গাজীপুরের শ্রীপুরে উপজেলা পরিষদ নির্বাচন কেন্দ্র করে অস্ত্রবাজি ও সংঘর্ষের ঘটনায় মামলার শিকার আওয়ামী লীগ ও অঙ্গ সংগঠনের পাঁচ শতাধিক নেতা-কর্মী এখন বাড়িছাড়া। চিহ্নিত ছাড়াও অজ্ঞাতদের অভিযুক্ত করায় এলাকায় বহু লোক গাঢাকা দিয়েছেন। অনেকে মোবাইল ফোন বন্ধ রেখে নতুন নম্বরে সংযোগ নিয়েছেন।
উপজেলা আওয়ামী লীগের মনোনীত প্রার্থী আবদুল জলিলকে ৭ মার্চ র্যাব সদস্যরা আটকের পর থেকে নির্বাচনী পরিবেশ ক্রমে অবনতির দিকে যেতে থাকে বলে দাবি করেছে স্থানীয় পুলিশ প্রশাসন ও সাধারণ ভোটাররা।
নির্বাচন স্থগিতের ঘোষণাকে নির্বাচন কমিশনের ব্যর্থতা হিসেবে চিহ্নিত করেছেন তৃণমূলের ভোটাররা। তাদের দাবি, এ সিদ্ধান্তে সরকারের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন হয়েছে। পটকা গ্রামের হোটেল ব্যবসায়ী হুমায়ুন কবির বলেন, পছন্দের প্রার্থীকে ভোট দিয়ে নির্বাচিত করব, এ রকম আশা নিয়ে অপেক্ষা করছিলাম ১৫ মার্চের জন্য। এলাকায় সব ভোটারের মধ্যে একটা উৎসাহ ছিল। হঠাৎ নির্বাচন স্থগিতের ঘোষণায় মর্মাহত হয়েছি।
শ্রীপুর পূর্বপাড়া গ্রামের মো. মাসুদ (২০) এবার নতুন ভোটার, কাজ করেন স্থানীয় একটি ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে। তিনি বলেন, নতুন ভোটার হওয়ার পর এবারই আমার ভোট দেওয়ার প্রথম সুযোগ এসেছিল। এ মুহূর্তে নির্বাচন স্থগিত করায় আশা ভঙ্গ হয়েছে। গোসিঙ্গা ইউনিয়নের শেখবাড়ী গ্রামের রিকশাচালক হাফিজ উদ্দিন বলেন, বেশির ভাগ ভোটার নারী ও আমার মতো সাধারণ মানুষ। যে পরিবেশ ছিল ওই পরিবেশে আমরা ভোটের দিন কেন্দ্রে যেতাম না। এখন নির্বাচন স্থগিত হয়েছে, নতুন তারিখ ঘোষণায় পরিবেশের উন্নতি হলে ভোট কেন্দ্রে যাব। শ্রীপুর পৌর বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক আবুল কালাম আজাদ বলেন, ১৯ দলের নিশ্চিত বিজয় জেনে সরকারি হস্তক্ষেপে নির্বাচন স্থগিত করা হয়েছে। সরকার ইচ্ছা করলেই সর্বোচ্চ নিরাপত্তা দিয়ে নির্বাচন অনুষ্ঠান করতে পারত। শ্রীপুর উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি অ্যাডভোকেট শামসুল আলম প্রধান বলেন, শনিবার শ্রীপুরে প্রকাশ্যে অস্ত্র নিয়ে যে মহড়া হয়েছে তা শ্রীপুরে অতীতে কখনো ঘটেনি। সন্ত্রাস, অস্ত্রবাজি আর দুর্নীতিমুক্ত পরিবেশে নির্বাচন অনুষ্ঠানের ব্যাপারে আমি একমত। তিনি দাবি করেন, ওই দিনের ঘটনায় তিনটি মামলায় আওয়ামী লীগ ও অঙ্গ সংগঠনের পাঁচ শতাধিক নেতা-কর্মী এখন বাড়িঘরছাড়া। গ্রেফতার আতঙ্কে এখন তারা পালিয়ে বেড়াচ্ছেন। উপজেলা যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক রফিকুল ইসলাম বলেন, মামলার পর থেকে পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন রয়েছে।
থানা যুব কমান্ডের সভাপতি নূরে আলম মোল্লা বলেন, হাতে অস্ত্র না থাকার পরও মামলার শিকার হয়েছি। এখন বাড়ি ছেড়ে পালিয়ে বেড়াচ্ছি। চেয়ারম্যান প্রার্থী ইকবাল হোসেন সবুজের নির্বাচন সমন্বয়কারী মাহতাব উদ্দিন বলেন, মামলার শিকার হয়ে এখন আমরা সপরিবারে গ্রেফতার আতঙ্কে রয়েছি। গতকাল দুপুর ১২টায় উপজেলা বিএনপির কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত এক সংবাদ সম্মেলনে ১৯ দলের মনোনীত প্রার্র্থী আবদুল মোতালেব বলেন, আমাদের নিশ্চিত বিজয় জেনে সরকার নির্বাচন স্থগিতের এ রকম সিদ্ধান্ত নিয়েছে। আওয়ামী লীগের দুই প্রার্থীর মধ্যে সংঘাত হবে, দ্বন্দ্ব হবে এ জন্য তো শ্রীপুরের মানুষ দায়ী নয়। তিনি নির্বাচনের তারিখ ঘোষণার জন্য ৪৮ ঘণ্টার আলটিমেটাম দেন। শ্রীপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আমির হোসেন জানান, শনিবারে ঘটনায় একাধিক অস্ত্রধারীর মধ্যে কামরুল ও মাসুম খানকে গ্রেফতার করা হয়েছে। চেয়ারম্যান প্রার্থী, বর্তমান চেয়ারম্যান ইকবাল হোসেন সবুজের ভাই অস্ত্রধারী সাখাওয়াত হোসেন ও শ্রীপুর পৌরসভার মেয়র আনিছুর রহমানের ছোট ভাই অস্ত্রধারী হাফিজুর রহমানকে গ্রেফতারে পুলিশ বিভিন্ন জায়গায় অভিযান অব্যাহত রেখেছে। তিনটি মামলায় মোট ৪৫০ জন অভিযুক্ত। তিনি অভিযোগ করেন, উপজেলা আওয়ামী লীগের মনোনীত প্রার্থী আবদুল জলিলকে গ্রেফতারের আগ পর্যন্ত শ্রীপুরের নির্বাচনী পরিবেশ ভালো ছিল। তাকে গ্রেফতারের পর থেকে পরিবেশ অশান্ত হয়ে ওঠে।
ছাত্রলীগের কর্মসূচি : শনিবার দুপুর সাড়ে ১২টায় উপজেলা ছাত্রলীগ দলীয় কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করে। উপজেলা ছাত্রলীগের সভাপতি কামাল ফকির সংবাদ সম্মেলনে কর্মসূচি ঘোষণা করেন।
এর মধ্যে রয়েছে ১৩ মার্চ বৃহস্পতিবার দিনব্যাপী কালো ব্যাজ ধারণ ও কালো পতাকা উত্তোলন, ১৪ মার্চ শুক্রবার বাদ জুমা উপজেলার সব মসজিদ ও উপাসনালয়ে বিশেষ দোয়া, বাদ আসর উপজেলা ছাত্রলীগ কার্যালয়ে ছাত্রলীগের উদ্যোগে শোকসভা, দোয়া ও মিলাদ মাহফিল, ১৬ মার্চ মানববন্ধন সকাল ১০টায় শ্রীপুর চৌরাস্তায় এবং উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বরাবর স্মারকলিপি প্রদান এবং ১৭ মার্চ উপজেলার বিভিন্ন ইউনিটে সুবিধাজনক সময়ে মানববন্ধন। সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন নিহত ছাত্রলীগ নেতা আল আমীনের একমাত্র ভাই আলমগীর হোসেন। তিনি প্রধানমন্ত্রী ও বিচার বিভাগের কাছে এ হত্যাকাণ্ডের সর্বোচ্চ শাস্তি প্রার্থনা করেন।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।