হলে থাকতে লাগবে ছাত্রলীগের প্রত্যয়নপত্র! এ যেন মগের মুল্লুক!
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে (ঢাবি) নতুন ভর্তি হওয়া নূতন ছাত্রদের হলে উঠতে স্থানীয় আওয়ামী লীগের প্রত্যয়নপত্র এনে দেখাতে হবে বলে জানিয়ে দিয়েছে সলিমুল্লাহ মুসলিম (এসএম) হল শাখা ছাত্রলীগ।
এদিকে প্রত্যয়নপত্র না থাকায় সোমবার রাতে হল থেকে ৯৭ শিক্ষার্থীকে বের করে দিয়েছে ছাত্রলীগ নেতারা। নিজেদের ছাত্রলীগের কর্মী প্রমাণ করতে না পারলে ওই ছাত্রদের আর হলে ঢুকতে দেয়া হবে না বলেও জানিয়েছে তারা।
ভুক্তভোগী ছাত্ররা জানায়, চলতি বছরই তারা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন বিভাগে ভর্তি হয়েছে। কারো ক্লাস শুরু হয়ে গেছে, কারো কিছুদিনের মধ্যেই শুরু হবে।
ভর্তির সময়ই হল বরাদ্দের পর পরিচিতদের সঙ্গে যোগাযোগের মাধ্যমে চলতি মাসের শুরু থেকে তারা তোশক-বালিশ আর কাপড়ের ব্যাগ বা ট্রাংক নিয়ে হলে উঠে। প্রথমবর্ষের ৯৭ জন ছাত্রের আশ্রয় হয় এসএম হলের বারান্দায়। কয়েকদিন ধরে তারা ওখানেই থাকছিল।
সোমবার রাতে তাদের হলের সামনের ফাঁকা জায়গায় জড়ো হতে বলে ছাত্রলীগের নেতারা। রাত ১০টার দিকে হল ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক দিদার মুহাম্মদ নিজামুল ইসলামসহ অন্য নেতাদের সামনে জড়ো হয় ওই ৯৭ জন শিক্ষার্থী।
দিদার মুহাম্মদ তখন সবার কাছে জানতে চান আগে কেউ ছাত্র রাজনীতি করেছে কী না। কয়েকজন উত্তর দেয় তারা কলেজে বা স্কুলে ছাত্রলীগ করেছে। এ সময় দিদার বলেন, ‘আর বাকিরা কি ছাত্রদল-শিবির করেছ? আগে যা করেছ করেছ এখানে থাকলে স্বাধীনতার পক্ষের শক্তিতে যোগ দিতে হবে। তা না হলে বাইরে গিয়া শান্তিতে থাকো। ’
হলে থাকার জন্য ১৫ ফেব্র“য়ারির মধ্যে নিজ নিজ এলাকার শাখা আওয়ামী লীগের প্যাডে একজন নেতার দেয়া প্রত্যয়নপত্র আনতে বলা হয়েছে নতুন ছাত্রদের।
দিদার শর্ত দিয়ে দিয়েছেন, প্রত্যয়নপত্রে যেন স্বাক্ষরকারী আওয়ামী লীগ নেতার মুঠোফোন নম্বর থাকে। যাতে হলের পক্ষ থেকে পরে যোগাযোগ করে বিষয়টি যাচাই করা যায়। নীলক্ষেত থেকে বানিয়ে প্রত্যয়নপত্র আনলে পিঠের চামড়া থাকবে না বলেও ছাত্রদের সতর্ক করেছেন দিদার।
এরপর তাদের ১৫ মিনিটের সময় দিয়ে ব্যাগ নিয়ে বের হয়ে যেতে বলা হয়। কয়েকজন রাতে থাকার অনুরোধ করলেও কাজ হয়নি।
এরপর ছাত্ররা বের হয়ে যায়।
তাদের অনেকেই ভালোভাবে ঢাকা শহর চেনে না বলে জানিয়েছে। আবার কয়েকজন জানিয়েছে, বাস টার্মিনালে গিয়ে রাত কাটিয়ে ভোরে বাড়ি চলে যাবে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে দিদার মুহাম্মদ নিজামুল ইসলাম বলেন, ‘এসএম হলে আবাসন সমস্যা সবচেয়ে বেশি। হলের অনেক ছেলে যারা মাস্টার্সে পড়ে তারা বারান্দায় থাকে।
এই অবস্থায় তাদের কথা দিয়েছি যেসব ছাত্ররা বর্তমানের বারান্দায় থাকছে তাদের রুমে সরানোর ব্যবস্থা করে নতুন ছাত্রদের তোলা হবে। ’
তিনি আরো বলেন, ‘ওইসব শিক্ষার্থী স্বাধীনতার সপক্ষের শক্তি কি না তা জানার জন্য ৫ দিন পর তাদের স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতাদের কাছ থেকে প্রত্যায়নপত্র আনতে বলেছি। ’
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক ওমর শরীফ বলেন, ‘আমি এ ধরনের কোনো ঘটনা শুনিনি। ’
এ বিষয়ে হলের ভারপ্রাপ্ত প্রাধ্যক্ষ মাহবুবুল হক জোয়ারদার বলেন, ‘এ ব্যাপারে আমি কিছু শুনিনি। তবে হলে নতুন শিক্ষার্থী তোলার ক্ষেত্রে আমরা বিজ্ঞাপন দিয়ে তুলে থাকি।
নতুন শিক্ষার্থী কার কাছে এসেছে কেন এসেছে আমি এর কিছু জানি না।
পাদটীকাঃ
১৯৭৫ সালে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ মুজিব গণতন্ত্রের গলা টিপে ধরে বাকশাল নামে নব্য স্বৈরতন্ত্র কায়েমের ষড়যন্ত্র করেন। পছন্দের দু একটি সংবাদপত্র ছাড়া সকল সংবাদপত্র বন্ধ করে দেন। এমনকি সকল সরকারী কর্মচারী-কর্মকর্তাকে বাধ্যতামূলকভাবে বাকশালের সদস্য করার জন্য ফরমান জারী করেন। তার এ আচরণ জনগণ মেনে নেয়নি।
তীব্র ক্ষোভ ও ঘৃণাভরে সরকারী কর্মচারী-কর্মকর্তারা শেখ মুজিবের এ ফরমান প্রত্যাখ্যান করেন। ঠিক তার কিছুদিন পর শেখ মুজিব নিজগৃহে সপরিবারে এক সেনা অভু্ত্থানে নিহত হন। ভাগ্যক্রমে শেখ হাসিনা ও শেখ রেহানা ঐ সময় বেলজিয়ামে থাকায় বেঁচে যায়।
ছাত্রলীগের এ কর্মকান্ড অনেকটা বাকশাল কায়েমের মতই। সকল সাধারণ ছাত্র-ছাত্রীরা এ বিরুদ্ধে তীব্র প্রতিরোধ গড়ে তুলুন।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।