তিন পার্বত্য জেলা পরিষদ বাদে বাকি ৬১টি জেলা পরিষদে প্রশাসক নিয়োগ দেওয়া হয়েছিল গত মহাজোট সরকারের সময়ে ২০১১ সালের ডিসেম্বরে। জেলা পর্যায়ে আওয়ামী লীগের দলীয় নেতাদের এই পদে বসানো হয়েছিল। কথা ছিল এই প্রতিষ্ঠানটিতে পরবর্তী ছয় মাসের মধ্যে নির্বাচন হবে। নির্বাচিত প্রতিনিধিদের হাতে দায়িত্ব দেওয়া হবে জেলা পরিষদের। কিন্তু সেই ছয় মাস আজও শেষ হয়নি। ইতোমধ্যে দুটি জেলা পরিষদের প্রশাসক মারা গেছেন। আর সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছেন আরও দুজন। সব মিলিয়ে চারটি জেলা পরিষদ এখন প্রশাসক শূন্য। এ অবস্থায় স্থানীয় সরকার বিভাগ থেকে সার্বিক বিষয় অবহিত করে সারসংক্ষেপ পাঠানো হয়েছে প্রধানমন্ত্রীর দফতরে। তবে এখনো পর্যন্ত কোনো অগ্রগতি নেই।
জেলা পরিষদের নির্বাচন না হওয়া প্রসঙ্গে স্থানীয় সরকার বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক তোফায়েল আহমেদ বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, নীতিগতভাবে আড়াই বছরের বেশি সময় ধরে প্রশাসক দিয়ে জেলা পরিষদ চালানোর কোনো যুক্তি নেই। এটা সংবিধান ও সর্বোচ্চ আদালতের নির্দেশনা লঙ্ঘন। তিনি বলেন, এখন প্রতিবছর অনির্বাচিত একটি পরিষদের নামে বাজেট থেকে যে অর্থ বরাদ্দ হয়, রাজস্ব খাতে যে ব্যয় হয় এটা সম্পূর্ণ বেআইনি ও অস্বচ্ছ। এবারও এর ব্যতিক্রম হবে না। এ বরাদ্দের কোনো অর্থপূর্ণ ব্যবহার হচ্ছে না। এটা রাষ্ট্রীয় সম্পদের অপচয়। ২০১১ সালের ১৫ ডিসেম্বর দেশের ৬১টি জেলা পরিষদে প্রশাসক নিয়োগ দেওয়া হয়। মূলত ২০০৮ সালের নির্বাচনে দলের মনোনয়নবঞ্চিত নেতাদের জায়গা করে দিতে সরকার জেলা পরিষদ ব্যবস্থাকে সক্রিয় করে। প্রজ্ঞাপনের মাধ্যমে জেলা পরিষদের প্রশাসক নিয়োগ করা হয় জেলা পর্যায়ে আওয়ামী লীগের বঞ্চিত ও ত্যাগী নেতাদের। জেলা পরিষদ গঠনের পর প্রায় আড়াই বছর পার হয়ে গেছে। কিন্তু প্রশাসক নিয়োগ দেওয়ার পর এখনো পর্যন্ত জেলা পরিষদ নির্বাচনের কোনো উদ্যোগই দেখা যাচ্ছে না সরকারের। আদৌও নির্বাচন হবে কিনা সে সম্পর্কে নিশ্চিত করে কিছু বলতে পারছে না স্থানীয় সরকার বিভাগ। স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, প্রশাসক হিসেবে নিয়োগ পাওয়া ৬১ জনের মধ্যে দুজন মারা গেছেন। তারা হলেন রংপুর জেলা পরিষদের প্রশাসক রেজিনা বেগম ও চুয়াডাঙ্গার প্রশাসক মেজর (অব.) আলীউজ্জামান জোয়ারদার। আর ৫ জানুয়ারির নির্বাচনে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছেন জেলা পরিষদের দুই প্রশাসক। তারা হলেন সিরাজগঞ্জের প্রশাসক আ. মজিদ মণ্ডল ও লক্ষ্মীপুরের প্রশাসক এ কে এম শাহজাহান কামাল। এ চারটি পরিষদের প্রশাসক শূন্য থাকলেও আজ পর্যন্ত নতুন প্রশাসক নিয়োগ দেওয়ার কোনো উদ্যোগ নেই। স্থানীয় সরকার বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, শূন্য হওয়া চারটি পরিষদে নতুন প্রশাসক নিয়োগ দেওয়া হবে, নাকি জেলা পরিষদের নির্বাচন দেওয়া হবে- সে বিষয়ে একটি সারসংক্ষেপ গত ফেব্রুয়ারির মাঝামাঝি সময়ে প্রধানমন্ত্রীর দফতরে পাঠানো হয়েছে। তবে সেই সারসংক্ষেপের বিষয়ে এখনো পর্যন্ত কোনো মতামত পায়নি স্থানীয় সরকার বিভাগ। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক স্থানীয় সরকার বিভাগের একজন কর্মকর্তা জানান, সরকার জেলা পরিষদে নির্বাচন দেবে কি-না তা এখনো নিশ্চিত নয়। তবে জেলা পরিষদের মতো প্রতিষ্ঠানটিকে কার্যকর করতে নির্বাচিত প্রতিনিধিদের দায়িত্ব দেওয়া উচিত বলে মনে করেন ওই কর্মকর্তা।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।