আল-কোরআনের ৫৫৫টি আয়াতে সরাসরি বিজ্ঞান সম্বন্ধে আলোচিত হয়েছে এবং কোরআনের এক-পঞ্চমাংশ আয়াতে জ্ঞান-বিজ্ঞান সম্বন্ধে আকারে-ইঙ্গিতে বলা হয়েছে। সপ্তম শতাব্দী থেকে দ্বাদশ শতাব্দী পর্যন্ত সারা বিশ্ব যখন অন্ধকারে নিমজ্জিত ছিল তখন মুসলমানরাই বিজ্ঞানের আলোকে পৃৃথিবীকে আলোকিত করেছিল। আল্লাহর কালাম কোরআনে মানব জাতির জন্য সহজ-সরল পথের মধ্য দিয়ে এসেছে হেদায়েত। কোরআনে আল্লাহপাক ইহকাল-পরকালের কল্যাণের সব দিকনির্দেশনাই দান করেছেন। তিনি আমাদের ইবাদত পদ্ধতি শিখিয়েছেন, সামাজিক আচার-আচরণের দিকনির্দেশনা দিয়েছেন ও ইতিহাসের উত্থান-পতনের মধ্য দিয়ে মানব জাতির নৈতিক বিবর্তনের বিশুদ্ধ পথ দেখিয়ে দিয়েছেন। বিজ্ঞানের উদাহরণ দিয়েছেন অনেকবার। কোরআনের আটভাগের একভাগ আয়াতেই এসেছে বিজ্ঞানের কথা। সংখ্যার হিসাবে যা আটশরও বেশি। জীবন্ত কোরআন আল্লাহর রাসূল (সা.) এ জন্যই হতে পেরেছিলেন একজন শ্রেষ্ঠ বিজ্ঞানবিশারদ। এ জন্যই আমরা ইসলামের প্রতিটি বিধানে আধ্যাত্দিক ক্রমোন্নতির উপযোগিতার পাশাপাশি ইহলৌকিক কল্যাণের জন্য সামাজিক বিজ্ঞান ও প্রাকৃতিক বিজ্ঞানের ভারসাম্যপূর্ণ সমন্বয় লক্ষ্য করি। বিজ্ঞান আল্লাহর সৃষ্টি-পরিকল্পনার বাইরের কোনো বিষয় নয়। তাই বিজ্ঞান ধর্ম থেকেও আলাদা নয়। যে বিধিগুলোর সাহায্যে আল্লাহ তাঁর সৃষ্টিকে বিকশিত এবং রক্ষণাবেক্ষণ করেন, তাই হলো বিজ্ঞান। আল্লাহ মানুষকে জন্ম-মৃত্যুর অধীন করে পরীক্ষার উদ্দেশ্যে এই স্থান-কালের জগতে পাঠিয়েছেন। কিন্তু আল্লাহর মাধ্যম ছাড়া লালন-পালন কর্মটি সম্পন্ন করলে মানুষকে পরীক্ষার উদ্দেশ্যটি বানচাল হয়ে যায়। তাই তো তিনি কার্যকারণ সম্পর্কিত বিধিবিধানের মধ্য দিয়ে তার লালন-পালন কর্মটি করে যাচ্ছেন। এই যে কার্যকারণ সম্পর্কিত অপরিবর্তনীয় বিধি-বিধান, এগুলোই হলো বিজ্ঞানের মূল সূত্র। আল্লাহ হলেন বিধিবিধান আরোপকারী এবং পরমবিজ্ঞানী। সঙ্গত কারণেই বিজ্ঞানের স্বতঃসিদ্ধ সূত্রগুলোর সঙ্গে সঠিক ধর্ম ও ধর্মগ্রন্থের কোনো সংঘর্ষ থাকতে পারে না। যেমন নেই আল-কোরআনের। আল্লাহর নবী (সা.) তৎকালীন সর্বাধুনিক বিজ্ঞানের অনুশীলন করেছেন। পাশাপাশি তিনি তাঁর অনুসারীদের বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি অনুশীলন করতে উৎসাহিত করেছেন। রাসূল (সা.) বলেন, যে ব্যক্তি জ্ঞান অন্বেষণের জন্য কোনো পথ বের করে দেয়, আল্লাহ তার মাধ্যমে তার জান্নাতের পথ সুগম করে দেন। (সহিহ বুখারি)
পৃথিবীতে কোরআনের অনুসারীরা যখন ভোগবিলাসে মত্ত হলো আর জ্ঞান-বিজ্ঞান চর্চা ছেড়ে দিল তখন থেকে তাদের জীবনে অন্ধকার নেমে এলো। আজও তার জের চলছে। তাই মুসলমানদের সামনে একটি মাত্র পথ খোলা আছে।
আর তাহলো জ্ঞান-বিজ্ঞানের দেউলিয়াত্ব ঝেড়ে ফেলে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির আঙ্গিনায় নিরলসভাবে কাজ করা। রাসূল (সা.) অন্যত্র বলেন, জ্ঞানী হও বা জ্ঞান অন্বেষণকারী হও অথবা জ্ঞনের কথা শ্রবণকারী হও বা জ্ঞানের অনুরাগী হও। তবে এ চার স্তর ব্যতীত পঞ্চম কোনো স্তরের হয়ো না, তাহলে ধ্বংস হবে। (ইবনে মাযাহ) রাসূল (সা.) জাগতিক জ্ঞান-বিজ্ঞান গবেষণার সব শাখা মুক্ত করে দিয়েছেন।
[সিলেটের শাহ রুমি জামে মসজিদ, ঈদগাহ মাঠে গত ১৩ ফেব্রুয়ারি বার্ষিক তফসিরুল কোরআন ওয়াজ মাহফিলে প্রধান অতিথির বক্তব্যের অংশবিশেষ]।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।