রাতের বেলা ফেসবুকে বসে ছিলো শুভ। হোমপেইজ স্ক্রল করে করে নীচে নামছিলো। এমন সময় থমকে যায় একটি পোস্ট দেখে। তার লিস্টের একজন পোস্টটা শেয়ার করেছিলো সেই সুত্রে দেখা গেলো। জরুরী ভিত্তিতে এক রোগীর জন্য এবি নেগেটিভ রক্ত লাগবে।
শুভর রক্ত এবি নেগেটিভ। এবি নেগেটিভ প্রায় দুষ্প্রাপ্য। এদিকে রক্ত না পেলে রোগী মারাও যেতে পারে। সে কখনো রক্তদান করেনি। কিন্তু এই পোস্ট দেখে কেনো যেনো রক্ত দান করতে ইচ্ছে হলো।
রোগীর ব্রেইনস্ট্রোক হয়েছে। অপারেশন হবে। তাই রক্ত দরকার।
পরদিন সকাল বারোটার মধ্যে রক্ত দরকার।
শুভ সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেললো সে রক্ত দিবে।
পোস্টে থাকা নাম্বার নিয়ে সে কল দিয়ে সব কনফার্ম করলো।
পরদিন সকালে শুভ রক্ত দিতে গেলো ।
প্রথমবার রক্ত দিচ্ছে শুভ তাই কিছুটা ভয় ভয় লাগছে।
শুভ সাথে করে একজন বন্ধু নিয়ে এসেছিলো যাতে অস্বস্তি না লাগে।
যে লোক রক্ত নিবে সে শুভর অবস্থা বুঝতে পারলো।
সে শুভকে জিজ্ঞেস করলো, এটা কি তোমার প্রথম রক্তদান?
শুভ হ্যাঁ সূচক জবাব দিলো।
লোকটি বলতে শুরু করলো,”একজন মানুষের সারা জীবনের সব থেকে গর্ব করার বিষয় হচ্ছে কারও জীবন বাচানো। হয়তবা ছোটকাল থেকেই শুনে থাকবে তোমার দাদা,নানা কিংবা চাচা তোমাদের যখন গল্প শুনাতো তখন সেই গল্পে একটি অংশ থাকতো কিভাবে আরেকজনকে বাচিয়েছিলো বা তাকে কে বাচিয়েছিলো। কিছু কিছু মানুষ সারা জীবনেও একজন মানুষকে বাচানোর মত কিছু করতে পারে না। কিন্তু বর্তমান যুগে পরিস্থিতি বদলে গেছে।
তুমি ইচ্ছে করলেই একজন মানুষকে বাচানোর মত মহৎ কাজ করতে পারবে । তাও একবার না প্রতি বছর মিনিমাম তিন জন মানুষকে তুমি বাচাতে পারবে । আর এর জন্য তোমাকে করতে হবে রক্তদান । এতে যে শুধু একজন মানুষের জীবনই বাচবে তা নয়। তোমারও অনেক লাভ হবে”।
তন্ময় হয়ে কথা গিলছিলো শুভ। সে বললো, কীভাবে আমার লাভ হবে?
লোকটি বললো, রক্তদানের সময় সবসময় ডোনারের হেপাটাইটিস-বি, হেপাটাইটিস-সি, সিফিলিস, এইচআইভি ইত্যাদি পরীহ্মা করা হয়। যা একেবারে বিনামুল্যে। নিয়মিত রক্ত দিলে হৃদরোগ ও হার্ট অ্যাটাকের মত রোগের ঝুকি কমে যায়। ধর্মীয় দিক দিয়ে রক্তদান অত্যান্ত সওয়াবের কাজ।
তাছাড়া রক্ত দান করলে তুমি পাবে মানসিক প্রশান্তি। রক্তদান করলে তোমার যে রোগগুলো পরীহ্মা করা হবে তা তুমি বিনামুল্যে পেয়ে যাচ্ছ। অথচ এগুলো অন্য কোনোভাবে করতে গেলে অনেক অর্থের প্রয়োজন হতো।
শুভ অবাক হয়ে গেলো মানুষটার কথা শুনে। এতো উপকারিতা রক্তদানের।
অথচ সে জানতই না। আগে থেকে কেনো রক্তদান করলো না এজন্য সে আফসোস করতে লাগলো। লোকটি বললো, চলো আগে তোমার রক্ত পরীহ্মা করে নেই।
সুন্দর মতই রক্ত দান শেষ হলো। শুভ ভেবেছিলো অনেক সময় লাগবে কিন্তু মাত্র দশ মিনিটেই রক্তদান কর্মসূচী শেষ হয়ে গেলো।
বেডে থাকা অবস্থায় রোগীর বাবা এক বোতল জুস এনে দিলো শুভকে। শুভ মনে মনে বলে,”যে লোক রক্ত নিলো সে এই সুবিধার কথা বলেনি। ”
জুস খেয়ে শুভ বললো, যাকে রক্ত দিলাম তাকে একবার দেখতে চাই।
রোগীর বাবা শুভকে রোগীর রুমে নিয়ে গেলো।
শুভ দেখলো একটি মেয়ে ।
বয়স ১৯/২০ হবে। প্রায় অজ্ঞান অবস্থায় পড়ে আছে। এই মেয়েটির ব্রেইন স্ট্রোক করেছে।
জানা গেলো রোগীর নাম, “লিটা”। মেয়েটি তো খুব লাবন্যময়ী ।
শুভ রোগীর বাবার নাম্বার নিয়ে আসলো রোগীর অবস্থা জানবার জন্য। দু তিনদিন পর শুভ ফোন করে জানতে পারলো রোগীর অপারেশন সাকসেসফুল হয়েছে, এবং রোগী নিরাপদ।
শুভ স্বস্থির নিঃশ্বাস ফেললো।
শুভ ঘুমাতে পারছে না। কেনো যেনো বারবার লিটার কথা মনে পড়ছে তার।
কেমন আছে, কি করছে কত প্রশ্ন যে তার মাথায় আসছে বলার বাহিরে।
শুভ্র খুব ইচ্ছা হচ্ছে লিটাকে দেখতে। কিন্ত কোনোদিন দেখা হবে কিনা তাও সে জানেনা।
প্রায় ৩০/৩৫ দিন পর শুভর নাম্বারে ফোন আসলো। স্ক্রিনে দেখলো লিটার বাবার নাম্বার।
শুভ ভয় পেয়ে গেলো লিটার কিছু হলো নাতো আবার।
মোবাইলটা কানে ধরে মিস্টি একটা মেয়েলী কন্ঠ শুনলো ।
সেই কন্ঠটা বলতে শুরু করলো,”আমি লিটা। আপনি আমাকে রক্ত দিয়ে আমার জীবন বাচিয়েছিলেন। কিন্তু আমি তখন অচেতন অবস্থায় ছিলাম তাই আপনার সাথে কথা বলতে পারিনি।
আগামী শুক্রবার দুপুরে যদি আমাদের বাসায় এসে আমাদের সাথে লাঞ্চ করেন তবে খুবই খুশি হতাম ”।
কথাগুলো শুনে শুভ প্রায় লাফিয়ে উঠলো। সেতো মনে মনে এটাই চাইছিলো।
কোনরকমে বললো,”জ্বী আমি এসে যাবো। আপনার বাসার ঠিকানাটা……”।
পরের শুক্রবার দুপুর দুটো।
বনশ্রীর এক বাড়ীর তিন তলার বাম পাশের ফ্ল্যাটের ডাইনিং রুমে খাওয়া দাওয়ার পাশাপাশি জমে উঠেছে আড্ডা । লিটার বাবা,মা,লিটা এবং শুভ।
হাসি ঠাট্টার মধ্যে এগিয়ে চলছে তাদের আড্ডা।
লিটার বাবা, মা খুবই মজার মানুষ।
লিটাও খুব প্রাণবন্ত। ব্রেইন স্ট্রোকের শোক সে প্রায় ভুলে উঠেছে। খাওয়া শেষে শুভকে লিটা বললো বিকেল পর্যন্ত থাকতে।
বিকেল সাড়ে চারটা
লিটাদের বাসার ছাদে দাঁড়িয়ে আছে লিটা ও শুভ। রোদ এখনও কিছুটা আছে ।
তবে তা তেমন তেজী নয়। সূর্য কিছুহ্মনের মধ্যে অস্ত যাবে। হালকা বাতাস বইছে। এক ঝাঁক পাখি উড়ে গেলো।
লিটা ও শুভ কথা বলা শুরু করলো।
তারা যে এতো কথা বলতে পারে তারা নিজেরাও সম্ভবত জানতো না। শেষই হতে চাচ্ছে না তাদের বাক্যবিনিময়। বাক্যবিনিময়ের পাশাপাশি তাদের মোবাইল নম্বর বিনিময়ও হলো।
শুভর খুব ইচ্ছে হচ্ছিলো লিটার হাতটা ধরতে। কেনো যেনো সাহস করে উঠতে পারছিলো না।
রেলিংয়ে হাত রেখে দাঁড়িয়ে ছিলো শুভ।
একটু পর সে অনুভব করলো তার হাতের উপর নরম একটি হাত। শুভ আলতো করে সেই হাতটি নিজের হাতের মুঠোতে নিলো।
২৫ বছর পর
শুভ পাগলপ্রায় হয়ে গেছে। তাদের একমাত্র মেয়ে তৃষা।
তার এপেন্ডিসাইটের অপারেশন আগামীকাল । ডক্টর এক ব্যাগ রক্ত যোগার করে রাখতে বলেছে। লাগতেও পারে। তৃষার রক্তের গ্রুপ ও পজেটিভ কোথাও পাচ্ছে না।
অবশেষে একটি ফোন আসলো ।
এক ছেলে আগামীকাল রক্ত দিতে আসবে। ফেসবুক থেকে নাকি তাদের রক্তের প্রয়োজন জেনেছে। শুভ জানিয়ে দিল কাল সকাল দশটার মধ্যে আসতে।
নয়টা পঞ্চান্ন মিনিটে আসলো ছেলেটি। ছেলেটির নাম তূর্য।
শুভ দেখলো ছেলেটি নার্ভাস । জিজ্ঞেস করে জানতে পারলো আজই প্রথম রক্তদান ছেলেটির।
শুভ বলতে শুরু করলো, একজন মানুষের সারা জীবনের সব থেকে গর্ব করার বিষয় হচ্ছে কারও জীবন বাচানো। হয়তবা ছোটকাল থেকেই শুনে থাকবে তোমার দাদা,নানা কিংবা চাচা তোমাদের যখন গল্প শুনাতো তখন সেই গল্পে একটি অংশ থাকতো কিভাবে আরেকজনকে বাচিয়েছিলো বা তাকে কে বাচিয়েছিলো। কিছু কিছু মানুষ সারা জীবনেও…………………………………………………………………..
উৎসর্গঃ অনলাইন জগতে রক্তের জন্য বিপ্লব করা আমার অতি প্রিয় দুই ভাই বোন শুভ ভাই এবং লিটা আপুকে ।
আপনারা হাজার বছর বেচে থাকুন । থাকুন সাধারন মানুষের রক্ত ভাইয়া বা রক্ত বোন হয়ে ।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।