অযত্ন-অবহেলায় রাজধানীর পার্কগুলো বেহাল দশার পাশাপাশি অপরাধ সাম্রাজ্যে পরিণত হয়েছে। এক সময়ের মনোমুঙ্কর ওসমানী, রমনা, সোহরাওয়ার্দী উদ্যান এখন যেন ময়লা-আবর্জনার স্থায়ী ডাস্টবিন, উন্মুক্ত টয়লেট। নগরবাসীর চিত্তবিনোদন, সপরিবারে ঘুরে বেড়ানো কিংবা দুদণ্ড অবসর কাটানোর বিন্দুমাত্র সুযোগ নেই এ উদ্যান বা পার্কগুলোতে।
ঢাকা সিটি করপোরেশন নিয়ন্ত্রিত পার্কগুলোর অবস্থা খুবই শোচনীয়। ৪৭টি পার্কের মধ্যে এখন ৩৩টি পার্কের অস্তিত্ব খুঁজে পাওয়াই কঠিন হয়ে দাঁড়িয়েছে। বাকিগুলো ঘিরে চলছে দখল-বেদখলের প্রতিযোগিতা। সিটি করপোরেশনের ওয়ার্ড পর্যায়ের মিনি পার্কগুলো কেউ কেউ গাড়ির গ্যারেজ হিসেবে, কেউ গরুর গোয়ালঘর হিসেবে আবার কেউ বা মালামাল রাখার খোলা গুদাম হিসেবে ব্যবহার করছে।
অন্যদিকে রাজউক নিয়ন্ত্রিত ওসমানী, রমনা, সোহরাওয়ার্দী ও চন্দ্রিমা (জিয়া) উদ্যানের অবস্থা আরও করুণ। সেসব উদ্যানে আয়েশে ঘুরে বেড়ানো দূরের কথা, আশপাশে একটু দাঁড়ানোর উপায় নেই। মদ্যপায়ী মাতাল, মাস্তান, ছিনতাইকারী, দেহপসারিণী ও পুলিশের যুগপৎ অত্যাচারে নানা হয়রানির শিকার হচ্ছে মানুষজন। সরেজমিন পর্যবেক্ষণকালে ঢাকার পার্কগুলোর হতশ্রী, বেহালচিত্র দেখা গেছে।
ঢাকা সিটি করপোরেশনের ৪৭টি পার্কের মধ্যে ২৫টি পার্ক বেদখল হয়ে গেছে, অস্তিত্ব নিশ্চিহ্ন হয়েছে আরও ৮টি পার্কের। কারওয়ান বাজারের পার্কটি ১০-১২ বছর আগেই নিশ্চিহ্ন করা হয়েছে। সেখানে গড়ে উঠেছে জমজমাট মার্কেট, শতাধিক দোকানপাট। ইংলিশ রোড ও যাত্রাবাড়ী মোড়ের পার্কে বসে রুটি-হালুয়া-ভাতের হোটেল, ফলের বাজার। জিন্দাবাহারের পার্ককে খেলার মাঠ এবং সায়েদাবাদ টার্মিনালসংলগ্ন মিনি পার্ককে ইতোমধ্যেই যানবাহন মেরামতের স্থায়ী গ্যারেজে পরিণত করা হয়েছে। মুক্তাঙ্গনের একচিলতে উদ্যানজুড়েই গড়ে তোলা হয়েছে রেন্ট-এ-কারের অবৈধ টার্মিনাল। পুরান ঢাকার ভিক্টোরিয়া পার্কটির আয়তন কমিয়ে এখন চিলেকোঠা আকৃতিতে পরিণত করা হয়েছে। সেখানে গাছপালা, সবুজ আচ্ছাদনের বিন্দুমাত্র অস্তিত্ব রাখা হয়নি।
ওসমানী উদ্যান : পুলিশ হেডকোয়ার্টার সংলগ্ন 'ওসমানী উদ্যান' এখন রাজধানীর সর্ববৃহৎ অপরাধ সাম্রাজ্য। এখানে জুয়া, চুরি, ছিনতাই, পকেটমারা, পতিতাবৃত্তি ও খুনখারাবি ঘটছে অহরহ, অবলীলায়। নগর ভবনের সামনের এই উদ্যানটির রক্ষণাবেক্ষণে ঢাকা সিটি করপোরেশন যেমনি দায়িত্বহীনতার পরিচয় দিচ্ছে, তেমনি আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদের মদদে অপকর্ম চলার অভিযোগ উঠেছে। কি দিন, কি রাত_ এক ও অভিন্ন অবস্থা বিরাজ করছে বছরের পর বছর। জমি দখল করে গড়ে উঠেছে দেশের অতি পরিচিত একটি ক্লাব। সেখানে চলে জুয়া, বিক্রি হয় মরণঘাতী মাদক ফেনসিডিল, হেরোইন ও মদ। উদ্যানের চারপাশ ঘিরে রয়েছে সচিবালয়, মেট্রোপলিটন পুলিশ ব্যারাক, পুলিশ হেডকোয়ার্টার, সুউচ্চ নগরভবন, টিএন্ডটির রমনা হেডকোয়ার্টার ও সরকারি কর্মচারী হাসপাতাল।
রমনা পার্ক : রাজধানীর বিখ্যাত পার্কগুলোর মধ্যে 'রমনা পার্ক' অন্যতম। কিন্তু দীর্ঘ অবহেলা, সংস্কারহীনতা, নজরদারির অভাবসহ নানা কারণে রমনা পার্কটির ঐতিহ্য ধ্বংসের মুখে দাঁড়িয়েছে। অথচ নগরীর কয়েক লাখ মধ্যবিত্ত, নিম্ন-মধ্যবিত্তের চমৎকার চিত্তবিনোদন কেন্দ্র হিসেবে ব্যাপক পরিচিত ছিল রমনা পার্কের। কর্মব্যস্ত মানুষের বিকাল-সন্ধ্যার অবসর কাটানো, পার্কের লেকে নৌবিহার, শিশুদের জন্য দোলনাসহ নানা উপকরণ ছিল সেখানে। আজ সেসব বিস্তৃত অতীত। চারদিকে গাছপালা, সবুজের সমারোহ স্বচ্ছ পানির লেক, প্যাডেল বোট এখনো আছে, কিন্তু লেকটির পাড়ে নির্ঝঞ্ঝাটভাবে বসার উপায় পর্যন্ত নেই। লেকের পুরো পাড়টাই ছিন্নমূল মানুষের স্নানঘাটে পরিণত হয়েছে।
পার্ক নেই উদ্যান নেই : সমগ্র গুলশান, বনানী, বারিধারা, বাড্ডা, ভাটারা এলাকার কোথাও কোনো পার্ক নেই, একচিলতে ফাঁকা জায়গা পর্যন্ত নেই। সেখানে নারী, পুরুষ, শিশুদের দুদণ্ড ঘুরে বেড়ানোর বিন্দুমাত্র সুযোগ নেই। অভিজাত আবাসিক এলাকা গুলশান-বারিধারা মিলিয়ে ফাঁকা স্থান বলতে মার্কিন দূতাবাস সংলগ্ন মাঠটি।
কর্তৃপক্ষের বক্তব্য : রাজউকের সদস্য এস্টেট হেলাল উদ্দিন চৌধুরী জানান, বড় উদ্যানগুলোর সব দখলবাজ এরই মধ্যে হটিয়ে দেওয়া হয়েছে। তবে এসব উদ্যান আধুনিকায়নের ব্যাপারে পর্যাপ্ত অর্থ বরাদ্দ না থাকায় দর্শনার্থীদের উপযোগী অনেক কিছু করা সম্ভব হচ্ছে না। রাজধানীর পার্ক-উদ্যান নিয়ে আমাদের আরও কিছু উদ্যোগ অচিরেই বাস্তবায়ন করা হবে বলেও মন্তব্য করেন হেলাল উদ্দিন চৌধুরী।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।