দূষণ ও দখলের অভিশাপে ভুগছে রাজধানীর প্রধান নদী বুড়িগঙ্গা। চারশ বছর আগে ঢাকা সুবেবাংলার রাজধানীর মর্যাদা পায়। ঢাকার এই অনন্য মর্যাদা লাভের পেছনে বুড়িগঙ্গার অবদান ছিল অগ্রগণ্য। সে সময়ে যোগাযোগের অন্যতম প্রধান মাধ্যম ছিল নদী। বুড়িগঙ্গা তীরের ঢাকাকে রাজধানী করার সিদ্ধান্ত নেন মোগল শাসকরা। কালের বিবর্তনে ঢাকা এখন স্বাধীন বাংলাদেশের রাজধানী। দুনিয়ার শীর্ষ স্থানীয় মেগাসিটি। বুড়িগঙ্গার সঙ্গে রাজধানীর দেড় কোটি মানুষের অস্তিত্ব জড়িয়ে পড়েছে। রাজধানীর বায়ুমণ্ডল নিঃশ্বাস নেওয়ার উপযুক্ত থাকবে কিনা তা নির্ভর করে বুড়িগঙ্গাসহ রাজধানীর নদনদী-জলাশয়গুলোর হালহকিকতের ওপর। দুর্ভাগ্যজনক হলেও সত্যি, আমাদের অসচেতনতার কারণে বুড়িগঙ্গাসহ রাজধানীর নদনদীগুলো অস্তিত্ব হারাতে বসেছে। নদী ও জলাশয়গুলোর পানি এতটাই বিষাক্ত হয়ে উঠেছে যে, তা পরিশোধন করে ব্যবহারও অসম্ভব হয়ে পড়ছে। ৬২ রকম রাসায়নিক বর্জ্যে বিষাক্ত হয়ে উঠেছে রাজধানবাসীর প্রিয় নদী বুড়িগঙ্গার পানি। পানির দুর্গন্ধে অনভ্যস্ত কারও পক্ষে এ নদীর পাড়ে অবস্থান করাও বিব্রতকর হয়ে উঠছে। নদীর তলদেশে জমাট বেঁধেছে ৮ ফুট পুরু পলিথিন স্তর। এন্টিবায়োটিকসহ হাসপাতালের বর্জ্যও অনায়াসে মিশছে এ নদীতে। দূষণের কারণে দ্রবীভূত অঙ্েিজন ক্রমান্বয়ে কমছে। এক সময়ের স্বচ্ছ পানির নদী বুড়িগঙ্গাকে এখন নদী না বলে আবর্জনা ও শিল্পবর্জ্য ফেলার ভাগাড় বলাই শ্রেয়। প্রাণিবিজ্ঞানীদের মতে, মাছ ও জলজ প্রাণীর বসবাসের জন্য প্রতি লিটার পানিতে দ্রবীভূত অঙ্েিজনের পরিমাণ ৫ মিলিগ্রাম বা তার বেশি থাকা প্রয়োজন। দ্রবীভূত হাইড্রোজেনের মাত্রা কমপক্ষে ৭ মিলিগ্রাম থাকা উচিত। কিন্তু বুড়িগঙ্গার পানিতে অঙ্েিজনের পরিমাণ প্রায় শূন্যের কোটায়। বুড়িগঙ্গা এতটাই দূষিত হয়ে উঠেছে যে, যারা সরাসরি এ নদীর পানি ব্যবহার করছেন তারা যেমন ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন তেমনই প্রাকৃতিক কারণে অন্যরাও পড়ছেন ক্ষতির আওতায়। নদনদী সুরক্ষায় পরিবেশ মন্ত্রণালয় থাকলেও এর কর্মকর্তা-কর্মচারীরা মাস শেষে বেতন নেওয়া ছাড়া অন্য কোনো দায়বোধ করেন কিনা সন্দেহ। সরকার এমনকি ঢাকা সিটি করপোরেশনের দায়-দায়িত্বহীন আচরণ বুড়িগঙ্গার এ অবস্থার জন্য দায়ী। রাজধানীর প্রাকৃতিক ভারসাম্য রক্ষা এবং মানুষের বাসযোগ্য পরিবেশের স্বার্থে বুড়িগঙ্গার দূষণ রোধে পদক্ষেপ নেওয়া দরকার। নদীতে বর্জ্য ফেলা বন্ধই শুধু নয়, দখলদারদের কবল থেকে রাজধানীর বৃহত্তম এ জলাশয়কে
রক্ষা করতে হবে।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।