অনেকদিন ধরে চলচ্চিত্র থেকে দূরে রয়েছেন, কেন?
দীর্ঘদিন অভিনয় করলাম। দর্শক ভালোবাসা এবং জাতীয় স্বীকৃতি সবই পেলাম। এরপর আশির দশকে অভিনয়ের পাশপাশি নির্মাণে এলাম। এখানেও সার্থক হলাম। ২০০৫ সালে সরকারি অনুদানে সর্বশেষ নির্মাণ করলাম জহির রায়হানের উপন্যাস অবলম্বনে 'হাজার বছর ধরে'।
এই চলচ্চিত্রটি জাতীয় পুরস্কারসহ দেশ-বিদেশে বহু সম্মান লাভ করেছে। এরপর সিদ্ধান্ত নিলাম জহির রায়হানের উপন্যাস নিয়ে 'বরফ গলা নদী' ও 'একুশে ফেব্রুয়ারি' চলচ্চিত্র দুটি নির্মাণের। কিন্তু এর জন্য অনুদানসহ সার্বিক সরকারি সহযোগিতা প্রয়োজন। বারবার চেষ্টা করেও তা লাভে ব্যর্থ হয়েছি। আবারও অনুদানের জন্য স্ক্রিপ্ট জমা দেব।
আশা করি সরকার এবার আমাকে নিরাশ করবে না। জহির রায়হানের অধরা স্বপ্ন পূরণ করে যেতে পারব।
চলচ্চিত্র নির্মাণ ছাড়া অন্য কোনো পরিকল্পনা রয়েছে?
হ্যাঁ, অবশ্যই আছে। জহির রায়হানের লেখা গল্পে কয়েকটি নাটক ও টেলিফিল্ম নির্মাণ করব। তাছাড়া জহিরের জীবনী ও কর্ম নিয়ে একটি বই লেখার কাজ শুরু করব।
একই সঙ্গে আমার মা ও বোনদের নিয়ে একটি বই লিখব। পাশাপাশি মায়ের নামে গ্রামের বাড়িতে তিন বোন মিলে একটি হাসপাতাল নির্মাণের পরিকল্পনা গ্রহণ করেছিলাম। এ বছর সেই কাজটিও শুরু করতে চাই।
অবসর কাটে কীভাবে?
এই তো ভাই-বোন, ছেলেমেয়ে আর নাতি-নাতনিদের নিয়ে বেশ আনন্দ-খুশিতে প্রতিটি দিন সুন্দরভাবে কেটে যাচ্ছে। সময়-সুযোগ পেলেই আমেরিকা ও কানাডায় চলে যাই।
ওখানে ভাই ও সন্তান, নাতি-নাতনিরা থাকে। তাদের নিয়ে ঘুরে বেড়িয়ে আনন্দঘন সময় পার করি। তুষারপাত দেখতে খুব ভালো লাগে। তাই বছরের শেষ দিকে বিদেশে চলে যাই। তুষারপাত শেষ না হওয়া পর্যন্ত ওখানেই থাকি।
আর ভালো লাগে ঢাকায় নিজের বাসার জানালা দিয়ে পূর্ণিমার চাঁদ দেখতে। একা দেখি না, নাতি-নাতনিদেরও ডেকে দেখাই। কারণ ইট-কাঠের এই শহরে আকাশ দেখাই দায়। তারা চাঁদ দেখবে কী করে। চাঁদের অপরূপ জ্যোৎস্না আর তুষারপাত আমাকে হাতছানি দিয়ে কাছে ডাকে।
আমিও তাদের ডাকে সাড়া দেই।
মুক্তিযুদ্ধে অংশ নিয়েছিলেন, এ বিষয়ে চলচ্চিত্র নির্মাণের পরিকল্পনা আছে?
হ্যাঁ, স্বামী জহির রায়হানের সঙ্গে মুক্তিযুদ্ধে পরোক্ষভাবে অংশ নিয়েছিলাম। মুক্তিযোদ্ধাদের রান্না করে খাওয়াতাম, তাদের কাপড় ধুয়ে দিতাম। মানে সাধ্যমতো তাদের সহযোগিতা করতাম। বিষয়টি নিয়ে চলচ্চিত্র নির্মাণের পরিকল্পনা অবশ্যই ছিল।
কিন্তু মুক্তিযুদ্ধের হুবহু চিত্র সেলুলয়েডের ফিতায় তুলে ধরতে যে ধরনের সরকারি সহযোগিতা দরকার তা পাওয়া যায় না বলেই সে ইচ্ছা ত্যাগ করেছি। তবে সরকার যদি এক্ষেত্রে সর্বাত্দক সহযোগিতা
করে তাহলে অবশ্যই মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক চলচ্চিত্র
নির্মাণ করব।
মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি পেয়েছেন?
স্বীকৃতির কথা বাদই দিলাম, দেশ স্বাধীন হওয়ার পর মুক্তিযোদ্ধা পরিবার হিসেবে আমাকে যে বাড়ি দেওয়া হয়েছিল অল্প সময়ের মধ্যে তাও নিয়ে নিয়েছে সরকার। স্বামী জহিরকেও হারালাম। আমি তখন ছোট ছোট সন্তানদের নিয়ে নিঃস্ব হয়ে পথে এসে দাঁড়ালাম।
সরকারের পক্ষ থেকে সহযোগিতা দূরে থাক কখনো খোঁজখবর পর্যন্ত নেয়নি কেউ। এখন বলতে চাই, তাহলে কি মুক্তিযুদ্ধে অংশ নেওয়াটা আমার অপরাধ ছিল।
ঙ্ আলাউদ্দীন মাজিদ
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।