জামায়াত-শিবিরের আধা ঘণ্টার তাণ্ডবলীলায় রাজধানীতে গাড়ি, বাজার, দোকান পুড়ে ছাই হয়েছে। ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয় রাজধানীর বেশ কয়েকটি সড়ক। জামায়াত নেতা কাদের মোল্লার ফাঁসি কার্যকরের পরদিন গতকাল মতিঝিল, ফকিরাপুল, রামপুরা, খিলগাঁও ও কমলাপুর এলাকায় একযোগে এই তাণ্ডবলীলা চালানো হয়। জুমার নামাজের পর হকিস্টিক, লাঠিসোঁটা, রড, বঁটি, রামদা নিয়ে বিভিন্ন অলিগলি থেকে প্রধান সড়কে নেমে এসে আকস্মিক হামলা চালালে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে রাজধানীজুড়ে।
কমান্ডো স্টাইলে শিবির কর্মীদের এসব হামলায় পুড়েছে গাড়ি, বাস, কাভার্ড ভ্যান, ট্রাক, অটোরিকশা ও মোটরসাইকেল। তাদের হামলা থেকে বাদ যায়নি রিকশা ও ভ্যান। ফুটপাতের পাশের ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদের দোকানগুলোতে পেট্রল ঢেলে আগুন দেওয়া হলে মুহূর্তেই তা ছাই হয়ে যায়। তারা ভাঙচুর করেছে অর্ধশতাধিক যানবাহন। বোমার বিস্ফোরণ ঘটায় মুড়ি-মুড়কির মতো।
শিবির কর্মীদের আকস্মিক বোমা হামলা থেকে রক্ষা পেতে কোনো কোনো স্থানে পিছু হটতে হয়েছে পুলিশকে। আবার কোনো কোনো এলাকা পরিণত হয়েছে রণক্ষেত্রে। পুলিশ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে নিতে টিয়ার গ্যাস ও গরম পানি ব্যবহারের পর গুলিবর্ষণ করেছে। সংঘর্ষে পুলিশসহ অন্তত ২০ জন আহত হয়েছেন। এদের মধ্যে গুলিবিদ্ধ ১২ জনকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
সম্প্রতি জামায়াত-শিবিরের এমন বড় ধরনের নাশকতা রাজধানীতে ঘটেনি বলে জানিয়েছেন আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর পদস্থ কর্মকর্তারা।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানায়, জুমার নামাজের পরপরই জামায়াত-শিবির কর্মীরা মিছিল বের করে। মতিঝিল-আরামবাগ প্রধান সড়কের পাশে এজিবি কলোনি ও আইডিয়াল স্কুল অ্যান্ড কলেজ সংলগ্ন দুই গলি থেকে বেরিয়েই তারা বোমাবাজি শুরু করে। এ সময় পাশেই অবস্থান করছিল ২০ থেকে ২৫ জন পুলিশ। মিছিলকারীরা আকস্মিকভাবে পুলিশকে ধাওয়া দিলে পুলিশ বিভিন্ন দিকে দৌড়ে আত্দরক্ষা করে। শিবির কর্মীরা প্রায় সিকি মাইল এলাকায় ব্যাপক ভাঙচুর-অগি্নসংযোগ চালায়। এ সময় সেখানে পার্কিং করে রাখা গাড়ি, ভ্যান, অটোরিকশা ও মোটরসাইকেলসহ ১২ থেকে ১৫টি যানবাহন পুড়িয়ে দেয়। রাস্তার ওপর জ্বলতে দেখা যায় বেশ কয়েকটি রিকশাও।
আইডিয়াল স্কুলের গলির হলিডে মার্কেটে শিবির কর্মীরা তাণ্ডব চালায়। তারা তছনছ করার পাশাপাশি তাতে আগুন ধরিয়ে দেয়। এরপর তারা ঢাকা সিটি করপোরেশনের আবর্জনা ব্যবস্থাপনা বিভাগের ১০ নম্বর ওয়ার্ড কার্যালয়েও আগুন দেয়। হলিডে মার্কেটের দোকানদার হারুন জানান, নামাজের পরপরই ওই দুই গলি দিয়ে জামায়াত-শিবিরের দুটি মিছিল আসে এবং 'ধর ধর' বলে চিৎকার দিয়েই ভাঙচুর-অগি্নসংযোগ চালাতে থাকে। এ সময় একের পর এক ককটেল ও পেট্রল বোমার বিস্ফোরণে পুরো এলাকায় আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। পরে পুলিশ এসে টিয়ার গ্যাস ও গুলিবর্ষণ করে।
পুলিশি নিরাপত্তার ঘেরাটোপ ভেদ করে শিবির কীভাবে নাশকতা চালাল এ প্রশ্নের উত্তরে পুলিশের মতিঝিল জোনের ডিসি আশরাফুজ্জামান বলেন, কাদের মোল্লার ফাঁসির পরিপ্রেক্ষিতে পুলিশ সর্বোচ্চ সতর্কতায় থাকায় গতকাল পর্যন্ত একটা ককটেলও বিস্ফোরণ হয়নি। কিন্তু আজ তারা একটি কাভার্ডভ্যানে করে মতিঝিলে বিপুল পরিমাণ লাঠি জড়ো করে। পরে হলিডে মার্কেটে ক্রেতা সেজে কেনাকাটা করে। নামাজ শেষে হলিডে মার্কেট থেকে শিবির প্রথমে মুহুর্মুহু ককটেল বিস্ফোরণ ঘটায় এবং লাঠি নিয়ে ভাঙচুর চালায়। এ সময় পুলিশ গুলি ছুড়লে দুজন দুষ্কৃতকারী গুলিবিদ্ধ হয় বলেও জানান তিনি। একই সময়ে কমলাপুর স্টেডিয়াম এলাকায় একটি কাভার্ডভ্যান ও যাত্রী পরিবহন বাসে আগুন দিয়েছে জামায়াত-শিবির কর্মীরা। এ সময় বেশ কয়েকটি বাস, লেগুনা ও স্থানীয় শ্রমিক লীগের একটি অফিসও ভাঙচুর করে তারা। এ ছাড়া পুলিশের পিকআপ ভ্যান লক্ষ্য করে উপর্যুপরি ককটেল বিস্ফোরণ ঘটায় শিবির কর্মীরা। খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে পুলিশ আসলে তাদের সঙ্গে শিবিরের ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটে। এ সময় টিয়ার শেল, রাবার বুলেট ছুড়ে শিবির কর্মীদের ছত্রভঙ্গ করে দেয় পুলিশ।
এদিকে মালিবাগ আবুল হোটেলের সামনে থেকে শুরু করে রামপুরা কাঁচাবাজার পর্যন্ত এলাকায় রাস্তার বিভিন্ন যানবাহনে আগুন ও দোকানপাটে ভাঙচুর করে শিবির কর্মীরা। মালিবাগে আবুল হোটেলের সামনে অনাবিল পরিবহনের একটি বাসে আগুন দেয় তারা। এ ছাড়া রামপুরা কাঁচাবাজারের সামনে হিমাচল পরিবহনের একটি যাত্রীবাহী বাসে ভাঙচুর চালিয়ে আগুন ধরিয়ে দেয় তারা। এ সময় ১৫টিরও বেশি ককটেলের বিস্ফোরণ ঘটায় শিবির ক্যাডাররা। পরবর্তীতে রাবার বুলেট ও টিয়ার শেল নিক্ষেপ করে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে পুলিশ। বর্তমানে ওই রাস্তা দিয়ে যানবাহন চলাচল বন্ধ। এ ছাড়া খিলগাঁওয়ে ৩টি গাড়িতে আগুন, ৭টি গাড়িতে ভাঙচুর ও অন্তত ২০টি ককটেল বিস্ফোরণ ঘটিয়েছে শিবির কর্মীরা।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।