জঙ্গি মামলাগুলো কেন বছরের পর বছর ঝুলে আছে? কেন দ্রুত নিষ্পত্তি হচ্ছে না তা খতিয়ে দেখতে আইনমন্ত্রীকে নির্দেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। একই সঙ্গে এসব স্পর্শকাতর মামলা দ্রুত নিষ্পত্তির জন্য একটি আলাদা বেঞ্চ সুনির্দিষ্ট করে দেওয়া যায় কিনা তা খতিয়ে দেখতে বলেছেন প্রধানমন্ত্রী। এ ছাড়া জঙ্গি হামলায় পুলিশ সদস্যের মৃত্যুর ঘটনায় দুঃখ প্রকাশ করেন তিনি। গতকাল সচিবালয়ে মন্ত্রিপরিষদের সভাকক্ষে অনুষ্ঠিত মন্ত্রিসভার নিয়মিত বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী এসব কথা বলেন।
বৈঠকে রবিবার জামা'আতুল মুজাহিদীন বাংলাদেশের (জেএমবি) তিন শীর্ষ জঙ্গিকে ময়মনসিংহের ত্রিশালে পুলিশের প্রিজন ভ্যান থেকে ছিনিয়ে নেওয়ার ঘটনা নিয়ে দীর্ঘ আলোচনা করেন মন্ত্রিসভার সদস্যরা। প্রধানমন্ত্রী দুর্বল নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। এরকম স্পর্শকাতর মামলা বিশেষ করে জঙ্গি মামলার আসামিদের কীভাবে দুর্বল নিরাপত্তা দিয়ে এক স্থান থেকে আরেক স্থানে নেওয়া হয় তা নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন মন্ত্রিসভার সদস্যরা। প্রধানমন্ত্রী এ বিষয়ে স্বরাষ্ট্র সচিবকেও প্রশ্ন করেন। বৈঠকে উপস্থিত মন্ত্রিসভার একাধিক সদস্যের সঙ্গে কথা বলে এসব তথ্য জানা গেছে। সূত্র জানায়, তিনজন মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামিকে কীভাবে এত দুর্বল নিরাপত্তা দিয়ে গাজীপুর থেকে ময়মনসিংহ নিয়ে যাওয়া হচ্ছিল সেটি নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন মন্ত্রিসভার সদস্যরা। প্রধানমন্ত্রী এ বিষয়ে স্বরাষ্ট্র সচিবকেও প্রশ্ন করেন। বৈঠকে উপস্থিত মন্ত্রিসভার একাধিক সদস্যের সঙ্গে কথা বলে এসব তথ্য জানা গেছে। সূত্র জানায়, তিনজন মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামিকে কীভাবে এত দুর্বল নিরাপত্তা দিয়ে গাজীপুর থেকে ময়মনসিংহ নিয়ে যাওয়া হচ্ছিল সেটি নিয়েও প্রশ্ন তোলেন মন্ত্রিসভার সদস্যরা। এ সময় প্রধানমন্ত্রীও ক্ষোভ প্রকাশ করেন। তিনি তার বক্তব্যে এই আসামিদের ক্ষেত্রে কেন বাড়তি নিরাপত্তা দেওয়া হলো না, কেন আসামি নিয়ে যাওয়ার সময় র্যাব ও পুলিশ ফোর্স থাকল না এ বিষয়টি খতিয়ে দেখতে স্বরাষ্ট্র সচিবকে নির্দেশ দেন। এ ছাড়া মন্ত্রিসভার সদস্যরা পুলিশের মোবাইল ফোন নিয়ে দণ্ডপ্রাপ্ত আসামিদের কথা বলা নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন। মন্ত্রিসভার একাধিক সদস্য জানান, গতকালের বৈঠকে জঙ্গি সংগঠন জেএমবি নিয়ে দীর্ঘ সময় কথা বলেছেন মন্ত্রিপরিষদের সদস্যরা। বিশেষ করে নিরাপত্তা নিয়েই আলোচনা হয়েছে। স্পর্শকাতর মামলার দণ্ডপ্রাপ্ত আসামিদের কেন মাত্র তিন-চারজন পুলিশ সদস্য দিয়ে একস্থান থেকে অন্যস্থানে নিয়ে যাওয়া হচ্ছিল তা নিয়ে প্রশ্ন তুলেন একাধিক মন্ত্রী। মন্ত্রিসভার সদস্যদের বক্তব্য শুনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এ নিয়ে কথা বলেন। এ সময় তিনি আইনমন্ত্রীকে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত এসব আসামির মামলা বছরের পর বছর কীভাবে ঝুলে আছে, কেন এগুলো এতদিনেও নিষ্পত্তি করা যায়নি তা খতিয়ে দেখার নির্দেশ দেন। জেএমবি ছাড়াও উপজেলা নির্বাচন নিয়েও আলোচনা হয় মন্ত্রিসভার বৈঠকে। উপজেলা নির্বাচনের প্রথম ধাপে আওয়ামী লীগ দলীয় প্রার্থীদের পরাজয়ে দলীয় কোন্দলকে চিহ্নিত করা হয়। এ সময় প্রধানমন্ত্রী আগামী উপজেলা নির্বাচনের আগে যেসব এলাকায় দলের একাধিক বা বিদ্রোহী প্রার্থী আছে তাদের মধ্যে সমঝোতা করে একক প্রার্থী নিশ্চিত করতে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রীদের নির্দেশ দেন। আগামী ২৯ মার্চ অনুষ্ঠিত টাঙ্গাইল উপনির্বাচনে কৃষক-শ্রমিক-জনতা লীগের সভাপতি আবদুল কাদের সিদ্দিকীর অংশ নেওয়ার বিষয় নিয়েও আলোচনা করেন মন্ত্রিসভার সদস্যরা। ১৯ দলীয় জোটের শরিক দলের এই নেতার নির্বাচনে অংশ নেওয়া প্রসঙ্গে কেউ কেউ বলেন, দশম সংসদ নির্বাচনে তারা অংশ নেয়নি, উল্টো নির্বাচন প্রতিহতের ডাক দিয়ে মানুষ হত্যা করেছে। এখন তারা নির্বাচনে অংশ নিচ্ছে। তাহলে এতগুলো মানুষ হত্যার কী দরকার ছিল। আগের নির্বাচনে অংশ নিলেই পারত।
একজন প্রভাবশালী মন্ত্রী নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, জঙ্গিবাদ নিয়ে যতগুলো মামলা আছে সেগুলোর বিচারকাজ কীভাবে দ্রুত শেষ করা যায় সেজন্য পদক্ষেপ নিতে আইনমন্ত্রীকে নির্দেশ দেন প্রধানমন্ত্রী। প্রয়োজনে শুধু জঙ্গিবাদের মামলাগুলো দ্রুত শেষ করতে উচ্চ আদালতে একটা আলাদা বেঞ্চ বসানো যায় কিনা সেটা খতিয়ে দেখতেও নির্দেশ দেন তিনি।
সড়ক উন্নয়নে কাটা হবে ৫০০ গাছ : এদিকে মন্ত্রিসভার বৈঠকে জয়দেবপুর থেকে মাওনা পর্যন্ত জয়দেবপুর-ময়মনসিংহ সড়কের উন্নয়নে বন বিভাগের প্রায় ৫০০ শাল গাছ কাটার প্রস্তাবে অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। তবে শর্ত হচ্ছে সমপরিমাণ গাছ লাগাতে হবে। বৈঠক শেষে মন্ত্রিপরিষদ সচিব মোশাররাফ হোসাইন ভূইঞা সংবাদ সম্মেলনে জানান, সংরক্ষিত প্রাকৃতিক বন থেকে বৃক্ষ কর্তন ২০১৫ সাল পর্যন্ত বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত আংশিক শিথিল করে জয়দেবপুর-ময়মনসিংহ সড়ক উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়নের জন্য এ অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। তিনি বলেন, ঢাকা-ময়মনসিংহ চার লেন প্রকল্পের ভাওয়াল গড় এলাকায় এ শাল গাছগুলো কাটা হবে। প্রকল্পে সয়েল টেস্টিংয়ের পর এলাইনমেন্ট পরিবর্তনের কারণে গাছ কাটার প্রয়োজন পড়ছে। এ ছাড়া গতকালের বৈঠকে বাংলাদেশের মানিলন্ডারিং ও সন্ত্রাসে অর্থায়ন প্রতিরোধ ব্যবস্থার আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি অর্জন সম্পর্কে মন্ত্রিসভাকে অবহিত করা হয়।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।