রাজ্জাক
মানসম্মত চলচ্চিত্র নির্মাণের পূর্বশর্ত হচ্ছে উন্নত চিত্রনাট্য এবং অভিনয় শিল্পী। যার অভাব এখন প্রকট। সিনিয়র চিত্রনাট্যকারদের বেশির ভাগই বেঁচে নেই। তা ছাড়া এখন যারা অভিনয়ে আসছে তাদের চিন্তা ভাবনা দ্রুত অর্থ প্রতিপত্তির মালিক হওয়ার মধ্যেই সীমাবদ্ধ। অভিনয় নিয়ে তাদের কোনো মাথাব্যথা নেই। ফলে যা হওয়ার তাই হচ্ছে। তা ছাড়া নির্মাতাদের নকল প্রবণতা পরিস্থিতিকে ভয়াবহ করে তুলেছে। আমাদের দেশে সীমিত বাজেট দিয়ে বলিউড বা তামিল ছবির নকল করাও যে সম্ভব নয় তাও তারা বোঝে না। ফলে দেশীয় সংস্কৃতি সমৃদ্ধ চলচ্চিত্র নির্মাণের নিয়মের বাইরে গিয়ে এ শিল্পের বারোটা বাজিয়েছে তারা। মনে রাখতে হবে, শুধু আধুনিক প্রযুক্তি দিয়ে দর্শকদের আকৃষ্ট করা যাবে না, প্রয়োজন সত্যিকারের বাংলা চলচ্চিত্র নির্মাণ। তা ছাড়া এফডিসি ও প্রেক্ষাগৃহের আধুনিকায়ন জরুরি। দীর্ঘদিনেও এ কাজ না হওয়া সত্যিই দুঃখজনক।
আমজাদ হোসেন
আমাদের চলচ্চিত্রের দর্শক এখন কোথায়? বিশেষ করে আমার চলচ্চিত্রের কথাই যদি বলতে হয় তাহলে বলব আমার দর্শক তো প্রায় ২৫ বছর আগেই ঘরে ঢুকে গেছে। কারণ প্রেক্ষাগৃহে যাওয়ার পরিবেশ নেই, নব্বই দশকের মাঝামাঝি সময়ে হঠাৎ করে আসা অশ্লীলতার কারণে মধ্যবিত্ত এবং মহিলা দর্শকরা হল বিমুখ হয়েছে।
ভালো গল্প আর অভিনয় শিল্পীর অভাবেও এখন তারা হলে ফিরছে না। সঙ্গে রয়েছে নকল ছবির ছড়াছড়ি। ঘরে বসে এখন সহজেই বিদেশের ছবি দেখা যায়। বলতে গেলে এমন অনেক কারণেই আজ আমাদের চলচ্চিত্র গতি হারিয়েছে। এ নিয়ে এখনো চিন্তাভাবনার অবকাশ রয়েছে। শুধু প্রযুক্তির পেছনে না ছুটে কীভাবে বাংলা ছবির মৌলিকত্ব ফেরানো যায় সবাইকে তা নিয়ে ভাবতে হবে।
চাষী নজরুল ইসলাম
শুধু প্রযুক্তিগত গ্লামার দিয়ে তো দর্শক মন জয় করা যাবে না। গল্প ও অভিনয়ে জোর থাকতে হবে। যা এখন নেই। এখনকার গল্প এবং শিল্পীর মধ্যে গভীরতা নেই। দর্শকহৃদয় দোলা দেবে এমন গল্প এখন কোথায়? নির্মাতাদের মধ্যেও জ্ঞান ও গুণের অভাব রয়েছে। বোম্বে এবং তামিল ছবির নকল করতে অনেকে ব্যস্ত। কিন্তু আমাদের স্বল্প বাজেট দিয়ে তো তাদের ছবি নকলও সম্ভব নয়। দর্শক স্যাটেলাইট চ্যানেলে আসল ছবি দেখে এর তারতম্য সহজেই বুঝতে পারছে। তাই দর্শকদের বোকা ভাবা বা ধোঁকা দেওয়ার সুযোগ নেই। এখনকার নির্মাতারা প্রযুক্তির মেধা নিয়ে কথা বলে কিন্তু অভিনয়, গল্প আর চিত্র্যনাট্যের অভাব নিয়ে চিন্তা করে না। বুঝতে হবে আমাদের কৃষ্টি ও সংস্কৃতি ভিন্ন। ছবি হবে বিনোদনের জন্য। দর্শকের চাওয়া-পাওয়া এবং তাদের অনুভূতির প্রতি লক্ষ্য না রেখে শুধু নকল আর প্রযুক্তির পেছনে ছুটলে অবস্থার উন্নয়ন সম্ভব নয়।
মোরশেদুল ইসলাম
এখন ট্রাডিশনাল ছবির বাইরে যা হচ্ছে তাতে গতি আছে। বাণিজ্যিক ধারাতেও নতুন নির্মাতা আসছে এবং সফল হচ্ছে। তবে প্রেক্ষাগৃহের পরিবেশ ভালো নয় বলে সব শ্রেণীর দর্শক সেখানে যেতে পারছে না। তা ছাড়া প্রযুক্তিগত পরিবর্তনের কারণও বড় বাধা। কারণ পুরনো নির্মাতাদের কাছে ডিজিটালের বিষয়টি বোধগম্য নয়। গল্প, চিত্রনাট্য ও অভিনয় শিল্পীর অভাব নেই। তবে নির্মাণ ও প্রদর্শনে বাধা রয়েছে। প্রোপার ডিজিটাল টেকনোলজির অভাবে দর্শকের মনে বিরূপ প্রভাব পড়ছে। প্রেক্ষাগৃহকে মাল্টিপ্লেঙ্ করা না গেলে দর্শক সেখানে যাবে না। এফডিসির দুরবস্থার কারণে মেইনস্ট্রিমের নির্মাতারা বিপাকে পড়ছে। ২ বছর আগে সরকার এফডিসির উন্নয়নে প্রায় ৬০ কোটি টাকা বরাদ্দ দিয়েছে। কিন্তু সেই টাকা এখনো উন্নয়ন কাজে লাগানো যায়নি। তাছাড়া ২ বছর আগে সরকার চলচ্চিত্রকে শিল্প ঘোষণা করলেও সেই সুবিধা আদায় করা যায়নি। চলচ্চিত্রের উন্নয়নে আন্তরিকতার অভাবে আজ এদেশের চলচ্চিত্র তার গতি হারিয়েছে।
মোস্তফা সরয়ার ফারুকী
কয় বছর আগেও আমাদের চলচ্চিত্রে যে দুরবস্থা ছিল এখন তা কাটিয়ে উঠা গেছে। নতুন প্রযোজনা সংস্থা, নির্মাতা ও অভিনয় শিল্পী আসছে এবং তারা ভালো করছে। তাদের সময় দিতে হবে। রাতারাতি সব বদলে ফেলা সম্ভব নয়। ষাট-সত্তর বা আশি দশক থেকে এখন বিনোদনের মাধ্যম অনেক বেড়েছে। তাই পলিসি মেকারদের প্রয়োজন কিভাবে চলচ্চিত্রে পূর্ণমাত্রায় প্রাণসঞ্চার করা যায় সেই চিন্তা করা। প্রেক্ষাগৃহের উন্নয়ন ও চলচ্চিত্র নির্মাণসহ সব ক্ষেত্রে সরকার যদি ব্যাংক লোন দেয় তাহলে নিঃসন্দেহে অবস্থার উন্নয়ন হবে।
তবে নিজ দেশের কৃষ্টি ও সংস্কৃতির প্রতি লক্ষ্য রেখে জীবনের গল্প বলতে হবে। মানে নকল নয়, আমাদের ঢংয়ে চলচ্চিত্র নির্মাণ করতে হবে।
স্বপন আহমেদ
এখনকার নির্মাতাদের মধ্যে নকল প্রবণতা জেঁকে বসেছে। আগে ধ্যান ধারণা ছিল শিল্পমুখী। আর এখনকার দৃষ্টিভঙ্গি পুরোপুরি বাণিজ্যিক। ফলে দর্শক বড়পর্দায় জীবনের প্রতিচ্ছবি আর স্বপ্নের বাস্তবায়ন না পেয়ে হতাশ হচ্ছে। প্রযুক্তির উন্নয়ন হয়েছে কিন্তু এক বা দুই মাসের মধ্যে যেনতেনভাবে চলচ্চিত্র নির্মাণ করতে গিয়ে এর মান নষ্ট হচ্ছে। এভাবে দর্শকদের বোকা বানাতে গিয়ে চলচ্চিত্রকাররা তাদের থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ছে। এ অবস্থার উন্নতি তখনই ঘটবে যখন আমরা দর্শকদের এমন জিনিস দেব যা তারা আগে পায়নি। তা ছাড়া সেন্সর বোর্ডের উদার এবং সুস্থ নির্মাণের প্রতি নির্মাতাদের দায়িত্ববান হতে হবে। একই সঙ্গে চলচ্চিত্র নির্মাণে বিদেশে যাওয়ার ক্ষেত্রে আমলাতান্ত্রিক জটিলতা দূর করতে হবে। এই জটিলতায় বিদেশ গিয়ে ভালো ছবি নির্মাণ সম্ভব হয় না।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।