এবার দক্ষিণ ভারত মহাসাগরে নিখোঁজ মালয়েশীয় উড়োজাহাজের 'ধ্বংসাবশেষের চিহ্ন' পাওয়ার দাবি করেছে চীন। দেশটির পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে- তাদের উপগ্রহে (স্যাটেলাইট) নতুন করে ধরা পড়া চিত্র নিখোঁজ উড়োজাহাজের 'ধ্বংসাবশেষ'-এর কি না তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে। চীন সরকারের এ দাবির কথা গতকাল বিকালে জানিয়েছেন মালয়েশিয়ার ভারপ্রাপ্ত পরিবহনমন্ত্রী হিশামুদ্দিন হুসেইন। নিয়মিত ব্রিফিংকালে হিশামুদ্দিন হুসেইন বলেন, দক্ষিণ ভারত মহাসাগরের তল্লাশি এলাকায় (মালাক্কা প্রণালি ও সংলগ্ন এলাকা থেকে থাইল্যান্ড উপসাগর ও তৎসংলগ্ন এলাকা পর্যন্ত) চীনা উপগ্রহে ধরা পড়া সম্ভাব্য ধ্বংসাবশেষের বস্তুটির আকার দৈর্ঘ্যে ২২ দশমিক ৫ মিটার ও প্রস্থে ১৩ মিটার। এ ছাড়া গতকালই এ সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য মালয়েশিয়া সরকারকে জানাবে বলে ঘোষণা দেয় চীন। চীন যে এলাকায় ধ্বংসাবশেষের চিহ্নটি আবিষ্কার করেছে তা অস্ট্রেলিয়ার ধ্বংসাবশেষ পাওয়া এলাকা থেকে ১২০ কিলোমিটার দূরে। অস্ট্রেলিয়া বৃহস্পতিবার ঘোষণা দেয় তারা পার্থ শহর থেকে আড়াই হাজার কিলোমিটার দক্ষিণে ভারত মহাসাগরে একটি ধ্বংসাবশেষের দেখা পেয়েছে, যা নিখোঁজ বিমানের অংশ হতে পারে। তবে এ দাবির তিন দিন পেরোলেও এ সম্পর্কে শক্ত কোনো প্রমাণ গতকালও নিশ্চিত করতে পারেনি অস্ট্রেলিয়া। এ অভিযানের মধ্যে গতকাল চীন ধ্বংসাবশেষ পাওয়ার এ ঘোষণা দিল। ৮ মার্চ ২৩৯ জন আরোহী নিয়ে কুয়ালালামপুর থেকে বেইজিংয়ে যাওয়ার পথে রহস্যজনকভাবে নিখোঁজ হয় মালয়েশিয়া এয়ারলাইনসের ফ্লাইট এমএইচ ৩৭০। উড্ডয়নের ঘণ্টাখানেকের মধ্যে উধাও হওয়া বিমানের সন্ধান গতকাল পর্যন্ত মেলেনি। ২৬ দেশের সন্ধান অভিযান গড়িয়েছে তিন সপ্তাহে, দিন যত যাচ্ছে হতাশা তত বাড়ছে। বিমানটি নিখোঁজ হওয়ার পর থেকে এটির সর্বশেষ অবস্থার নানা তথ্য প্রকাশ হচ্ছে। তবে নিশ্চিত কোনো তথ্য এখনো জানা যায়নি। প্রথমে দক্ষিণ চীন সাগরের ভিয়েতনাম উপকূলে ২৩৯ আরোহীবাহী এমএইচ ৩৭০ ফ্লাইটি বিধ্বস্তের খবর পাওয়া গেলেও এর কোনো প্রমাণ মেলেনি। তারপর দক্ষিণ চীন সাগরে উপগ্রহ চিত্রে সম্ভাব্য ধ্বংসাবশেষের বস্তু শনাক্ত করা গেছে বলে দাবি করে চীন। এ দাবির পক্ষেও সত্যতা উপস্থাপন করা যায়নি। বিস্তৃত পরিসরে অনুসন্ধান শুরু করেছে অস্ট্রেলিয়া : মালয়েশিয়ার নিখোঁজ বিমানের সম্ভাব্য ধ্বংসাবশেষ খুঁজে পেতে ভারত মহাসাগরে অনুসন্ধান এলাকার সীমানা গতকাল আরও বাড়ানো হয়েছে। অনুসন্ধানে নিয়োজিত বিমানের সংখ্যাও বাড়ছে। আবহাওয়া অনুকূলে রয়েছে।
বার্তা সংস্থা এএফপির প্রতিবেদনে জানানো হয়- অস্ট্রেলিয়ার পশ্চিম উপকূলীয় শহর পার্থ থেকে আড়াই হাজার কিলোমিটার দক্ষিণ-পশ্চিমে দক্ষিণ ভারত মহাসাগরে ২৩ হাজার বর্গকিলোমিটার এলাকায় গতকাল পাঁচটি বিমান তন্নতন্ন করে তল্লাশি চালায়। বিরূপ আবহাওয়ার কারণে ওই অনুসন্ধান অভিযান ব্যাহত হয়। নিখোঁজ বিমানের সম্ভাব্য ধ্বংসাবশেষও খুঁজে পাওয়া যায়নি।
অস্ট্রেলিয়ার কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, অনুসন্ধান এলাকার আয়তন বাড়িয়ে ৩৬ হাজার বর্গকিলোমিটার করা হয়েছে। বাড়ছে অনুসন্ধানকারী বিমানের সংখ্যা। এ অভিযানে চীন, জাপান ও যুক্তরাজ্যও সহযোগিতা করছে। নিউজিল্যান্ড ও যুক্তরাষ্ট্রের বিমানও অভিযানে যোগ দিয়েছে। ভারতও দুটি বিমান পাঠাবে বলে জানিয়েছে।
লোকসানের আশঙ্কা মালয়েশিয়ান এয়ারলাইনসের : একদিকে তীব্র প্রতিযোগিতাসহ অন্যান্য কারণে আর্থিক ক্ষতির মধ্য দিয়ে যাচ্ছিল মালয়েশিয়ার বিমান সংস্থা মালয়েশিয়া এয়ারলাইনস। এর মধ্যে যোগ হয়েছে বিমান নিখোঁজের। সংস্থাটির সবচেয়ে বেশি যাত্রী চীনের। কিন্তু ওই বিমানটি গায়েব হওয়ার পর থেকে চীন ও কুয়ালালামপুর থেকে শুরু করে বিভিন্ন দেশের শিডিউলে বিপর্যয় দেখা দিয়েছে। এ কারণে সংস্থাটির শেয়ারহোল্ডারদের মধ্যে উদ্বেগ বাড়ছে। বিভিন্ন রুটের যাত্রীদের মধ্যে বিমান সংস্থাটির বিষয়ে ভীতিও কাজ করছে, যা কোম্পানির আয় কমিয়ে দেবে।
এদিকে দি ইকোনমিক টাইমসের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে- সাম্প্রতিক বছরগুলোয় মালয়েশিয়ান এয়ারলাইনস (মাস) ব্যাপক অর্থনৈতিক লোকসানের মধ্য দিয়ে পরিচালিত হচ্ছে। গত মাসে মাস-এর দেওয়া তথ্যানুযায়ী গত বছর সংস্থাটি ৩৬ কোটি ডলার লোকসান দেয়। সংস্থার ৭০ শতাংশ সরকারি মালিকানাধীন, বাকিটা বেসরকারি। সংস্থাটি সর্বশেষ লাভের মুখ দেখেছিল ২০১০ সালে ২৩ দশমিক ৭ কোটি রিংগিত। এবার বিমান নিখোঁজ হওয়ার পর লোকসানের পরিমাণ বাড়তে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে। এএফপি, বিবিসি, দি ইকোনমিক টাইমস।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।