আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

ধর্ম ভিত্তিক রাজনীতির বিষবৃক্ষ

লিখতে গিয়েই নিজেকে খুঁজে পাই বাংলার মাটিতে ধর্মভিত্তিক রাজনীতির বিষবৃক্ষের শিকড় অনেক গভীরে প্রোথিত। এই বিষবৃক্ষটি বাংলার গনমানুষের কু-সংস্কার, অজ্ঞানতা, অসচেতনতা ও ধর্মীয় গোড়ামীকে পুঁজি করে বাংলার মাটি থেকে জারক রস সংগ্রহ করে চলেছে। এবং শিক্ষা, চিকিৎসা ও ব্যাংকিং সংক্রান্ত অর্থনৈতিক প্রতিষ্ঠানের মোটা মোটা শিকড় তৈরী করে বাংলার মাটিতে তাদের ভিত্তি পাকাপোক্ত করে ফেলেছে। এই বিষবৃক্ষটি নিজেকে আরো শক্তিশালী ভাবে বহুদিন টিকিয়ে রাখার মানসে- প্রগতিশীলতার ঝড়-ঝাপটা থেকে বাঁচাতে- প্রতিক্রিয়াশীলতার চর্চা বাংলার আকাশে বাতাসে পরিব্যাপ্ত করতে- নিউজপ্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক প্রচার মাধ্যমের মোটা ও শক্ত বাকল তৈরী করেছে। ধর্মীয় গোড়ামী সম্পন্ন বেকার যুবক ও গরীব ছাত্রদের ইহজগতে তার সমস্ত অর্থনৈতিক ও প্রচার প্রতিষ্ঠানে চাকরী, মধ্যপ্রাচ্য থেকে পাওয়া পেট্রোডলার এবং পরকালে বিলাস-বহুল জীবন-যাপন ও সুন্দরী হুরের লোভ দেখানোর মাধ্যমে যৌনানুভূতিতে সুড়সুড়ি দিয়ে, তার বিষাক্ত তরতাজা, নীল পাতায় পরিনত করছে।

এই পাতার মাধ্যমে তারা বিষাক্ত কার্বন ডাই অক্সাইড নিজের মধ্যে টেনে নেয় এবং মধ্যপ্রাচ্য নামক গনগনে সুর্যের রশ্মির সাহায্যে পাতায় সলোক সংশ্লেষনের মাধ্যমে তার বিষাক্ত খাদ্য তৈরী করে। এই পাতার মাধ্যমে তারা আরো পায় মধ্যপ্রাচ্যের অতীব ভয়ংকর অতিবেগুনী রশ্মি। আর এই মধ্যপ্রাচ্য নামক গনগনে সূর্যটি ভর দুপুরের সূর্যের মত সবসময় জাজ্বল্যমান থাকে; কোন সময়ের জন্যই অস্ত যায়না। এই সূর্যের জ্বালানী, আমাদের সৌরজগতের সুর্যটির চেয়ে কোন অংশে কম নয়; আমাদের সূর্য জ্বালানীর অভাবে একদিন ঠান্ডা হয়ে যাবে, কিন্তু মধ্যপ্রাচ্য নামক সূর্যের জ্বালানী কোনদিন শেষ হবে বলে মনে হয় না। আর মধ্যপ্রাচ্য সূর্যটির তাপ আমাদের সূর্যের তাপের চেয়ে সতের গুন বেশী, আর এর অতিবেগুনী রশ্মির বিষক্রিয়তা আমাদের সুর্যের অতি বেগুনী রশ্মির বিষক্রিয়তার চেয়ে সত্তুর গুন বেশী ক্ষতিকর।

এই মধ্যপ্রাচ্য নামক সূর্যটি সবসময় রাগী অতি জ্বলন্ত চোখে চতুর্দিক নিরীক্ষন করে। কেউ যদি তার এই বিষবৃক্ষটির বিরুদ্ধে টু শব্দটি উচ্চারন করে বা করতে চায় তাহলে, তাকে সে জ্বালিয়ে পুড়িয়ে ভস্মে পরিনত করে। তাই সবাই এই মধ্যপ্রাচ্য সুর্যের ভয়ে সবসময় তটস্থ থাকে। আবার কেউ যদি এই বিষবৃক্ষটির ছোট ডালে পরিনত হয়ে দালালী বিষফুল ও ছোট ছোট তীব্র বিষময় লেজুরবৃত্তি ফল উৎপাদন করতে চায় তাহলে তাকে সে পেট্রোডলারের বিষাক্ত শর্করা ও ক্ষতিকর অতিবেগুনি রশ্মির যোগান দেয়। তাই খেয়ে ছোট ডালটি একটু পুষ্ট হয়-বিষফুল তৈরি করে গাছটিকে কুৎসিত ও শক্তিশালী করে।

ইতিমধ্যেই মহীরুহে পরিনত হওয়া বিষবৃক্ষটি তার জন্মকাল থেকেই একের পর এক তৈরী করে চলেছে কালচে, মলিন সাদাটে, ধূসর গোলাপী, বিবর্ণ নীলাভ, অতিবেগুনী , টকটকে লাল, বিভিন্ন ভ্যাপসা রঙের, বিভিন্ন আকারের হরেক রঙের এবড়ো-থ্যাবড়ো বিষফল। এই বিষফলগুলো যে কী ভীষন মারাত্বক, কত ভয়ঙ্কর এবং কত রকমের বিষক্রিয়া যে বাঙ্গলার আকাশে বাতাসে ছড়াচ্ছে; কত জীবন, কত প্রগতিশীলতার মৃত্যু যে প্রতিনিয়ত ঘটাচ্ছে, তা এখনও বাঙ্গালী ঠিকমতো বুঝে উঠতে পারছেনা। বাংলার মাটি থেকে এই বিষবৃক্ষটির সমূলে উৎপাটন অনেক বেশী জরুরী হলেও সচেতন গোষ্ঠী সেই কাজটি করার শক্তি হাড়িয়ে ফেলেছে বা ভয়ে তটস্থ হয়ে আছে। তা যদি না হত তাহলে তারা এমন নিষ্ক্রিয় ভাবে বিষবৃক্ষের বিষাক্ত ছায়ার নিচে বসে থাকতে পারত না। এই বিষবৃক্ষটি এ যাবতকালে যত বিষফল উৎপাদন করেছে, তার মধ্যে সবচেয়ে বড় ,অনেক বেশী রসালো, ওজনে সবচেয়ে ভারী, তীব্র বিষে ভরপুর, (এখনও চুইয়ে চুইয়ে বাংলার মাটিতে পড়ে) টকটকে লাল ফলটি হচ্ছে ‘যুদ্ধাপরাধ’ ।

এই বিষফলটির পতন ঘটাবার জন্য, বাঙ্গালী বিগত চল্লিশ বছর যাবত-কখনো কম কখনো বা একটু বেশী চেষ্টা করে আসছে কিন্তু কোন ফল হয়নি। বর্তমানে যে বিষয়টি লক্ষ্য করা যাচ্ছে- যুদ্ধাপরাধ নামক এই বিষফলটির পতনের একটি সম্ভাবনা তৈরী হয়েছে। এই প্রথমবারের মত বাংলার জনগন, বর্তমান ক্ষমতাসীন আওয়ামীলীগের নেতৃত্বে বিষফলটির বোটায় হুক লাগাতে সক্ষম হয়েছে; সেই হুক ধরে চলছে অবিরাম টানাটানি। এই টানাটানিতে যুদ্ধাপরাধ নামক বিষবৃক্ষটি তার পতন রোধ পারবে কিনা সেটি নির্ভর করছে বাঙ্গালী কত জোরে টান দিতে পারে সেটির উপর। এই অতিশয় বড় বিষফলটি পড়ে গেলে, বাঙ্গালী এর বিষক্রিয়ার হাত থেকে মুক্তি পাবে।

এবং পরিনামে বিষবৃক্ষটি কিছুটা হলেও দুর্বল হবে । এই বিষবৃক্ষটি যুদ্ধাপরাধ ছাড়াও উৎপাদন করেছে এবং করে চলেছে আরো বিষফল। এবং ভবিষ্যতে আরো উৎপাদন করবে যদি না এই বিষ বৃক্ষটিকে সমূলে বাঙ্গলার মাটি, আকাশ , বাতাস, আবহাওয়া ও জলবায়ু থেকে, এর বিষফল, কান্ড, ডাল-পালা, পাতা, বাকল সহ উৎপাটিত না করা যায়। বিষবৃক্ষটির উৎপাদিত কালচে বিষফলগুলো বাঙ্গলার সকল ধরনের প্রগতিশীল আন্দোলন, সিদ্ধান্ত, চিন্তা ও শিল্প, সাহিত্য, সংস্কৃতিতে, শিক্ষায়, জ্ঞানে, বিবেকবোধে, সচেতনতায়, সমাজে বিদ্যমান অসঙ্গতি নিরসনে সবচেয়ে বড় বাধা হয়ে দাঁড়ায়। উত্তরাধিকার সম্পত্তিতে নারী-পুরুষের সমানাধিকারের দাবীর বিরুদ্ধে কোরানের বিষ কিসে ছড়ায়, সাহিত্যকে রক্তাক্ত করে কোন বিষফল, এয়ারপোর্টের সামনে বলাকা ভাস্কর্যকে চুরমার করে সেই বিষফলের নাম কি? মাদ্রাসা শিক্ষা সংস্কারের তীব্র বিষাক্ত হুল ফোটায় সেই বিষফলের নাম কি? এই বিষফলের রঙ কালো এবং এর নাম কালচে বিষফল।

বিষবৃক্ষ থেকে উৎপাদিত আরেকটি অন্যতম বিষফলটির রঙ হচ্ছে নীলাভ। এই নীলাভ বিষফলগুলো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে বিশেষ করে উচ্চশিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের উপর ঝুলে থাকে। বর্তমানে এই বিষফলটির বিষক্রিয়া সবচেয়ে বেশী লক্ষ্য করা যাচ্ছে। এই বিষফলটি অনেক বেশী উৎপাদিত হচ্ছে আজকাল। এর বিষক্রিয়তা ছাড়া অন্য সকল বিষফলের বিষক্রিয়া প্রায় অচল।

এই বিষফল তার বিষক্রিয়ার মাধ্যমে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে শিক্ষা, জ্ঞানার্জন এবং প্রগতিশীলতার বদলে ধর্মীয় গোড়ামী ও কুসংস্কারে ভরে ফেলতে চায়। এটি ছাত্রদের ভরে ফেলতে চায় জোব্বা –টুপির ভেতরে এবং মেয়েদের বন্দী করতে চায় হিজাবের ভেতরে। কেউ এগুলোর ভেতর থেকে বেরিয়ে আসতে চাইলে এর বিষের তীব্রতায় পায়ের রগ কেটে যায়, মাথা উড়ে যায়, হাত-পা খসে পড়ে, হতে হয় বালাৎকার। এবং এই নীলাভ বিষফলটির প্রত্যক্ষ বিষক্রিয়তা ছাড়া যুদ্ধাপরাধ নামক তীব্র লাল বিষফলটি উৎপাদিত হতে পারেনি । এরপর আছে মলিন সাদাটে বিষফল।

এর বিষাক্ত মলিন সাদায় আকাশ পাতাল ছেয়ে ফেলে বলে এর নাম মলিন সাদাটে বিষফল। হঠাৎ হঠাৎ ধারাবাহিকভাবে এর বিষক্রিয়তা লক্ষ্য করা যায়। এর বিষক্রিয়তা অস্বাভাবিক রকমের তীব্র এবং স্বল্পকাল স্থায়ী হয়। আক্রমনের পূর্বে এর অস্তিত্বই লক্ষ্য করা যায় না, এটি ঝটিকা আক্রমনে অনেককে নিহত, বহুকে পঙ্গু, এবং অনেকজনকে দগ্ধ করে চলে যায়। কখন, কিভাবে, কোন জায়গায় এটি তার বিষ ছড়াবে তা বোঝার কোন উপায় থাকেনা।

যখন বোঝা যায় তখন পুরো দেশ জুড়ে হাহাকার এবং এর পরে টিকিটিও খুজে পাওয়া যায় না। এটি সবসময় থাকে ধরাছোয়ার বাইরে। এর বিষের শিকার পহেলা বৈশাখে রমনার বটমূল, মুক্তাঙ্গনে উদিচির প্রতিষ্ঠা বার্ষিকী, ২১ শে আগষ্টে পল্টন ময়দানে আওয়ামীলিগের জনসভা, একসাথে দেশের ৬৩টি জেলা, শো চলাকালীন সময়ে সিনেমা হল, উরশের সময় পীর, আওলিয়া, পাগলা বাবাদের মাজার, ১৪ই ফেব্রুয়ারী টি এস সি তে উন্মোক্ত বিতর্ক চলাকালীন, আদালত প্রাঙ্গনে বিচার চলাকালীন সময়ে। কে কখন কারা যে এর বিষের শিকার হবে তা বিষক্রিয়া শুরু হওয়ার এক সেকেন্ড আগেও বোঝার উপায় নেই। আমি এই লেখাটি শেষ করতে পারব কিনা, বা এর পূর্বেই কি এর বিষক্রিয়া আমার উপর শুরু হয়ে যাবে কিনা তা বুঝতে পারছিনা।

অতিবেগুনি বিষফলের বিষক্রিয়া অনেকটা মলিন সাদাটে বিষফলের বিষক্রিয়তার মতই। এর উৎপাদন অনেকটা বন্ধ হয়ে গেছে বলে মনে হচ্ছে কিন্তু আসলেই বন্ধ হয়ে গেছে কিনা তা বোধগম্য হচ্ছেনা। কারন এটি উৎপাদিত হয় অনেক ছোট ছোট পাতার অন্তরালে । এই বিষফলের একটি বৈশিষ্ট্য হচ্ছে এটি যার বা যাদের উপর পড়বে শুধুমাত্র তাদের উপরই বিষ ছড়ায় না উপরন্তু বিষ ছড়ায় তাদের বাহক কচি নবীন পাতাগুলোর উপরেও । এর বাহক পাতাগুলো আগে থেকেই বুঝতে পারে এর বিষক্রিয়া তাদের উপরও ছড়াবে এবং এই তীব্র বিষক্রিয়ায় তারা মুক্তি পাবে দারিদ্রের বিষক্রিয়া থেকে এবং লাভ করবে ধন প্রাচুর্য ও বহু নারী সম্ভোগের বিলাস-বহুল জীবন।

মলিন সাদাটে বিষফলের টার্গেট মিস হয়ে যেতে পারে কিন্তু অতিবেগুনী বিষফলের বিষক্রিয়া কখনো শেষ হয় না। এটি যখন যার উপর পতিত হতে চায় তার উপরই পড়ে। ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.