বিমসটেক সম্মেলনে যোগ দিতে নে পি দওয়ে পৌঁছে সোমবারই দেশটির প্রেসিডেন্ট থেইন সেইনের সঙ্গে বৈঠকে বসেন হাসিনা।
প্রেসিডেন্ট ভবনে ওই বৈঠকের পর প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ সহকারী মাহবুবুল হক শাকিল সাংবাদিকদের বলেন,“প্রধানমন্ত্রী মিয়ানমারের শরণার্থীদের ফিরিয়ে নিতে দুই দেশের বন্ধুত্বপূর্ণ ও সৌহাদ্যপূর্ণ আলোচনার ওপর জোর দিয়েছেন। ”
প্রতিবেশী দেশ মিয়ানমারে রাজনৈতিক সংঘাত দেখা দিলে দুই যুগ আগে বিপুল সংখ্যক মানুষ বাংলাদেশে ঢুকে পড়ে। এরপর বিভিন্ন সময় জাতিগত সংঘাতের কারণে আরো অনেকে বাংলাদেশে আশ্রয় নেয়।
জাতিসংঘের শরণার্থী বিষয়ক সংস্থা ইউএনএইচসিআরের তথ্য অনুযায়ী, কক্সবাজারের কুতুপালং ও নয়াপাড়া শরণার্থী শিবিরে নিবন্ধিত ৩০ হাজারসহ দুই লাখের বেশি মিয়ানমারের নাগরিক রয়েছে।
এর বাইরে মিয়ানমারের আরো প্রায় পাঁচ লাখ নাগরিক বাংলাদেশের বিভিন্ন স্থানে অবস্থান করছে বলে বলা হয়ে থাকে, যারা রোহিঙ্গা নামেই পরিচিত।
এই শরণার্থীদের ফিরিয়ে নিতে দীর্ঘদিন ধরে মিয়ানমারের প্রতি আহ্বান জানিয়ে আসছে বাংলাদেশ সরকার।
শাকিল বলেন, বৈঠকের শুরুতেই দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিপুল বিজয় এবং শেখ হাসিনার নেতৃত্বে সরকার গঠনে তাকে অভিনন্দন জানান মিয়ানমারের প্রেসিডেন্ট। আলোচনায় দুজনেই আঞ্চলিক শান্তি ও স্থিতিশীলতাকে অগ্রাধিকার দেন।
মিয়ানমারকে বাংলাদেশের নিকটতম প্রতিবেশী উল্লেখ করে শেখ হাসিনা আশা প্রকাশ করেছেন, দারিদ্র্য দূর করাসহ এই অঞ্চলের মানুষের ভাগ্য উন্নয়নে সবাই এক সঙ্গে কাজ করবে।
বাংলাদেশের মাটি কখনোই অন্য কোনো বন্ধু বা প্রতিবেশী রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডে ব্যবহার করতে দেয়া হবে না বলেও থেইন সেইনকে আশ্বস্ত করেন বাংলাদেশের সরকার প্রধান।
“সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স অব্যাহত থাকবে,” বলেন তিনি।
আন্তঃদেশীয় যোগাযোগের ওপর গুরুত্ব দিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, আন্তঃআঞ্চলিক যোগাযোগ বৃদ্ধি পেলে এই অঞ্চলের দেশগুলো আরো শক্তিশালী হবে, বাণিজ্য বাড়বে।
থেইন সেইন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীকে বলেন, তার দেশ ভারত ও থাইল্যান্ডের সঙ্গে সড়ক সংযোগের ব্যবস্থা করছে। বাংলাদেশ চাইলে এতে যোগ দিতে পারে।
প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, বাংলাদেশ, মিয়ানমার এবং চীনের কুনমিংয়ের মধ্যে সড়কপথ চালু হলে তা বাণিজ্য বৃদ্ধিতে প্রভাব ফেলবে।
বাংলাদেশের ব্যবসায়ীদের মিয়ানমারে বিনিয়োগে আগ্রহের কথাও দেশটির প্রেসিডেন্টকে জানান শেখ হাসিনা।
শেখ হাসিনার সঙ্গে ৪৫ মিনিটের বৈঠকে মিয়ানমারের প্রেসিডেন্টের সঙ্গে সে দেশের মন্ত্রিসভার সদস্যরাও ছিলেন।
শেখ হাসিনার সঙ্গে ছিলেন পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম, অ্যাম্বাসেডর অ্যাট লার্জ এম জিয়াউদ্দিন, পররাষ্ট্র সচিব মো. শহীদুল হক, প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ সহকারী মাহবুবুল হক শাকিল ও মিয়ানমারে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত অনুপ কুমার চাকমা।
স্পিকারের সঙ্গে বৈঠক
সফরের প্রথমদিন মিয়ানমারের প্রেসিডেন্টের সঙ্গে বৈঠকের আগে নোবেলজয়ী নেত্রী অং সান সু চির সঙ্গে বৈঠক করেন হাসিনা।
প্রেসিডেন্টের সঙ্গে বৈঠকের পর মিয়ানমারের পার্লামেন্টের স্পিকার থুরা শোয়ে মানের সঙ্গে বৈঠক করেন তিনি।
স্পিকার কার্যালয়ে পৌঁছলে থুরা শোয়ে মান গাড়ি বারান্দায় নেমে শেখ হাসিনাকে স্বাগত জানান।
আধ ঘণ্টার বেশি সময় দুজনে দ্বিপক্ষীয় স্বার্থ সংশ্লিষ্ট নানা বিষয়ে আলোচনা করেন।
স্পিকারের সঙ্গে বৈঠক শেষে শেখ হাসিনা দর্শণার্থী বইয়ে স্বাক্ষর করেন।
বিদায় নেয়ার সময়ও গাড়ি বারান্দায় এসে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীকে বিদায় জানান মিয়ানমারের স্পিকার।
সন্ধ্যায় বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী সফরকারী দেশের প্রেসিডেন্টের দেয়া নৈশভোজে যোগ দিতে মিয়ানমার আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে যান।
নৈশভোজের আগে শেখ হাসিনা বিমসটেকে অংশগ্রহণকারী দেশগুলোর সরকার ও রাষ্ট্রপ্রধানদের সঙ্গে একসঙ্গে ছবি তোলেন।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।