শিক্ষার্থীরা বলছেন, প্রয়োজনের অতিরিক্ত নিয়োগপ্রাপ্ত শিক্ষকদের বেতনভাতার খরচ জোগাতেই গত ২৪ ডিসেম্বর সিন্ডিকেটের সভায় বর্ধিত ফি কার্যকরের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। সিন্ডিকেটের সিদ্ধান্ত কার্যকর করতে সব বিভাগে নোটিস দেয়া হয়েছে।
সিন্ডিকেট সদস্য আমজাদ হোসেন বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “সাধারণভাবে সাময়িক সনদপত্র উত্তোলন ফি একশ থেকে বাড়িয়ে তিনশ এবং জরুরি ভিত্তিতে সনদপত্র উত্তোলন ফি দুইশ টাকা থেকে বাড়িয়ে এক হাজার টাকা করা হয়েছে। ”
এছাড়া মূল সনদপত্র উত্তোলন ফি দুইশ থেকে বাড়িয়ে পাঁচশ, জরুরি নম্বরপত্র ২২৫ থেকে বাড়িয়ে ৬০০, সাবসিডিয়ারি নম্বরপত্র ফি ১৫০ থেকে বাড়িয়ে ৫০০, ডুপ্লিকেট নম্বরপত্র ৩০০ থেকে এক হাজার, ডুপ্লিকেট প্রবেশপত্র ৫০ থেকে ২০০, নাম সংশোধনী ফি ২৫০ টাকা থেকে বাড়িয়ে ৫০০ টাকা করা হয়েছে, বলেন তিনি।
২০১৩-১৪ শিক্ষাবর্ষ থেকেই বর্ধিত ফি কার্যকর হয়েছে।
এছাড়া সম্মান শ্রেণির তিন ঘণ্টার তত্ত্বীয় পরীক্ষার ফি ৫০ টাকা থেকে বাড়িয়ে ১০০, তিন ঘণ্টার বেশি স্থিতিকালের পরীক্ষার ফি ৬০ থেকে ১২৫ টাকা করা হয়েছে। স্নাতকোত্তর শ্রেণীর পরীক্ষার ফি ৬০ থেকে ১২৫ টাকা করা হয়েছে।
বিভিন্ন বিভাগে কোর্স উন্নয়ন ফি ১০০ টাকা থেকে পাঁচগুণ বাড়িয়ে ৫০০ টাকা করা হয়েছে। ননকলেজিয়েট ফি ৫০০ টাকা থেকে বাড়িয়ে এক হাজার এবং মাস্টার্সে তত্ত্বীয় পরীক্ষার ফি ২০০ টাকা থেকে পাঁচগুণ বাড়িয়ে একহাজার টাকা করা হয়েছে।
বেড়েছে বিশ্ববিদ্যালয়ের চিকিৎসা অনুষদভুক্ত বিভিন্ন খাতের ফিও।
এমবিবিএস, বিডিএস পরীক্ষার ফি প্রতি বিষয় ১ হাজার ২০০ টাকা থেকে বৃদ্ধি করে ১ হাজার ৫০০ টাকা করা হয়েছে।
স্নাতকোত্তর এমএস, এমডি এফফিল পরীক্ষার ফি ২ হাজার থেকে বাড়িয়ে ৫ হাজার এবং স্নাতকোত্তর ডিপ্লোমা কোর্সের বিভিন্ন পরীক্ষার ফি ১ হাজার ৫০০ টাকা থেকে বাড়িয়ে ৫ হাজার টাকা করা হয়েছে।
তবে বিশ্ববিদ্যালয়ের কোষাধ্যক্ষ ও ফি বৃদ্ধি বিষয়ে গঠিত কমিটির আহ্বায়ক অধ্যাপক সায়েন উদ্দিন আহমেদ দাবি করেছেন, শিক্ষার্থীদের নিয়মিত ফি কম বৃদ্ধি করা হয়েছে।
তিনি বলেন, “জরুরি ভিত্তিতে যেসব সনদপত্র উত্তোলন করা হয় সেখানে কিছুটা বেশি বাড়ানো হয়েছে। ”
বিশ্ববিদ্যালয়ের সংস্থাপন দপ্তর থেকে পাওয়া তথ্যে দেখা যায়, ২০০৯ সালের ২৬ ফেব্রুয়ারিতে সাবেক উপাচার্য আব্দুস সোবহান দায়িত্ব নেয়ার পর চলতি বছরের ২৬ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত ২০৪ পদের বিপরীতে ৩৬৮ জন শিক্ষক নিয়োগ করা হয়েছে, যা বিজ্ঞাপিত পদের তুলনায় ৮১ শতাংশ বেশি।
ফলে অতিরিক্ত শিক্ষকদের বেতন বিশ্ববিদ্যালয়ের নিজস্ব তহবিল থেকে ব্যয় হচ্ছে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের হিসাব-পরিচালক আশরাফ-উল-হুদা বলেন, বিজ্ঞাপিত পদের চেয়ে দ্বিগুণ শিক্ষক নিয়োগ দেয়ায় বর্তমানে ৩০১ জন নবীন শিক্ষকদের বেতন দিতে প্রশাসন হিমশিম খাচ্ছে।
বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন এইসব শিক্ষকদের বেতন দিতে পারবে না বলে জানিয়ে দিয়েছে বলে জানান তিনি।
বর্ধিত ফি প্রসঙ্গে মৎস্য বিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী রবিউল ইসলাম রবিন বলেন, “সাধারণত এই বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা দরিদ্র পরিবার থেকে আসে। তাই বিশ্ববিদ্যালয়ের এই সিদ্ধান্ত সাধারন শিক্ষার্থীদের ভোগান্তিতে ফেলবে।
কোন নোটিস ছাড়া অতিরিক্ত ফি আদায় করা সমীচীন নয়।
এ বিষয়ে ছাত্র ইউনিয়নের সভাপতি আয়তুল্লাহ খোমেনী বলেন, আগের প্রশাসন নিয়োগ বিজ্ঞপ্তির অতিরিক্ত শিক্ষক নিয়োগ দেয়ায় বর্তমান প্রশাসন তাদের বেতনভাতা দিতে শিক্ষার্থীদের ওপর চাপ সৃষ্টি করছে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক সেলিম রেজা নিউটন বলেন, পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে নিজস্ব অর্থায়নে চলার প্রস্তাব গ্রহণযোগ্য নয়। বিশ্বব্যাংকের এ কৌশল বাস্তবায়ন করা হলে তা উচ্চশিক্ষার জন্য সর্বনাশ ডেকে আনবে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক মুহম্মদ মিজানউদ্দিন বলেন, “আমরা চাই সাধারণ শিক্ষার্থীদের জন্য সহনীয় পর্যায়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন ফি কার্যকর থাকুক।
সেই প্রেক্ষিতে এই সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে।
শিক্ষার্থীদের ওপর বর্ধিত কোন চাপ হবে না উল্লেখ করে উপাচার্য বলেন, “যেহেতু বিষয়টি সিন্ডিকেটের সিদ্ধান্ত সেহেতু আমরা বিশ্বাস করি এটি শিক্ষার্থীদের কোন চাপ সৃষ্টি করবে না। ”
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।