আমাদের দেশে সরকারি ও রাষ্ট্রায়ত্ত প্রতিষ্ঠানকে লুটপাটের মৃগয়াক্ষেত্র বলে ভাবা হয়। দেশের বৃহত্তর রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংক সোনালী ব্যাংক এ ঐতিহ্যের বাইরে থাকবে এমন প্রথাবিরুদ্ধ অবস্থা কল্পনা করা সত্যিকার অর্থেই কঠিন। বেসরকারি ব্যাংকগুলো যেখানে আঙুল ফুলে কলাগাছের রূপ ধারণ করছে, সেখানে সরকারি আনুকূল্য পেয়েও সোনালী ব্যাংককে জিইয়ে রাখা হয়েছে কোরামিন দিয়ে। বলা হয়, এ ব্যাংককে ফতুর করতে সদা প্রস্তুত সরকার কর্তৃক নিয়োজিত চাপিয়ে দেওয়া ব্যক্তিরা। ব্যাংক কর্মচারীদের মহাক্ষমতাধর ইউনিয়নও এক্ষেত্রে দোসরের ভূমিকা নাকি পালন করে। এসব অভিযোগ কতটা সত্যি তা একমাত্র যথাযথ 'পোস্টমর্টেমের' মাধ্যমেই জানা যেতে পারে। লুটপাটের মৃগয়াক্ষেত্র হিসেবে সোনালী ব্যাংকের ঐতিহ্য জেনেই সম্ভবত হলমার্কসহ লুটেরা চক্র এ ব্যাংক থেকে শত শত কোটি টাকা লোপাটের সাহস পেয়েছে। ভদ্রবেশী চোরদের পাশাপাশি সুড়ঙ্গ কাটা চোররাও সক্রিয় হয়ে উঠেছে সোনালী ব্যাংককে লোপাট করতে। কয়েক মাস আগে সোনালী ব্যাংকের কিশোরগঞ্জ শাখা থেকে ১৬ কোটি ৪০ লাখ টাকা লোপাট করা হয় সুড়ঙ্গ কেটে। সে ঘটনার রেশ না কাটতেই বগুড়ার আদমদীঘিতে সুড়ঙ্গ করে সোনালী ব্যাংকের ৩২ লাখ টাকা লুট হয়েছে। লুটেরা আর চোরেরা সোনালী ব্যাংককে লোপাট করার জন্য টার্গেট করেছে এ ব্যাংকের অন্তর্নিহিত দুর্বলতাকে লক্ষ্য করে। ব্যাংক কর্মচারীদের একাংশ গ্রাহক বা সঞ্চয়কারীদের স্বার্থরক্ষার বদলে লুটেরাদের কাছে নিজেদের বিবেককে জিম্মি করায় এ ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়ে লোপাট করা নাকি সহজ ব্যাপার হয়ে দাঁড়িয়েছে। একজন কৃষক পাঁচ হাজার টাকা ঋণ নিতে গেলে তাকে নাকে দড়ি দিয়ে ঘোরানো হয়। কিন্তু শত কোটি টাকা ঋণ নেওয়া যায় ভুয়া কাগজপত্র দাখিল করে। কর্মকর্তা-কর্মচারীদের মধ্যে দায়বোধের মনোভাব না থাকায় এই ব্যাংককে লক্ষ্য করে চোর-ডাকাতরা সুড়ঙ্গ কাটা শুরু করেছে। ব্যাংকের সৎ ও নিবেদিত কর্মচারী-কর্মকর্তাদের জন্য বিড়ম্বনা ডেকে আনছে এ বিপর্যয়ের ঘটনা। আমরা মনে করি বগুড়ার আদমদীঘির চুরি বা ডাকাতির ঘটনা উদ্ঘাটন শুধু নয়, কেন বার বার সোনালী ব্যাংককে চৌর্যবৃত্তির জন্য বেছে নেওয়া হচ্ছে তারও কারণ উদ্ঘাটিত হওয়া দরকার। যেসব দুর্বলতার কারণে লুটেরারা সুযোগ পাচ্ছে তা বন্ধেরও ব্যবস্থা নিতে হবে।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।