স্বাধীনতা, সে তো আমার প্রিয় মানুষের এক সাগর রক্তের বিনিময়ে কেনা
মিশরে নতুন সংবিধানের জন্য গণভোট অনুষ্ঠিত হয়ে গেল। সরকারীভাবে ইতিমধ্যেই ফলাফল প্রকাশ করা হয়েছে। এতে দেখা যাচ্ছে- শতকরা ৬৩.৮ ভাগ হ্যাঁ ভোট পড়েছে আর শতকরা ৩৬.২ ভাগ পড়েছে নতুন সংবিধানের বিপক্ষে। মিশরের সরকার-বিরোধীরা গণভোটের ফলাফল মেনে নিতে অস্বীকার করেছে। তারা বলেছে, এ ফলাফলকে তারা আদালতে চ্যালেঞ্জ করবে।
ফলাফল যাইহোক আমার কাছে সেটা মুখ্য নয় মূখ্য হল গণতন্ত্র। মিশরের গণভোট নিয়ে যা ঘটে গেল এবং যা ঘটতেছে বা যা ঘটবে তাতে গণতন্ত্রের ফেরিওয়ালাদের গণতন্ত্রদাবীনামার মুখোশটা সজোরেই খুলে দিয়েছে। বিগত কয়েকদিন ধরে মিশরের গণভোট সারাবিশ্বের সংবাদ মাধ্যমসহ, ব্লগ, ফেসবুকে আলোচনা সমালোচনার অন্যতম বিষয়বস্তু ছিল বা আছে।
মিশরবাসীও এই প্রস্তাবিত সংবিধানের পক্ষে ও বিপক্ষ নামে দুইভাগ হয়ে পড়েছে। সমাজের সেক্যুলার শ্রেণীর দাবি প্রস্তাবিত সংবিধান সংখ্যালঘু ও নরীদের সমান অধিকার সুনিশ্চিৎ করতে ব্যর্থ হয়েছে।
যদি তা সত্যিই করে থাকে তা অবশ্যই নিন্দনীয় এবং বর্জনীয় । এতে কোন দ্বিমত থাকার কথা না কিন্তু আমি কোন সোর্স থেকে পাইলাম না সেই প্রস্তাবিত সংবিধানের কোন আইনটি নারী ও সংখ্যালঘুদের অধিকার হরন করে। কারো জানা থাকলে অবশ্যই জানানোর অনুরোধ থাকলো।
আমি যেটুকু পেলাম আর্টিকেল ২ ইসলাম রাস্ট্রধর্ম, প্রিন্সিপাল অফ ইসলামিক শরীয় হল আইনের অন্যতম উৎস কিন্তু কোন কোন আইন এখানে উল্লেখ করা আছে তা জানা দরকার। শুধু শরীয়া আইনের উৎস বললেই তো এখানে শেষ হয় না ।
আর্টিকেল ৪ এ আল আজহার বিশ্বদ্যিালয়কে স্বায়ত্বশাসন দেওয়া হয়েছে।
এখন আসি শরীআ আইনের কথায়। আমি যতটুকু জানি শরীয়া আইনে সবচেয়ে বাজে আইন হল ব্যভিচারের দায়ে পাথরছুড়ে হত্যা আর হিজাব সবার জন্য বাধ্যতামুলক করা। আমার জ্ঞাতনুসারে এই দুইটির একটিও প্রস্তাবিত সংবিধানে নেই আর শরীয়া আইনে সংখ্যালঘুদের বিচার করা কোন ইসলামিক আইনের মধ্যে পড়ে না ।
ইসলাম রাস্ট্রধর্ম এটা আমাদের দেশেও আছে পছন্দ করি আর না করি কিন্তু সবচেয়ে বড় কথা হল প্রস্তাবিত সংবিধানটি গণভোটের মাধ্যমে অনুমোদিত বা অনুমোদিত হবে না কিন্তু আমাদের দেশে তো গণভোট ছাড়াই সংবিধানে ইসলামকে রাস্ট্রধর্ম যুক্ত করা হয়েছে যা আপনি আমি পছন্দ না করলেও আমাদের করার কিছু ছিল না বা নেই কিন্তু মিশরীয়দের তো সবচেয়ে বড় সুযোগ আছে ”না “ ভোট দেওয়ার অধিকার ।
তাহলে কেন তারা ”না” ভোট প্রয়োগ করে প্রস্তাবিত সংবিধান বাতিল না করে রাস্তায় নামল ? এতে কাদের স্বার্থ আছে ? এভাবে রাস্তায় আন্দোলন হতে থাকলে নিশ্চয় তা মিশরীদের স্বার্থ রক্ষা করবে না ।
গণভোটের মাধ্যমে সংবিধান অনুমোদন এর চেয়ে উত্তম কোন পদ্ধতি আছে কি ? আমার জানা নেই । তৃতীয় বিশ্বের দেশগুলিতে এ পর্যন্ত কয়টি সংবিধান ও কোন সংশোধনী গণভোটের মাধ্যমে বৈধ করা হয়েছে ? গুটি কয়েক ব্যক্তির মতামতের ভিত্তিতে যদি সংবিধান অনুমোদন হয়ে থাকে তাহলে সেটাকে গণতন্ত্র বলে না, বলে পরোক্ষ স্বৈরতন্ত্র। গণভোটই হল তথাকথিত কুশীলবদের বড় ভয়।
তাছাড়া প্রস্তাবিত সংবিধানের জন্য যে গণভোট সেখানে তো হ্যাঁ আর না দুইটা অপশন আছে ।
যদি কেউ প্রস্তাবিত সংবিধানকে উপযোগী মনে না করেন তাহলে না ভোট দিয়ে আসুন । সংখ্যাগরিষ্ঠের মতামতই তো গণতন্ত্র । না ভোট জয়যুক্ত হলে প্রস্তাবিত সংবিধান বাতিল হবে এ তো ধ্রুব সত্য আর হ্যাঁ জয়যুক্ত হলে মেনে নিতে সমস্যা কোথায় যদি আপনি গণতন্ত্রে বিশ্বাসী হন ?
না, আমি কোন শরীয়া বা ইসলামিক আইনের পক্ষে কথা বলতেছি না বা বিপক্ষেও বলতেছি না যদি সেটা মিশরীয়রা পছন্দ করে । শরীয়া আইনের ক্ষেত্রে আমার নিজের বেলায় যেমন না ভোট দিতাম তেমনি হ্যাঁ জয়যুক্ত হলে সেটাও মেনে নিতাম কারন আমি গণতন্ত্রে বিশ্বাসী। আমার পছন্দের প্রার্থী জয়ী না হলে সেই ফলাফল আমি মানব না তা গণতন্ত্র হতে পারে না।
সমস্যাটা অন্য জায়গায় এবং সেটা মিশরেও ততোধিক নয় । সমস্যাটা হল যুক্তরাস্ট্রের, ইসরায়েলের, সমস্যাটা হল পশ্চিমাদের এবং সমস্যাটা হল দেশের সেই কুশীলবদের যারা পশ্চিমাদের চাটুকারী করে জীবীকা নির্বাহ করে। যারা মোবারক আমলের প্রধান সুবিধাভোগী। আর কয়েকদিনের মধ্যে জানতে পারবেন মিশরে প্রস্তাবিত সংবিধান বিরোধী আন্দোলনের জন্য কত বিলিয়ন ডলার ব্যয় করা হয়েছে। পশ্চিমাদের সেবাদাস এক মোবারক গেছে তাইতো মিশরে এখন আর একজন সেবাদাসের দরকার হয়েছে না হলে যে পশ্চিমাদের প্রিয় জারজ সন্তান ইসরায়েলের অস্তিত্ব সংকট।
ইসরায়েলের প্রতিবেশী মিশর, সিরিয়ারমত দেশেগুলি যতদিন অস্থিতীশীল থাকবে ততদিনতো ইসরায়েলেরই লাভ আর পশ্চিমাদের লাভ তেলসমৃদ্ধদেশগুলিকে নিয়ন্ত্রন করা আর লুটপাট করা। বলা হয়ে থাকে মোবারকের পতন ইসরায়েলের জন্য ভূকম্পন।
আসলে মিশরে যা চলছে তা ক্ষমতার লড়াই কিন্তু জনমতকে উপেক্ষা করে যদি সেই লড়াই হয়ে থাকে তাহলে এর পরিণতি যে কখনোই যে শুভ হয় না তা তো বলার অপেক্ষা রাখে না। তাহলে শেষ পর্যন্ত কি বিপ্লব তথা মোবারক উৎখাতের ফলাফল ভোগ করবে পশ্চিমারা ও ইসরায়েল ?
অবশ্য প্রেসিডেন্ট মুরসিরও বিচক্ষনতার পরিচয় দিতে পারেননি। তিনি আগে ভাগেই তার ক্ষমতা বাড়াতে ডিক্রী জারী করে একটা মহাগ্যামজ্যাম বাধিয়ে দিয়েছিলেন যা ডিক্রী বাতিল করেও তার মাশুল দিতে পারেননি এবং এর মাশুল তাকে আরো দিতে হবে।
হয়তো সেদিকেই এগুচ্ছে মিশর। স্যালভেশন পার্টির নেতা তো ইতিমধ্যেই ঘোষনা দিয়েছেন যে ব্যাটল কেবল শুরু । এরপর তারা এখন ফলাফল নিয়ে যাবে কোর্টে । আর কোর্ট তো মোবারক পন্থিরাই নিয়ন্ত্রন করে । এই কোর্টেই কয়েকমাস আগে নির্বাচিত সংসদকে অবৈধ ঘোষনা করেছে।
যদি আবার তাই হয় তাহলে মিশর কোন দিকে যাবে বলা মুশকিল।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।