সরকারের প্রতি কথিত বিরোধী দলের অকুণ্ঠ সমর্থন ও অবিচল আস্থা ঘোষণার মাধ্যমে প্রায় বিনা ভোটে 'নির্মিত' দশম জাতীয় সংসদের অনিশ্চিত যাত্রা শুরু হয়েছে ২৯ জানুয়ারি। কার্যকর কোনো বিরোধী দল ছাড়াই নজিরবিহীন এই সংসদ যাত্রা শুরু করল। নজিরবিহীন এই কারণে যে, সব দলের অংশগ্রহণের মাধ্যমে একটি প্রত্যক্ষ ও প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ নির্বাচনের মাধ্যমে পৃথিবীর সব গণতান্ত্রিক দেশে যেভাবে নির্বাচন হয়, বাংলাদেশের দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচন সেভাবে অনুষ্ঠিত হয়নি। সংবিধানের নির্দেশ অনেকটা গায়ের জোরে অগ্রাহ্য করা হয়েছে। আমাদের সংবিধানের ৬৫(২) অনুচ্ছেদে বলা আছে, 'একক আঞ্চলিক নির্বাচনী এলাকাসমূহ হইতে প্রত্যক্ষ নির্বাচনের মাধ্যমে আইনানুযায়ী নির্বাচিত তিনশত সদস্য লইয়া এবং এই অনুচ্ছেদের (৩) দফার কার্যকরতাকালে উক্ত দফায় বর্ণিত সদস্যদিগকে (সংরক্ষিত আসনের মহিলা সদস্য) লইয়া সংসদ গঠিত হইবে এবং সদস্যগণ সংসদ সদস্য বলিয়া অভিহিত হইবেন।
' অত্যন্ত সহজ-সরলভাবে লিখিত এই অনুচ্ছেদটি বোঝার জন্য সংবিধানবিশেষজ্ঞ হওয়ার প্রয়োজন নেই। সংবিধানের নির্দেশ হচ্ছে, নির্বাচন হতে হবে প্রত্যক্ষ। এই অনুচ্ছেদ বিশ্লেষণ করলে এই দাঁড়ায় যে, একক আঞ্চলিক নির্বাচনী এলাকা থেকে প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ নির্বাচনের মাধ্যমে বিজয়ীরাই জনগণের প্রতিনিধি হয়ে সংসদে যাবেন, তাদের পক্ষে কথা বলবেন, দেশের স্বার্থে কাজ করবেন। বহুদলীয় গণতান্ত্রিক প্রথায় একটা দেশে বহু দল থাকে, বহু মত থাকে। জাতীয় নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে তাদের মনোনীত প্রার্থীরা।
এমন কি উঁচু মানের ও মাপের নির্দল জনসেবকরাও প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন। প্রত্যক্ষ ভোটে জনগণ এদের মধ্য থেকে তাদের পছন্দের প্রার্থীকে প্রতিনিধি হিসেবে বেছে নেওয়ার সুযোগ পায় একটা অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনে। কিন্তু দুর্ভাগ্যজনক হলেও সত্য যে, আমাদের এবারকার দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনটি সেই অর্থে সংসদীয় গণতন্ত্রের রীতি-নীতি মেনে, এমন কী আমাদের সংবিধানের পথনির্দেশ মেনেও অনুষ্ঠিত হয়নি। এ নির্বাচনের মারাত্দক দুর্বলতা হলো, প্রধান বিরোধী দল বিএনপিসহ নির্বাচন কমিশনে নিবন্ধিত ৪২টি রাজনৈতিক দলের মধ্যে আওয়ামী লীগ ও হু. মু. এরশাদের জাতীয় পার্টি ছাড়া ভুঁইফোর অপর ১০টি দল অংশ নিয়েছে। এদের নামও মানুষ জানে না।
বাদবাকি ৩০টি দলই নির্বাচন বর্জন করেছে। এদের অধিকাংশই পরিচিত। বিএনপি-জামায়াত ছাড়া বর্জনকারীদের মধ্যে ছিল সাবেক রাষ্ট্রপতি অধ্যাপক বদরুদ্দোজা চৌধুরীর বিকল্পধারা, ড. কামাল হোসেনের গণফোরাম, কমিউনিস্ট পার্টি অব বাংলাদেশ (সিপিবি), কর্নেল অলির নেতৃত্বাধীন এলডিপি, বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকীর কৃষক শ্রমিক জনতা পার্টি, আ. স. ম. আবদুর রবের নেতৃত্বাধীন জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল (জেএসডি), কমরেড খালেকুজ্জামানের বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দল (বাসদ), আন্দালিব রহমান পার্থের জাতীয় পার্টিসহ বিভিন্ন ইসলামী দল। আর এই নির্বাচনের তামাশাটা হলো নির্বাচন ছাড়া, ভোটাভুটি ছাড়াই ৩০০ আসনের জাতীয় সংসদে ১৫৩ জনই 'নির্বাচিত' হয়ে গেছেন নির্বাচনের ঘোষিত তারিখের ২০ দিন আগে। সরকারের অনুগত ও কুখ্যাত 'জনতার মঞ্চের' অন্যতম নায়ক কাজী রকিবউদ্দীন আহমদের নেতৃত্বাধীন নির্বাচন কমিশন ঘোষিত ভোট গ্রহণের দিন ছিল ৫ জানুয়ারি।
নির্বাচন কমিশন বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় ১৫৩ জনকে বিজয়ী ঘোষণা করেছে। অর্থাৎ সরকার গঠন করার মতো সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জনের জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে আর ৫ জানুয়ারি পর্যন্ত অপেক্ষা করায়নি, অস্বস্তিতে রাখেনি ইসি। ৫ জানুয়ারি অনুষ্ঠিত হয়েছে ১৪৭ আসনের খণ্ডিত বা খুচরা সংসদ নির্বাচন। কোনো কারণে ৫ তারিখের নির্বাচন যদি ভণ্ডুলও হয়ে যেত তাহলেও কিন্তু লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনার প্রধানমন্ত্রী হতে কোনো অসুবিধা ছিল না। সেই খুচরা নির্বাচনও কেমন হয়েছিল তা সবারই জানা।
এমন কি যারা পাঁচ বছরের জন্য নির্বাচিত হয়েছেন বলে তৃপ্তির ঢেঁকুর তুলছেন তারাও তা জানেন। নির্বাচন কমিশন কর্তৃক প্রদত্ত ৪০.৫৬ শতাংশ ভোট প্রদানের হার মোটেও বিশ্বাসযোগ্য নয়। অনেকের মনেই প্রশ্ন জেগেছে, এই সংসদের ১৫৩ জন তো বটেই, বাকি ১৪৭ জনও সংবিধানের ৬৫ (২) অনুচ্ছেদ অনুযায়ী যেহেতু নির্বাচিত হননি, তাদের কোন নামে ডাকা হবে? সংবিধানের ৬৫ (২) অনুচ্ছেদে তো বলা আছে, এই অনুচ্ছেদ অনুযায়ী নির্বাচিতরাই (৬৫ (৩) অনুচ্ছেদ অনুযায়ী সংরক্ষিত মহিলা আসনের সদস্যসহ) সংসদ সদস্য বলে অভিহিত হবেন। কারও কারও মতে, এই সংসদ অস্বাভাবিকভাবে নির্মিত হয়েছে শাসক লীগের ইচ্ছা ও পছন্দ অনুযায়ী। ক্ষমতা দখলে বা নিয়ন্ত্রণে রাখাই এর উদ্দেশ্য।
স্বাভাবিক প্রক্রিয়ায় গঠিত হয়নি বলে এটি সুস্থ, সবল নয়, বলা চলে প্রতিবন্ধী সংসদ। অনেক মুখ ও বধির বা বুদ্ধিহীন মানুষ আছে যারা স্বাভাবিক মানুষের চেয়েও অনেক সুন্দর, আকর্ষণীয় কিন্তু তারা সুস্থ নয়, প্রতিবন্ধী। যার পা আছে কিন্তু ভালো করে হাঁটতে পারে না, তাকে দিয়ে কি ফুটবল খেলানো যাবে? যার হাত আছে কিন্তু কোনো কিছু ভালো করে ধরতেও পারে না, তাকে দিয়ে ক্রিকেট? আমাদের সংবিধানে বা আরপিওতে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হওয়ার পথে কোনো অন্তরায় রাখা হয়নি, একইভাবে মোট ভোটারের কত পার্সেন্ট ভোট দিলে নির্বাচন বৈধ এবং প্রার্থীর বিজয় নিশ্চিত হবে তারও কোনো নির্দেশনা নেই, কথাটি ঠিক। কিন্তু তাই বলে এই সুযোগ গ্রহণ করে ৩০০ আসনের ১৫৩ জনকেই বিনা ভোটে এমপি বানিয়ে নিয়ে আসা হবে? বাকি ১৪৭ আসনে পুলিশ, র্যাব, বিজিবি এমন কি সেনা পাহারায় ১২ থেকে ১৫ শতাংশ ভোটে পছন্দের প্রার্থী জিতিয়ে এনে বলা হবে নির্বাচন হয়েছে এবং ৩০০ জনই নির্বাচিত! এমন এক নজিরবিহীন নির্বাচনের (?) মাধ্যমে নির্মিত লেজিটিমেসিহীন সংসদ এবং 'সংসদ সদস্যদের' ওপর নির্ভর করে লীগ সরকারের হোমরা-চোমরারা কি করে বলতে পারছেন যে, জনগণ তাদের পক্ষে রায় দিয়েছে এবং এই ম্যান্ডেট পাঁচ বছরের জন্য, ভাবতে বিস্ময় জাগে। এই সংসদ প্রকৃত অর্থে নৈতিকতাহীনতার কারাগারে বন্দী।
প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, দেশের ইতিহাসে এ-ই নাকি প্রথম একটি নির্বাচিত সরকার শান্তিপূর্ণভাবে আরেকটি নির্বাচিত সরকারের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর করেছে। মানুষকে এত বোকা ভাবছেন তারা? এই সরকার কেমন নির্বাচিত সরকার মানুষ তো নিজ চোখেই দেখেছে। বিদেশি বন্ধুরাষ্ট্র এবং উন্নয়ন সহযোগীরাও কি তা দেখেনি? পর্যবেক্ষণ করেনি? প্রকৃত কোনো নির্বাচিত সরকারের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর হয়নি, একটি প্রশ্নবিদ্ধ লেজিটিমেসিহীন সরকারের কাছে একটি নির্বাচিত সরকার ক্ষমতা ছেড়ে দিয়েছে বলাটাই এখানে যুক্তিযুক্ত হতো বলে মনে করেন পর্যবেক্ষকরা। এসব লোক হাসানো কথা না বলে বরং এটুকু বললে শোভন হতো যে, সাংবিধানিক শাসনের ধারাবাহিকতা রক্ষার জন্য নির্বাচনটি করতে হয়েছে (যদিও কথাটির ভিত্তি জোরালো নয়); কার্যকর বিরোধী দলের সঙ্গে আলোচনা-সংলাপ করে দ্রুততম সময়ে সবার অংশগ্রহণের মাধ্যমে একাদশ সংসদ নির্বাচনের উদ্যোগ নেওয়া হবে। ১৯৯৬ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি বেগম খালেদা জিয়ার সরকারের আমলে বিরোধী দলের অংশগ্রহণহীন যে ষষ্ঠ সংসদ নির্বাচন হয়েছিল, তা প্রতিরোধের জন্য রক্তক্ষয়ী আন্দোলনের পরও তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবি মেনে নিয়ে দ্রুততম সময়ের মধ্যে সপ্তম সংসদ নির্বাচনের ব্যবস্থা করায় তৎকালীন বিরোধী দল আওয়ামী লীগ এবং তাদের আন্দোলনের সহযোগী জামায়াতে ইসলামী ও এইচএম এরশাদের জাতীয় পার্টি তা মেনে নিয়েছিল।
কিন্তু বর্তমানে লেজিটিমেসিহীন সরকার শুরু থেকেই স্বৈর মানসিকতার পরিচয় দিচ্ছে। রাষ্ট্রশক্তি প্রয়োগ করে ক্ষমতায় থাকার ইঙ্গিত দিচ্ছে। দেশের অন্যতম প্রধান রাজনৈতিক দল বিএনপি তাদের ভাষায় প্রহসন নির্বাচনের মাধ্যমে গঠিত দশম জাতীয় সংসদের প্রতি অনাস্থা প্রকাশ করে কালো পতাকা মিছিলের শান্তিপূর্ণ কর্মসূচি ঘোষণা করেছিল ২৯ জানুয়ারি। কিন্তু সরকার স্বৈরাচারী পন্থায় পুলিশি শক্তি ব্যবহার করে সেই কর্মসূচি পালন করতে দেয়নি। মনে হচ্ছে, যে মানসিকতায় ও প্রক্রিয়ায় লীগ সরকার রাষ্ট্রীয় অস্ত্রবলে নামকাওয়াস্তে দশম সংসদ নির্বাচন করে নিয়েছে, একই কায়দায় রাষ্ট্রক্ষমতা নিয়ন্ত্রণে রাখতে চাচ্ছে।
রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ অ্যাডভোকেট আওয়ামী লীগের একজন প্রবীণ নেতা হলেও তিনি এখন রাষ্ট্রের সর্বোচ্চ ব্যক্তি, অভিভাবক। তিনি অভিভাবকত্ব করবেন সব দলের, সব মতের মানুষের, সমগ্র জাতির। কিন্তু ২৯ জানুয়ারি সংসদে প্রদত্ত তার ভাষণ জাতিকে হতাশ করেছে। তিনি যেন অভিভাবকত্ব করছেন শুধু আওয়ামী লীগের এবং দেশ-বিদেশে বিতর্কিত নির্বাচনের মাধ্যমে গঠিত লীগ সরকারের। তিনি লীগ নেত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কণ্ঠে সুর মিলিয়েই বলেছেন, দশম সংসদ নির্বাচন অবাধ ও সুষ্ঠু হয়েছে।
তিনি প্রচ্ছন্নে বিএনপির প্রতি ইঙ্গিত করে তাদের সাম্প্রদায়িক ও সন্ত্রাসী সংগঠনের সংশ্রব ত্যাগের আহ্বান জানিয়েছেন; এটা ঠিক আছে কিন্তু একই সঙ্গে সরকারের প্রতি সবার অংশগ্রহণের মাধ্যমে দ্রুত একটি গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের মাধ্যমে কার্যকর একটি সংসদ গঠনের আহ্বান জানালেন না। অথচ অভিভাবকের কাছ থেকে জাতির এই প্রত্যাশা ছিল। আমাদের দেশের সংসদীয় গণতন্ত্রের হাল-হকিকত মানুষের জানা। এমন একটা ধারণা সর্বত্র বিরাজ করছে যে, প্রেসিডেন্টের ভাষণ হলেও তা 'রচিত' হয় প্রধানমন্ত্রীর সচিবালয়ে। প্রেসিডেন্টের কার্যালয় শক্তিশালী হলেও এবং তার ভাষণ তার কার্যালয় থেকে তৈরি হলেও তার ভাষণে প্রধানমন্ত্রীর নাকি অনুমোদন লাগে।
অধ্যাপক বি. চৌধুরী তাতে ব্যত্যয় ঘটাতে গিয়ে পদচ্যুত হয়েছিলেন। রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ অধ্যাপক বদরুদ্দোজা চৌধুরীর মতো সাহস দেখাতে না পারলেও এই সংসদের দুর্বলতার বাস্তবতা তুলে ধরে একটি কার্যকর সংসদ গঠনের ব্যাপারে চিন্তা করার জন্য আহ্বান জানালে জনমনে কিছুটা হলেও আশা জাগত, স্বস্তি ফিরত। তবে সবার উচিত হবে জাতীয় রাজনীতিতে হিংসা-হানাহানি, সন্ত্রাস-নৈরাজ্য পরিহারের জন্য তার আহ্বানের প্রতি গুরুত্ব দেওয়া, সম্মান দেখানো।
দুই.
বিএনপি এবারও পারেনি। ২৯ জানুয়ারি ঘোষিত কালো পতাকা মিছিল সফল করতে পারেনি।
নির্বাচনের আগে তাদের শেষ কর্মসূচি 'মার্চ ফর ডেমোক্রেসি'র মতো নির্বাচনের পর প্রথম কর্মসূচিও সরকার আইনশৃঙ্খলা রক্ষাবাহিনী দিয়ে ঠেকিয়ে দিয়েছে। ওই দিনও বিএনপির কোনো দায়িত্বশীল নেতাকে রাস্তায় দেখা যায়নি। অথচ কোনো কোনো কর্মসূচিতে বেগম খালেদা জিয়ার সঙ্গে ছবি তোলার জন্য, এমন কী শহীদ জিয়ার মাজারে মোনাজাত করার সময়ও 'নেতাদের মধ্যে কী ধস্তাধস্তি, কুস্তাকুস্তি_ যেন চট্টগ্রামের ঐতিহাসিক জব্বরের 'বলি খেলা'! মাত্র কিছু দিন আগে বেগম খালেদা জিয়ার জনসভামঞ্চে প্রায় শতিনেক নেতানেত্রীর ভিড় দেখা গেছে। তারা সবাই একসঙ্গে নামলেও একটা চোখে পড়ার মতো 'কালো পতাকা' মিছিল হতে পারত। কোথায় ছিলেন তারা? কোথায় থাকেন? কিছু কিছু ওয়ার্ডে পুলিশি বাধার মুখেই টুকটাক কিছু হয়েছে।
কিন্তু কোথাও কোনো পরিচিত নেতানেত্রী ছিলেন না। এ লেখা লিখছি শুক্রবার। শনিবারে আবার বিক্ষোভের কর্মসূচি দেওয়া হয়েছে। জানি না কেমন হবে? কর্মসূচি ফ্লপ করানোর পেছনে বিএনপি নেতাদের একটি প্রভাবশালী অংশ জড়িত আছে বলে সে দলের নিবেদিতপ্রাণ কর্মীরাই সমালোচনামুখর। বিগত জনসভায় জামায়াতে ইসলামীকে বাদ দেওয়ায় বিএনপির জামায়াতীরা নাকি নাখোশ।
তারা তাদের নেত্রীর ঘোষিত কর্মসূচি বানচাল করিয়ে নেত্রীকে বোঝাতে চাইছেন যে, জামায়াতকে বাদ দিয়ে আন্দোলন হবে না। দেশি-বিদেশি বন্ধুদের পরামর্শে এবং জাতীয় বাস্তবতায় বেগম জিয়া জামায়াতের সঙ্গে দূরত্ব বজায় রাখার যে সিদ্ধান্ত নিয়েছেন বলে শোনা যাচ্ছে, তার সেই সিদ্ধান্ত পরিবর্তনের জন্যই এমন কৌশল প্রয়োগ করছে বিএনপির জামায়াতপন্থিরা। পর্যবেক্ষকরা মনে করেন, জনসাধারণ দশম সংসদ নির্বাচন মেনে নেয়নি। তারা বেগম জিয়ার ডাকে ঠিকই সাড়া দিয়েছেন। সরকারি বাহিনীগুলোর অস্ত্রের মুখে ৫ জানুয়ারির 'নজিরবিহীন' নির্বাচন বন্ধ করতে পারেননি তিনি ঠিক কিন্তু জনসাধারণ ভোট বর্জন করেছে এটাও সত্য।
জনগণের বর্জনের ভয়েই সরকার ১৫৩ আসনে ভোট ও ভোটার ছাড়াই এমপি বানিয়ে নিয়েছে। 'অভিনয়ের' জন্য একটি 'গৃহপালিত' বিরোধী দলেরও ব্যবস্থা হয়েছে। সরকারে থেকে বিরোধী দল হয় কী করে? বিএনপি কোনো সশস্ত্র বিপ্লবী সংগঠন নয় যে, সরকারি বাহিনীকে সশস্ত্রভাবে মোকাবিলা করে নির্বাচন বন্ধ করে দেবে। এটা উচিত নয়। বেগম জিয়া ঠিকই করেছেন।
পৃথিবীর কোনো গণতান্ত্রিক দলই এ ধরনের গর্হিত, বেআইনি কাজ করে না। ভবিষ্যতেও সবার এই পথ পরিহার করা দরকার। তবে বেগম জিয়া ও বিএনপিকে গণপ্রত্যাশা পূরণ করতে হলে দলের নেতৃত্ব কাঠামোয় আমূল সংস্কার করতে হবে। দুর্নীতিবাজ হিসেবে চিহ্নিতরাসহ অরাজনৈতিক, ব্যবসায়ী, অপদার্থ আমলাদের বাদ দিয়ে ক্যারিয়ার রাজনীতিবিদদের মূল্য দিতে হবে, তরুণ প্রজন্মকে সামনে আনতে হবে, যোগ্যতার ভিত্তিতে নেতৃত্ব নির্বাচন করতে হবে, তার নিজের গুলশান কার্যালয় সম্পর্কে অপবাদ ঘুচাতে হবে। দলের রাজনীতি ও লক্ষ্য স্পষ্ট করতে হবে।
দলের বিদেশনীতি, বিশেষ করে নিকট প্রতিবেশী ভারতের সঙ্গে সম্পর্ক কী হবে_ 'চল চল দিলি্ল চল-লাল কেল্লা দখল কর', নাকি সমমর্যাদা ও স্বার্থ বিবেচনায় সৎ ও আন্তরিক বন্ধুত্ব ও পারস্পরিক বিশ্বস্ততা? জামায়াতের সঙ্গে সম্পর্কটাও স্পষ্ট করতে হবে কোনো প্রকার চালাকি না করে। তার অনুরাগীরা মনে করে, আপাত এই বিষয়গুলোর ফায়সালা হলেই বেগম জিয়া আবার পারবেন, যে জনগণ তার দিকে তাকিয়ে আছে তারাও তার সঙ্গে, তার দলের সঙ্গে মাঠে নামবেন।
সরকারের উচিত হবে প্রকৃত বিরোধী দলের সামনে সব গণতান্ত্রিক অধিকার ভোগের পথ উন্মুক্ত রাখা। তানা হলে আবার রাজনীতি খারাপ পথে এগুবে এবং বিএনপি-জামায়াত সম্পর্কটা আবার মেরামত হয়ে যাবে। সরকার কী তাই চায়? জামায়াতেরও উচিত হবে বিএনপিকে মুক্তি দেওয়া।
জামায়াতের তরুণ প্রজন্মের বিষয়টি ভাবা উচিত। একাত্তরের দায় কাঁধে নিয়ে তারা কী নিঃশেষ হবে, নাকি সেই দায় অস্বীকার করে, অতীতের সব ভুল স্বীকার করে দেশের গণতান্ত্রিক রাজনীতির মূল স্রোতের সঙ্গে থাকবে?
লেখক : সাংবাদিক, কলামিস্ট
ই-মেইল : kazi.shiraz@yahoo.com
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।