জন্মকালে মানবদেহের ধমনী সম্পূর্ণভাবে বাধাহীন থাকে। ধমনীর স্থিতিস্থাপকতা এবং প্রসারণ মাত্রাও থাকে উঁচু। হৃদযন্ত্রের প্রতিটি পাম্পের সঙ্গে এর সংযোগ থাকে অবাধ। প্রাণশক্তি ও অঙ্েিজনে ভরপুর রক্তধারা সঞ্চালিত হয় দেহের প্রতিটি কোষে ও কলায়। যার ফলে দেহের সর্বত্র ক্রমাগতভাবে রাসায়নিক ক্রিয়া চলতে থাকে।
শিশু সন্তান বেড়ে উঠে প্রাপ্তবয়স্ক হয় প্রাকৃতিক নিয়মে। কালে কালে লিড, ক্যাডমিমাম বা অ্যালুমিনিয়ামের মতো ভারী ধাতুর দ্বারা ধমনীতে প্রতিবন্ধকতা তৈরি হলে কথিত রাসায়নিক ক্রিয়া বহুলাংশে হ্রাস পায়। কোলেস্টেরলের মতো মেদজাতীয় উপাদান ক্যালসিয়াম কণার সঙ্গে যুক্ত হতে শুরু করে। ধমনীর ভেতরে এভাবেই সূচনা হয় প্লাকের বা অবরোধের। যা মারাত্দক হুমকি হয়ে উঠে হৃদযন্ত্রের জন্য।
স্বাভাবিক রক্তচলাচলের পথে এই অবরোধ সৃষ্টির কারণেই হার্ট অ্যাটাক হয়। বিশ্বের এক নম্বর মরণব্যাধি হৃদরোগ। কোনোরকম পূর্বাভাস ছাড়াই যে কোনো সময় এটি কেড়ে নিতে পারে মানুষের জীবন। বিশ্বের মোট মৃত্যুর অর্ধেকই হয় হার্টের রোগে। প্রতিবছর লাখ লাখ লোকের হার্ট অ্যাটাক হচ্ছে।
এদের মধ্যে ২৫ ভাগের মৃত্যু হয় হাসপাতালে পেঁৗছার আগেই। হার্ট অ্যাটাক হয়েও অনেক সময় বেঁচে থাকতে হয় নানা অক্ষমতা আর হঠাৎ মৃত্যুর ভয় নিয়ে। মানুষের বেঁচে থাকার জন্য যেমন খাদ্যের প্রয়োজন তেমনি রোগাক্রান্ত হলে প্রয়োজন চিকিৎসার। তাই হৃদরোগের চিকিৎসা হিসেবে প্রচলিত বহুল আলোচিত দুটি পদ্ধতি বাইপাস ও স্ট্যান্টিং। এ দুটিই অপারেশন।
অনেক সময় ডাক্তাররা বিভিন্ন পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে জানিয়ে দেন যে, রোগীর বাইপাস সার্জারি বা স্ট্যান্টিং করার মতো অবস্থা নেই বা অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ। আবার এমনও দেখা গেছে, ৮০ বছরের বৃদ্ধের একটি আর্টারিতে ব্লক থাকায় রিং বসাতে গিয়ে অসফল বা ব্যর্থ। তাকে এই বয়সে বাইপাস করা রিস্ক অথবা রোগীও এই বয়সে অপারেশন করাতে অনিচ্ছুক। এসময় পুনরায় অপারেশন করা অপরিহার্য কিন্তু করা রিস্ক। হেপাটাইটিস বি পজিটিভ থাকলে সার্জনরা অপারেশন করতে অনিচ্ছা প্রকাশ করে।
অন্যদিকে হৃদরোগ প্রতিরোধ ও নিরাময়ে মেডিটেশন এবং লাইফস্টাইলভিত্তিক চিকিৎসা পদ্ধতি এখন বিশ্বব্যাপী স্বীকৃত ও জনপ্রিয় একটি মাধ্যম। আত্দা ও মাইন্ড যে শরীরে রোগের উপর প্রভাব ফেলে তা অনেকে না মানলেও এটা যে ধ্রুব সত্য তা আজ পশ্চিমা বিশ্ব মেনে নিয়েছে এবং ঝড়ঁষ, গরহফ, ইড়ফু সবফরপরহব একটা বিষয় হয়ে গেছে। পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে ডাক্তাররা একেকটি সমস্যার সম্মুখীন হন, সমস্যা নিয়ে তারা আলোচনা ও গবেষণা করেন। এভাবেই এক সময় তারা ওই সমস্যার সমাধান বের করেন। ধাপে ধাপে চিকিৎসার অগ্রগতি সাধিত হয়।
কেবল হৃদরোগ চিকিৎসায়ই নয়, অসংক্রামক বহু রোগ বিশেষত উচ্চ রক্তচাপ, ডায়াবেটিস, মাইগ্রেন রোগ চিকিৎসায় এ পদ্ধতির সাফল্য পরীক্ষিত। সুতরাং দেহের সঙ্গে মনের প্রভাব অবশ্যই জড়িত।
ডা. গোবিন্দ চন্দ্র দাস,সহযোগী
অধ্যাপক, শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল
কলেজ ও হাসপাতাল, ঢাকা। ফোন : ৮১২৯৩৮৩
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।