উপজেলা নির্বাচনের প্রবর্তক সাবেক রাষ্ট্রপতি হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের নেতৃত্বাধীন জাতীয় পার্টির চলমান উপজেলা নির্বাচনের তৃতীয় ধাপেও চরম বিপর্যয় হয়েছে। প্রথম দুই ধাপে একজন করে উপজেলা চেয়ারম্যান বিজয়ী হলেও তৃতীয় ধাপের ফলাফল শূন্য। প্রথম ধাপে মাত্র ১১ জন প্রার্থীকে কেন্দ্র থেকে সমর্থন দিতে সক্ষম হলেও দ্বিতীয় ও তৃতীয় দফায় কোনো প্রার্থীকে সমর্থনও দিতে পারেনি জাতীয় সংসদে প্রধান বিরোধী দলে থাকা এ দলটি। আর ভরাডুবির জন্য পার্টির চেয়ারম্যান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ এবং সংসদের প্রধান বিরোধীদলীয় নেতা রওশন এরশাদের দ্বন্দ্বকেই দায়ী করছেন নেতা-কর্মীরা। এ প্রসঙ্গে জাতীয় পার্টির নির্বাচন পরিচালনা কমিটির প্রধান ও দলটির প্রেসিডিয়াম সদস্য মাসুদ পারভেজ সোহেল রানা বলেন, তৃতীয় ধাপের উপজেলা নির্বাচন উপলক্ষে কেন্দ্র থেকে তৃণমূলে নেতা-কর্মীদের কোনো নির্দেশনা দেওয়া হয়নি।
কেন্দ্রের ধোঁয়াশা না কাটায় তৃণমূলে ফলাফল খারাপ করছে, এটাই মানতে হবে। উপজেলা নির্বাচন অরাজনৈতিক হলেও প্রথম দুই ধাপে জাতীয় পার্টির বিপর্যয় ঘটেছে, এটা অস্বীকার করার উপায় নেই। কেন্দ্র থেকে আমরা মেসেজ দিতে না পারার কারণে এ অবস্থা হয়েছে। জানা যায়, চলমান উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে প্রথম দুই ধাপে চরম বিপর্যয় ঘটলেও ১৫ মার্চের তৃতীয় ধাপেও বিপদ কাটাতে কোনো উদ্যোগ ছিল না দলটির। উপজেলা পরিষদের প্রবর্তক জাতীয় পার্টি দুই দফায় ২১১টি উপজেলায় নির্বাচনে তাদের মাত্র দুজন চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়েছেন।
আর তৃতীয় দফায় ৮১টি উপজেলার নির্বাচনেও চরম ভরাডুবি হয়েছে প্রধান বিরোধী দল জাতীয় পার্টির। নেতা-কর্মীরা জানান, উপজেলা নির্বাচন নিয়ে সামনের দিনগুলোতে কোনো প্রস্তুতিই নেই জাতীয় পার্টির। কেন্দ্র থেকে কাউকে সমর্থন দেওয়া হয়নি। কোনো কোনো উপজেলায় দলের একাধিক প্রার্থী। আবার কোনো উপজেলায় দলের প্রার্থীই নেই।
এসব ক্ষেত্রে নেই কেন্দ্রের কোনো তদারকি। খোঁজ নিয়ে জানা যায়, উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে জাতীয় পার্টির হ-য-ব-র-ল অবস্থা বিরাজ করছে। কেন্দ্রের সমন্বয়ের অভাবের কারণেই প্রধান বিরোধী দল জাতীয় পার্টি উপজেলায় ভালো করতে পারছে না। ফলে তৃণমূলে জাতীয় পার্টির সাংগঠনিক অবস্থা তছনছ হয়ে যাচ্ছে।
নেতা-কর্মীদের অভিযোগ, উপজেলা নির্বাচনে আওয়ামী লীগ, বিএনপি, জামায়াত তাদের দলীয় প্রার্থীদের সমর্থন দিয়ে দলের অবস্থান শক্ত করে নিচ্ছে আর জাতীয় পার্টি ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে।
আর এ জন্য পার্টির চেয়ারম্যান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ এবং সংসদের প্রধান বিরোধীদলীয় নেতা পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্য রওশন এরশাদের দ্বন্দ্বকেই দায়ী করছেন। নেতা-কর্মীরা বলছেন, তারা দুজন এক হতে না পারার কারণে কেন্দ্র থেকে প্রার্থীর সমর্থন দেওয়া সম্ভব হয়নি। এ প্রসঙ্গে মাসুদ পারভেজ সোহেল রানা বলেছেন, এরশাদ ও রওশনের টানাপোড়েনের কারণেই মূলত দলটির তৃণমূল পর্যায়ে এ অবস্থা। এরশাদ বা রওশন কেউই তাকে উপজেলা নির্বাচন নিয়ে কোনো নির্দেশনা দেননি। নেতা-কর্মীরা বলেন, সামগ্রিকভাবে জাতীয় পার্টির পরাজয়ের কারণ নেতৃত্বের বিরোধ, সংশয়, প্রার্থী দিতে না পারা।
আর জাতীয় সংসদে রওশন এরশাদ ও হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের মধ্যে নেতৃত্বের বিরোধ জিইয়ে রেখেছেন পার্টির কয়েকজন নেতা। তারা চান, পার্টিতে রওশনের কর্তৃত্ব। তবে তৃণমূলের নেতা-কর্মীরা চান এরশাদকে। নেতৃত্বের এই দ্বন্দ্ব নেতা-কর্মীদের মাঝে ক্ষোভ ও হতাশার সৃষ্টি করছে, প্রভাব পড়েছে দলে। ভোটের রাজনীতিতে তাই পিছিয়ে পড়েছে জাতীয় পার্টি।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।