গরিব মানুষকে জন্ম থেকে মৃত্যু পর্যন্ত সুরক্ষা দেওয়ার লক্ষ্য নিয়ে সামাজিক নিরাপত্তার নতুন কৌশলপত্র তৈরি করছে সরকার। খসড়া কৌশলপত্রে যে বিষয়টির ওপর সবচেয়ে বেশি জোর দেওয়া হয়ছে, তা হলো 'লাইফ সাইকেল'। পরিকল্পনা কমিশন বলছে, ২০২১ সালে মধ্যম আয়ের দেশে উন্নীত হতে হলে 'লাইফ সাইকেল' পদক্ষেপ ছাড়া কোনো বিকল্প নেই। এই লাইফ সাইকেলের সুবিধা পাবে দেশের অতিদরিদ্র, প্রাকৃতিক দুর্যোগে ক্ষতিগ্রস্ত ও প্রতিবন্ধী মানুষেরা।
খসড়া কৌশলপত্রে সুবিধাভোগীদের জন্ম থেকে মৃত্যুর আগ পর্যন্ত মোট পাঁচটি লাইফ সাইকেল চালুর প্রস্তাব করা হয়েছে। প্রথমত. সারা দেশে শূন্য থেকে চার বছর বয়সী পর্যন্ত যেসব অতিদরিদ্র, প্রতিবন্ধী ও ক্ষতিগ্রস্ত শিশু এবং পরিবার রয়েছে, তাদের প্রতি পরিবারকে মাসে ৮০০ টাকা হারে আর্থিক সহায়তা দেওয়া হবে। দ্বিতীয়ত. পাঁচ থেকে ১৮ বছর বয়সী যারা, তাদের মাসিক ২৪০ টাকা করে দেওয়ার প্রস্তাব করা হয়েছে। তৃতীয় এবং চতুর্থ ধাপে ১৯ থেকে ৫৯ বছর বয়সী এবং ৬০ থেকে ৮৯ বছর বয়সী অতিদরিদ্র, ক্ষতিগ্রস্ত ও প্রতিবন্ধীদের ৮০০ টাকা হারে ভাতা দেওয়ার প্রস্তাব করা হয়েছে। তবে পঞ্চম ধাপে যাদের বয়স ৯০-এর ওপরে তাদের মাসে তিন হাজার টাকা হারে দেওয়ার প্রস্তাব করা হয়েছে কৌশলপত্রে। খসড়া প্রস্তাবে বলা হয়েছে, পাঁচটি লাইফ সাইকেল একসঙ্গে বাস্তবায়িত হবে না। পাঁচ বছরে তা ধাপে ধাপে বাস্তবায়িত হবে। খসড়া কৌশলপত্রে বলা হয়েছে, অতিদরিদ্রদের জন্য এখন যেসব কর্মসূচি চলছে, তাতে খাদ্যশস্য ও টাকা ছাড় করেই দায়িত্ব শেষ করে মন্ত্রণালয় ও বিভাগ। কিন্তু এই খাদ্য ও টাকা সঠিকভাবে বিতরণ হয় কি না তা মনিটরিং করা হয় না। পুরো বিষয়টি মনিটরিং করতে জিইডিকে দায়িত্ব দেওয়ার সুপারিশ করা হয়েছে। দরিদ্র ব্যক্তিকে কর্মসূচিতে অন্তর্ভুক্ত না করলে এবং ধনী কাউকে অন্তর্ভুক্ত করলে যে কেউ যাতে অভিযোগ করতে পারে, সে জন্য মন্ত্রণালয়ে আলাদা একটি বিভাগ চালুর কথা বলা হয়েছে। কেউ যাতে দুই কর্মসূচি থেকে সুবিধা না নিতে পারেন সে জন্য সিঙ্গেল রেজিস্ট্রি ম্যানেজমেন্ট ইনফরমেশন সিস্টেম চালুর পরামর্শও দেওয়া হয়েছে। পরিকল্পনা কমিশন জানায়, জাতীয় সংলাপে সামাজিক নিরাপত্তার নতুন কৌশলপত্র প্রণয়নের পাশাপাশি এই খাতে অনিয়ম, অপচয় ও দুর্নীতি রোধে বেশ কিছু সংস্কারের সুপারিশও করা হয়েছে। অতিদরিদ্রদের জন্য ভিজিএফ, টিআর, কাবিখা ও বয়স্ক ভাতাসহ যেসব প্রচলিত কর্মসূচি রয়েছে, সেগুলোর ধরন ও কৌশলে ব্যাপক পরিবর্তন আনার কথা বলা হয়েছে। খাদ্যের পরিবর্তে নগদ টাকা দেওয়ার প্রস্তাব করা হয়েছে নতুন কৌশলপত্রে। এ ছাড়া সারা দেশে চলমান ৯৯টি কর্মসূচি কমিয়ে পাঁচের নিচে নিয়ে আসার সুপারিশ করা হয়েছে। খসড়া প্রস্তাবে সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের নাম পরিবর্তন করে সমাজ উন্নয়ন মন্ত্রণালয় রাখারও প্রস্তাব করা হয়েছে। এ ছাড়া একটি নতুন জাতীয় সামাজিক নিরাপত্তা সংস্থা তৈরি এবং প্রশাসনিক নানা সংস্কারের প্রস্তাব করা হয়েছে।
পরিকল্পনা কমিশনের সদস্য (জিইডি) প্রফেসর শামসুল আলম বলেন, নতুন জাতীয় সামাজিক সুরক্ষা কৌশলপত্র (এনএসপিএস) থেকে সুফল পেতে হলে প্রশাসনিক পরিবর্তন আনতে হবে। কারণ চলমান যেসব কর্মসূচিতে খাদ্য বিতরণ করা হচ্ছে, তাতে অনেক অপচয়, অনিয়ম ও দুর্নীতির সুযোগ রয়েছে। ২০ কেজির পরিবর্তে ১২ কেজি চাল দেওয়ার অভিযোগও রয়েছে। এসব অভিযোগ থেকে পরিত্রাণ পেতে খাদ্যের পরিবর্তে টাকা হস্তান্তর করা যেতে পারে। এ ক্ষেত্রে অনলাইন ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে তা বিতরণ করা যেতে পারে। তবে দেশে হঠাৎ করে বন্যা, ঝড় হলে ক্ষতিগ্রস্ত এলাকায় খাদ্যশস্যভিত্তিক কর্মসূচির ব্যবস্থাও থাকবে বলে জানান তিনি। প্রসঙ্গত, সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচির আওতায় বর্তমানে ২৭ লাখ ২২ হাজার ৫০০ জন ৩০০ টাকা হারে বয়স্ক ভাতা, ১০ লাখ ১২ হাজার দুস্থ নারী ৩০০ টাকা হারে বিধবা ভাতা, তিন লাখ ১৪ হাজার ৬০০ জন ৩৫০ টাকা হারে প্রতিবন্ধী ভাতা, ২০ হাজার ৪৮২ জন দরিদ্র প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থীকে মাসিক চার স্তরে (প্রাথমিক স্তরে ৩০০ টাকা, মাধ্যমিক স্তরে ৪৫০ টাকা, উচ্চ মাধ্যমিক স্তরে ৬০০ টাকা ও উচ্চতর স্তরে ১০০০ টাকা) শিক্ষা উপবৃত্তি প্রদান করা হচ্ছে। এ ছাড়া ৮৫টি সরকারি শিশু পরিবারের ১৬ হাজার ৩১৫ জন নিবাসীকে মাসিক দুই হাজার টাকা হারে ভরণপোষণ ব্যয় প্রদান করা হচ্ছে। তিন হাজার ৪৩৫টি বেসরকারি এতিমখানার (নিবন্ধনকৃত) ৫৯ হাজার ৩০০ জন নিবাসীর ভরণপোষণে সহায়তায় মাসিক এক হাজার হারে ক্যাপিটেশন গ্রান্ট প্রদান করা হচ্ছে।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।