ড্রোন হচ্ছে এমন একটি বিমান যেখানে কোনো পাইলট থাকে না। দূর থেকেই এটি নিয়ন্ত্রণ করা যায়। ড্রোনে সাধারণত ক্যামেরা থাকে। এ ক্যামেরার মাধ্যমে গৃহীত ভিডিওচিত্র ভূমি থেকে নিয়ন্ত্রণকারী অপারেটরের কাছে পেঁৗছে দেওয়া হয়। আকাশসীমায় পর্যবেক্ষণসহ সীমানা পাহারা দেওয়া, আবহাওয়া পর্যবেক্ষণ, শত্রুদের রাডার বেতার সিস্টেমে ব্যাঘাত ঘটানো, আড়ি পেতে তথ্য জোগাড়সহ আরও অনেক কাজে পারদর্শী এ ড্রোন।
আর চালক না থাকার কারণে ঝুঁকিও নেই। দেশের অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা, সীমান্তে বহিঃশত্রুর অনুপ্রবেশ ঠেকানোসহ আধুনিক সমরবিদ্যার সর্বশেষ সংযোজনগুলোর অন্যতম হচ্ছে ড্রোন বা মনুষ্যবিহীন বিমান। আধুনিক বিশ্বের সমরবিদ্যার বিশেষ সহায়ক হলো ড্রোন। বিশ্বের শক্তিশালী রাষ্ট্রগুলো ড্রোন ব্যবহার করে অন্যকে নিয়ন্ত্রণ করাসহ নানা কাজ করছে অনায়াসেই। উন্নত প্রযুক্তি আর ব্যয়বহুল হওয়ায় সব দেশ ড্রোন ব্যবহার করতে পারে না।
এতদিন ড্রোন ব্যবহার ছিল শুধু উন্নত রাষ্ট্রগুলোর মধ্যেই সীমাবদ্ধ। বর্তমান ড্রোন ব্যবহারকারী রাষ্ট্রগুলোর মতো বাংলাদেশ এতটা উন্নত না হলেও খুব শীঘ্রই হয়তো বাংলাদেশের আকাশেও দেখা যাবে ড্রোন। তবে ড্রোন ব্যবহারকারী এসব দেশের খাতায় হয় তো খুব দ্রুতই নাম লেখাতে যাচ্ছে বাংলাদেশ। শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় তেমনটাই স্বপ্ন দেখাচ্ছে এখন পুরো দেশকে। সম্প্রতি মানববিহীন বিমান ড্রোন বানাচ্ছে শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষক দল।
নতুন বছরের শুরুতেই তারা ড্রোনের একটি পরীক্ষামূলক ডিজাইন তৈরি করেছে। এখন চলছে বিভিন্ন ডিভাইস সংযোজনের কাজ।
আগামী এপ্রিলেই বাংলাদেশের আকাশে ড্রোন উড়াবেন বলে জানিয়েছে গবেষক দলটি। গবেষণা দলের তত্ত্বাবধানে রয়েছেন শাবিপ্রবির ইলেকট্রিক্যাল অ্যান্ড ইলেকট্রনিঙ্ বিভাগের শিক্ষক অধ্যাপক ড. মুহম্মদ জাফর ইকবাল। গবেষক দলটির প্রধান পদার্থবিজ্ঞান বিভাগের মাস্টার্সের শিক্ষার্থী সৈয়দ রেজওয়ানুল হক নাবিল।
নাবিল ছাড়াও ড্রোন গবেষক দলে রয়েছেন পদার্থবিজ্ঞান বিভাগের চতুর্থ বর্ষের শিক্ষার্থী রবি কর্মকার এবং একই বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী মারুফ হোসেন রাহাত। তারা সবাই সাস্ট রোবটিক অ্যারোনোটিঙ্ অ্যান্ড ইন্টারফেসিং রিসার্চ গ্রুপের (সাস্ট রোবঅ্যারো) সদস্য। নাবিল জানান, আমরা নিজেদের টাকাতেই শুরু করেছি। তবে কোনো স্পন্সর পেলে আমরা এটা আরও বড় আকারে এবং দ্রুত শেষ করতে পারব। জাফর স্যার নিজেও ব্যক্তিগতভাবে আমাদের অর্থায়ন করেছেন।
নাবিল বলেন, 'এ ড্রোন দিয়ে দেশের সীমানা পাহারা দেওয়া, ওপর থেকে তাৎক্ষণিক ছবি তোলা সম্ভব হবে। এ ছাড়া আবহাওয়া সম্পর্কে তথ্য পাওয়া যাবে। দেশের সেনা, নৌ, বিমানবাহিনী এটা নিরাপত্তাজনিত কাজেও ব্যবহার করেতে পারবে। রেজওয়ানুল নাবিল জানালেন, গত বছরের এপ্রিল থেকে তারা ড্রোন তৈরির তাত্তি্বক কাজ শুরু করেন। দীর্ঘ গবেষণা শেষে তারা হাত দেন এ কাজে।
এরপর চলতি বছরের শুরু থেকে মূল কাজগুলো শুরু করেছেন। আরও তিন মাস পর ড্রোনটি আকাশে উড়ানো যাবে।
সাস্ট রোবোঅ্যারোর তৈরি ড্রোনের প্রাথমিক সংস্করণ হবে অনেকটা বি-৫২ জঙ্গিবিমানের মতো। প্রাথমিকভাবে তিন ফুট চওড়া এবং চার ফুট লম্বা একটি ড্রোন তৈরি হচ্ছে বলে জানান রেজওয়ানুল নাবিল। শাবিপ্রবির গবেষক দলটির প্রধান সৈয়দ রেজওয়ানুল হক নাবিল জানান, দেশের আকাশে ড্রোন উড়ানোর স্বপ্ন তাদের অনেক আগের।
তবে গবেষণা কাজে বিশ্ববিদ্যালয় কোনো অর্থ বরাদ্দ দেয়নি। সম্পূর্ণ ব্যক্তিগত খরচে ড্রোন গবেষণার কাজ চলছে। জাফর ইকবালও তার ব্যক্তিগত তহবিল থেকে গবেষণা কাজে অর্থ ব্যয় করেন। নাবিল জানান, কোনো প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি না হলে আগামী এপ্রিল মাসেই এ ড্রোন উড়বে আকাশে। এখন ড্রোনের ডিভাইস সংযোজনের কাজ চলছে।
ড্রোন নির্মাণের প্রাথমিক গবেষণার কাজ তারা ইতোমধ্যে সম্পন্ন করেছেন। তৈরি হয়েছে পরীক্ষামূলক ডিজাইনও। পুরোদমে চলছে ডিভাইস তৈরি ও সংযোজনের কাজ। গত বছরের এপ্রিল থেকে শাবিপ্রবির পদার্থবিজ্ঞান বিভাগের কয়েকজন ছাত্র ড্রোন তৈরির কাজে হাত দেন। ড্রোনটি কি কাজে লাগবে এমন প্রশ্নের জবাবে গবেষক নাবিল জানান, শাবিপ্রবিতে যে ড্রোন তৈরি হচ্ছে তা দিয়ে দেশের সীমানা পাহারা দেওয়া, আকাশ থেকে ভূমির নিরাপত্তা নিশ্চিত করা এবং ছবি তোলা সম্ভব হবে।
দেশের সেনা, নৌ ও বিমানবাহিনীর সদস্যরাও নিরাপত্তাব্যবস্থায় এ ড্রোনটি ব্যবহার করতে পারবেন। এ ছাড়া ওই ড্রোন দিয়ে আবহাওয়া পর্যবেক্ষণ, শত্রুদের রাডার বেতার সিস্টেমে ব্যাঘাত ঘটানো, আড়ি পেতে তথ্য সংগ্রহসহ রাষ্ট্রীয় অনেক নিরাপত্তাজনিত কাজে এ ড্রোন ব্যবহার করা যাবে বলে জানান গবেষকরা।
*শাহ্ দিদার আলম নবেল ও আসাদুজ্জামান নয়ন, সিলেট
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।