আজ ১৪ ফেব্রুয়ারি, বিশ্ব ভালোবাসা দিবস। বিশ্বব্যাপী নানান আয়োজনে দিবসটি পালন করা হয়। বাংলাদেশেও বেশ কয়েক বছর ধরে এই দিবসটি পালিত হচ্ছে। এবারও এ দিবস পালনের প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে। দিনটির মর্মকথা হলো, 'আত্দকেন্দ্রিকতা থেকে মুক্ত হয়ে অপরের জন্য নিজেকে উৎসর্গ করা। কারণ ভালোবাসা শেখায় হাসি-আনন্দ-গান ভাগাভাগি করে নিতে।' ১৪ ফেব্রুয়ারি কীভাবে বিশ্ব ভালোবাসা দিবস হিসেবে নির্ধারিত হলো এ নিয়ে ভিন্ন কিছু কাহিনী প্রচলিত আছে। এদিকে শীতের শেষে প্রকৃতি এখনো পুরোপুরি নবরূপে সাজেনি। তবে ঋতু পরিবর্তনে শীতের কনকনে ঠাণ্ডার পরিবর্তে এখন বসন্তের হালকা গরম বাতাসই ঋতুরাজের আগমনী বার্তার জানান দিচ্ছে। আমের মুকুল গাছে শোভা না পেলেও বুঝে নিতে কষ্ট হয় না বসন্ত এসেছে বাঙালির দুয়ারে। আর বসন্ত মানেই ভালোবাসার মাস। ফুলে সজ্জিত প্রাকৃতি বুঝি মানবপ্রাণেও ছড়িয়ে দেয় ভালোবাসার রং। বরাবরের মতো এবারও নগরীতে নানা আয়োজনে পালিত হয় ঋতুরাজ বসন্তের প্রথম দিন। প্রাণের উৎসবে মেতে উঠতে দিনভর নানা প্রান্ত থেকে বিভিন্ন বয়সী নর-নারী বাসন্তী সাজে হলুদ পোশাকে সজ্জিত হয়ে শাহবাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস, ধানমন্ডি ও পুরান ঢাকার বিভিন্ন আয়োজনে অংশ নেয়। এদিকে বসন্ত উৎসব শেষ হতেই নগরবাসী আজ উচ্ছ্বাস ও উদ্দীপনায় পালন করবেন বিশ্ব ভালোবাসা দিবস। নগরীর বসন্ত উৎসবে গতকাল সব বয়সী নারী-পুরুষ উৎসবের রঙে রঞ্জিত হয়ে ওঠেন। নারীরা বাসন্তী, সবুজ, ও লাল রঙের শাড়ি, হাতভর্তি কাচের চুড়ি এবং কপালে টিপ এঁকে বাঙালি সাজে নিজেকে সাজিয়ে তোলেন। এর মধ্যে বাড়তি শোভা বাড়ায় ফুলের তৈরি বিভিন্ন গহনা। সাজে ছেলেরাও কম যায়নি। সবুজ ও হালকা হলুদ রঙের পাঞ্জাবি পরিহিত তরুণদেরও দেখাচ্ছিল সজীব। অনুষ্ঠানে অভিভাবকের হাত ধরে আসা ছোট শিশুদের অনেককেই শাড়ি ও পাঞ্জাবি পরতে দেখা যায়। তাদের মুখে পহেলা ফাল্গুন লেখা উল্কিও দেখাচ্ছিল বেশ।
এদিকে ফাল্গুনের প্রথম দিনে সরেজমিন শাহবাগের ফুলের দোকানগুলো ঘুরে দেখা যায়, সব বয়সী নর-নারীর উপচে পড়া ভিড়। বিভিন্ন বয়সী নারী ও তরুণীরা ফুল দিয়ে তৈরি মাথার মুকুট ও গাঁদা ফুলের গহনা পরেছেন। অন্যদিকে প্রেয়সীর সাজে বাড়তি আকর্ষণে তার সঙ্গীও তাকে কিনে দেন ফুলেল গহনা। দোকানগুলোতে বিভিন্ন রকমের রঙিন ফুলের একেকটি মুকুট ৫০ থেকে ১০০ টাকায় বিক্রি হতে দেখা যায়। এ ছাড়া গাঁদা ফুলের গহনা ২০ থেকে ৫০ টাকায় বিক্রি হয়। শাহবাগের এক ফুল ব্যবসায়ী জানান, প্রতিবছর বসন্তে তাদের বিক্রি বেশ ভালো হয়। এ বছরও তারা ক্রেতাদের ইতিবাচক সাড়া পাচ্ছেন। তারা জানান, ভালোবাসা দিবস উপলক্ষে আজও বিপুল পরিমাণ ফুল বিক্রির টার্গেট করেছেন।
এদিকে বসন্ত উৎসব উপলক্ষে সকাল থেকেই নগরীর বিভিন্ন স্থানে নানা আয়োজন চোখে পড়ে। এর মধ্যে সকাল ৭টায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় চারুকলার বকুলতলায় 'জাতীয় বসন্ত বরণ উদযাপন' পরিষদের উদ্যোগে উদযাপিত হয় বসন্ত উৎসব। এরপর বসন্তের শোভাযাত্রা, আবির ছড়ানো ও ফুলের প্রীতিবন্ধনী এবং বিভিন্ন সাংস্কৃতিক সংগঠনের পক্ষ থেকে নাচ-গানের আয়োজন করা হয়। এ ছাড়া পুরান ঢাকার বাহাদুর শাহ পার্কে বসন্ত উৎসবের অনুষ্ঠান শুরু হয় বিকাল সাড়ে ৪টায়। এতে শিশু-কিশোরদের সাংস্কৃতিক উৎসবের পাশাপাশি আদিবাসীদের পরিবেশনা, বসন্তকথন পর্ব নৃত্যনাট্য পরিবেশন করা হয়। ধানমন্ডির রবীন্দ্রসরোবরে বিকালে আয়োজন করা হয় বসন্তবরণ অনুষ্ঠানের।
নিজস্ব প্রতিবেদক, চট্টগ্রাম জানান 'বসন্ত ছুঁয়ে যাক প্রাণ, হৃদয়। জাগরুক হোক বসন্তের ছোঁয়ায়। ফাল্গুনের গান বেজে উঠুক প্রাণে প্রাণে।' এভাবেই প্রিয়জনকে নিয়ে আপন আলোয় ভরিয়ে তুলেছেন সবাই। বসন্ত ছুঁয়েছে সবাইকে। ফাল্গুনের হলুদ রঙের অবয়ব ধারণ করেছে সর্বত্র। বসন্তের সতেজ প্রকৃতির সবুজকে হারিয়ে জয় করে নিয়েছে হলুদ। ঋতুর হলুদ রঙে সেজেছে চট্টগ্রাম। 'নিবিড় অন্তরতর বসন্ত এলো প্রাণে' স্লোগানে বসন্তবরণের অনুষ্ঠানের আয়োজন করে 'বোধন আবৃত্তি পরিষদ'। দিনব্যাপী বসন্ত উৎসবে ছিল নানা বর্ণিল আয়োজন। সকাল ৯টায় শোভাযাত্রা ও ভায়োলেনিস্ট চিটাগং নামে একটি সংগঠনের যন্ত্র সংগীতের মধ্য দিয়ে শুরু হয় বসন্ত উৎসব। কর্মসূচি চলে রাত ৯টা অবধি।
ডিসি হিলে নজরুল মঞ্চে বোধন ছাড়াও বসন্ত উৎসব আয়োজন করে অন্যান্য আবৃত্তি ও সাংস্কৃতিক সংগঠন। পাঠ চলে আবৃত্তিশিল্পীদের স্বরচিত কবিতার।
চলে বিভিন্ন সংগঠনের নৃত্য, ঢোলবাদন, বাঁশি বাজানোও। বাঙালির চিরায়ত এসব অনুষঙ্গ যারপরনাই মুগ্ধ করেছে দর্শকদের। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা ইনস্টিটিউটের শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা আয়োজন করেছেন চিত্রাঙ্কনের। উদীচী চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় সংসদের আয়োজনে ক্যাম্পাসে চলছে প্রাণবন্ত বসন্ত উৎসব। তাছাড়া 'আজি বসন্ত জাগ্রত দ্বারে' স্লোগানে উদীচীর আয়োজনে ছিল আনন্দ শোভাযাত্রা, সংগীত, নাচ, বাউলগান ও অন্ধযান ব্যান্ডের পরিবেশিত গান। পক্ষান্তরে 'বসন্তের মৌতাতে জাগে জীবনের জয়গান' স্লোগানে 'প্রমা' আবৃত্তি সংগঠন নগরীর শিল্পকলা একাডেমির মুক্তমঞ্চে আয়োজন করে উৎসবের। ছিল গান, আবৃত্তি, দলীয় নৃত্য, আদিবাসী নৃত্য, ঢোলবাদন, যন্ত্রসংগীত ও কথামালা।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।