঁজে বের করতে পুলিশের একাধিক টিম মাঠে নেমেছে। নিহত ব্যক্তি পুলিশ সদস্য কিনা তা এখনি বলা যাবে না। তার পরিচয় জানার চেষ্টা চলছে।
দুপুরে সরেজমিনে দেখা যায়, রাজারবাগ কেন্দ্রীয় পুলিশ হাসপাতাল সংলগ্ন ট্রাফিক ভবনে যেতে পল্টন থানার প্রধান গেট দিয়ে প্রবেশ করতে হয়। থানা ক্যাম্পাসে প্রবেশের পর ডান দিকে একটি দেয়াল। সেখানে ভেতরে যাওয়ার জন্য সরু রাস্তা। উত্তর পাশে পুলিশের স্টাফ কোয়ার্টার দিয়ে ওই ভবনে প্রবেশের ব্যবস্থা থাকলেও সেটি অধিকাংশ সময় বন্ধ থাকে। ভবনের প্রতিটি তলায় পুলিশের শতাধিক সদস্যের থাকার ব্যবস্থা রয়েছে। পাঁচ তলায় ওঠার পর সিঁড়ি যেখানে শেষ, তার পাশেই ছাদে ওঠার জন্য লোহার সিঁড়ি। তবে দুজনের বেশি একসঙ্গে ওঠা যায় না। ভবনের দ্বিতীয় ও তৃতীয় তলায় থাকে ট্রাফিক পুলিশ। চতুর্থ ও পঞ্চম তলায় রাজারবাগ পুলিশ লাইনের খেলোয়াড় ও ওয়ার্কশপ কর্মী। নিচ তলায় আছে একটি ক্যান্টিন।
ভবনের বাসিন্দা একাধিক পুলিশ সদস্য জানান, দিনরাতে প্রচুর মানুষ সেখানে যাতায়াত করেন। বেশিরভাগই আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্য। তবে কোনো সদস্যের ঘনিষ্ঠ বহিরাগত, যাকে অন্য সদস্যরাও চেনেন, এমন লোকও মাঝে মধ্যে আসেন। প্রতি বিছানায় একজন থাকার কথা থাকলেও জায়গার অভাবে দুই থেকে তিনজন করেও থাকতে হয়।
ঘটনাস্থল পরিদর্শন শেষে পল্টন থানার এসআই শিমুল চন্দ্র বলেন, 'লাশটি ছাদের উপরে পানির ট্যাংকের পাশে চিত অবস্থায় ছিল। ডান পায়ের উরু ও পাঁজরে কয়েকটি ছুরিকাঘাতের চিহ্ন। লাশ উদ্ধারের সময়ও শরীর থেকে রক্ত ঝরছিল। এতে ধারণা করা হচ্ছে, তাকে ভোরের দিকে খুন করা হতে পারে। তবে ছাদের উপরই খুন করা হয়, নাকি বাইরে থেকে লাশ এনে ছাদে রাখা হয়, তা তদন্ত সাপেক্ষ।'
অপরাধ বিশেষজ্ঞরা বলছেন, পুলিশ লাইন্স এলাকায় দিনরাত কঠোর নিরাপত্তা ব্যবস্থা থাকে। এর মধ্যে খুন করে পালিয়ে যাওয়া কঠিন। এর আগেও রাজারবাগ পুলিশ লাইন্সের ভেতরের একটি ভবনে প্রধান হিসাব রক্ষক ও মিন্টু রোডে মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ কার্যালয়ের একটি ভবনের ছাদের পানির ট্যাংক থেকে দুজনের লাশ উদ্ধার করা হয়।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।