প্রথমে নিজের গীত দিয়েই শুরু করি। কেউ কেউ ভাবেন, আমি বোধ হয় আর আওয়ামী লীগে নেই। ৫ জানুয়ারির নির্বাচনে আওয়ামী লীগের নমিনেশন পেপার না কেনার জন্য কেউ কেউ যেমন ভর্ৎসনা করেন। তেমন কেউ কেউ প্রশংসা করেন নানান অভিধায়_ বাপের বেটার মতো কাজ করেছ। এমন নজির কেউ দেখাতে পারেনি, তোমার ভবিষ্যৎ অতি উজ্জ্বল ইত্যাদি।
যারা আমার ভবিষ্যৎ অতি উজ্জ্বল মনে করেন তাদের কেউ কেউ মাঝে-মধ্যে আমার কাছে আসেন। এ কথা ও কথা বলার পর শুরু করেন সরকারের বদনামি। তারপর বলেন, এই সরকারের পতন সময়ের ব্যাপার মাত্র। আমি বলি কীভাবে? তারা কথায় আমার প্রশ্নের জবাব না দিয়ে অসহায়ভাবে আসমানের দিকে তাকান। তারপর বলেন, আল্লাহ আছেন না! গজব নাজিল হবে! মস্তবড় গজব।
আমি ধীরে-সুস্থে তাদের কথা শুনি। তারপর সময় নিয়ে তাদের কাছে কিছু প্রশ্ন উত্থাপন করি। তারা ইচ্ছমতো জবাব দেন। জবাব দিতে দিতে একসময় নিজেরাই নিজেদের প্রশ্ন করেন হায় আল্লাহ! তাহলে আমরা কেন সরকারের বিরোধিতা করছি? কেনইবা গালাগাল করছি! আমি উত্তর করি স্বভাবজাত চুলকানির জন্য এবং একনাগাড়ে কোনো জিনিস ভালো না লাগার জন্য। এরপর তারা সাধারণত কোনো বিতর্ক না তুলেই খুশি মনে বাড়ি চলে যান, আর যাওয়ার সময় অনিচ্ছা সত্ত্বেও তাদের মন থেকে দূর হয়ে যায় কিঞ্চিত হলেও সরকারবিরোধিতার কিছু বিষবাষ্প।
কী এমন সেই কথা, যা শুনে কট্টর সরকারবিরোধীরাও আমার সঙ্গে সহমত প্রকাশ করে থাকেন? আমি মুখে যা বলতে পারি তা পাঠকদের কাছে গুছিয়ে লিখতে পারব কিনা সন্দেহ। তবে চেষ্টা করব এই কারণে যে, সবার উচিত প্রথম আসল ঘটনা জানা। তারপর জেনেশুনে সমর্থন কিংবা বিরোধিতা করা। যারা এ কাজ করে না তারা মূলত অন্যের ক্ষতির তুলনায় নিজেদের ক্ষতিই করে বেশি। আবার কোনো মানুষ যদি জেনেশুনে কোনো সত্য গোপন রাখে তবে তাকে হয়তো কুফরের দায়িত্ব নিতে হতে পারে, এ কারণে যে কাফির শব্দের অর্থই হলো সত্য গোপনকারী।
এবার মূল প্রসঙ্গে আসি। অনেক লোক সরকারের বিরোধিতা করেন এত প্রবল বিরোধিতা যে, তারা কেউ কোনো অজুহাত শুনতে কিংবা মানতে নারাজ। তারা পারলে সরকারকে এই মুহূর্তে টেনেহিঁচড়ে ক্ষমতা থেকে নামিয়ে ফেলেন। তারপর সরকারের যেসব লোকজনের প্রতি তাদের খুব রাগ সেসব লোকজনকে আদিম কায়দায় প্রকাশ্যে বেত্রাঘাত, অপমান কিংবা জীবন্ত কবর দিয়েও তারা ক্ষান্ত হবেন না_ সেসব লোকের আত্দীয়স্বজন, বন্ধু-বান্ধব এবং পরবর্তী প্রজন্মকেও তারা নির্যাতন করতে চান। যখন তারা দেখেন যে এসব হবে না বা সম্ভব নয়, কারণ প্রতিপক্ষকে পরাজিত করার কিংবা শাস্তি দেওয়ার কোনোই সামর্থ্য তাদের নেই তখন তারা অভিশাপ দেন।
বলেন, তাদের ওপর আল্লাহর গজব নাজিল হবে। যেনতেন গজব নয়_ ঠাডা পড়বে, কুঁড়ো কুষ্ঠ রোগ হবে, আসমান থেকে ফেরেশতা এসে আছড়ে মারবে।
আপনি যদি প্রশ্ন করেন, কেন সরকারের পতন চাচ্ছেন? তারা সমস্বরে বলে উঠবেন, অনেক অনেক কারণ। যেমন সীমাহীন সন্ত্রাস! সীমাহীন দুর্নীতি, নির্যাতন, জুলুম, সুশাসনের অভাব, দলীয়করণ, গণতন্ত্রের কবর দেওয়া, আর্থিক কেলেঙ্কারি, দেশটাকে দেউলিয়া বানিয়ে ফেলা, ভারতের তাঁবেদারি করা, ইসলাম ধর্মের বারোটা বাজানো ইত্যাদি। এবার আপনি তাদের যদি জিজ্ঞাসা করেন তাদের উত্থাপিত অভিযোগ সম্পর্কে বিস্তারিত বলার জন্য তাহলে দেখবেন বেশির ভাগ লোকই বলতে পারছেন না।
যারা হালকাভাবে দুই-চারটি অভিযোগের ব্যাপারে বিস্তারিত বলবেন তাদের যুক্তি আপনার কাছে গ্রহণযোগ্য মনে হবে না।
এসব বিষয় নিয়ে ইদানীং আমি ভাবছি এ কারণে যে, সরকার বিরোধীরা যদি তাদের প্রতিটি দাবি কিংবা অভিযোগের বিষয়ে শতভাগ নিশ্চিত না হন এবং পর্যাপ্ত তথ্য প্রদানসহকারে জনগণের কাছে উপস্থাপন করতে না পারেন তাহলে একদিকে জনবিচ্ছিন্ন হয়ে পড়বেন, অন্যদিকে সরকার অতিমাত্রায় আত্দবিশ্বাসী কিংবা অহঙ্কারী হয়ে উঠবেন। বিরোধী দল যদি তাদের রাজনৈতিক কর্মসূচিতে জনগণকে ব্যাপক হারে সম্পৃক্ত করতে না পারে সেক্ষেত্রে জনগণের দুর্ভোগ বাড়তে থাকে এবং জাতীয় জীবনে মারাত্দক হতাশা দেখা দেয়।
এবার আসি বিরোধীদের কয়েকটি অভিযোগ প্রসঙ্গে। সবাই একবাক্যে বলছে সন্ত্রাস বেড়েছে।
সন্ত্রাস বলতে চুরি, ডাকাতি, রাহাজানি, ছিনতাই, লুট, অবৈধ দখল বা অবৈধ উচ্ছেদ ছাড়াও নানান নামের রকমারি সব সন্ত্রাসী বাহিনীকে বোঝাবে। ঢাকা শহরের কতগুলো অপরাধপ্রবণ এলাকা শহরবাসীকে সর্বদা সন্ত্রস্ত রাখত। রাজধানীর কলাবাগান, বিশ্ববিদ্যালয় এলাকা, টঙ্গী, মিরপুর, হাজারীবাগ, মগবাজার, বাড্ডা, যাত্রাবাড়ী, গুলিস্তান প্রভৃতি এলাকা ছিল সন্ত্রাসী আর চাঁদাবাজদের অভয়ারণ্য, সেই স্বাধীনতা-পরবর্তী সময় থেকে ২০০৯ সাল অবধি। রাজধানীর বাইরে লক্ষ্মীপুর, গফরগাঁও, নারায়ণগঞ্জ, ফেনী, চট্টগ্রামের ডবলমুরিং, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় এলাকা, মাদারীপুর, বরিশাল, গলাচিপা, ভাঙ্গা, মেহেরপুর, ঝিনাইদহ, খুলনার ঘাট এলাকা ও সুন্দরবন প্রভৃতি এলাকায় সন্ত্রাস প্রাতিষ্ঠানিক রূপ নিয়েছিল। প্রতিটি এলাকায়ই দুই-চারটা সন্ত্রাসী গ্রুপ এবং তাদের গডফাদার ছিল।
দেশবাসী কম-বেশি এদের নাম জানত এবং দূর থেকে হলেও ওইসব নাম শুনে ভয় পেত।
আপনি যদি সরকার বিরোধীদের জিজ্ঞাসা করেন ওইসব এলাকার বর্তমান হালহকিকত কি? কিংবা ওই গডফাদাররা এখন কেমন আছে? অথবা আপনি এ কথাও জিজ্ঞাসা করতে পারেন_ আচ্ছা আপনি কি গত পাঁচ বছরে নিজে কোনো ছিনতাই, ডাকাতি কিংবা সন্ত্রাসী চাঁদাবাজির কবলে পড়েছেন? সবাই বলবে না পড়িনি। তাহলে আপনার কোনো আত্দীয় বা পরিচিতজন নিশ্চয়ই পড়েছেন! এবার তারা বলবেন, না তো এমন কোনো ঘটনা ঘটেনি। বেশ ভালো, তাহলে অন্তত একবার আপনার নিজ চোখে এসব ঘটনা ঘটতে দেখেছেন যখন আপনি ছিলেন হয়তো পথিক, নয়তো যাত্রী কিংবা প্রাতঃভ্রমণকারী। এবারও আপনি 'না' জবাব পাবেন।
এবার পাল্টা প্রশ্ন তো আপনার জন্য ফরজ হয়ে গেল_ তাহলে কোন কোন ক্ষেত্রে সন্ত্রাস হলো? তারা নিচু গলায় হয়তো বলবেন, মিডিয়ায় প্রকাশিত চাঞ্চল্যকর কয়েকটি হত্যা, গুম, আর ক্রসফায়ারের কথা।
দেশে কোনো অর্থনীতি নেই, ব্যাংকে টাকা নেই, কোনো ব্যবসা-বাণিজ্য নেই, নতুন বিনিয়োগ নেই, বিদেশি বায়াররা চলে গেছেন_ এসব অভিযোগের পাশাপাশি শেয়ার মার্কেট কেলেঙ্কারি, হলমার্ক, ডেসটিনি, পদ্মা সেতুর দুর্নীতি এবং বিভিন্ন মন্ত্রী, এমপি সম্পর্কে নানা রকম কুকথা শুনতে পারবেন। এসব শুনে শুনে যখন আপনি সত্যিই বিশ্বাস করতে বসেছেন যে, বিরোধীদের সব অভিযোগ সত্য ঠিক তখনই যদি আপনাকে প্রশ্ন করা হয়, আচ্ছা বলুন তো_ গত মন্ত্রিপরিষদের কয়জন মন্ত্রী এবং সংসদের কয়জন এমপিকে দুর্নীতিবাজ বলা যাবে? আপনি ভেবেচিন্তে হয়তো উত্তর করবেন, এই ধরুন ৭-৮ জন মন্ত্রী এবং ১০-১২ জন এমপি। আপনার কাছে যদি তাদের নাম জিজ্ঞাসা করা হয় তখন আপনি আরও একটু সতর্ক হয়ে গণনা করবেন এবং দেখতে পাবেন অভিযুক্ত মন্ত্রীর সংখ্যা হয়তো ৪-৫ জন এবং এমপির সংখ্যা ৭-৮ জন।
এবার আপনি মোট মন্ত্রীর সংখ্যা এবং এমপির সংখ্যার সঙ্গে কথিত বা অভিযুক্ত মন্ত্রী-এমপির সংখ্যার তুলনা করুন।
শতকরা কত ভাগ পেলেন? এবার দয়া করে আপনার নজর, মন এবং মেধা আপনার পরিবার, সমাজ এবং পেশার প্রতি নিবদ্ধ করুন। ভালো করে খুঁজুন। দুর্নীতিবাজ খোঁজার দরকার নেই। ভালো মানুষ পান কিনা যাকে আপনি নিজের ধন, জন, সঞ্চয় দিয়ে বিশ্বাস করতে পারেন! নিজের সুন্দরী স্ত্রী, কন্যা কিংবা সোনাদানা দুই-চার দিনের জন্য কারও হেফাজতে রাখবেন এমন একজন লোক_ হোক সে নারী কিংবা পুরুষ। খুঁজে বের করুন তো আপনার আশপাশের এলাকা থেকে! পাবেন? নাহ, অবশ্যই পাবেন না।
এবার দয়া করে নিজের দিকে তাকান। তারপর বড় করে নিঃশ্বাস নিন। প্রথমে বিশাল আসমানের দিকে দৃষ্টিনিবদ্ধ করুন। তারপর জমিনের ওপর আপনার দৃষ্টি ফেলুন। আবার দীর্ঘ করে নিঃশ্বাস নিন এবং চোখ বন্ধ করে ভাবুন_ আপনাকে কয়জন বিশ্বাস করে?
এটা তো গেল ব্যক্তিগত দুর্নীতির কথা।
রাষ্ট্রীয়ভাবে যেসব দুর্নীতির কথা বলা হচ্ছে তা কি একবারও খতিয়ে দেখেছেন। অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত মন্ত্রী, এমপি বা সরকারি কর্তাব্যক্তিরা কী কী দুর্নীতি করেছেন, তার কোনো খতিয়ান কি আপনার কাছে আছে? আপনি হয়তো বলবেন_ না, তারা দুর্নীতি করেননি বটে কিন্তু ভুল সিদ্ধান্তেই এতসব কাণ্ডকারখানা ঘটল। এসব নিয়ে আপনার সঙ্গে বিতর্ক না করে বরং কিছু সফলতার তথ্য উপস্থাপন করলে আপনি সহজেই হিসাব মেলাতে পারবেন_ কতভাগ সফল, কতভাগ ব্যর্থ, কত ভাগ ভুল?
আপনি দয়া করে স্মরণ করুন, পাঁচ বছরে সরকার মোট ব্যয় করেছে প্রায় ৮ লাখ কোটি টাকা, যা কিনা পূর্ববর্তী পাঁচ বছরের তুলনায় গড়ে ৩ গুণ বেশি। সরকারি কর্মকর্তাদের বেতন-ভাতা বেড়েছে প্রায় সোয়া তিনশ ভাগ। বেসরকারি খাতের কেবল গার্মেন্ট সেক্টরে বেতন-ভাতা বৃদ্ধি ঘটেছে প্রায় সাড়ে চারশ ভাগ (ছয় দফায়)।
পুলিশ, আনসার, ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ার, শিক্ষক এবং সামরিক বাহিনীতে কত লোক নতুন করে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে তা কি আপনি জানেন? সাকুল্যে পাঁচ/ছয় লাখ তো হবেই। এবার ৮ লাখ কোটি টাকার আয় এবং সমপরিমাণ ব্যয়ের খাতায় একপাশে আর্থিক খাতে ক্ষতির পরিমাণগুলো লিখুন। তারপর নিজেই সিদ্ধান্ত নিন কী করা উচিত এবং কী বলা উচিত। আপনারা নিশ্চয়ই অনেকে চীন দেশে যান কিংবা আমেরিকা বা ইউরোপ হয়তো আপনাদের কাছে ভাত-মাছ। আপনারা সভ্য দুনিয়ার দেশগুলোতে যান এবং সেখানকার কৃষ্টি কালচার দেখে বিমুগ্ধ হয়ে যান।
এবার দয়া করে একটু খোঁজ করুন তো ওইসব দেশে গত পাঁচ বছরে জিডিপির হার কত ছিল? সামাজিক খাতে তাদের প্রবৃদ্ধি কত ছিল? এবার বাংলাদেশে ফিরে আসুন। নিজের দেশের সফলতা দেখুন। এ সফলতা সরকারের নয়, দেশের এবং বিশ্বাস করুন আপনি যদি একবারের জন্যও আস্থা স্থাপন করতে পারেন যে, গত পাঁচ বছরে আপনার দেশ এবং জাতি ইউরোপ-আমেরিকা-অস্ট্রেলিয়া-কানাডার তুলনায় ভালো করেছে সে ক্ষেত্রে আপনি অবশ্যই প্রিয় মাতৃভূমিকে ভালো না বেশে পারবেন না।
আপনার হয়তো অনেক রাগ এদেশের রাজনীতিবিদের ওপর। আপনি মনে করেন এরা মানুষ না, এরা হয়তো আওয়ামী লীগ নয়তো বিএনপি।
আপনি হয়তো মাঝে-মধ্যে নিজের কাছেই প্রশ্ন করেন_ আচ্ছা ওরা এত অসভ্য আর অমানবিক কেন? এবার আপনি ঘুরে আসুন ভারতের পশ্চিমবঙ্গ থেকে, দেখবেন রাজ্যের সংসদে বর্তমান মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জি এবং সাবেক মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধদেব বসু ও বিমান বসুরা ঝগড়া করছে। ওরা রেগে গিয়ে একে অপরের দিকে তেড়ে আসছে আর বলছে_ আয় এদিকে আয়, তোর ধুতি খুলে নেব। অপরপক্ষ থেকে হুমকি_ ওরে ধুমসী তোর এত্তোবড় সাহস, বড্ড বাড় বেড়েছিস! তোর কাপড় খুলে নেব। কি হলো আপনার! এসব শুনতে এবং দেখতে দেখতে আপনি দিলি্লতে চলে যান। সেখানে কেন্দ্রীয় লোকসভায় এমপিরা শুরু করল মারামারি।
একজন আরেকজনকে ঘুষি দিয়ে নাকের বদনা ফাটিয়ে ুদিল। দর দর করে রক্ত বেরিয়ে এলো। সেই রক্তের ওপর গুঁড়া মরিচ ছিটিয়ে দেওয়ার জন্য আরেক এমপি এগিয়ে এলো। আবার সেই এমপিকে বাধা দেওয়ার জন্য চাকু হাতে এগিয়ে এলো অন্য আরেকজন। মরিচওয়ালা এমপি চাকুওয়ালা এমপির হাত থেকে বাঁচার জন্য পাইকারি হারে মরিচের গুঁড়া ছিটাতে লাগল।
১০-১২ জন এমপির চোখে তা ঢুকল এবং সবাই চোখের যন্ত্রণায় শিশুর মতো চিৎকার শুরু করল।
এই দেশের আইন-আদালত আর থানা পুলিশ নিয়েও আপনার বিস্তর অভিযোগ। নিজে হয়তো বিপদে পড়ে কোনো দিন থানায় যাননি কিন্তু লোকমুখে শুনেই আপনার ওদের একদম দেখতে ইচ্ছা করে না। আপনি ওদের বদমাশ ভাবেন এবং ওদের দেখলেই আপনার রক্ত বমির উদ্রেক হয়। আপনি বিদেশের জেলহাজত কিংবা থানা পুলিশ সম্পর্কে তেমন জানেন না।
আপনি কোনো দিন আমেরিকার গুয়ানতানামো বে কারাগারটি হয়তো দেখেননি কিংবা সেখানকার বাসিন্দাদের হালনাগাদ হালহকিকতও আপনার জানা নেই। তারপরও আপনার আস্থা আর ভালোবাসা কেবল ওদের প্রতি।
ুএবার আপনি আপনার আস্থা আর ভালোবাসার পুলিশের একটি কাহিনী শুনুন। দুনিয়া তোলপাড় করা কাহিনী। মেয়েটির নাম দেবযানী।
যুবতী ও তরুণীর মাঝামাঝি বয়স। ইন্ডিয়ান সুপিরিয়র সার্ভিসের ফরেন ক্যাডারের কর্মকর্তা। আমাদের দেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের উপসচিব পদমর্যাদার। দেবযানি অত সুন্দরী নন আবার কুৎসিতও নন।
যারা উজ্জ্বল শ্যাম বর্ণের মেয়ে পছন্দ করেন তাদের কাছে দেবযানির চেহারা খুবই ভালো লাগবে।
লম্বাটে গড়ন, শিক্ষিত ও উচ্চপদস্থ সরকারি চাকুরে মেয়েটির কর্মস্থল ছিল মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্কে অবস্থিত ভারতীয় দূতাবাস। ওই শহরে সে থাকত নিজের ছোট মেয়ে শিশুটিকে নিয়ে এবং তাদের সাহায্য করার জন্য ছিল ভারত থেকে আনা একটি কাজের মেয়ে বা আয়া।
সাধারণ সংসারে যা হয়_ কাজের মেয়ের সঙ্গে গৃহকর্ত্রীর প্রায়ই মতের অমিল হয়। দেবযানির ক্ষেত্রেও একদিন তাই হলো। সে কোনো কারণে হয়তো মেয়েটিকে একটু বকা দিয়েছিল।
মেয়েটি অমনি থানায় গিয়ে দেবযানির বিরুদ্ধে নালিশ ঠুকে দিল। অভিযোগ দেবযানি ভারত থেকে আনার সময় মেয়েটিকে যত টাকা বেতন দেবে বলেছিল তার চেয়ে কম দিচ্ছে, অথচ সরকারি কাগজপত্রে উল্লেখ করেছে বেশি বেতন প্রদানের তথ্য। আর যায় কোথায়, নিউইয়র্ক শহরের একটি থানার পুলিশ দেবযানিকে রাস্তা থেকে গ্রেফতার করে ফেলল যখন সে তার মেয়েকে স্কুল থেকে আনতে যাচ্ছিল। সে অনেক আকুতি করল কিছু পরে গ্রেফতার করার জন্য যাতে শিশুকন্যাটিকে স্কুল থেকে এনে কোনো পরিচিতজনের কাছে রাখা যায়। পুলিশ শুনল না।
এর পর সে নিজের কূটনৈতিক পরিচয় দিয়ে বলল নিয়ম মতো পুলিশ তো তাকে গ্রেফতার করতে পারে না। এ কথা শুনে বিগড়ে গেল পুলিশ এবং দেবযানিকে হাতকড়া পরিয়ে থানায় নিয়ে এলো।
থানায় আনার পর শুরু হলো নির্যাতন। তাকে পুরুষ ও মহিলা পুলিশরা মিলে উলঙ্গ করে ফেলল। তারা বলল, দেবযানির কাছে মাদক আছে।
এ অভিযোগে পুরুষ পুলিশ দেবযানির শরীরের স্পর্শকাতর জায়গায় হাত ঢুকিয়ে দিল। মহিলা পুলিশরা খিল খিলিয়ে হাসতে লাগল। দেবযানি সংজ্ঞা হারালেন। তার সারা শরীর কুকুর দিয়ে পরীক্ষা করা হলো, এর পর তাকে পাঠানো হলো থানা হাজতে। দেবযানির যখন সংজ্ঞা ফিরে এলো তখন গভীর রাত।
সে দেখতে পেল অনেক বেশ্যার সঙ্গে তাকে রাখা হয়েছে। বেশ্যাগুলো দেবযানিকে কাতুকুতু দিয়ে তার বিশেষ বিশেষ স্থানে আঘাত করতে করতে বলল হায় খোদা! তুমি এত কুৎসিত, এমন পুরুষও কি দুনিয়ায় আছে যে কিনা তোমার মতো বেশ্যার সঙ্গে রমণ করতে চায়!
এবার আপনি নিজ দেশের পুলিশ নিয়ে ভাবুন। তারপর আপনার অভিজাত কোনো বোন যে কিনা সরকারি অফিসের বড় কর্তা তার কথা ভাবুন। যদি দেখেন পরিস্থিতি আসলেই খারাপ তাহলে বিরোধিতা করুন খুব জোরে, সর্বশক্তি দিয়ে! দেখবেন জনগণ এগিয়ে এসেছে।
লেখক : সাবেক সংসদ সদস্য।
(বাংলাদেশ প্রতিদিন- এ প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না। )
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।