আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

নরসিংদী সদর হাসপাতাল নিজেই রোগাক্রান্ত

১০০ শয্যার নরসিংদী সদর হাসপাতাল নিজেই এখন রোগাক্রান্ত। রোগ সংক্রমণ প্রতিরোধ দূরের কথা এখানকার পুরো পরিবেশ রোগের সংক্রমণ আরও বাড়াচ্ছে। প্রয়োজনীয় জনবল, চিকিৎসা সরঞ্জাম ও বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক না থাকায় স্থবির হয়ে পড়েছে জেলার গুরুত্বপূর্ণ এ হাসপাতালের চিকিৎসা কার্যক্রম। সরেজমিনে দেখা গেছে, সদর হাসপাতালে আসা রোগীরা প্রায় প্রতিদিন চিকিৎসা সেবা বঞ্চিত হচ্ছেন। চিকিৎকরা হাসপাতালের চেম্বারে বসেই প্রাইভেট রোগী দেখার কারণে এমন অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। এ ছাড়া ওষুধ ও সিরিঞ্জ নিয়ে বাণিজ্যের অভিযোগ পাওয়া গেছে হাসপাতালটির কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বিরুদ্ধে। হাসপাতাল ভবনের চারপাশে স্যুয়ারেজের ময়লা দুর্গন্ধময় পানি। অথচ ময়লা পানি অপসারণে উদ্যোগ নেই কর্তৃপক্ষের। হাসপাতালের ভেতরের চিত্রও একই রকম। জেলার গুরুত্বপূর্ণ এ হাসপাতালে কোনো বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক নেই। মেডিকেল অফিসারদের জটিল ও দুরারোগ্য রোগের ওপর কোনো বিশেষ প্রশিক্ষণও নেই। অনেক ক্ষেত্রে এক বিভাগের চিকিৎসক অন্য বিভাগে দায়িত্ব পালন করতে বাধ্য হচ্ছেন। হাসপাতালে আসা রোগীদের অভিযোগ, অনেক সময় ডাক্তার পাওয়া যায় না। ভর্তি হওয়া রোগীদের জন্য বরাদ্দকৃত খাবারের মানও খুব খারাপ। দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে নরসিংদী জেলার সিভিল সার্জন ডা. রশিদ আহমেদ মেডিসিন, সার্জারি ও রেডিওলজি বিভাগের চিকিৎসক সংকটের কথা স্বীকার করে বলেন, চাহিদার তুলনায় হাসপাতালে জনবল কম। সে জন্য দূর-দূরান্ত থেকে আসা রোগীরা কাঙ্ক্ষিত সেবা পেতে কিছুটা ভোগান্তি পোহাতে হয়।

জনবল ও চিকিৎসা সরঞ্জাম সংকট : চিকিৎসা সরঞ্জাম থাকলেও তা চালানোর জন্য নরসিংদী সদর হাসপাতালে সংশ্লিষ্ট বিষয়ের প্রয়োজনীয় জনবল নেই। মেডিসিন, সার্জারি ও রেডিওলোজি বিষয়ে একজন করে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের মঞ্জুরি থাকলেও তা নেই। জেলা সদরের এ হাসপাতালে নেই কোনো ইনটেনসিভ কেয়ার ইউনিট (আইসিইউ)। এই ইউনিটের জন্য কয়েকটি বিছানা এবং প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত নার্স থাকলেও নেই কোনো প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি। আইসিইউ না থাকায় অনেক জটিল রোগীকে বাঁচানো সম্ভব হচ্ছে না। এ ছাড়া হাসপাতালের পাঁচজন নার্সের শূন্যতায় চলছে চিকিৎসা কার্যক্রম। হাসপাতালে একটি মাত্র অ্যাম্বুলেন্স থাকায় জরুরি প্রয়োজনে রোগী বহন করা যায় না। বড় দুর্ঘটনা ঘটলে চরম ভোগান্তিতে পড়তে হয় আহতদের। হাসপাতালের নিচ তলার পুরুষ ওয়ার্ডে গিয়ে দেখা গেছে ভবনটির অবস্থা খুবই নাজুক। ভবনের কয়েকটি জায়গায় ফাটল দেখা দিয়েছে। এ ছাড়া দোতলার ছাদ ও পলেস্তারা খসে পড়ছে। নিচ তলায় পুরুষ ওয়ার্ডে ভর্তি হওয়া মাধবদী উপজেলার শিলমান্দী ইউনিয়নের মোসলেম উদ্দিন বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, কয়েক দিন আগে তার গায়ে পলেস্তারা খসে পড়েছিল। দ্বিতীয় তলার গাইনি ওয়ার্ডের কুলসুম বিবি ক্ষোভের সঙ্গে বলেন, হাসপাতাল থেকে ওষুধ পাওয়া যায় না। বাধ্য হয়ে বাহির থেকে কিনতে হচ্ছে। জরুরি বিভাগে চিকিৎসা নিতে আসা খোরশেদ আলম বলেন, এই হাসপাতালের প্যাথলজি বিভাগের ভারপ্রাপ্ত চিকিৎসক ডা. শরাফত উল্লাহর নির্দেশিত ডায়াগনোসিস সেন্টারে পরীক্ষা না করালে পুনরায় তিনি চিকিৎসা সেবা দিতে চান না। আউট ডোরে চিকিৎসা সেবা নিতে আসা ভেলানগরের বাসিন্দা রুস্তম আলী বলেন, সদর হাসপাতালের চিকিৎসকরা হাসপাতালের চেয়ে প্রাইভেট চেম্বারে রোগীদের ভালোভাবে দেখে থাকেন। অনেক সময় হাসপাতালে গেলে তারা বিরক্ত হন। জানতে চাইলে সদর হাসপাতালের মেডিকেল অফিসার রোজী আকতার বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, আমরা সব রোগীদের প্রতি সমানভাবে যত্নশীল। নানা কারণে মাঝে মধ্যে চিকিৎসা সেবায় কিছুটা ঘাটতি থাকতে পারে। ওষুধ ও সিরিঞ্জের বিষয়ে তিনি বলেন, স্টকে থাকা পর্যন্ত আমরা সরবরাহ করে থাকি। মর্গ ঘরের কাছে যেতেই দুর্গন্ধে নাকে রুমাল ধরতে হয়। মর্গের ডোম রতন কুমার জানান, সরবরাহ না থাকায় প্রয়োজনীয় ওষুধ মৃতদেহে ব্যবহার করতে না পারায় মর্গে আগত সবাইকে নাকে রুমাল চেপে ধরতে হয়। ভুক্তভোগীদের অভিযোগ, মর্গের ডোমকে টাকা না দিলে পোস্টমর্টেম করতে চান না।

ওষুধ ও সিরিঞ্জ বাণিজ্য : অভিযোগ রয়েছে, সদর হাসপাতালের বিনামূল্যের ওষুধ ও সিরিঞ্জ নিয়ে বাণিজ্য চলছে। একটি চক্র এই দুটি উপকরণের কৃত্রিম সংকট সৃষ্টি করে রোগীদের কাছ থেকে নগদ অর্থ হাতিয়ে নিচ্ছে। অনেকের অভিযোগ হাসপাতালের ওষুধ বাহিরে পাওয়া যায়।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.