আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

বরিশালে ভোটারশূন্য কেন্দ্রে ভৌতিক ভোটের

কেন্দ্র দখল, ব্যালট ছিনতাই, জালভোট প্রদান ও প্রশাসনের প্রশ্নবিদ্ধ আচরণসহ ব্যাপক অনিয়মের মধ্য দিয়ে বরিশাল জেলার তিনটি আসনে গতকাল ভোটগ্রহণ সম্পন্ন হয়েছে। বিভিন্ন কেন্দ্র ঘুরে ভোটারদের তেমন উপস্থিতি না দেখা গেলেও ভৌতিক ভোটের খবরের সত্যতা মিলেছে দিনশেষে ভোটের হিসাবে। বিকাল ৪টার পর বরিশালের পুলিশ সুপার গড়ে ৫৪ থেকে ৫৫ ভাগ ভোটার ভোট দিয়েছেন বলে জানান। তবে এর সঙ্গে দ্বিমত পোষণ করে সংসদ সদস্য প্রার্থী জাতীয় পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্য গোলাম কিবরিয়া টিপু এমপি বলেন, সর্বাধিক ২৫ থেকে ৩০ ভাগ ভোটার ভোট দিতে পারেন। বাকিগুলো সব 'জাল ভোট'। ব্যাপক কারচুপির অভিযোগে বরিশাল-২ আসনের স্বতন্ত্র প্রার্থী মিসেস সাবিনা আক্তার বেলা ১১টায় এবং বরিশাল-৩ আসনের জাতীয় পার্টির প্রার্থী গোলাম কিবরিয়া টিপু বেলা ৩টার দিকে নির্বাচন থেকে সড়ে দাঁড়ানোর ঘোষণা দেন। অবশ্য বিচ্ছিন্ন কিছু ঘটনা ছাড়া নির্বাচন মোটামুটি সুষ্ঠু এবং শান্তিপূর্ণ হয়েছে দাবি করে রিটার্নিং অফিসার জেলা প্রশাসক মো. শহীদুল আলম জানান, জেলার তিনটি আসনে গড়ে ৪৫ ভোগ ভোটার ভোট দিয়েছেন। সরেজমিন দেখা গেছে, নানা অনিয়ম, কারচুপি, প্রভাব বিস্তার এবং ভৌতিক ভোটের মাধ্যমে বরিশালের তিনটি আসনের ২৯১টি কেন্দ্রে ভোটগ্রহণ সম্পন্ন হয়েছে। এদিকে বরিশাল-৪ আসনে পৌনে ৯টার দিকে উজিরপুরের পশ্চিম শাতলা প্রাথমিক বিদ্যালয় ভোটকেন্দ্র থেকে বরিশাল-২ আসনের স্বতন্ত্র প্রার্থী সাবিনা আক্তারের এজেন্ট মো. মিন্টুকে মারধর করে বের করে দেওয়া হয়। একই আসনের উজিরপুর চতলবাড়ি আবদুল মজিদ মাধ্যমিক বিদ্যালয় আওয়ামী লীগের সিনিয়র নেতাদের উপস্থিতিতে নেতা-কর্মীরা প্রকাশ্যে জালভোট দেয় বলে অভিযোগ করেন স্বতন্ত্র প্রার্থী সাবিনা আক্তার। এদিকে গণমাধ্যম কর্মীরা অনূধর্্ব ১৪ বছরের এক কিশোরকে ভোট দেওয়ার সময় হাতেনাতে ধরে ফেলে। ওই কিশোর মুসলিম হলেও সে এক হিন্দু ভোটারের নামের স্লিপ (৮১৫ নম্বর) নিয়ে ভোট দেওয়ার চেষ্টা করেছিল। গণমাধ্যম কর্মীরা জালভোট হাতেনাতে ধরে ফেলার পর কেন্দ্রের প্রিসাডিং অফিসার তাকে পুলিশে সোপর্দ করেনি। আওয়ামী লীগ কর্মীরা তাকে ছিনিয়ে নিয়ে গেছে। একই আসনের বামরাইল এবি মাধ্যমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে আওয়ামী লীগ কর্মীরা জালভোট দেওয়ার চেষ্টা করে প্রিসাইডিং অফিসারের দৃঢ়তায় ব্যর্থ হয়। এ কেন্দ্রে ৩ হাজার ৫৯৯ ভোটের মধ্যে দুপুর ১২টা পর্যন্ত ভোট দেন ১৪০ জন। আর হস্তিশুণ্ডু কেন্দ্রে ভোটারদের যেতে বাধা দেওয়াকে কেন্দ্র করে বিএনপি-আওয়ামী লীগ সংঘর্ষে আহত হয় ৫ জন। এদিকে বাবুগঞ্জের ইসলামপুর, মাধবপাশা ও চাঁদপাশায় আওয়ামী লীগ নেতা-কর্মীরা ভোট কক্ষের দরজা আটকে ওয়ার্কার্স পার্টির প্রার্থী টিপু সুলতানের পক্ষে ইচ্ছামতো ভোট দিয়েছে বলে অভিযোগ করেন ওই আসনের বর্তমান এমপি ও জাতীয় পার্টির প্রার্থী গোলাম কিবরিয়া টিপু। তবে মাধবপাশা লাফাদি ভোটকেন্দ্রে যাওয়ার সড়কটি শনিবার রাতে কেটে ফেলে দুর্বৃত্তরা। বরিশাল-মুলাদি সড়কের ক্ষুদ্রকাঠি এলাকায় এবং বাবুগঞ্জের রহমতপুর, মাধবপাশা ও গৌরনদীর তাঁরাকুপি এলাকায় গাছের গুঁড়ি ফেলে অবরোধ সৃষ্টি করে বিএনপি কর্মীরা। অন্যদিকে নদীবেষ্টিত বরিশাল-৪ (হিজলা-মেহেন্দিগঞ্জ) আসনের কয়েকটি ভোটকেন্দ্রে জালভোটের খবর পাওয়া গেছে। বরিশাল-২ (উজিরপুর-বানারীপাড়া) আসনের স্বতন্ত্র প্রার্থী সাবিনা কারচুপির অভিযোগে বেলা ১১টার পর নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ানোর ঘোষণা দেন। বরিশাল-২ (বাবুগঞ্জ-উজিরপুর) জাতীয় পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্য গোলাম কিবরিয়া টিপু এবং ওয়ার্কার্স পার্টির টিপু সুলতান প্রতিদ্বন্দ্বিতা করলেও কারচুপির অভিযোগে বেলা ৩টার দিকে নির্বাচন বয়কট করেন। বরিশাল-৪ (হিজলা-মেহেন্দিগঞ্জ) আসনে আওয়ামী লীগের পংকজ দেবনাথ ছাড়া বিএনএফের আঞ্জুমান সালাউদ্দিন এবং জেপি (মঞ্জু) প্রার্থী শেখ মো. শহীদুল ইসলাম প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন।

চট্টগ্রামে ভোটের দিনও আধিপত্য ১৮ দলের : চট্টগ্রাম প্রশাসনের গলার কাঁটা হয়ে ওঠা চার উপজেলায় দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের দিনও আধিপত্য ছিল ১৮ দলের নেতা-কর্মীদের। সীতাকুণ্ড, সাতকানিয়া, লোহাগাড়া ও বাঁশখালীর ভোটকেন্দ্র এবং ভোটারদের ওপর হামলা, ব্যালট বঙ্ ছিনতাইয়ের চেষ্টাসহ নাশকতার ঘটনা ঘটে। বেশির ভাগ এলাকায় ভোটারদের উপস্থিতি কম হলেও সংখ্যালঘু এবং আওয়ামী লীগ অধ্যুষিত অঞ্চলে তুলনামূলক বেশি ছিল। ভোটগ্রহণের শুরুতে বাঁশখালীর বিভিন্ন এলাকায় ভোটারদের উপস্থিতি ছিল খুবই নগণ্য। কিন্তু বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে আওয়ামী লীগ ও সংখ্যালঘু অধ্যুষিত এলাকা সাধনপুর, বানিগ্রাম, জলদি এবং নাপুরা এলাকায় ভোটকেন্দ্রে ভোটারদের উপস্থিতি বাড়তে থাকে। কিন্তু এর বিপরীত চিত্র দেখা যায় দক্ষিণ-পশ্চিম বাঁশখালীর চাম্বল, পুঁইছড়ি, শেখেরখিল ও গণ্ডামরা ইউনিয়নসহ বিএনপি-জামায়াত অধ্যুষিত বিভিন্ন এলাকায়। এসব এলাকায় বিএনপি-জামায়াতের হুমকি-ধমকির কারণে সিংহভাগ ভোটারই ভোটকেন্দ্রে যাননি। শেখেরখিল ইসলামিয়া দাখিল মাদ্রাসার প্রিসাইডিং অফিসার মাহমুদুল হক বলেন, বিএনপি-জামায়াতের বাধার কারণে বেলা ১টা পর্যন্ত মাত্র ৫ জন ভোটার ভোট দিয়েছেন। সীতাকুণ্ড উপজেলার বিএনপি-জামায়াত অধ্যুষিত বারবকুণ্ড, মুরাদপুর, আমিরাবাদ, ইয়াকুবনগর, কেদারখিল এবং ফৌজদারহাট এলাকায় ভোটারদের উপস্থিতি ছিল নগণ্য। তবে আওয়ামী লীগ অধ্যুষিত বড় দারগারহাট, মাদাম বিবিরহাট, বারইয়ার ঢালা, সলিমপুর এলাকায় ভোটারদের উপস্থিতি ছিল তুলনামূলক উল্লেখযোগ্য।

সিলেটে প্রাণহীন নির্বাচনে ভোটাররা ছিলেন উদ্বিগ্ন : নির্বাচনে বিশৃঙ্খলার শঙ্কা ছিল, ছিল নাশকতার ভয়। নির্বাচনের আগের রাতেই সিলেটের বিভিন্ন স্থানে ভোটকেন্দ্রে আগুনসহ নাশকতার ঘটনার শঙ্কা ছড়িয়ে পড়েছিল সর্বত্র। অথচ গতকাল ভোটের দিনে সিলেটে তেমন কোনো অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেনি। প্রায় সবগুলো কেন্দ্রেই শান্তিপূর্ণ পরিবেশে ভোট গ্রহণ হয়েছে। অপ্রীতিকর ঘটনা না ঘটলেও পুরো দিন ভোটাররা ছিলেন শঙ্কিত। ভোটেও ছিল নিষ্প্রাণ। দিনভর সিলেট-২ ও ৪ আসনের বিভিন্ন এলাকা ঘুরে বেশিরভাগ ভোটকেন্দ্র ভোটারবিহীন দেখা যায়। এই দুই আসনে ২৫ শতাংশ ভোটার ভোট দিয়েছেন বলে জানিয়েছে নির্বাচন কমিশন। সকাল ১১টার দিকে সিলেট-২ (বিশ্বনাথ-বালাগঞ্জ-ওসমানীনগর) আসনের কময়কটি কেন্দ্রে গিয়ে দেখা যায়, বেশিরভাগ কেন্দ্রেই ভোটার উপস্থিতি একেবারে নগণ্য। কেন্দ্রগুলোতে দায়িত্বরত নির্বাচনী কর্মকর্তা ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা বারান্দায় অলস সময় কাটাচ্ছেন। তবে কয়েকটি কেন্দ্রে ব্যতিক্রম চিত্রও দেখা গেছে। সিলেট-২ আসনের বিশ্বনাথ উপজেলার অলংকারী ইউনিয়নের রামপুরা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে গিয়ে কোনো ভোটারের দেখা মিলেনি। গল্পগুজব করে সময় কাটাচ্ছেন নির্বাচনী কর্মকর্তা ও আইনশৃঙ্খলাবাহিনীর সদস্যরা। ভোটকেন্দ্রের পাশেই জমিতে হালচাষ করতে থাকা কৃষক আশরাফ আলী বলেন, এই নির্বাচনে ভোট দিয়ে কোনো লাভ নেই। সিলেকশনেই পাস-ফেল নির্ধারিত হয়ে গেছে। তাছাড়া খামাখা মারামারিতে জড়ানোর দরকার কী? এ কেন্দ্রের প্রিসাইডিং অফিসার দেওয়ান আল আমীন জানান, দুপুর ১২টা পর্যন্ত ১১৮৭ ভোটারের মধ্যে ৪-৫ জন ভোট দিয়েছেন। তবে একই উপজেলার জানাইয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে গিয়ে ভোটারদের লাইন ধরে ভোট দিতে দেখা যায়। নারী ভোটারদের উপস্থিতিও ছিল লক্ষণীয়। বিকালে সিলেট-৪ (জৈন্তাপুর-গোয়াইনঘাট-কোম্পানীগঞ্জ) আসনের বেশিরভাগ কেন্দ্রই ছিল ভোটারবিহীন। তবে চা ও পাথর শ্রমিক অধ্যুষিত কেন্দ্রগুলোতে বিপুল সংখ্যক ভোটারের উপস্থিতি লক্ষ্য করা যায়। বেলা পৌনে ১১টায় জৈন্তাপুর উচ্চ বিদ্যালয় গেটের পাশে ৫টি ও বাউরবাগ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পাশে একটি ককটেল বিস্ফোরণ ঘটে।

ফলাফল ছিনতাইয়ের অভিযোগ দুই বিদ্রোহীর : বিকাল ৪টার পর পর আলাদাভাবে সংবাদ সম্মেলন করে ফল ছিনতাইয়ের অভিযোগ করেছেন সিলেট-২ আসনের আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী মুহিবুর রহমান ও সিলেট-৪ আসনের একই দলের বিদ্রোহী প্রার্থী ফারুক আহমদ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.