বিদ্যুতের দাম বৃদ্ধির প্রক্রিয়া শুরু না হতেই এবার গ্যাসের দাম বৃদ্ধির কথা ভাবছে সরকার। নিয়মানুযায়ী বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশন (বিইআরসি)-এর কাছে দেশের গ্যাস বিতরণকারী সংস্থাগুলো গ্যাসের মূল্য বৃদ্ধির প্রস্তাব পৃথকভাবে জমা দেওয়ার পর সব বিষয়ে পরীক্ষা-নিরীক্ষা শেষে দাম বৃদ্ধির শুনানি হবে। আর এ প্রক্রিয়া আগামী দু-এক মাসের মধ্যেই হবে বলে জানিয়েছে দায়িত্বপ্রাপ্তরা। এ বিষয়ে সংশ্লিষ্টদের বক্তব্য, গ্যাসকে সম্পদ নয় 'পণ্য' হিসেবে দেখতে হবে। কারণ পণ্যের দাম বৃদ্ধি হওয়াই স্বাভাবিক। এর ফলে গ্যাসের অপব্যবহার রোধে মানুষও সচেতন হবে। দেশে যে দামে গ্যাস বিক্রি করা হচ্ছে তার চেয়ে উৎপাদন খরচ অনেক বেশি। তাই সমন্বয় করতে যৌক্তিকভাবে যতটুকু দাম বৃদ্ধি করা প্রয়োজন ঠিক ততটাই করা উচিত। তা না হলে অপরিকল্পিতভাবে দাম বৃদ্ধির বোঝা বয়ে বেড়াতে হবে সাধারণ মানুষকে। সর্বশেষ ২০০৯ সালে গ্রাহক পর্যায়ে গ্যাসের দাম ৫০ টাকা করে বাড়ানো হয়। সে সময় বাণিজ্যিক সংযোগেরও দাম বাড়ে। জানতে চাইলে গ্যাসের দাম বৃদ্ধির বিষয়টি স্বীকার করে পেট্রোবাংলার চেয়ারম্যান ড. হুসাইন মনসুর বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, গ্যাস বিতরণকারী কোম্পানিগুলোর মূল্য বৃদ্ধির প্রস্তাব জমা দেওয়ার পরপরই আমরা বিইআরসির কাছে তা জমা দেব। এ জন্য প্রতিষ্ঠানগুলোর কাছ থেকে মূল্য বৃদ্ধির প্রস্তাব জমা দেওয়ার জন্য বলা হয়েছে।
তিনি বলেন, দাম বৃদ্ধির সিদ্ধান্ত অনেক আগেই নেওয়া হয়েছে। প্রতিবেশী দেশ ও আন্তর্জাতিক বাজারের সঙ্গে তুলনা করে দেখা যায় যে, বাংলাদেশ পানির দরে গ্রাহকদের কাছে গ্যাস বিক্রি করছে। কিন্তু যে দামে গ্যাস বিক্রি করা হচ্ছে তার চেয়ে উৎপাদন খরচ আরও বেশি। তবে এবার বেশ কিছু পদ্ধতি বা মানদণ্ড মেনে গ্যাসের দাম বৃদ্ধি করা হবে। ইতোমধ্যে গ্যাসের দাম বৃদ্ধির জন্য মানদণ্ড নির্ধারণে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ে পেট্রোবাংলা চিঠি পাঠিয়েছে। আগামী দু-এক মাসের মধ্যেই গ্যাসের দাম বৃদ্ধির প্রক্রিয়া শুরু হবে। যারা গ্যাস ব্যবহারের ক্ষেত্রে সচেতন নয় তাদের জন্য এ মূল্য বৃদ্ধি সচেতনতা বৃদ্ধিতে কার্যকরী পদক্ষেপ বলে মনে করি। বিইআরসি সদস্য ড. সেলিম মাহমুদ বলেন, এখন সময় হয়েছে গ্যাসের দাম কিছুটা সমন্বয় করার। গ্যাসের দাম বৃদ্ধির জন্য ২০১২ সালে পেট্রোবাংলা দেশের বিতরণকারী প্রতিষ্ঠানগুলোর পক্ষে আমাদের কাছে আবেদন করেছিল। কিন্তু আইনি জটিলতার কারণে সে সময় দাম বৃদ্ধির বিষয়ে কোনো শুনানি না হওয়ায় গ্যাসের দাম বৃদ্ধির প্রক্রিয়াটি আটকে যায়। নিয়মানুযায়ী বিতরণকারী সংস্থাগুলোর সরাসরি বিইআরসি'র কাছে গ্যাসের দাম বৃদ্ধির জন্য আবেদন করার কথা। আমরা আশা করছি আগামী দু-এক মাসের মধ্যেই গ্যাসের নতুন মূল্য বৃদ্ধির সমন্বয় প্রক্রিয়া শুরু হবে। তবে এ দাম বৃদ্ধি ২০১২ সালের প্রস্তাব অনুযায়ী হবে অথবা নতুনভাবে নির্ধারিত হবে তা বিতরণকারী সংস্থাগুলোকে ঠিক করতে হবে। তবে আমরা সব পক্ষের কথা বিবেচনা ও পরীক্ষা করে তবেই গ্যাসের মূল্য বৃদ্ধির সিদ্ধান্ত নেব। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, লিকুইড তেল ও গ্যাসের মূল্যের মধ্যে সামঞ্জস্য রাখার বিষয়ে ভাবতে হবে। গ্রাহকরা যে গ্যাস পাচ্ছেন তার সঙ্গে এলপি গ্যাসের মূল্য সামঞ্জস্য থাকতে হবে। অনেকেই আছেন যারা বেশি দামে এলপি গ্যাস ব্যবহার করেন আবার এদের অনেকেই গ্যাসের দাম বৃদ্ধি করা হলে তা নেতিবাচকভাবে দেখেন। তবে এ জন্য দেশের শিল্প ও বাণিজ্যিক খাতে যাতে কোনো সমস্যা না হয় তা খেয়াল রাখতে হবে। কনজুমার অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের জ্বালানি উপদেষ্টা অধ্যাপক শামসুল আলম বলেন, প্রতিবারই গ্যাসের দাম বৃদ্ধির ঘোষণা দিয়েও সরকার জ্বালানি খাতের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে পারছে না। কিন্তু দাম বৃদ্ধির চাপ পুরো অর্থনীতির ওপর পড়ছে। সরকারের অপরিকল্পিতভাবে দাম বৃদ্ধির বোঝা বয়ে বেড়াতে হয় জনগণকে। ২০১২ সালের মার্চ মাসে পেট্রোবাংলা বিইআরসি'র কাছে গ্যাস সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠানগুলোর পক্ষে গড়ে ৩৪ শতাংশ হারে গ্যাসের দাম বৃদ্ধির জন্য একটি প্রস্তাব জমা দেয়। এতে বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্র, সার কারখানা, চা-বাগান, শিল্প-কারখানা এবং সিএনজি ফিলিং স্টেশনগুলোতে গ্যাস বৃদ্ধির কথা উল্লেখ করা হয়। এর আগে ২০০৯ সালের ১ আগস্ট বিইআরসি আবাসিক গ্রাহকদের জন্য ১১ শতাংশ হারে গ্যাসের মূল্য বৃদ্ধি করে, এ ছাড়া ২০১১ সালে ২০ সেপ্টেম্বর ২০ শতাংশ হারে সিএনজি গ্যাসের মূল্য বৃদ্ধি করে। বর্তমানে দেশে দৈনিক ২৭০০-৩০০০ এমএমসিএফডি গ্যাসের চাহিদার বিপরীতে উৎপাদিত হচ্ছে ২৩০০ মিলিয়ন কিউবিক ফিট গ্যাস।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।