প্রশাসনের প্রাণকেন্দ্র সচিবালয়ে প্রশাসনিক কাজকর্মে এখন চলছে স্থবিরতা। কর্মকর্তা-কর্মচারীরা আলোচনায় ব্যস্ত আসন্ন নির্বাচন, নির্বাচন-পরবর্তী সরকার গঠন এবং সরকারের মেয়াদকাল নিয়ে। এ কারণে অধিকাংশ মন্ত্রণালয়ে কাজকর্ম চলছে ঢিমেতালে। নির্বাচনকালীন সরকারের সম্ভাব্য অধিকাংশ মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রী নিজেদের নির্বাচনী প্রচারণায় ব্যস্ত থাকায় মন্ত্রণালয়ের স্বাভাবিক কার্যক্রমে ভাটা পড়েছে। এ ছাড়া নির্বাচনকালীন সরকারের মন্ত্রিসভায় স্থান পাওয়া জাতীয় পার্টির ছয় মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রীর অনুপস্থিতির কারণে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়গুলোয় প্রশাসনিক কর্মকাণ্ড নেই বললেই চলে।
সচিবালয়ে বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তাদের দফতর ঘুরে এবং কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, এ মুহূর্তে মন্ত্রণালয়গুলোয় কাজকর্মে বেশ ভাটা পড়েছে। দেশের চলমান রাজনৈতিক সহিংসতা ও অস্থিরতা এবং ৫ জানুয়ারির নির্বাচন নিয়েই আলাপ-আলোচনায় ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছেন আমলারা। ৫ জানুয়ারির নির্বাচনের পর সরকার গঠন এবং নতুন সরকারের মেয়াদকাল নিয়েও চলছে আলোচনা। স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের একাধিক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, নির্বাচনকালীন সরকার গঠনের পর গত কয়েক দিনে নতুন কোনো নথি তৈরি হয়নি। কাজকর্ম নেই বললেই চলে। দফতরে এসে খোশগল্প ছাড়া আর কোনো কাজ নেই। তারা বলেন, এখন কর্মকর্তা-কর্মচারীরা শুধু সময় পার করছেন। কেউ কেউ শুধু নিয়ম রক্ষার অফিস করছেন। অর্থাৎ নিজেদের ইচ্ছামাফিক অফিসে যাওয়া-আসা করছেন। এত দিন নির্বাচন নিয়ে শঙ্কার মধ্যে থাকলেও এখন সেই শঙ্কা দূর হয়েছে জানিয়ে একজন কর্মকর্তা বলেন, সরকার নির্বাচন করার ব্যাপারে বদ্ধপরিকর এটা পরিষ্কার হয়ে গেছে। এরই মধ্যে ১৫৪ জন সংসদ সদস্য বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হওয়ার পর এটা নিশ্চিত যে ৫ জানুয়ারির নির্বাচন নিয়ে আর কোনো শঙ্কা নেই। এখন দেখার বিষয় নির্বাচন-পরবর্তী নতুন সরকার কেমন হবে। মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের একাধিক কর্মকর্তা বলেন, সাংবিধানিক বাধ্যবাধকতার কারণে যেভাবেই হোক সরকার নির্বাচন করে ফেলবে। কিন্তু নির্বাচনের পর সরকারের মেয়াদ কত দিন হবে, এটাই এখন দেখার বিষয়। আর নির্বাচন-পরবর্তী সময়ে দেশের পরিস্থিতি কেমন হবে, সরকার সহিংসতা রোধে সফল হবে কি না, আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় নতুন সরকারকে কতটা সমর্থন করবে- এ নিয়েই এখন কর্মকর্তাদের মধ্যে আলোচনা হচ্ছে। তবে নাম প্রকাশ না করার শর্তে একজন প্রভাবশালী আমলা বলেন, বিরোধী দলের আপত্তির মুখে সরকার যেহেতু নির্বাচন করেই ফেলছে, তাতে একটা বিষয় পরিষ্কার যে নির্বাচনের পর সরকার কঠোরভাবেই রাজনৈতিক সহিংসতা দমন করবে তাতে কোনো সন্দেহ নেই। এই কর্মকর্তার মতে, আন্দোলনের নামে এখন যে সহিংসতা হচ্ছে আর যাই হোক সেটা মেনে নেওয়া যায় না। অন্য একজন কর্মকর্তা বলেন, কয়েক দিনের সহিংসতা গত দুই দিনে সরকারের নিয়ন্ত্রণে চলে এসেছে। এখন পরিস্থিতির উন্নতি হচ্ছে। সময় যত যাবে পরিস্থিতির ততই উন্নতি হবে বলে মনে করেন ওই কর্মকর্তা।
তবে শঙ্কা প্রকাশ করে অন্য একজন আমলা বলেন, নির্বাচনের পর নতুন সরকার যদি স্বল্পসময়ের জন্য অর্থাৎ দুই-চার মাস বা ছয় মাস সময়ের জন্য হয় তাহলে সামনে বড় বিপর্যয় অপেক্ষা করছে। এতে সরকার সমর্থক আমলাদের কাজকর্মে পুরোপুরি হতাশা দেখা দেবে। তারা অনিশ্চয়তায় ভুগবেন। তার মতে, নতুন সরকারকে অন্তত দুই বছর সময় ক্ষমতায় থেকে স্থিতিশীল এবং মধ্যবর্তী নির্বাচনের জন্য একটা সুষ্ঠু পরিবেশ তৈরি করতে হবে। তাহলে সব মহলেই স্বস্তি আসবে। না হলে খুবই বিপদ হতে পারে বলে আশঙ্কা এই কর্মকর্তার। ২৪ জানুয়ারি সরকারের মেয়াদ শেষ হচ্ছে। এই সময়ের মধ্যে নির্বাচন অনুষ্ঠানের সাংবিধানিক বাধ্যবাধকতা রয়েছে। এর কারণে ৫ জানুয়ারি নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে, যাতে অংশ নিচ্ছে না প্রধান বিরোধী দল বিএনপি ও তার নেতৃত্বাধীন জোট। নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবিতে আন্দোলনরত বিএনপি জোট বর্তমান নির্বাচনকালীন সরকারের বিরোধিতা করে আসছে শুরু থেকে। এর সঙ্গে যুক্ত হয়েছে জামায়াত-শিবিরের সহিংসতা। একাত্তরের মানবতাবিরোধী অপরাধে জামায়াত নেতা কাদের মোল্লার ফাঁসির পর থেকেই দেশের কয়েকটি জেলায় বেপরোয়া সহিংসতা চালাচ্ছে জামায়াত-শিবির। এ অবস্থায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন নির্বাচনকালীন সরকার ৫ জানুয়ারি নির্বাচন অনুষ্ঠানের দিকে এগোচ্ছে।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।