এক কোটিরও বেশী লোক বিদেশে অমানসিক পরিশ্রম করে বৈদেশিক মুদ্রা পাঠাচ্ছে। বিশেষ করে গার্মেন্টস শ্রমিকদের রক্তমাখা পেন্ট-শার্ট ও সুয়েটার বিদেশে রপ্তানী করে বিপুল অংকের বৈদেশিক মুদ্রা আসছে। সংক্ষেপে কোন সরকারের বদৌলতে নয় বিজ্ঞান-প্রযুক্তি ও আমাদের কৃষকসহ খেটে-খাওয়া মানুষদের কঠোর পরিশ্রমে অন্ন-বস্ত্র, শিক্ষা-স্বাস্থ্যখাতে বেশ উন্নতি সাধিত হয়েছে। অবশ্য এসবের পরেও জনগোষ্ঠীর এক বিরাট অংশ দারিদ্রতার কষাঘাতে ঝরজরিত। গরীব মানুষদের আবাসিক সমস্যা এক ভয়াবহ রূপ ধারণ করেছে।
বর্তমানে যাদের কোন অবৈধ আয়ের সুযোগ নেই অথবা নীতিগত কারণে অবৈধ পথে আয় করে না তারা খুবই কষ্টে আছে।
বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি অনেক ভাল কিছু দেওয়ার সাথে সাথে খারাপ যা কিছু দিয়েছে তারও কোন তুলনা নেই। একদিকে বৈষয়িক উন্নতি হয়েছে। অন্যদিকে নৈতিক অবক্ষয়ের ভয়াবহ দানব গোটা জাতিকে গ্রাস করেছে। বুর্জোয়া মূল্যবোধের প্রভাবে লোভ-লালসা মানুষের মন থেকে মানবিক গুণাবলীকে ধ্বংস করে দিয়েছে।
বর্তমানে টাকাই সবকিছু। লোভ-নিষ্ঠুরতা, লুন্ঠন এক ভয়াবহ রূপ ধারণ করেছে।
অবুঝ শিশুদের ধর্ষনের পর হত্যার কোন নজির পশুজগতেও নেই। কিন্তু আমাদের সমাজে অহরহ ঘটছে এই ভয়াবহ ঘটনা। শত্রুতা বশতঃ বা মুক্তিপনের দাবীতে নিষ্পাপ শিশু-সন্তানদের অপহরণ এবং হত্যার নজির বিহীন ঘটনা ঘটেই চলেছে।
১৪/১৫ বছরে ছেলেরা একে অন্যকে হত্যা করছে। গুন্ডা-বদমাসদের হাতের লাঞ্চিত ও ধর্ষিত হয়ে ক্ষোভে লজ্জায় অসংখ্য মেয়ে আত্মহত্যা করছে। অল্পকিছু সংখ্যক লোভী মানুষের লোভের কারণে মাদক ও ভেজাল দ্রব্য জনপদকে ধ্বংসের কিনারায় নিয়ে গেছে। এমনি হাজার হাজার নিষ্ঠুর ও অমানবিক ঘটনার জনমনে কতটুকু প্রতিক্রিয়া দেখা যাচ্ছে ? নিজের ঘর রক্ষা হলেই সন্তুষ্ট। আগের যুগে একটা গরুর বাচ্চা অস্বাভাবিক কারণে মারা গেলে পাড়া-প্রতিবেশীরা যে ব্যথা পেত আজকের দিনে মানুষের বাচ্চা মারা গেলেও তেমন দুঃখের বহিঃপ্রকাশ ঘটে না।
এক কথায় সমাজ থেকে বিদায় নিয়েছে সত্য-সততা, মায়া-মমতা। কারণে-অকারণে মিথ্যা বলাটা রেওয়াজে পরিণত হয়েছে। সমাজ থেকে বিদায় নিয়েছে শ্রদ্ধা-সহানুভূতি, মায়া-মমতা, ভালবাসা, ভ্রাতৃত্ববোধ। আজকের সমাজ আত্মসর্বস্ব এক নিষ্ঠুর সমাজে পরিণত হয়েছে। সমাজ থেকে বিদায় নিয়েছে ন্যায় বিচার।
আজকের প্রজন্ম নিজেকে নিয়ে ব্যস্ত। গাড়ি-বাড়ি তথা কোটিপতি বনার জন্য পাগলের মত ছুটে বেড়াচ্ছে। তাদের কাছে জীবনের মায়া থেকে বড়লোক বনার মায়া বেশী। বর্তমানে মেধাবীরা চাকুরী পায় না। ঘুষের বিনিময়ে অযোগ্যরা বড় বড় পদ বাগিয়ে নিচ্ছে।
ভর্তি বাণিজ্যের কারণে মেধাবী ছাত্র-ছাত্রীরা ভাল শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ভর্তি হতে পারে না। এছাড়া প্রতিনিয়ত খুন-ডাকাতি, ছিনতাই, যানজট, সড়ক দুর্ঘটনা, অফিস-আদালতের ঘুষ দুর্নীতি, মাস্তানী-চাঁদাবাজি এবং ক্ষমতা রক্ষা ও ক্ষমতা দখলের লড়াইয়ে দেশে এক নজিরবিহীন বিপদজ্জনক পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে।
দেশের আপামর জনসাধারণ যতদিন অসত্যের পরিবর্তে সত্য, অন্যায়-অবিচারের বদলে ন্যায়নীতি, নিষ্ঠুরতার পরিবর্তে দয়া-মায়া এবং অমানবিকতার পরিবর্তে মানবতাকে গ্রহণ করবে না ততদিন মানুষ অরাজকতা ও অশান্তির আগুনে জ্বলতে থাকবে। টাকার বস্তার উপর শুয়েও ঘুমাতে পারবে না। সংক্ষেপে আগে মানুষ জ্বলতো পেটের জ্বালায়, আজকের মানুষ জ্বলছে অরাজকতা ও অশান্তির আগুনে।
সুতরাং শান্তিতে বসবাস করতে হলে অবক্ষয়ের দানবকে রুখতে হবে।
ঢাকা, ১২ ফেব্রুয়ারি ২০১৪ইং কমরেড নুরুল হক মেহেদী
প্রতিষ্ঠাতা: গরিবী হটাও আন্দোলন
সভাপতি: গণতান্ত্রিক কর্মীশিবির। ।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।